somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার চলচ্চিত্র দর্শনঃ আয়নাবাজি

১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অবশেষে আয়নাবাজি দেখে ফেললাম। মুক্তির আগে থেকেই মুভিটা নিয়ে বেশ আলোচনা তৈরী হয়েছিল, ট্রেইলর দেখেও মনে হয়েছিল ভাল কিছুই হবে। তারওপর অমিতাভ রেজার প্রথম চলচ্চিত্র, সাথে চঞ্চল চৌধুরী আর আমার কৈশোরের ক্রাশ নাবিলা-প্রত্যাশার পারদতো উপরের দিকে থাকাটাই স্বাভাবিক।

বন্ধুদের সাথে সময় মেলানো যাচ্ছিল না, তাই ঠিক করলাম কলিগদের সাথেই দেখে ফেলব।

সোমবার-ওয়ার্কিং ডে। দিনের শো'তে চাকরিজীবিরা আসবেন না আর মা-খালারা স্টার জলসা ছেড়ে হলে এসে বাংলা সিনেমা দেখবেন-এমন দিবা স্বপ্ন দেখার কোন কারণই নেই। অল্পবয়সী কিছু ছাত্রছাত্রী থাকবে-জানতাম। তবে সব মিলিয়ে ধরে নিয়েছিলাম মানুষ কম হবে।কিন্ত কিসের কম?

হলে পৌছেই দেখি চারপাশে মানুষের ঢল। হিসেব ঠিকই আছে-অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরাই এসেছে। অধিকাংশেরই বয়স আঠার থেকে চব্বিশের মধ্যে-দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ছাত্রছাত্রী।এদের সেলফি আর হাহাহিহিতে চারদিকে এমন অবস্থা- বয়স্করা আসলেও বিশেষ সুবিধা করতে পারতেন না।

শো শুরু সাড়ে তিনটায়(এর আগে যতবার সিনেমা হলে গিয়েছি-প্রত্যেকবারই দেখেছি শো হয় বারটা-তিনটা-ছয়টা-নয়টা। এবার কেন সাড়ে তিনটা-কে জানে?)।বাসা থেকে বের হতে দেরী হয়ে গেল। তিন কলিগ আগেই পৌছে গিয়েছিলেন।গিয়েই শুনি ভাইরা কাউন্টারে টিকেট পাননি, টিকেট কাটতে হয়েছে ব্ল্যাকে। আর ওরা বলে দর্শক নেই বলে ভাল সিনেমা হয় না-যত্তসব।

হলে পৌছেই সবাই দল বেধে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। কোন সিট নম্বর নেই, যে যার ইচ্ছামত বসে পড়ছে। আমরা চারজন চারটা সিট দখল করে নিলাম।

সিনেমা শুরুর আগে জাতীয় পতাকা দেখানো বা জাতীয় সংগীত বাজানোর কতটুকু যৌক্তিকতা আছে জানিনা- তবে আজ জাতীয় সংগীত শোনার সাথে সাথেই অধিকাংশ ছেলেপেলে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান দাঁড়াল। ব্যাপারটা বেশ ভাল লেগেছে আমার।



অনেক খাজুরে আলাপ হল। এবার মূল সিনেমার ব্যাপারে আসি। সিনেমার নাম আয়নাবাজি, মূল চরিত্রের নাম শরাফত করিম আয়না।চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করেছেন এই চরিত্রে। পুরো ছবি জুড়ে তার যে কীর্তিকলাপ- তারই নাম আয়নাবাজি।

প্রথম দিকে চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় আমার ভালই লাগত। কিন্তু বারবার তার একই রকম চরিত্রে অভিনয় বিরক্তির সৃষ্টি করেছিল। একটা পর্যায়ে আমি ধরেই নিয়েছিলাম পরিচালক সালাহউদ্দীন লাভলু না হলে কিংবা গ্রামের বোকাসোকা ছেলে ছাড়া অন্যকোন চরিত্রে বোধহয় চঞ্চল অভিনয় করতে পারেন না বা পারবেন না। আমি অত্যন্ত খুশি-আয়নাবাজি দিয়ে চঞ্চল আমাকে ভুল প্রমানিত করেছেন।

