প্রথম পর্ব
পাঁচ
বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
গতকাল থেকে শরীরটা কোন বিশ্রাম পায়নি, খালি দৌড়ঝাপ চলছে। এখন একটু ঘুমানো দরকার। ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখতে হবে গত দুদিনে যা ঘটেছে।
-এসেই শুয়ে পড়লাম?
নাইসার কন্ঠ।আমি চোখ মেলে তাকালাম।
-টায়ার্ড লাগছে।
-অন্তত হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
-পরে।আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম।
নাইসা আমার পাশে বসে পড়ল।কপালে হাত দিয়ে বলল, শরীর খারাপ?
-না।
-তাহলে?
-তাহলে কি?
-আগে কখনো তোমাকে অফিস থেকে এসেই শুয়ে পড়তে দেখিনি।
আমি চুপ করে রইলাম। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।
-এই ওঠো না। মাত্র সাতটা বাজে। এত তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লে হবে?
আমি চোখ মেলে তাকালাম।
-চল, আজকে আমরা বাইরে কোথাও খেতে যাই।
নাইসার এসন আহ্লাদীপনায় বিরক্ত লাগছিল। আমি হাত ছাড়িয়ে নিলাম।
-আহ, বিরক্ত কোর নাতো। মন মেজাজ এমনিতে ভাল নেই।
আমার কথা শুনে মনে নাইসার খারাপ লেগেছে। আহত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
-দেখা নাইসা, আজ সকালে শামীমা মারা গেছে। আমি মাত্র ওর জানাজা থেকে আসছি। আমার মনে ভাল নেই।পরে কোন একদিন আমরা খেতে যাব।
শামীমার কথা শুনেই নাইসার চোখ ধ্বক করে জ্বলে উঠল।
-শামীমা মারা গেলে তোমার কি?
-হোয়াট?
নাইসা কোন জবাব না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
এখন আর ঘুম আসবে না।আমি চোখ বন্ধ করে আজকের ঘটনাগুলো ভাবতে লাগলাম।
মাহফুজ আহমেদ বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি সাথে সাথে ফোন দিলাম নাঈমকে।
-হ্যালো নাঈম।
-বল।
-তোরা কোথায়?
-এই মাত্র হাসপাতাল থেকে শামীমার লাশ রিলিজ করল। আমরা এখন বাসায় যাচ্ছি।
-গ্রামে?
-না।আপাতত শরীফের বাসায়।ওর আত্মীয় স্বজন আছে ওখানে।ওখানে লাশ গোসল করানো হবে। যোহরের নামাযের পর এলাকার মসজিদে জানাজা হবে।তারপর লাশ নিয়ে গ্রামে যাবে।ওখানে আসরের নামাযের পর আরেকটা জানাজা হয়ে দাফন।
-ওকে।আমি তাহলে সরাসরি শরীফের বাসায় আসছি।
-ওকে, আয়।
আমি বেরিয়ে পড়লাম। অফিসে আজ আর তেমন কাজ ছিল না, তাই বসও আপত্তি করলেন না।
লাশ আসার পর গোসল করাতে সময় লাগল না। যোহরের নামাযের পর লাশ নিয়ে আমরা রওয়ানা হলাম শরীফের গ্রামের বাড়ি।
শরীফের গ্রামের বাড়িতে গিয়া একটা ভাল ধাক্কা খেলাম। ওখানে আগে থেকেই বসে আছে এএসপি মাহফুজ আহমেদ।
-নাঈম।
-এএসপি ব্যাটা এখানে কি করে?
-চিনিস নাকি ব্যাটাকে?
-চিনতাম না আগে, আজ সকালে চিনেছি। অফিসে এসে শরীফ আর ওর বউয়ের ব্যাপারে অনেকক্ষণ জেরা করল আমাকে।
-ব্যাটা আজকে হাসপাতালেও অনেক ঝামেলা করছে।বারবার চিৎকার করছিল এটা অ্যাকসিডেন্ট না মার্ডার, শরীফকে সে দেখে নেবে- এইসব।
-কেন?
