ভাল করে বাইরে তাকালাম।
নাহ, কাউকে দেখা যায় না।
হেড লাইটটা অফ করে সাবধানে নামলাম গাড়ি থেকে। মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে আরেকবার দেখে নিলাম।
নাহ, কেউ নেই।
যাক বাবা, নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।
অবশ্য এতটা সাবধান না হলেও চলত।একে গভীর রাত, তার ওপর আবহাওয়া খারাপ। একবারে বাধ্য না হলে বা মাথায় ভয়াবহ গন্ডগোল না থাকলে এরকম পরিস্থিতিতে কেউ বের হবে না।
গাড়ির পেছনের সীটের দরজাটা খুললাম। সীটে একটা বস্তা রাখা আছে।গাড়ি থেকে নামিয়ে আনলাম।
দম বেরিয়ে গেল। বাপরে বাপ, মুটকির ওজন মনে হয় ৭০ কেজি ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
জ্বি হ্যা, ঠিকই ধরেছেন। বস্তার ভেতর আছে আমার স্ত্রীর লাশ।খুনটা আমিই করেছি।
নিশ্চিতভাবেই, এতটুকু পড়ার পর আপনি আমাকে একজন ঠান্ডা মাথার খুনী কিংবা সাইকোপ্যাথ ধরে নিয়েছেন। আপনাদের আশ্বস্ত করার জন্য না, আমি সত্যিই করেই বলছি, কোন সাইকোপ্যাথ বা অপরাধী আমি নই।
আপনি নিশ্চই ভাবছেন, সব অপরাধী এমনই বলে।
আচ্ছা, আপনাদের তাহলে পুরো ঘটনা খুলেই বলি। নাহ, আপনাদের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য নয়। আমার আসলে গল্প করতে ইচ্ছা করছে।
তাহলে শুরু করা যাক।
আমাদের বিয়েটা হয়েছিল পারিবারিক ভাবেই। আমার মত মধ্যবিত্ত ছেলের ফারিয়ার মত বউ পাওয়ার কথা না। তবে আমি পেয়েছিলাম- অসাধারন অ্যাকাডেমিক রেকর্ড আর ক্যারিয়ারের ঊর্ধ্মুখী গ্রাফের কারণে।
ওহ, এতক্ষণেতো জেনেই গেছেন আমার স্ত্রীর নাম ফারিয়া। ফারিয়া বিনতে আজাদ। আজাদ ইন্ডাস্ট্রীজের কর্ণধারের একমাত্র কন্যা।
আমাদের বিয়েটা হয়েছিল মূলত ফারিয়ার বাবার আগ্রহেই। ফারিয়া আমাকে কখনোই ভালবাসেনি। চেষ্টার ত্রুটি আমি করিনি, কিন্তু ফারিয়া কেন যেন স্বামী হিসেবে আমাকে মেনে নিতে পারিনি।
প্রথম থেকে ও আমার প্রতি উদাসীন। প্রতিদিনই দেখতাম ফোনে কার সাথে দীর্ঘসময় কথা বলে, বাপের বাড়ি যাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বের হয়, অথচ সেখানে থাকে খুব কম সময়ই।
বাচ্চা নেওয়ার কথা বললাম, তাতেও রাজি হল না।
বুঝতেই পারছেন, ফারিয়ার জীবনে অন্য পুরুষ আছে-এটা বুঝতে আমার তেমনব কোন বেগ পেতে হয়নি। তারপরও ওর পেছনে একটা লোক লাগিয়ে দিলাম।
বিশ্বাস করুন, ওদের দুজনের অন্তরঙ্গ ছবিগুলো যেদিন দেখলাম, ইচ্ছা হল মরে যাই। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম, দুজনকেই খুন করব।
সুযোগও পেয়ে গেলাম। নাদির ফোন করে জানাল, মাগীর নাগর এসেছে। আমিও দেরী না করে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
কপাল ভাল ছিল হারামজাদাটার। আমি জ্যামে আটকে আছি, সুযোগে সে রসলীলা সে শেষ করে পগার পার।
বাসায় পৌছে দেখি ফারিয়া তার ব্লাউজ ঠিক করাতেই ব্যস্ত, শাড়ির আচল তখনও পড়ে আছে মাটিতে। এতক্ষণ হয়ে গেল, এখনো নিজের কাপড়টাও ঠিক করতে পারলি না মাগী?
হাতের কাছে শুধু তামার ফুলদানীটাই ছিল, ওটা দিয়েই মাথায় পরপর কয়েকটা বাড়ি দিয়ে দিলাম।
।। দুই ।।
মোবাইলটা বেজে উঠল।এলার্ম। ভোর চারটা।
বসে আছি ড্রাইভিং সীটে, ফিরে যাচ্ছি শহরের দিকে।হাইওয়ের বুক চিড়ে গাড়ি উড়ে চলেছে শহরের দিকে, হয়ত আধ ঘন্টা, হয়ত পাচ মিনিট এদিক সেদিক।
রেডিওটা অন করলাম।
তোরা দেখ, দেখ, দেখরে চাহিয়া
চোখ থাকিতে এমন কানা কেমন করিয়া...
সত্যিই, কানাইতো ছিলাম। নইলে ফারিয়ার মত মেয়েকে নিয়ে কেউ এতদিন সংসার করে?
