-এই সাকিব, ওঠ।
সাকিব চোখ খুলে দেখে আম্মা ডাকছে।
-কয়টা বাজে? সাকিব জানতে চাইল।
-সাড়ে পাঁচটা।আম্মা জবাব দিলেন।তোর ট্রেন কয়টায়?
-ছয়টা চল্লিশ।
-উঠে তাড়াতাড়ি গোসল করে নে। ছয়টার মধ্যে বেরিয়ে পরতে হবে।
-পাঁচ মিনিট।
-পাঁচ মিনিট যেন পাঁচ মিনিটেই শেষ হয়।
-আচ্ছা।
আম্মা চলে যান। সাকিব আবার শুয়ে পড়ে।
-এই ফাজিল।আম্মার ডাকে চোখ খোলে সাকিব।
-উফ, আজকে ক্লাস নাই আম্মা।ডিস্টার্ব কইরো না।সাকিব পাশ ফিরে শোয়।
-ক্লাসতো পরের কথা, ক্লাস করার জন্য তোকে আগে ট্রেন ধরতে হবে।জলদি ওঠ।
সাকিবের মাথায় যেন হাতুড়ির বাড়ি পড়ে। ট্রেন?
-জলদি ওঠ।তোর ট্রেন মিস হবে।
ওহ শিট। সাকিবের মনে পড়ে আজ ওর ট্রেন, ঢাকা ফিরতে হবে। ‘আর পাঁচ মিনিট’ বলে ঘুমিয়ে পড়ার দুনিয়ার আর কোন কিছুই খেয়াল ছিল না।
সাকিব লাফ দিয়ে উঠে পড়ে।
-বাজে কয়টা?
-চল্লিশ বাজে।জলদি।
বাথরুমে ঢুকেই সাকিবের মন ভাল হয়ে গেল।বালতিতে গরম পানি রাখা আছে।এখনও পানি থেকে ধোয়া উঠছে।
সাকিবের সবসময়ই সকালবেলা গোসল করে অভ্যাস।এখন শীতকাল চলছে, তারওপর শৈত্যপ্রবাহ। আম্মাকে কিছু বলতে হয় না, সবদিকেই তার খেয়াল থাকে। তাই বলার আগেই বাথরুমে গরম পানি হাজির।
আজকে হলে থাকলে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে রীতিমত কবরে চলে যেতে হত।ভাবতেই সাকিব শিউরে ওঠে।
-সাকিব বেরিয়ে আয়।দেরী হয়ে যাবে।
সাকিব বেরিয়ে আসে।
-এদিকে আয়।মাথা মুছে দেই।
প্রথম সন্তানের প্রতি প্রত্যেক বাবা-মায়েরই একটা আলাদা ভালবাসা থাকে। সাকিব সেই ভালবাসার পুরোটাই পেয়েছে হোসনে আরার কাছ থেকে।আর কদিন পরেই সাকিব ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হবে, অথচ আম্মা এখনও তার মাথা মুছে দেয়।ভাবতেই হাসি পায় সাকিবের।
-কিরে ব্যাটা, হাসির কি হল? আম্মা জানতে চায়।
-কিছু না।
-যা, তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দিয়ে আয়।আমি তোর নাস্তা দিচ্ছি।
-আচ্ছা।
সাকিব তোয়ালে নিয়ে বারান্দায় যায়। এখনও সূর্য ওঠেনি, আকাশে লাল আভা।পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে, হঠাৎ হঠাৎ উড়ে যাচ্ছে দু-একটা কাক।
মানুষের জীবন কি অদ্ভুত।হলে সাকিবরা এমন সময়ে ঘুমাতে যায় আর আব্বা-আম্মা প্রতিদিন এমন সময়ে তাদের দিন শুরু করে।
-আম্মা, আপনি নাস্তা দেন টেবিলে।আম আসতেছি।সাকিব বলে।
-তুই আবার কোথায় যাস? হোসনে আরা জানতে চান।
-আমি একটু বাবুদের দেখে আসি।
-আচ্ছা।
হোসনে আরা রান্নাঘরে চলে যান। সাকিব ওর রুমে ঢোকে।
সাকিবের রুম মানে এটা আসলে সাকিব আর তার ছোট ভাই সামিনের রুম।সাকিব পড়ে বুয়েটে ফোর ওয়ানে আর সামিন মাত্র ক্লাস সেভেনে।বয়সে ছোট বলেই হয়ত সামিন সেভাবে তার দাবী জানাতে পারে না।তাই বাসিন্দা দুজন হলেও এটা এখনো শুধুই সাকিবের রুম।