-আরে, এই ব্যাটা শামীমার বড় ভাই।
-আপন বড় ভাই?
-তা জানি না। তবে সে শরীফকে ভালই ভোগাবে।
-শুধু শরীফকে না, আমার মনে হয় ব্যাটা আমাদেরও ভালই ভোগাবে।থানায় নাকি মামলা হয়েছে?
-হ্যা, অপমৃত্যুর মামলা।
হঠাৎই ব্যাটা আমাদের দেখে ফেলল। দেখেই এগিয়ে আমাদের দিকে।
-আগের দিন রাতে পরিচয় আর আজকে দাফন করতে একেবারে গ্রামে চলে এলেন? আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল সে।
-আমি এসেছি বন্ধুর দুঃসময়ে ওর পাশে দাঁড়াতে। আমি রুক্ষ কন্ঠে জবাব দিলাম।
-তাই? তা আপনার বন্ধু কোথায়?
-ভেতরে। নাঈম জবাব দিল।আমরা আসছি।এই বলে হাত ধরে টেনে আমাকে মাহফুজের সামনে থেকে সরিয়ে দিল।
-রাফি।
-বল।
-এই পুলিশটার ভাবভঙ্গী বিশেষ সুবিধার মনে হচ্ছে না।আমি কিন্তু কবরে মাটি দিয়েই শহরে রওয়ানা দেব।
-ঠিক আছে। আমিও তোর সাথে চলে যাব।
ছয়
ঘন্টা দুয়েক পর।
আমি আর নাঈম শহরে ফিরছিলাম। আমি ড্রাইভ করছি, নাঈম আমার পাশে বসে আছে।
আসরের নামাযের পর গ্রামে শামীমার আরেকটা জানাজা হয়েছে। এরপর ওর কবরে মাটি দিয়েই আমি আর নাঈম শহরে রওয়ানা হয়েছি।শরীফ আসেনি, ও নাকি পরিবারসহ আগামী চারদিন গ্রামে থাকবে। চতুর্থদিন সমাজের লোকজনকে খাইয়ে তারপর শহরে ফিরবে।
অবাক কান্ড হল আসার সময় আর মাহফুজ আহমেদকে দেখিনি। লোকটা কোন ফাঁকে কোথায় গেল কে জানে।
-রাফি।
-বল।
-কি বুঝছিস?
-কিছুই বুঝতে পারছি না দোস্ত।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল। এক রাতের ব্যবধানে সব পাল্টে গেছে।
-সেটাই।বেচারা শরীফের কথা চিন্তা কর। বিয়ে করেছে এখনও বছরখানেকও হয়নি আর বউটা এভাবে মরে গেল।
-বেচারা ভাল শক খেয়েছে। হাসপাতালে ওর কথার কোন লাগাম ছিল না।
-কি বলতে চাইছিস?
-তোকে বলেনি?
-কি বলবে?
-আর বলিস না। আমাকে বলল, আক্সিডেন্টের পর পরই শরীফ দেখেছে এক বুড়ি নাকি শামীমার গলা থেকে রক্ত চুষে খাচ্ছিল। শামীমা যখন অপারেশন থিয়েটারে ছিল তখনও নাকি ওই বুড়ি ওর সাথেই ছিল।
-আমি ভেবেছিলাম শরীফ শুধু আমাকেই এসব বলেছে। এখন দেখি তোকেও বলেছে। কাউকে বলিস না এসব। শরীফ বেচারা আবার শেষে কি বিপদে পরে।
-আরে না, না, বলব কেন?কিন্তু কিছু ব্যাপার কেন যেন মিলছে না।
-মানে?
-মানে হল শরীফ গাড়ি চালাচ্ছিল, ওর পাশে ছিল শামীমা। অ্যাকসিডেন্টে শামীমা এভাবে ইনজুরড হল আর শরীফের কিছুই হল না।
-তো কি বলতে চাইছিস?