প্রথম যেদিন বুঝতে পেরেছিলাম, সেদিনই কাজটা করে ফেললে এতদিন আর কষ্ট পেতে হত না।
যাই হোক, এই সুযোগে আপনাদের বাকি গল্পটা বলে নেই।
ফারিয়া মরে গেছে, আমিই ওকে খুন করেছি-এটা বুঝতে আমার সময় লাগল পাচ মিনিট।এরপর যা করার তাই করার সিদ্ধান্ত নিলাম। লাশ ঠিকানা লাগাতে হবে। ফারিয়ার পরকীয়ার কথা ওর বাসায় সবাই জানে। সুতরাং যদি বলি নাগরের সাথে ফারিয়া পালিয়ে গেছে-কেউ অবিশ্বাস করবে না।
বাসায় যত দা-বটি-ছুরি ছিল, সব শোবার ঘরে নিয়ে এলাম। লাশটা মোট সতের টুকরা করতে আমার সময় লাগল দুঘন্টা, আর সব ধোয়ামোছার পেছনে আরও এক ঘন্টা।
বারটা বাজার পর আমি বস্তাবন্দী লাশ নিয়ে বের হলাম।
গেটের একটা চাবি আমার কাছেই থাকে-দারোয়ানকে আর জাগানোর প্রয়োজন পড়ল না।
পুরো রাস্তা গান শুনতে শুনতে জঙ্গলে এসে পৌছালাম। কেমন যেন নিজেকে হালকা লাগছিল।
গাড়ি থেকে লাশ নামানোর সময় হঠাৎ বৃষ্টি নামল। বৃষ্টি আমার খুব বেশি প্রিয় না, তবে আজ খুব একটা গায়ে মাখলাম না। বরং ভালই হবে-গায়ে লেগে থাকা সব রক্তের দাগ ধুয়ে যাবে।
কবর খুড়তে বেশি সময় লাগল না। লাশ মাটি চাপা দিয়েই শহরের দিকে রওয়ানা দিলাম।
গল্পটা এতটুকুই। খুন করেছি, লাশ মাটি চাপা দিয়েছি, এখন শহরে ফিরছি, সকালে সবার সামনে এক নষ্টা স্ত্রীর দূর্বল স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করব যে কিনা তার স্ত্রীকে ধরে রাখতে পারেনি।
আশ্চর্য, রেডিওটা এমন করছে কেন? শহরের যত কাছাকাছি আসছি, সিগন্যাল তত দূর্বল হয়ে পড়ছে।
রেগে দুটো বাড়ি দিলাম। এইতো এখন পরিস্কার শোনা যাচ্ছে।
ব্রেকিং নিউজঃ কুখ্যাত স্ত্রী হন্তারক তৈমুর হায়দারের শাস্তি এই মাত্র কার্যকর করা হবে ...
হোয়াট?
আমি তৈমুর হায়দার, আমায় শাস্তি দেবে কোন বাপের ব্যাটা?
রেডিও নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তাই তখনও খেয়াল করিনি ব্রেক ফেল করা একটা লরি আমার দিকে ছুটে আসছে ফুল স্পীডে ...
।। তিন ।।
-এইতো স্যার, আপনার জ্ঞান ফিরেছে।
আমি চোখ খুললাম, নার্সের পোশাক পড়া একটা মেয়ে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
তার মানে আমি হাসপাতালে?
-আমার দিকে তাকান স্যার। বলুনতো আমি কে?
-নার্স। আমি কোনরকমে বললাম।
-এইতো আপনি সব চিনতে পারছেন।যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।গত দুই দিন উনি শুধু কান্নাকাটি করেছেন।
-উনি মানে? আমার জন্যতো কান্নাকাটি করার কেউ নেই।
-সেকি স্যার? নিজের স্ত্রীকে এভাবে ভুলে গেলে চলবে? একটু অপেক্ষা করুন, আমি উনাকে ডেকে আনছি।
-সিস্টার ওয়েইট।
-জাস্ট এক মিনিট স্যার।
নার্স বেরিয়ে গেল। আমি উঠে বসার চেষ্টা করলাম, শরীরটা বিদ্রোহ করে বসল।
কান পেতে রইলাম।
ঐতো। বাইরে পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
এজন্যই কি আমি মরে যাইনি? ফারিয়া কি তবে ফিরে এসেছে আমায় শাস্তি দিতে?
==========================================
আমার লেখা অন্যান্য ভৌতিক গল্পগুলোঃ
১.পিশাচ কাহিনীঃ রক্তখেকো ডাইনী পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩
২.পিশাচ কাহিনীঃ জানোয়ারের রক্ত (১৮+)
৩.পিশাচ কাহিনীঃ অন্ধকারে বিলীন
৪.পিশাচ কাহিনীঃ হোটেল একশ তলা
৫.পিশাচ কাহিনীঃ একশ তলায় আবার
৬.পিশাচ কাহিনীঃ রাতের আঁধারে
৭.পিশাচ কাহিনীঃ কন্ঠ
৮.পিশাচ কাহিনীঃ অতিথি
৯.পিশাচ কাহিনীঃ কান্নার শব্দ
১০.পিশাচ কাহিনীঃ শয়তানের পাল্লায়
১১.পিশাচ কাহিনীঃ নির্ঘুম রাত
১২.পিশাচ কাহিনীঃ জঙ্গল মঙ্গলপুর
১৩.পিশাচ কাহিনীঃ একটি ফটোগ্রাফ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৪৯