মূল কাহিনীতে আসি। এলাকার সবাই জানে আয়না জাহাজে রাধুনী হিসেবে কাজ করেন। আর যখন জাহাজে থাকেন না, তখন এলাকায় বাচ্চাদের অভিনয়ের স্কুল চালান।

কিন্তু এর পাশাপাশি আয়নার আরেকটা পরিচয় আছে। বিভিন্ন অপরাধীর জায়গায় আয়না জেল খাটেন আর বিনিময়ে টাকা পান।আর এই কাজ করতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত ভয়াবহ বিপদে পড়েন আয়না-এটাই চলচ্চিত্রের মূল গল্প।

পুরো চলচ্চিত্র জুড়েই অসাধারন অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। এবছরের সেরা অভিনেতার পুরস্কারের প্রধান দাবীদার তিনিই। এছাড়া প্রথম সিনেমা হিসেবে বেশ ভাল করেছেন নায়িকা নাবিলা। অভিনয়ে কোন জড়তা ছিল না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন গায়ক পার্থ। গানেতো তিনি সফলই, অভিনয়টাও দেখি বেশ সাফল্যের সাথে করে যাচ্ছেন।

মুভিটির ভাল দিক বলতে গেলে সবার আগে বলতে হবে সিনেমার কাহিনী এবং সংলাপ। কাহিনীকারের নাম এই মুহূর্তে মনে পরছে না, তবে একটা ধন্যবাদ পাবেন তিনি অবশ্যই। তবে সেই কাহিনী চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে অসাধারন সব সময়োপযোগী বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ দিয়ে। এর আগে বাংলাদেশের আর কোন সিনেমার শুধুমাত্র সংলাপ আমাকে এতটা আনন্দ দেয়নি।

পুরো সিনেমাই চিত্রায়িত হয়েছে ঢাকায় এবং চেলা সব কমন লোকেশানে।ক্যামেরার পেছনের কাজও ছিল চমৎকার। ঢাকাকে বেশ দৃষ্টিনন্দনভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে নদীর আশেপাশে এবং ড্রোন থেকে নেয়া শটগুলো অসাধারন ছিল।

এবার আসি গানের ব্যাপারে।ইউটিউবের কল্যানে 'এই শহর আমার(অর্ণব)' 'এ কেমন আয়নাবাজি(টাইটেল সং)' এবং 'আলু পিয়াজের কাব্য'-তিনট গান শোনা হয়েছিল আগেই।সিনেমা দেখার সময় তিনটি গানই আবার শুনতে ভাল লেগেছে। নায়ক নায়িকার প্রেম দেখাতে বনেবাদাড়ে আর মাঠেঘাটে বৃষ্টিভেজা গান রাখেননি, বরং নরনারীর প্রেমটাকে একটা স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে উপস্থাপনের জন্য একটা বড়সড় ধন্যবাদ পাবেন পরিচালক। তবে সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ পাবেন 'আইটেম সং' নামক কোন গার্বেজ না রাখার জন্য।

যা কিছু বলার ছিল বলা মোটামুটি শেষ। তাহলে আর দেরী না করে নিকটস্থ হলে দেখে ফেলুন আয়নাবাজি। জয়তু আয়নাবাজি।

চলচ্চিত্রঃ আয়নাবাজি
পরিচালনাঃ অমিতাভ রেজা চৌধুরী
অভিনয়ঃ চঞ্চল চৌধুরী, নাবিলা, পার্থ
আইএমডিবি রেটিংঃ ৯.৮/১০
আমার রেটিংঃ ৮.৫/১০
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×