শিল্পপতি নাহিদ সুলতানের অফিস।
দরজায় খট খট শব্দ হল।
-স্যার, আসব?
নাহিদ সাহেব চোখ তুলে তাকালেন। রাকিব, উনার পিএস।
-আস।
রাকিব ঢুকে পড়ল।
-কি ব্যাপার, রাকিব?
-ওই মহিলাটা আবার আসছে।
-ওই মহিলাটা মানে? কোন মহিলাটা?
-ওই যে স্যার, আমাদের অনগোয়িং প্রজেক্ট ‘হোটেল একশ তলা’র নিরানব্বই তলার ছাদ ঢালাইয়ের দিন বিল্ডিং থেকে পড়ে মারা গেল এক শ্রমিক। তার স্ত্রী।
-এখানে কি চায়? ক্ষতি পূরণ?
-না স্যার।
-না মানে কি? সে এই কথা বলছে?
-জ্বি স্যার। আমরা এক লাখ টাকা অফার করেছিলাম, সে নিতে রাজি হয় নাই।
-তো টাকার এমাউন্ট বাড়িয়ে দাও।
-আমরা পাঁচ পর্যন্ত অফার করেছিলাম, সে রাজি হয় নাই।
-হোয়াট? তাহলে সে কি চায়?
-ন্যায় বিচার।
নাহিদ সাহেব অবাক হয়ে যান। তারমনে হয় যেন ভুল শুনেছেন।
-কি বললা? ন্যায়বিচার?
-জ্বি স্যার।
-তো পাঁচ লাখ টাকায় কি ন্যায়বিচার হবে না?
-স্যার, আমি কি করব?
-কি করবা মানে? যাও, জিজ্ঞেস কর সে কি চায়। যে করেই হোক ম্যানেজ কর।
-স্যার, আমি জিজ্ঞেস করছি।
-আর?
-সে বলছে ‘হোটেল একশ তলা’ কর্তৃপক্ষকে তাদের ভুল স্বীকার করতে হবে।
-কিসের ভুল?
-আমাদের হোটেলে নাকি শ্রমিকদের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা নাই, আমরা নাকি নির্মাণ শ্রমিকদের মানুষের মত ট্রিট করছি না।
-বুলশিট।
-এখন কি করব স্যার? আপনি কি ওর সাথে দেখা করবেন?
-ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও।
পরদিন সকাল।
হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে পড়ল রাকিব, অনুমতিরও তোয়াক্কা করল না। নাহিদ সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
-কি ব্যাপার, রাকিব?
-স্যার, সর্বনাশ।
-মানে?
-এই দেখুন।
রাকিব পত্রিকা এগিয়ে দেয়।
স্থানীয় পত্রিকার শিরোনামঃ
নির্মান শ্রমিকদের দাসজীবন,
শ্রমিকের রক্তের ওপর গড়ে উঠছে হোটেল একশ তলা।
ছিহ, কি জঘন্য শিরোনাম। পুরো খবর পড়ার মত রুচি হল না নাহিদ সাহেবের।
-এসব কি?
-স্যার, গতকালকের সেই মহিলা।
-কি করেছে সে?
-আমাদের অফিস থেকে গতকাল বের করে দেয়ার পরি সে সোজা পত্রিকা অফিসে চলে যায়।তার ফলে এই রিপোর্ট।
-রাকিব।
-জ্বি স্যার।
-রিপোর্টার কে?
-খুঁজে বের করা যাবে।
-এডিটরকে চেন?
-না স্যার।
-ব্যাপার না, উনাকে একটা ফোন দাও। বল কালকের পত্রিকায় যেন হোটেল একশ তলার নামে মিথ্যা খবর প্রকাশের জন্য ওরা দুঃখ প্রকাশ করে।
-আর যদি রাজি না হয়?
-মেক হিল এন অফার হি কান্ট ডিনাই।
পরদিন সকাল।
-স্যার।
-বল।
-ওই সাংবাদিক ব্যাটা আর তার সম্পাদক কিছুতেই আমাদের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিল না। এখন দেখছি ঠিকই দুঃখ প্রকাশ করে খবর প্রকাশ করেছে।কিভাবে হল?