-ব্যাপারটা কেমন অস্বাভাবিক না?
-শুধু শরীফ কেন, তোর অনেক ব্যাপারও অস্বাভাবিক।
-কোন ব্যাপারটা?
-এই যেমন ধর, ঘরে অনুষ্ঠান চলছে, ঘর ভর্তি মেহমান। এর মধ্যে তুই আমাদের সবাইকে আর ভাবীকে ছেড়ে শামীমাকে নিয়ে ঘন্টাখানেকের জন্য উধাও হয়ে গেলি। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক না?
-আশ্চর্য।শামীমা বাসার ছাদ দেখতে চেয়েছিল। আমি ওকে ছাদে নিয়ে গিয়েছিলাম।সেদিন আকাশে কোন তারা যেন স্পষ্ট দেখা যাওয়ার কথা। শামীমা সেটাই দেখতে চেয়েছিল।
-রাফি।
-বল।
-কাকে বেকুব বানাচ্ছিস? আমি তোকে ছোটকাল থেকে চিনি।
-কি বলতে চাইছিস?
-রাইসুলের গার্লফ্রেন্ডের সাথে তুই কি করেছিলি সেটা কিন্তু আমরা সবাই জানি।
-তনিমার সাথে আমি কিছুই করিনি।আর তাছাড়া আমি কখনও তনিমার কাছে যাইনি, তনিমাই আমার কাছে আসত।
-তাই?
-হ্যা। আর তাছাড়া ওই সময় আর এই সময় কি এক? তখন ছাত্র ছিলাম আর এখন আমি চাকরি করি। ঘরে আমার বউ আছে। আই হ্যাভ এ স্ট্যাটাস টু মেইন্টেইন।
-আজ সেজন্যই এখন ছাদে যাস।
-আজব। যেটা বলতে চাইছি সেটা বোঝার চেষ্টা কর।
-আর কি বুঝব বল। আমার বাসা এসে গেছি। বামে সাইড কর।
আমি গাড়ি সাইড করলাম। নাঈম নেমে যেতে উদ্যত হল।
-নাঈম।
-বল।
-এই মাহফুজ আহমেদের কি করবি?
-আমি আর কি করব? কিছু জানতে চাইলে যা সত্য তা-ই বলব। আমি কিছু করিওনি, আমার ভয় পাওয়ারও কিছু নেই।
নাঈম গাড়ি থেকে নেমে গেল।
সাত
-এই ওঠ।
চোখ খুলে দেখি নাইসা ধাক্কা দিচ্ছে।
-সকাল হয়ে গেছে? আমি জানতে চাইলাম।
-নাহ, রাত দশটা বাজে। ভাত খাবে না?
-না, টায়ার্ড লাগছে। ঘুম যাব।
-ফ্রেশ হয়ে নাও।
আমি জবাব না দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করলাম।
-আরে ওঠো না।
-কি সমস্যা?
-বাসায় পুলিশ এসেছে।
পুলিশ শুনেই আমি উঠে বসলাম। কেন?
-আমি কি জানি? নিজেই গিয়ে দেখ।
নাইসা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি হাত মুখ ধুয়ে ড্রইং রুমে গেলাম। মাহফুজ আহমেদ!
কি সমস্যা এই লোকটার? এভাবে আমার পেছনে লেগে আছে কেন?
-আরে আপনি? আমি কোনরকমে হাসার চেষ্টা করলাম।
-কি অদ্ভুত ব্যাপার বলুনতো। আজকে যেখানেই যাচ্ছি, সেখানে শুধু আপনার সাথেই দেখা হচ্ছে।
-আপনি আবার শরীফ আর শামীমার ব্যাপারে কথা বলতে এসেছেন?
-না। আমি এসেছি আপনার স্ত্রীর ব্যাপারে কথা বলতে।
-নাইসার ব্যাপারে? কি হয়েছে নাইসার?
-উনি কয়েকদিন আগে থানায় একটা অভিযোগ করেছিলেন।
-তাই নাকি?কার বিরুদ্ধে?কেন?
