somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ গল্পঃ ♣♣ The Story of An Hour ♣♣ - Kate Chopin

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিসেস মালার্ডের হার্টে সমস্যা, তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল খুব ধীরে সুস্থে স্বামীর মৃত্যুর খবরটা উনাকে দেয়া হবে।

মিসেস মালার্ডের ছোট বোন, জোসেফিন, ছোট ছোট বাক্যে, ইশারা ইঙ্গিতে বোনকে মৃত্যুর খবরটা দিল। মিস্টার মালার্ডের বন্ধু, রিচার্ডও তখন উপস্থিত ছিলেন।রিচার্ডই প্রথম খবরের কাগজ থেকে দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরেছিলেন। উনিই দূর্ঘটনায় মৃতদের তালিকা নিয়ে এসেছিলেন। তালিকায় মালার্ড সাহেবের নাম একেবারে প্রথমে ছিল।

প্রথমে মনে হল, মিসেস মালার্ড হয়ত জোসেফিনের কথা বুঝতেই পারেন নি। বোনের কাঁধে মাথা রেখে তিনি কিছু সময় কাদলেন, তারপর ধীর পায়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে বলে গেলেন কেউ যেন তাকে বিরক্ত না করে, কিছু সময় একা থাকতে চান তিনি।

রুমে ঢুকেই জানালার দিকে মুখ করে রাখা আরাম কেদারায় গা এলিয়ে দিলেন ভদ্রমহিলা। দেখে মনে হল তার দেহ আর মন-দুটোই প্রচন্ড অবসন্ন।

মিসেস মালার্ড বাইরে তাকালেন। গাছগুলো সব বসন্তের নতুন পাতায় ভরে উঠেছে, একটু আগের বৃষ্টি চারদিকের প্রকৃতিকে আশ্চর্যরকমের স্নিগ্ধ করে তুলেছে। ঐতো, একটা ফেরিওয়ালার চিৎকার শোনা যাচ্ছে।

পশ্চিমের জানালা জুড়ে রয়েছে আকাশ। নীল আকাশের বুকে থরে থরে সাজানো সাদা মেঘগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে।

মিসেস মালার্ডের বয়স বেশি হয়নি, আর তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী।তার দুচোখ আকাশের একটা বিন্দুতে স্থির হয়ে আছে। চোখ দুটো কি আকাশের বুকে মৃত স্বামীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে?
মনে হয় না।
তিনি কিছু একটা গভীরভাবে ভাবছিলেন।

আর তখনই ঘটল ঘটনাটা।এতক্ষন যে ভয়টা পাচ্ছিলেন, ঠিক তাই ঘটল।
ব্যাপারটা কি?
ব্যাপারটা এতটাই সূক্ষ্ম, প্রথমে তিনি বুঝতে পারলেন না তার মনের মধ্যে ঠিক কি চলছে।
কোন একটা অজানা-অচেনা ব্যাপার তার চারপাশের রং-রূপ-গন্ধ নিয়ে ঢুকে পড়ল তার ভেতর।মিসেস মালার্ড জানেন না জিনিসটা কি, কেবল এর অস্তিত্বই অনুভব করা যায়।

আরাম কেদারা থেকে উঠে দাঁড়ালেন ভদ্রমহিলা। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে এই অজানা-আচেনা অনুভূতির সাথে লড়ে যাবেন বলে ঠিক করলেন।কিন্তু তিনি বুঝতে পারছিলেন তার ইচ্ছাশক্তি ধীরে ধীরে পরাজিত হচ্ছে এই অনুভূতির কাছে। শেষ পর্যন্ত তিনি হার মেনে নিলেন।

ঠিক তখনই, মিসেস মালার্ডের দুঠোট মিলে অদ্ভুত একটা কান্ড করে বসল।নিজের অজান্তেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন, "মুক্তি। আমি এখন মুক্ত।"

মিসেস মালার্ডের চোখ থেকে হঠাত করেই হতাশা আর ভয় দূর হয়ে গেল, তীক্ষ্ণ আর উজ্জ্বল হয়ে উঠল চোখ দুটো। তার হৃদপিন্ডটাও যেন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।উষ্ণ রক্ত সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে নতুন প্রানের সঞ্চার হল প্রতিটি ইঞ্চিতে।

স্বামীর মৃত্যুতে তার এই উল্লাসকে কি বলা যায়? পৈশাচিক? হয়তবা। কিন্তু এসব ভাবাভাবির সময় এখন নয়। মিসেস মালার্ড খুব ভাল করেই জানেন কফিনে মোড়ানো স্বামীর নিথর দেখটাকে দেখে তিনি ঠিকই আবার কাঁদবেন, ওই ধূসর চোখদুটো আর কখনোই প্রেমময় দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকাবে না।

কিন্তু এখানেই কি জীবন শেষ?