-এটা ম্যানেজ করতে পার না বলেই আমি বস আর তুমি পিএস।
শুনে রাকিবের মুখ কালো হয়ে যায়।
-দেখ রাকিব, মন খারাপের কিছু নেই। তুমি যেটা মুখোমুখি কথা বলে পারনি আমি সেটা ওভার দ্যা ফোন করে ফেলেছি।
-কিভাবে স্যার? আমি সেটাই শিখতে চাই।
-খুবই সিম্পল। ওই সাংবাদিক ব্যাটা ইয়াং, খুব বেশি লাফাচ্ছিল। তুমি জান গতকাল বিকালে তার এক্সিডেন্ট হয়েছে?
-বলেন কি?
-হ্যা। ছেলেটা কোমায় আছে। এক্সিডেন্টের পর আমি এডিটর ব্যাটাকে ফোন করি।একটা কথাই বলছি। যদি আজকের পত্রিকার মিথ্যা আর উদ্দেশ্যপ্রনোদিত সংবাদ ছাপানোর জন্য ওরা ক্ষমা না চায়, তবে এডিটর ব্যাটার ছেলেরও একই দশা হবে।
নাহিদ সাহেবের কথা শুনে রাকিব অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।
-এভ্রিওয়ান হ্যাজ এ প্রাইজ রাকিব। কেউ টাকার কাছে বিক্রি হয়, কেউ ছেলের জীবনের কাছে।
চারদিন পর।
-স্যার।
-কি ব্যাপার, রাকিব?
-ওই মহিলা আবার এসেছে।
-কোন মহিলা?
-ওই শ্রমিকের বউ, যে বিল্ডিং থেকে পড়ে মরে গেল।
-কি চায়?
-নীচে লবিতে খুব হইচই করছে?
-কেন?
-গতকাল রাতে নাকি তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
-তাই নাকি? কেন?
-আগের নাকি তার মেয়ে রেপড হয়েছিল।
-তো আমার অফিসে কি চায়? আমি কি আইন? না আদালত?
-স্যার, ওই মহিলার দাবী তার মেয়ের রেপিস্ট নাকি আমাদের ভাড়া করা।
-আচ্ছা?
-হ্যা, সে নাকি ওই ছেলেকে আমাদের এখানে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতে দেখেছে।
-যতসব রাবিশ।
-ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও ওকে আমার অফিস থেকে।
-স্যার?
-বল।
-ইজ শী টেলিং দ্যা ট্রুথ?
-গেট আউট।
পরদিন সকাল।
হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে পড়ল রাকিব, নাহিদ সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।ছেলেটার সাহস দিনদিন বাড়ছে, অনুমতি না নিয়ে প্রায়ই ঢুকে পড়ছে রুমে।
-কি চাও, রাকিব?
-স্যার, সর্বনাশ হয়ে গেছে।
-মানে?
-মানে পুলিশ।
-পুলিশ? কোথায়?
-বাইরে।
-কেন?
-স্যার, গজব হয়ে গেছে।
-ন্যাকামি না করে আসল কথা বল। সমস্যা কি?
-ওই যে, ওই মহিলা।
-হ্যা, আবার কি করছে সে?
-আত্মহত্যা।
-তো?
-সে আত্মহত্যা করেছে ‘হোটেল একশ তলা’র ছাদ থেকে লাফিয়ে।
-মানে?
-মানে নিরানব্বই তলার ছাদ ঢালাই গতকাল কমপ্লিট হয়েছে। সেখান থেকে রাতের বেলা ওই বেটি লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
-সে আমার কন্সট্রাকশন সাইটে ঢুকল কি করে?
-জানি না স্যার।
-সিকিউরিটি কোথায় ছিল?
-জানি না স্যার।
-তো জানটা কি?
পাঁচ মিনিট পর।
-কি খবর ওসি সাহেব?
-এইতো আছি। আর আপনি?
-আমাদের আর থাকা। দেশে কি আর ব্যবসা করার পরিবেশ আছে?
-কি যে বলেন। আপনারা যাতে ঠিকমত ব্যবসা করতে পারেন, তার জন্যইতো আমরা আছি।
-ঠিক বুঝলাম না।
-বুঝতে পারেননি? আচ্ছা, তাহলে সহজ ভাষাতেই বলি। আপনাদের হোটেল একশ তলা, একজন ওখান থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ওটা এখন অফিসিয়ালি ক্রাইম সিন।
-মানে?
-লেট মি ফিনিশ ফার্স্ট।আপনারা একশ তলা হোটেল বানাবেন, এরই মধ্যে নিরানব্বই তলা কম্পলিট। এখন যদি মামলার কারণে উদ্বোধনের আগেই হোটেল বন্ধ হয়ে যায়, পুরো এরিয়া রেস্ট্রিক্টেড হয়ে যায়-তাহলে কি ভাল হবে?
-আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?
-ছি ছি, কি যে বলেন। আপনারা এত বড় মানুষ, আর আমরা হলাম চুনোপুটি। আমার সাধ্য আছে আপনাকে ভয় দেখানোর? আমি শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বলছি।এই হোটেলটা আপনার ড্রীম প্রোজেক্ট, তার জন্য মার্কেট থেকে কতগুলা টাকা আপনি উঠিয়েছেন, এখন সামান্য একটা মামলার জন্য যদি পুরো প্রজেক্ট আটকে যায়, তাহলে কি আর ভাল হবে?
-আপনার একাউন্ট নম্বরটা বলুন। সময়মত টাকা পৌছে যাবে।
-আসলে পুরো ব্যাপারটা মিডিয়া সেনসেশনে পরণত হয়েছে। বুঝতেই পারছেন আমার একার পক্ষে সব সামাল দেয়া সম্ভব নয়।
-সবার একাউন্ট নম্বর আমার পিএস-এর কাছে দিয়ে যান।কাজ হয়ে যাবে।
-আসলেই আপনি বুদ্ধিমান লোক।কেউতো আর এমনি এমনি ওপরে ওঠে না।
দুইদিন পর।
-স্যার।
-সর্বনাশ হয়ে গেছে।
-মানে কি?
-আমাদের গার্মেন্টসে আগুন লেগেছে?
-হোয়াট?
-জ্বি স্যার। সব চ্যানেলে লাইভ দেখাচ্ছে।
-লাইভ দেখে কি করব হারামজাদা? ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বল।
পরদিন।
-স্যার।
-আবার কি?
-আমাদের গুদামে আগুন লেগেছে?
-কখন?
-একটু আগে।
-আজ না দুইটা ডেলিভারী ছিল।
-একটা ট্রাকও গুদাম থেকে বের হতে পারেনি।
এক সপ্তাহ পর।
-স্যার।
-বল।
-গত এক সপ্তাহে আমাদের চারটা অর্ডার ক্যানসেল হয়েছে। ইন্সুরেন্সগুলা নিয়েও নাকি সমস্যা হয়েছে।
-কি সমস্যা?
-আমি ঠিক জানি না। তবে ভাসাভাসা শুনে যা বুঝলাম তাতে মনে হচ্ছে আমরা মনে ইন্সুরেন্স ক্লেইম করতে পারব না।
-কেন?
-উকিলের সাথে বলতে হবে।আমার ঠিক জানা নেই।
-তো বসে আছ কেন? গিয়ে জেনে আস। বসে থাকার জন্য নিশ্চয়ই তোমাকে বেতন দেই না।
দুইদিন পর।
-স্যার, আসব?
নাহিদ সাহেব চেয়ে দেখেন রাকিব উকি দিচ্ছে।
-আস।
রাকিব ঢুকে পড়ে।
-কেমন আছ, রাকিব?
-আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভাল আছি স্যার।
-ভাল আছ? ভালই তো।
নাহিদ সাহেব চেয়ারে হেলান দিয়ে শুন্যচোখে সিলিং এর দিকে চেয়ে থাকেন।
রাকিবের মনটা হঠাত খারাপ হয়ে যায়। এই শহরের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী নাহিদ সুলতান। তার প্রথম চাকরীটাই সে করেছে এমন একজন শক্তিশালী লোকের পিএস হিসেবে। আজ কি অবস্থা তার? এলোমেলো চুল, মুখভর্তি দাড়ি, চোখ দুটো বসে গেছে। পোশাক আশাকের অবস্থাও খারাপ।
কে জানত দোর্দন্ড প্রতাপশালী ব্যবসায়ী নাহিদ সুলতানের একদিন এই অবস্থা হবে?
-স্যার।
-বল।
রাকিব একটা কাগজ এগিয়ে দেয়।
-কি এটা? নতুন কোন দুঃসংবাদ?
-আমার রেজিগনেশন।
-রেজিগনেশন? বাহ। চলে যাবা তাহলে?
-জ্বি স্যার।
-যাও, আমার এতদিনের ব্যবসায়িক পার্টনাররাই চলে যাচ্ছে, তুমি আর থেকে কি করবা?