-উনার অভিযোগ আপনাদের স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের ছেলে নাকি উনাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করেন, উনার সাথে অশোভন আচরন করেন।
-তাই নাকি? আমিতো কিছুই জানি না।
-হ্যা, তাই।উনি নিজে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছিলেন।সাথে আপনাদের কজের লোকটাও ছিল।
শুনেই অবাক হয়ে গেলাম।নাইসা আমাকে কিছুই বলেনি, দেলোয়ার হারামজাদাটাও মুখ একেবারে বন্ধ করে রেখেছে।
-রাফি সাহেব।
-বলুন।
-ছেলেটা আজকে মারা গেছে।
-হোয়াট?
-সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় কি জনেন?
-কি?
-যেদিন আপনার স্ত্রী থানায় অভিযোগ করেছিলেন সেদিনই ছেলেটা অ্যাকসিডেন্ট করে।গত চারদিনে ওকে ছাব্বিশ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে।তবুও ছেলেটা বাঁচেনি।কারণ ওর ব্লিডিং বন্ধ হয়নি।নাক-কান-চোখ দিয়ে অবিরাম রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
-এখানে অদ্ভুত কোন বিষয়টা?
-শামীমাও ঠিক একইভাবে মারা গেছে। প্রথমে অ্যাকসিডেন্ট, তারপর ননস্টপ ব্লিডিং।
আমি কিছু বলার মত খুঁজে পেলাম না।এই ব্যাটার মাথায় সমস্যা, কঠিন পর্যায়ের সমস্যা।
-রাফি সাহেব, আপনার কিছু বলার আছে?
-কোন ব্যাপারে?
-ছেলেটার মৃত্যুর ব্যাপারে?
-না। তবে আপনাকে একটা কথা বলার আছে।
-কি?
-গেট ওয়েল সুন।
আমার জবাব শুনে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন মাহফুজ সাহেব।
-আমার কাজ মানসিকভাবে অসুস্থ সব শয়তানদের সুস্থ করে তোলা। আপনার শুভকামনা ওদের জন্যই তুলে রাখুন।
আমি কোন জবাব দিলাম না।সোফা থেকে উঠে ঘরের দরজাটা খুলে দিলাম।
মাহফুজ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। অচিরেই আমাদের আবার দেখা হবে।
আট
খুবই ঘটনাবহুল একটা দিন গেল।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছি, ঘুম আসছে না। মাথার ভেতর শুধু মাহফুজ আহমেদের ডায়লগটা ঘুরছে। অচিরেই আমাদের আবার দেখা হবে।
এই লোকটা হঠাৎ আমার পেছনে লাগল কেন?
তারচেয়েও বড় প্রশ্ন, নাইসা একজনের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে মামলা করে এল। আমাকে জানানোর প্রয়োজনবোধও করল না। দেলোয়ার হারামজাদাটা ওর সাথে গেল, সেও আমাকে কিছু বলল না।
দেলোয়ারকে কিছু করা দরকার।
আমি উঠে বসলাম।
ভাবছি দেলোয়ারকে ডাকব, এমন সময় বাথরুমের দরজাটা খুলে গেল। ভেতর থেকে বেরিয়ে এল নাইসা।
নাইসার এই ব্যাপারটা আমার খুব পছন্দের। প্রতিরাতে ঘুমানোর আগেও গোসল, আবার দিনের শুরুতে সকালবেলাও গোসল।
নাইসা গায়ে সাদা একটা স্লিভলেস কাপড়।হাতে একটা সাদা তোয়ালে।ওর ভেজা চুল থেকে পানি ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে পড়ছে।অসাধারন দৃশ্য।আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম।
-কি দেখ? হেসে জানতে চাইল নাইসা।
-তোমাকেগো সুন্দরী, তোমাকে।
-আচ্ছা?
-হুম।
-আগে দেখনি আমাকে?