কিন্তু মিসেস মালার্ডের সামনে আরো দিন পড়ে আছে, সেই দিনগুলোতে কাউকে পাশে পাবেন না তিনি। একাকীই তাকে সেই পথ পাড়ি দিতে হবে।

মিসেস মালার্ড দুহাত সামনে বাড়িয়ে দিলেন, যেন অনাগত কঠিন দিনগুলোকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন।

যে সম্পর্কের দাবীতে নারী-পুরুষ একে অপরের ওপর নিজের ইচ্ছাগুলো চাপিয়ে দেয়-সেরকম কেউ আর তার পাশে রইল না। তবুও এই লোকটাকে তিনি ভালবাসতেন। আবার মাঝে মাঝেই মনে হত এই লোকটার জন্য তার মনে কোন ভালবাসা অবশিষ্ট নেই।

আরে ধুর।এইসব ভালবাসা-টালবাসা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আছে নাকি? ভালবাসার রহস্য দুনিয়ার কোন বাপের ব্যাটা ভেদ করতে পারে নাই। ভালবাসা আসলে ফালতু একটা জিনিস।

"মুক্তি। অবশেষে আমার দেহ-মন-দুটোই মুক্তি লাভ করল।" মিসেস মালার্ড চিৎকার করে উঠলেন।

দরজার ঠিক বাইরেই কান পেতে দাড়িয়েছিল জোসেফিন-তার বোন। "লইস, দরজা খোল।তোর পায়ে পড়ি, দরজা খোল। এরকম কেন করছিস? তুইতো অসুস্থ হয়ে পড়বি।"

"দূর হ, আমি পুরোপুরি ঠিক আছি।" মিসেস মালার্ড এখন জীবন সুধা পানে ব্যস্ত, এসব আলগা ন্যাকামি পাত্তা দেয়ার সময় তার নেই।

মিসেস মালার্ড তার আগামী দিনগুলো পরিকল্পনা করতে বসলেন। বসন্তের বাকি আর গ্রীষ্মের দিনগুলো আর তারও পরে তার জীবনে যত দিন আসবে-প্রতিটি দিনই হবে একান্তই তার নিজের। কারো সাথেই জীবনের আর একটি দিনও তিনি ভাগ করে নেবেন না।

জোসেফিন তখনও দরজা ধাক্কা দিয়ে চলেছে।অবশেষে তিনি বেরিয়ে এলেন, দুহাত কোমরে রেখে জোসেফিনের সামনে দাঁড়ালেন বিজয়িনীর বেশে।

"চল নিচে যাই"।
দুই বোন সিড়ি বেয়ে নীচে নামতে লাগলেন। রিচার্ড অনেকক্ষণ ধরেই সেখানে অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

কেউ একজন তখনি সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল। ব্রেনটলি মালার্ড, এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে সুটকেস নিয়ে। বোঝাই যাচ্ছে দীর্ঘ ভ্রমনে লোকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।দূর্ঘটনাস্থল থেকে তিনি অনেক দূরে ছিলেন, আসলে তিনি জানতেনই না এরকম একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে।

জোসেফিনের চোখে পানি দেখে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। রিচার্ড দ্রুত মিসেস মালার্ডকে আড়াল করে ব্রেনটলির সামনে দাঁড়াল, স্ত্রীর এই রূপ যাতে তার চোখে না পড়ে।

ডাক্তার এসে শুধু একটা কথাই বললেন, হার্ট এটাকই মিসেস মালার্ডের মৃত্যুর কারণ। এত আনন্দের ধাক্কা তার দূর্বল হৃদয় নিতে পারেনি!!!




===================================================================================

Ambrose Bierce এর লেখা An Occurrence at Owl Creek Bridge পড়ার জন্য ক্লিকান এইখানে

কাহলিল জিবরান এর লেখা চল্লিশটি গল্প পড়ার জন্য ক্লিকান এইখানে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:১৮
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×