সামিন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।সাকিব সামিনের বালিশের পাশে একটা বড় ক্যাটবেরী রেখে দেয়।
আরেকটা ক্যাটবেরী আছে সাকিবের পকেটে। এটা সামিহার জন্য। সামিহা পড়ে ক্লাস সিক্সে, সাকিবদের ঘরের সবচাইতে পিচ্চি।
সাকিব বেরিয়ে আসে।এবার সামিহাকে দেয়ার পালা।
সামিহাও ঘুমাচ্ছিল।সাকিব ওর শেষ ক্যাটবেরীটা রেখে দেয় সামিহার বালিশের পাশে।
আর ঘন্টখানেক পরেই ওরা দুজন স্কুলের জন্য উঠে পড়বে।কটাদিন বাসায় চমৎকার কেটেছে, কিন্তু আজ আর ঘুম থেকে উঠে ওরা ভাইয়াকে দেখতে পাবে না, থাকবে শুধু ভাইয়ার দেয়া চকলেট।
এসব ভাবলেই সাকিবের কেমন যেন লাগে।মনে হয় সব ছেড়েছুড়ে বাসায় চলে আসি।আবার পরমূহূর্তেই মনে পরে সাকিব বাড়ির বড় ছেলে, ওর অনেক দায়িত্ব।আর বছরখানেক পরে আব্বা অবসরে গেলে ওকেই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে।আশার কথা হল আর কিছুদিন পরেই সাকিব ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হবে, তখন একটা ভাল চাকরী নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরে আসবে।
-কোথায় গেলি সাকিব? জলদি খেয়ে নে।আবার ট্রেন যেন মিস না হয়।আম্মা ডাকেন।
আম্মার ডাক শুনে সাকিব হাসে। প্রথমবার ঢাকা যাওয়ার সময় ওর ট্রেন মিস হয়েছিল, তারপর সাকিবের সেকি টেনশান।আব্বা এরপর ওকে সুবর্নর জায়গায় প্রভাতীতে তুলে দিয়েছিলেন, কিভাবে যেন একট সিটও ম্যানেজ করে দিয়েছিলেন-আহ, সেইসব দিন।
সাকিব খাবার টেবিলে বসে পরল।
-চমৎকার।টেবিলে বসতেই সাকিবের মুখে হাসি ফুটল।খিচুড়ি আর ডিম সেদ্ধ।
সাকিবের মুখ দেখে হোসনে আরা হাসলেন।তার ছেলেটার টেস্ট সবার থেকে একটু আলাদা।বাসার সবাই যেখানে খিচুড়ির সাথে ইলিশ পছন্দ করে সেখানে সাকিবের পছন্দ ইলিশের সাথে সেদ্ধ ডিম।
-বাসায় খাসির মাংস আছে।খাবি?
-না।ডিম দিয়েই খেতে পারব আমি।
-খাবি না কেন? খাসির মাংসতো তোর খুব পছন্দের।হোসনে আরা জানতে চান।
-পছন্দের, কিন্তু এখন খাব না।ভয় লাগে।
শুনে হোসনে আরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।
-আরে আম্মা, আব্বার হার্ট প্রবলেম, আপনার হাই প্রেশার। মাংস খেতে এখন খুব ভয় লাগে।
সাকিবের কথা শুনে হোসনে আরার কেমন যেন লাগে।তাদের শৈশব কৈশোরে কোন কিছু খেতে তাদের কোন ভয় লাগেনি।এই ছেলেগুলোর কত ভয়, কত স্বাস্থ্য সচেতনতা।আর সেই সচেতনতা তাদের কত আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছে।দিনকাল খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
-কি ভাবেন আম্মা? সাকিব জানতে চায়।
-কিছু না।
-আব্বা কই?
