চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলতে যাব, হঠাৎ দেখি সিড়িতে একটা লোক বসে আছে।
বিশাল জ্যাম পেরিয়ে অফিস থেকে বাসায় আসতে প্রতিদিন দেরী হয়ে যায়। ক্লান্তিকর যাত্রা শেষে বাসায় পৌছে কোনরকমে বিছানার ওপর উঠতে পারলেই বাঁচি।এরকম পরিস্থিতিতে আশেপাশে তাকানোর মত মুড কখনও হয় না।
তারপরও আজকে কিভাবে যেন সিড়িতে বসে থাকা লোকটা চোখে পড়ে গেল। অপরিচিত লোকজনের দিকে সাধারণত তাকাই-ই না, তাদের ভাল করে লক্ষ্য করাতো পরের কথা। তবুও এই লোকটার মধ্যে কি যেন ছিল, অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলাম। ফর্সা গাল, ক্লিন শেভড, মাথার চুলগুলো পরিপাটি করে আঁচড়ানো। গায়ে গাঢ় মেরুন রং-এর শার্ট, সাথে কালো প্যান্ট, ইন করা। টোটাল ফর্মাল লুক।
আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লোকটাই প্রথম কথা বলল।
-কিছু বলবেন?
-আপনি কি আমাদের বিল্ডিং-এ থাকেন? আমি জানতে চাইলাম।
-ঠিক থাকি বলা যায় না, তবে এখন থেকে থাকব। লোকটা হেসে জবাব দেয়।
-মানে?
-মানে আমি সালাম সাহেবের ছেলে। এতদিন দেশের বাইরে ছিলাম, এখন পার্মানেন্টলি চলে এসেছি।
সালাম সাহেব আমার প্রতিবেশি, একই ফ্লোরে পাশাপাশি দুটো ফ্ল্যাটে থাকি আমরা। সালাম সাহেবের ছেলে মানে মুনিয়ার
ভাই।ওহ, এই সুযোগইতো খুজছি এতদিন ধরে।
-আপনি সালাম আংকেলের ছেলে? মানে মুনিয়ার ভাই?
-হ্যা, আপনি চেনেন মুনিয়াকে?
-কি যে বলেন ভাই, পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকি।নিজের প্রতিবেশিদের না চিনলে চলে নাকি? বিপদেআপদে উনারাইতো সবার আগে কাজে আসে।
-তা ঠিক। সবাই কোথায় গেছে বলতে পারেন?
-মানে?
-আসলে আমি কাউকে জানিয়ে আসিনি। ইচ্ছা ছিল হঠাৎ এসে সবাইকে চমকে দেব, আর দরজা তালা দেখে নিজেই চমকে গেছি। গত এক ঘন্টা ধরে এই সিড়িতে অপেক্ষা করছি আমি।
-আজকেই দেশে এসেছেন?
-হ্যা।
-আপনার লাগেজ?
-বন্ধুর বাসায় আছে।ওকে আগেই আসার কথা জানিয়েছিলাম। ঢাকা শহরে লাগেজ নিয়ে চলাফেরা করা ঝামেলার ব্যাপার।
তাই ওর গাড়িতে মাল তুলে দিয়ে আমি এদিকে এসে পড়েছি।
-যদি আপত্তি না থাকে আমার বাসায় অপেক্ষা করতে পারেন।এতবড় জার্নির পর বিশ্রাম দরকার নিশচয়ই।
ভদ্রলোকের মুখে হাসি ফুটল।
-থ্যাংক ইউ ব্রাদার। আমার সত্যিই খুব বিশ্রাম দরকার।
-সালাম আংকেলকে ফোন করে বলব আপনার কথা?
-প্লিজ এই কাজ করবেন না ভাই। তাহলে পুরো সারপ্রাইজটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
-ওকে ব্রাদার। আসুন, ভেতরে আসুন।
দুজন বাসায় ঢুকলাম।
-আপনি কি ফ্রেশ হয়ে নেবেন? আমি এই সুযোগে ডিনারের এরঞ্জমেন্টটা করে ফেলি।
-আপনি এত কষ্ট করবেন কেন ভাই?