রাকিব চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
-রাকিব।
-জ্বি স্যার।
-বস।
রাকিব অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
-আরে ভয় পাচ্ছ কেন? চলেইতো যাবা, শেষবারের মত একটু বস। এমন খারাপ দিনকাল পড়েছে, কারো সাথে একটু মন খুলে কথাও বলতে পারি না।
রাকিব বসে পড়ে।
-বুঝলা রাকিব।
-বলেন স্যার।
-তোমাদের বকা দেই, ঝাড়ি দেই, গালাগালি করি-সেগুলো কিন্তু তোমাদের ভালর জন্যই। তোমাদের ভালবাসি বলেই।
-আমি জানি স্যার।
-বুঝলা রাকিব, হোটেল একশ তলা নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। যে শহরে একটা বিশ তলা বিল্ডিংও নেই, সেখানে একশ তলা হোটেল-ভাবা যায়?
-না স্যার।
-স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অনেক বড় বেশি রিস্ক নিয়ে ফেলেছিলাম।আমি হলাম গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, এই হোটেলের পিছে ছুটতে গিয়ে সেদিকেই নজর দেয়া হয়নি। বারবার শিপমেন্ট ডেট ফেল করছিলাম, অর্ডারের পর অর্ডার ক্যানসেল হচ্ছিল। তবু আমি পাত্তা দেইনি। ভেবেছিলাম এই হোটেলটা দাঁড়িয়ে গেলে সব লস পুষিয়ে নেব।রাকিব।
-জ্বি।
-তুমি কি জান এই হোটেলটার জন্য কত লোন নিয়েছিলাম?
-না স্যার।
-থাক, বাদ দাও। জেনে আর কি করবা?
-স্যার, আমার যাওয়া দরকার।
-হ্যা, হ্যা, নিশ্চয়ই।
রাকিব উঠে দাঁড়ায়। জীবনে প্রথমবারের মত নাহিদ সুলতানের সাথে হ্যান্ডশেক করে।
-বেস্ট অফ লাক, রাকিব।
-সেম টু ইউ স্যার।
রাকিব দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
-রাকিব।
রাকিব ঘুরে দাড়ায়।জ্বি স্যার।
-মানুষের স্বপ্নের দাম কত, জান?
-মানে?
-একজন শ্রমিকের জীবন কি একশ তলা একটা স্বপ্নের চেয়ে বেশি?
-বুঝতে পারিনি।
-আমিও বুঝতে পারিনা। শুধু প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখি, এক মধ্যবয়সী নারী এসে বলছে, আমার স্বামীর লাশের ওপর দিয়ে তোর স্বপন সত্যি হবে না, আমি হতে দিব না।
রাকিব অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।
-ওই শ্রমিকটাকে আমি কখনো দেখিনি। বউকে দেখারতো প্রশ্নই আসে না।আচ্ছা, লোকটার নাম কি ছিল?
পরদিন সকাল।
রাকিব দ্রুত ঘুম থেকে উঠে পড়ে। নতুন চাকরিতে আজ তারা প্রথম দিন, কোনভাবেই সে লেট হতে চায় না।
গোসল করে তৈরী হতে বেশি সময় লাগে না।
-ঈশিতা, চা দাও।
ইশিতা চা দিয়ে যায়, সাথে পত্রিকাও।
শিরোনাম দেখে তার হাত কেঁপে ওঠে।
নির্মানাধীন হোটেলের ছাদ থেকে পড়ে
শিল্পপতি নাহিদ সুলতানের মৃত্যু!!!
===================================================================
আমার লেখা অন্যান্য ভৌতিক গল্পগুলোঃ
১.পিশাচ কাহিনীঃ রক্তখেকো ডাইনী পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩
২.পিশাচ কাহিনীঃ জানোয়ারের রক্ত (১৮+)
৩.পিশাচ কাহিনীঃ অন্ধকারে বিলীন
৪.পিশাচ কাহিনীঃ হোটেল একশ তলা
৫.পিশাচ কাহিনীঃ একশ তলায় আবার
৬.পিশাচ কাহিনীঃ রাতের আঁধারে
৭.পিশাচ কাহিনীঃ কন্ঠ
৮.পিশাচ কাহিনীঃ অতিথি
৯.পিশাচ কাহিনীঃ কান্নার শব্দ
১০.পিশাচ কাহিনীঃ শয়তানের পাল্লায়
১১.পিশাচ কাহিনীঃ নির্ঘুম রাত
১২.পিশাচ কাহিনীঃ জঙ্গল মঙ্গলপুর
১৩.পিশাচ কাহিনীঃ একটি ফটোগ্রাফ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৪৪