-তোর আব্বা ফজরের সময় মসজিদে যায়। নামায শেষে ঘন্টাখানেক হাটাহাটি করে বাসায় ফেরে।
-এই শীতের মধ্যেও আব্বা হাটতে যায়?
-হ্যা।
-বাহ।আব্বার ডায়বেটিসের কি অবস্থা?
-আর কি হবে? আছে আগের মতই।
-সুগার টুগার নীল হয়েছিল নাকি আর?
-নাহ, সেবারের পর আর হয় নাই।
-আব্বুকে সবসময় পকেটে চকলেট রাখতে বলবেন আর মেজবান খাওয়া কমাতে বলেন।
-এখন আর সেরকম মেজবানে যায় না।
-না গেলেই ভাল।
-তোর আব্বা আসলে সামাজিক মানুষতো, কেউ দাওয়াত দিলে এভয়েড করতে পারে না।
-আগেতো নিজের জীবন, তারপরেই সামাজিকতা।
-তা ঠিক।
হোসনে আরা কেমন যেন অস্বস্তিবোধ করেন।মাস কয়েক আগে অফিস থেকে ফিরে হঠাৎ করেই জামিল সাহেব অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। সাবিহা তখন এক বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গেছে, সাথে নিয়ে গেছে সামিহাকে।সামিন বিকালের খেলাধূলা শেষ করে তখনও বাসায় ফেরেনি।কি করবেন বুঝতে না পেরে হোসনে আরার নিজেরই ব্লাড প্রেশার বেড়ে অজ্ঞান হওয়ার দশা।
ঠিক তখনই সাকিবের ফোন। সাকিব সাধারনত রাতের ভাত খেয়ে ফোন করে, সেদিন কি মনে করে সন্ধ্যায় ফোন করেছিল কে জানে।
হোসনে আরা কোনরকমে বলতে পেরেছিলেন জামিল সাহেব জ্ঞান হারিয়েছেন।
সাকিব বুদ্ধি করে বলল পানিতে চিনি গুলে জামিল সাহেবকে খাইয়ে দিতে।হোসনে আরা ঠিক তাই করেছিলেন।
কি আশ্চর্য।কয়েক মিনিটের মধ্যে জামিল সাহেবের জ্ঞান ফিরেছিল।
-সাকিব।
-বলেন।
-তুই কিভাবে জানতি ডায়বেটিস রোগীদের সুগার নীল হয়ে যায়?
-আমার এক ডাক্তার বন্ধুর কাছ থেকে শোনা।ওর আব্বারও ডায়বেটিস আছে।
-কোন বন্ধু? আমি চিনি?
-আম্মা, আমার অনেক বন্ধুকেই আপনি চিনেন না। সবাইকে আমি বাসায় নিয়ে আসি নাই।
-তাই?
-হ্যা।
সাকিবের মুখের লাজুক হাসি হোসনে আরার চোখ এড়ায় না।শেষ এক-দেড় বছর ধরেই লক্ষ্য করেছেন সাকিব কারো সাথে ফোনে কথা বলে, কেউ রুমে ঢুকলে বা আশেপাশে থাকলেই ওর গলার স্বর নীচু হয়ে যায়। একদিন পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার তিনি নামও শুনতে পেয়েছিলেন।নিতি।
কথাবার্তায় বুঝতে পেরেছিলেন মেয়ে ডাক্তার। হোসনে আরা খুশি। যুগ এখন এমন। সবাই এখন নিজেরা পছন্দ করেই বিয়ে করে। তার ছেলে সুখী হলেই তিনি খুশি।
-কি ভাবেন আম্মা?
সাকিবের কণ্ঠ শুনে হোসনে আরা বাস্তবে ফেরেন।সাকিব তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-কিছু না। হোসনে আরা তাড়াতাড়ি জবাব দেন।
সাকিব কিছু বলে না, হোসনে আরার দিকে চেয়ে থাকে।
-দাড়া, তোর জন্য পুডিং বানিয়ে রেখেছি।নিয়ে আসি।
-আপনি আবার শুধুশুধু কষ্ট করতে গেলেন কেন?
