শুক্রবারের পত্রিকাটি এখনো টেবিলে পড়ে আছে। আজ সে পত্রিকার পিছনের পৃষ্ঠায় একটি "অনার কিলিং" এর শিরোনাম চোখে পড়ল।
সংবাদের প্রথম প্যারা পড়ে আমি শিহরিত ও বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমি হুবহু তুলে ধরছি "Two young girls stand inches away from charred bricks and ash, staring at the detritus of a "kind and gentle" teenager who taught them the Quran but was savagely burned by her mother for marrying the man of her choice"
অর্থাৎ 'বিনয়ী ও নম্র' তরুণীর ছাইভস্মটির দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুই কিশোরী দগ্ধ দেহ ও ছাইয়ের কয়েক ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে আছে, যিনি তাদেরকে কোরআন শিক্ষা দিত কিন্তু তার পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার জন্য নিজ মা কর্তৃক তাকে বর্বরভাবে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
তরুণী দুটি হলো দশ বছর বয়সী মাহাম ও মুসকান। যারা প্রতিবেশী জিনাতের নিকট কোরআনের তালিম নিত। দীর্ঘ সময়ের প্রেমিক হাসান খানকে বিয়ে করায় জিনাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় এবং মারা যায়। মাহাম ও মুসকানের মনে প্রচন্ড ভয়ের সাথে শত প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, কেন তাদের শিক্ষককে হত্যা করা হলো ? তারা কি দেখছে ?? কি শিখছে ?? এটি লাহোরের মতো বড় শহরের ঘটনা। অসম্মান বয়ে আনার জন্য প্রতি বছর আত্মীয়রা শত শত নারীকে হত্যা করছে। যাতে কেউ বলার নেই, দেখার নেই। এমন একটা ভাব, যা হয়েছে ঠিকই হয়েছে। রক্ষণশীল মুসলমানদের তথাকথিত 'অনার কিলিং'য়ের নামে এ রকম পূণ্য কাজ কি প্রকৃত ইসলাম ???
আসুন দেখি স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা কি বলছেন...
সূরা নিসার ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْض
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য এটা বৈধ নয় যে, তোমরা জোর করে মহিলাদের বিয়ে করে তাদের উত্তরাধিকারী হবে"।(আংশিক আয়াত)
এ বিষয়ে হাদিসগুলো দেখি....
ﻰﻠﺻ ِﻪﻠﻟﺍ َﻝﻮُﺳَﺭ َّﻥَﺃ ؛ٍﺱﺎَّﺒَﻋ ِﻦْﺑ ِﻪﻠﻟﺍ ِﺪْﺒَﻋ ْﻦَﻋ :َﻝﺎَﻗ ،ﻢﻠﺳﻭ ﻪﻴﻠﻋ ﻪﻠﻟﺍ »ْﻦِﻣ ﺎَﻬِﺴْﻔَﻨِﺑ ُّﻖَﺣَﺃ ُﻢِّﻳَﺄْﻟﺍ ﺎَﻬِّﻴِﻟَﻭ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৮৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪২১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৮, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৩৪, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১০৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩৫৭৬} ِﺕَﺀﺎَﺟ ” :َﻝﺎَﻗ ِﻦَﻤْﺣَّﺮﻟﺍ ِﺪْﺒَﻋ ِﻦْﺑ َﺔَﻤَﻠَﺳ ﻲِﺑَﺃ ْﻦَﻋ ،َﻢَّﻠَﺳَﻭ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪَّﻠﻟﺍ ِﻝﻮُﺳَﺭ ﻰَﻟِﺇ ٌﺓَﺃَﺮْﻣﺍ ،َﻮُﻫ ُﺏَﺄْﻟﺍ َﻢْﻌِﻧَﻭ ﻲِﺑَﺃ َّﻥِﺇ ،ِﻪَّﻠﻟﺍ َﻝﻮُﺳَﺭ ﺎَﻳ :ْﺖَﻟﺎَﻘَﻓ ﺎًﻠُﺟَﺭ ﻲِﻨَﺤَﻜْﻧَﺃَﻭ ،ُﻩَّﺩَﺮَﻓ ﻱِﺪَﻟَﻭ ُّﻢَﻋ ِﻪْﻴَﻟِﺇ ﻲِﻨَﺒَﻄَﺧ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪَّﻠﻟﺍ ُﻝﻮُﺳَﺭ َﺚَﻌَﺒَﻓ .ٌﺔَﻫِﺭﺎَﻛ ﺎَﻧَﺃَﻭ :َﻝﺎَﻘَﻓ ،ﺎَﻬِﻟْﻮَﻗ ْﻦَﻋ ُﻪَﻟَﺄَﺴَﻓ ،ﺎَﻬﻴِﺑَﺃ ﻰَﻟِﺇ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ُﻝﻮُﺳَﺭ َﻝﺎَﻘَﻓ .ﺍًﺮْﻴَﺧ ﺎَﻬُﻟﺁ ْﻢَﻟَﻭ ﺎَﻬُﺘْﺤَﻜْﻧَﺃ ،ْﺖَﻗَﺪَﺻ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪَّﻠﻟﺍ » ،ِﻚَﻟ َﺡﺎَﻜِﻧ ﺎَﻟ ِﺖْﺌِﺷ ْﻦَﻣ ﻲِﺤِﻜْﻧﺎَﻓ ﻲِﺒَﻫْﺫﺍ»
হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল সাঃ মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। {সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া, হাদীস নং-৫৪১}
ﻦَﻋ ،ٌﺮﻳِﺮَﺟ ﺎَﻨَﺛَّﺪَﺣ ،ٌﻦْﻴَﺴُﺣ ﺎَﻨَﺛَّﺪَﺣ َّﻥَﺃ ” :ٍﺱﺎَّﺒَﻋ ِﻦْﺑﺍ ِﻦَﻋ ،َﺔَﻣِﺮْﻜِﻋ ْﻦَﻋ ،َﺏﻮُ ﺃ ،َﻢَّﻠَﺳَﻭ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ َّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ِﺖَﺗَﺃ ﺍًﺮْﻜِﺑ ًﺔَﻳِﺭﺎَﺟ ﺎَﻫَﺮَّﻴَﺨَﻓ ٌﺔَﻫِﺭﺎَﻛ َﻲِﻫَﻭ ﺎَﻬَﺟَّﻭَﺯ ﺎَﻫﺎَﺑَﺃ َّﻥَﺃ ْﺕَﺮَﻛَﺬَﻓ ” َﻢَّﻠَﺳَﻭ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ .ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﻁﺮﺷ ﻰﻠﻋ ﺢﻴﺤﺻ ﻩﺩﺎﻨﺳﺇ ﺩﻭﺍﺩ ﻮﺑﺃ ﻪﺟﺮﺧﺃﻭ )2096( ﻪﺟﺎﻣ ﻦﺑﺍﻭ ، )1875( ”ﻯﺮﺒﻜﻟﺍ“ ﻲﻓ ﻲﺋﺎﺴﻨﻟﺍﻭ ، )5387( ، ﻰﻠﻌﻳ ﻮﺑﺃﻭ )2526( ﻱﻭﺎﺤﻄﻟﺍﻭ ، 4/365، ﻲﻨﻄﻗﺭﺍﺪﻟﺍﻭ 3/234ﻲﻘﻬﻴﺒﻟﺍﻭ ،235- 7/117 ﺍﺬﻬﺑ ،ﻱﺫﻭﺮﻤﻟﺍ ﺪﻤﺤﻣ ﻦﺑ ﻦﻴﺴﺣ ﻖﻳﺮﻃ ﻦﻣ .ﺩﺎﻨﺳﻹﺍ ﻪﺟﺎﻣ ﻦﺑﺍ ﻪﺟﺮﺧﺃﻭ )1875( ﻲﺋﺎﺴﻨﻟﺍﻭ ، )5389( ﻲﻨﻄﻗﺭﺍﺪﻟﺍﻭ ، 3/235 ﻖﻳﺮﻃ ﻦﻣ ،ﻥﺎﺒﺣ ﻦﺑ ﺪﻳﺯ ﻦﻋ ،ﻥﺎﻤﻴﻠﺳ ﻦﺑ ﺮﻤﻌُﻣ ﻲﻨﻄﻗﺭﺍﺪﻟﺍﻭ 3/235 ﻦﺑ ﺏﻮﻳﺃ ﻖﻳﺮﻃ ﻦﻣ ﺏﻮﻳﺃ ﻦﻋ ﺎﻤﻫﻼﻛ ،ﻱﺭﻮﺜﻟﺍ ﻥﺎﻴﻔﺳ ﻦﻋ ،ﺪﻳﻮﺳ ﻪﺑ ،ﻲﻧﺎﻴﺘﺨﺴﻟﺍ .
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। কুমারী মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্বেও বিয়ে দিয়েছে, তখন রাসূল সাঃ সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৬, সুনানুল কুবরা নাসায়ী, হাদীস নং-৫৩৬৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৬৬} ﻰَﻟِﺇ ٌﺓﺎَﺘَﻓ ْﺕَﺀﺎَﺟ :َﻝﺎَﻗ ،ِﻪﻴِﺑَﺃ ْﻦَﻋ ،َﺓَﺪْﻳَﺮُﺑ ِﻦْﺑﺍ ِﻦَﻋ ﻲِﺑَﺃ َّﻥِﺇ ” :ْﺖَﻟﺎَﻘَﻓ ،َﻢَّﻠَﺳَﻭ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ :َﻝﺎَﻗ ،ُﻪَﺘَﺴﻴِﺴَﺧ ﻲِﺑ َﻊَﻓْﺮَﻴِﻟ ،ِﻪﻴِﺧَﺃ َﻦْﺑﺍ ﻲِﻨَﺟَّﻭَﺯ َﻊَﻨَﺻ ﺎَﻣ ُﺕْﺰَﺟَﺃ ْﺪَﻗ :ْﺖَﻟﺎَﻘَﻓ ،ﺎَﻬْﻴَﻟِﺇ َﺮْﻣَﺄْﻟﺍ َﻞَﻌَﺠَﻓ ﻰَﻟِﺇ َﺲْﻴَﻟ ْﻥَﺃ ُﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ َﻢَﻠْﻌَﺗ ْﻥَﺃ ُﺕْﺩَﺭَﺃ ْﻦِﻜَﻟَﻭ ،ﻲِﺑَﺃ ٌﺀْﻲَﺷ ِﺮْﻣَﺄْﻟﺍ َﻦِﻣ ِﺀﺎَﺑﺂْﻟﺍ “
হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবীজী সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল সাঃ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে। তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের চূড়ান্ত মতের অধিকার নেই {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ, হাদীস নং-১৩৫৯, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৫৫} উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও আরো এমন অনেক হাদীস রয়েছে, যা স্পষ্ট ভাষায় প্রমাণ করে যে, বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবক নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তারা এটা কোন ইসলাম পালন করে ??
তারা কোন অধিকারে প্রকৃত ইসলামকে না জেনে, না মেনে পাপ-পূণ্যের বিচার করে ?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:১৭