-কি যে বলেন। একদিনইতো।
-আচ্ছা, তাহলে এক কাপ চা। ডিনারটা বাসায় গিয়েই করব।
-ওকে ব্রাদার। ওয়াশরুমটা ওইদিকে।
ভদ্রলোক ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।
আমি তাড়াতাড়ি গলির শেষ মাথার রেস্টুরেন্টটায় ফোন দিলাম।যদিও জানি ভদ্রলোক ভারী কিছু খাবেন না, তবুও এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই ভাল আয়োজন করে ফেলতে হবে।
এই সুযোগে পাঠককে জানিয়ে দেই কেন এই ভদ্রলোককে ইমপ্রেস করার এত চেষ্টা। মুনিয়াকে আমি পছন্দ করি অনেকদিন থেকেই, ইন্ডিরেক্টলি প্রস্তাবও পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কোন এক বিচিত্র কারণে সালাম আংকেল আমাকে অপছন্দ করেন। তাই মুনিয়ার বড় ভাইকে নিজের দলে আনাটা খুব জরুরী।
বেলটা বেজে উঠল।দরজা খুললাম। দারোয়ান, হাতে একটা পলিথিন।
-স্যার, খানার অর্ডার দিছিলেন?
বাহ, ইদানীং বেশ অল্প সময়ের মধ্যেই এরা ডেলিভারি দিয়ে দিচ্ছে।সার্ভিসের উন্নতি হচ্ছে।
-হ্যা। এই নাও টাকা। ওদের লোক নীচে দাড়িয়ে আছে না?
-জ্বি।স্যার, যদি কিছু মনে না করেন, বাসায় কি গেস্ট আসছে? বলেই একটা কুৎসিত হাসি দিল মতি মিয়া।
কথাটা শুনেই ইচ্ছা করল চড় কষাই। হারামজাদা, ব্যাচেলরের ঘরের গেস্ট মানেই কি ওইসব?
-তুমি যা ভাবছ তা ঠিক না মতি মিয়া। বাসায় সালাম আংকেলের ছেলে এসেছেন। সালাম আংকেলরা বাসায় নেই, তাই আমার বাসায় অপেক্ষা করছেন।
আমি পুরো কথা শেষ করার সুযোগ পেলাম না,মতি মিয়ার মুখটা হঠাৎ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
-আপনের পাশের ফ্ল্যাটের সালাম সাব?
-তো আর কে হবে?
-এইসব কি কন স্যার?
-কেন?
-সালাম স্যারের পোলাতো পেলেন এক্সিডেন্টে মারা গেছে দুইদিন আগে। আইজকা দেশে লাশ আইসা পৌছাইছে, তারা সবাই গেছে লাশ আনতে।
-দেখ মতি মিয়া, আমার সংগে তামাশা করবা না একদম।
-আপনের সাথে তামাশা করুম কেন? আমার দিলে কি ডর ভয় নাই?
'ওরে বাবারে ' বলে মতি মিয়া হঠাৎ সিড়ি দিয়ে দৌড় দেয়।
হঠাৎ আমি কাধে একটা শীতল হাতের স্পর্শ অনুভব করি।
'এত রাত হয়ে গেল, তবুও ওরা আসছে না কেন বলুনতো ব্রাদার?'
==========================================
আমার লেখা অন্যান্য ভৌতিক গল্পগুলোঃ
১.পিশাচ কাহিনীঃ রক্তখেকো ডাইনী পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩
২.পিশাচ কাহিনীঃ জানোয়ারের রক্ত (১৮+)
৩.পিশাচ কাহিনীঃ অন্ধকারে বিলীন
৪.পিশাচ কাহিনীঃ হোটেল একশ তলা
৫.পিশাচ কাহিনীঃ একশ তলায় আবার
৬.পিশাচ কাহিনীঃ রাতের আঁধারে
৭.পিশাচ কাহিনীঃ কন্ঠ
৮.পিশাচ কাহিনীঃ অতিথি
৯.পিশাচ কাহিনীঃ কান্নার শব্দ
১০.পিশাচ কাহিনীঃ শয়তানের পাল্লায়
১১.পিশাচ কাহিনীঃ নির্ঘুম রাত
১২.পিশাচ কাহিনীঃ জঙ্গল মঙ্গলপুর
১৩.পিশাচ কাহিনীঃ একটি ফটোগ্রাফ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৫৪