-তুই বয়। আমি পুডিং নিয়ে আসি।
হোসনে আরা উঠে যান, সাকিব মনে মনে হাসে। আম্মুর দৃষ্টি শক্তি অসম্ভব প্রখর, স্মরণশক্তিও। পুডিং সাকিবের খুবই পছন্দ।প্রথম যেবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসলে, সেবার সাকিব বলেছিল ট্রেনের খাবার ওর পছন্দ না। ছয় সাত ঘন্টার জার্নিতে কিছু না খেয়ে থাকাটা খুব কষ্টকর হয়ে হয়ে যায়। সেই থেকে প্রতিবার ঢাকায় ফেরার সময় আম্মা ওর পছন্দের কিছু না কিছু বানিয়ে দেন।সাকিব জানতো এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এবার তাহলে পুডিং।
-ভাইয়া, তুমি চলে যাচ্ছ?
সাকিব পাশ ফিরে দেখে সাবিহা উঠে পড়েছে।ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
-কিরে, তুই কখন উঠলি?
-এইতো এখন।
-স্যারের বাসায় যাবি নাকি?
-নাহ, আজকে কোন প্রাইভেট নাই।
-তাহলে এত সকালে উঠলি কেন?
-অভ্যাস।এখন পানি খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ব।
-যা তাহলে, ভাল একটা ঘুম দে।
-ভাল থাকো ভাইয়া, হ্যাভ এ সেফ জার্নি। আর তোমার গিফটের জন্য থ্যাংক্স।
-সাকিব আবার কি গিফট দিল তোকে?পুডিং এর বাটি হাতে জানতে চান হোসনে আরা। রান্নাঘর থেকে বেরনোর সময় সাবিহার শেষ কথাটা শুনে ফেলেছেন তিনি।
-কিছু না। সাবিহা তাড়াতাড়ি নিজের রুমে দৌড় দেয়।
-কি দিলিরে ওকে? হোসনে আরা জানতে চান।
-বাদ দেন আম্মা। এটা আমাদের ভাই বোনের ব্যাপার। আমাদের মধ্যে থাক।
-তোর ব্যাগ কোথায়?
-কেন?
-বক্সে পুডিংটা দিয়েছি।তোর ব্যাগে রেখে দেই।
-আমাকে দেন।
হোসনে আরা পুডিং ভর্তি বক্সটা এগিয়ে দেন।এমন সময় বাইরে সিএনজির শব্দ শোনা যায়।
-এত সকালে আবার কারা আসল? সাকিব জানতে চায়।
-তোর আব্বা মনে হয় সিএনজি নিয়ে আসছে।
-আব্বার এত কষ্ট করার দরকার কি?