-দেখেছি। কিন্তু আজকের তুমি অন্যরকম।
নাইসা আমার পাশে এসে বসল। আমার হাত জড়িয়ে ধরে জানতে চাইল, কিরকম?
-তোমার গা থেকে এক মাতাল করা সুগন্ধ আসছে। আমি তোমার নেশায় ডুবে যাচ্ছি গো সুন্দরী।
নাইসা আমার কাধে মাথা রাখল। একটা কথা বলব?
-কি?
-চল না আমরা আমেরিকা ফেরত যাই।
-দেশে এলাম কদিন হয়েছে? এর মধ্যে ফেরৎ যেতে চাইছ কেন?
-ভাল লাগছে না এখানে।
-ভাল না লাগার কারণ কি? ওয়ার্ড কমিশনারের ছেলে?
নাইসা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কে বলল তোমাকে এই কথা?
-কে বলল সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল তুমি একজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে এসেছ আর আমাকে সেটা জানানোর প্রয়োজনবোধ করনি।
-আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।তুমিই শুনতে চাওনি।
-তাই নাকি? কখন?
-কয়েকদিন আগে যখন তুমি অফিস থেকে ফিরে আমাকে কাঁদতে দেখেছিলে সেদিন। আমি তোমাকে নিয়ে থানায় যেতে চেয়েছিলাম। তুমি বললে, আমি খুব টায়ার্ড।তোমার কথা পরে শুনব। তুমি আমার কথাই শোননি, আবার সাথে করে থানায় যাওয়া।
-মামলা করার পর বলতে?
-তোমার সময় কোথায়? তুমি থাক তোমার অফিস নিয়ে। বাসায় এলে খাওয়া, টিভি আর ঘুম।আর লাস্ট কদিন ব্যস্ত ছিলে বন্ধুদের জন্য বাসায় পার্টি দেবে-তাই নিয়ে।আমার কথা ভাবার সময় আছে তোমার?
-সরি।
আমি নাইসাকে চুমু খেতে গেলাম, নাইসা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।
-সর। আমার ঘুম পাচ্ছে, আমি এখন ঘুমাব।
নাইসা পাশ ফিরে শুয়ে পরল।
এখন আর ঘুম আসবে না।মেজাজ চূড়ান্ত রকমের খারাপ হয়ে গেছে।আমি সারারাত জেগে রইলাম।
নয়
সকালে ঘুম ভাঙল শরীফের ফোন পেয়ে।
ঘড়ির দিকে তাকালাম। দশটা বাজে। অফিস আওয়ার পেরিয়ে গেছে, এইচ আরে ফোন করে জানিয়ে দিতে হবে আজ আর অফিসে আসতে পারছি না।
-হ্যালো।
-কিরে ব্যাটা, এখনো ঘুমাস নাকি?
-কি হয়েছে?
-তুই বাসায়?
-হ্যা।
-আমার বাসায় আসতে পারবি?
-তোর বাসায় মানে? তুই না গ্রামে?
-না, গতকাল রাতে শহরে চলে আসছি।
-হঠাৎ?
-বাসায় আয়, সব বলছি।
শরীফ ফোন কেটে দিল, আমি বাথরুমে ঢুকে পড়লাম।
ঘন্টাখানেক পর। শরীফ আর আমি মুখোমুখি বসে আছি।
-তোর না চারদিন পর শহরে আসার কথা? রাতেই চলে আসলি?
-আসিনি, আসতে বাধ্য হয়েছি।
-মানে কি?
-মাহফুজ ভাইকে চিনিস?
-পুলিশের এএসপি? তোর বউ এর ভাই?
-হ্যা।
-দেখা হয়েছে।
-কবে?
-গতকাল অফিসে এসেছিল বারটার দিকে আর রাতে এসেছিল বাসায়।
-তোর বাসায় কেন গিয়েছিলেন উনি?
-একটা কেসের ব্যাপারে।
-কিসের কেস?
-বাদ দে। হয়েছে কি-তাই বল।
-উনি গতকাল রাতে অ্যাকসিডেন্ট করেছেন।
-বলিস কি?
-হ্যা। হুবহু শামীমার মত অবস্থা।কোনভাবেই রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না।
-ডাক্তার কি বলে?
-ডাক্তার কি বলবে? জানাই আছে কি ঘটবে।
-মানে?
-তুই বস। আমি আসছি।
-কোথায় যাস?
-রেডি হয়ে আসছি।হাসপাতালে যাব। তুইও যাবি আমার সাথে।
শরীফ ভেতরে চলে গেল।আমার ব্রেইন পুরোপুরি হ্যাং করেছে। প্রথমে শামীমা, তারপর ওয়ার্ড কমিশনারের ছেলে আর এখন মাহফুজ আহমেদ। দুই রাতের ব্যবধানে তিনজন লোকের একই অবস্থা। কেন?কিভাবে? কে করছে?
শরীফ বেরিয়ে এল।
-চল।
আমরা দুজন বেরিয়ে পড়লাম।
আধঘন্টা পর।হাসপাতাল।
-রাফি।
-বল।
-মাহফুজ ভাই আছেন আইসিইউতে। রক্ত দেয়া হয়েছে দশব্যাগের মত।কিন্তু লাভ হচ্ছে না। ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছে না। তুই ওই জানালা দিয়ে উনাকে দেখতে পারবি। দেখবি।
আমি হ্যা-সূচক মাথা নাড়লাম।
-দেখে আয় তাহলে।
আমি জানালা দিয়ে উকি দিলাম।
-জ্ঞান ফিরেছে তাহলে? শরীফ আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।
আমি চারিদিকে তাকালাম।একটা সোফায় শুয়ে আছি। কোথায় আমি?
-হাসপাতালেই আছিস।এখানকার ডাক্তার আমার পরিচিত।উনার রুমেই আছিস এখন।
-কি হয়েছিল?
-তুই জানালা দিয়ে মাহফুজ ভাইকে দেখতে গিয়েছিলি।এরপর হঠাৎই চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলি।
আমার মনে পড়ল। আমি জানালা দিয়ে মাহফুজ সাহেবকে দেখার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু যা দেখলাম-তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ভেতরে অজ্ঞান মাহফুজ সাহেব আছেন ঠিকই, কিন্তু সাথে ছিল আরও একজন। এক পৈশাচিক চেহারার বুড়ি।মাহফুজ সাহেবের ঘাড় চেটে রক্ত খাচ্ছিল!
শেষ পর্ব
কয়েকজন ব্লগারের অনুরোধে আজকেই বাকিটা পোস্ট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সামুতে সম্ভবত ওয়ার্ড লিমিট আছে, পুরোটা পোস্ট করা যাচ্ছিল না। তাই আজ অর্ধেক আজ পোস্ট করলাম। শেষ পর্ব আসবে ইন শা আল্লাহ আগামীকাল। সকলকে ধন্যবাদ।
আমার লেখা অন্যান্য ভৌতিক গল্পগুলোঃ
১.পিশাচ কাহিনীঃ রক্তখেকো ডাইনী পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩
২.পিশাচ কাহিনীঃ জানোয়ারের রক্ত (১৮+)
৩.পিশাচ কাহিনীঃ অন্ধকারে বিলীন
৪.পিশাচ কাহিনীঃ হোটেল একশ তলা
৫.পিশাচ কাহিনীঃ একশ তলায় আবার
৬.পিশাচ কাহিনীঃ রাতের আঁধারে
৭.পিশাচ কাহিনীঃ কন্ঠ
৮.পিশাচ কাহিনীঃ অতিথি
৯.পিশাচ কাহিনীঃ কান্নার শব্দ
১০.পিশাচ কাহিনীঃ শয়তানের পাল্লায়
১১.পিশাচ কাহিনীঃ নির্ঘুম রাত
১২.পিশাচ কাহিনীঃ জঙ্গল মঙ্গলপুর
১৩.পিশাচ কাহিনীঃ একটি ফটোগ্রাফ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:১৪