-বাপ বলেই কষ্ট করতেছে।অন্য কেউ করবে না।
সাকিব কিছু বলে না।
দরজায় কলিং বেল পড়ে।
-সাকিব, দরজাটা খুলে দে আর তোর আব্বাকে বল দুই মিনিট দাড়াতে।আমি বোরকাটা পড়েই আসতেছি।
সাকিব ঘড়ির দিকে তাকায়।ছয়টা দশ।
-তাড়াতাড়ি করেন আম্মা।
-হ্যা, হ্যা, আমার সময়ের খেয়াল আছে।
-তোর ঠান্ডা লাগে?আব্বা জানতে চান।
-নাহ, ঠিক আছে। সাকিব জবাব দেয়।
-মাফলারটা ঠিকমত গলায় পেচায় নে।সিএনজির বাতাস খুব খারাপ জিনিস।
-ঠিক আছে আব্বা।
জামিল সাহেব বলার মত আর কিছু খুঁজে পান না। নিজের বাবা তার কাছের মানুষ ছিলেন না, জামিল সাহেবও তার ছেলেমেয়েদের কাছের মানুষ হয়ে উঠতে পারেন নি। বাচ্চাগুলো মায়ের সাথে কত গল্প করে, অথচ তার সামনে আসলেই যেন সবার মুখে তালা পড়ে যায়।জামিল সাহেব নিজেও বলার মত কিছু খুঁজে পান না।
জামিল সাহেবের মনটা কেন যেন খারাপ হয়ে যায়।ছেলেট কয়েকদিন বাসায় থাকল, অথচ ভাল করে দুটো মিনিট কথাই বলা হল না।জামিল সাহেব নিজ থেকে ডেকে ছেলেমেয়েদের কখনো কিছু বলেন না, ছেলেমেয়েগুলোও কখনও তার কাছে আসে না।
জামিল সাহেব বাইরে তাকান।বাইরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা লোকগুলোর চেহারা স্পষ্ট বোঝা যায় না, কেবল অবয়ব দেখা যায়।নিজের ছেলেমেয়েদের কাছে জামিল সাহেবও কুয়াশায় ঢাকা কেউ-চেহারা বোঝা যায় না, কেবল অবয়ব দেখা যায়।
হোসনে আরা সাকিবের সাথে বগিতে ওঠেন।জামিল সাহেব বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকেন।
-সাকিব।
-জ্বি।
-তোর পাশে কে?
-তাতো জানি না। আসলেই দেখব।
-আবার কবে আসবি?
-টার্ম ফাইনালটা শেষ হোক।
-মানে এক মাস?
-নাহ, টার্ম ফাইনালের পর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচম্যান্ট আছে।
আম্মা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
-পরীক্ষা শেষে কোন একটা ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে ট্রেনিং করতে হবে।
-কতদিন?
-ধরেন দুই বা তিন সপ্তাহ।
-এই ট্রেনিং করলে চাকরি বাকরির সুবিধা হবে?
-হঠাৎ এই প্রশ্ন?
-তুইতো জানিসই তোর আব্বার চাকরির মাত্র এক বছর আছে মাত্র। সাবিহা-সামিন-সামিহাতো এখনও ছোট। তুই তাড়াতাড়ি পাশ করে একটা চাকরি না করলেতো বিপদ বাবা।
সাকিব কি বলবে বুঝে পায় না।
এমন সময় বছর ত্রিশের এক ভদ্রলোক আসেন।
-আন্টি, এটা আমার সীট।
-হ্যা, বাবা, আমি নেমে যাচ্ছি।
হোসনে আরা আর সাকিব নেমে আসে।
-আম্মা যাই। গেলাম আব্বা।
হোসনে আরা ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন।–ভাল থাকিস বাপ।
ট্রেন হুইসেল দিচ্ছে।
-ছাড় ছেলেকে।ওর ট্রেন মিস করাবা নাকি?
জামিল সাহেবের কথা শুনে হোসনে আরা ছেলেকে ছেড়ে দেন। সাকিব ট্রেনে উঠে পড়ে।
হোসনে আরা এক দৃষ্টিতে ট্রেনের দিকে তাকিয়ে থাকেন।ওইতো ছেলেটা জানালার পাশে সীটে বসল, গলা থেকে মাফলার খুলল।হ্যা, ওইতো মোবাইল বের করল সাকিব।নিশ্চয়ই নিতিকে ম্যাসেজ দেবে।
ট্রেন চলতে শুরু করেছে। সাকিব জানালা দিয়ে তাকায়, হাত নাড়ে আব্বা-আম্মার উদ্দেশ্যে।
হোসনে আরাও হাত নাড়েন।কুয়াশার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া ট্রেন থেকে সাকিব সেই হাত দেখতে পায় কিনা কে জানে।
======================================================================
বছর আড়াই আগে ব্লগে একটা গল্প লিখেছিলাম, ভালবাসার বৃষ্টি। সেই গল্পে সাকিব হল থেকে বাসায় এসেছিল আর আজকের গল্পে সাকিব বাসা থেকে হলে ফিরে যাচ্ছে।দুটোই সম্পূর্ন গল্প, আগের গল্পটা না পড়লেও সমস্যা নেই, কাহিনী বুঝতে কোন সমস্যা হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪২