আসুন প্রথমেই দেখে নেই আজকের প্রথম আলোর একটি খবরঃ
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) গত রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কোম্পানির চেয়ারম্যান গোলাম মইনউদ্দিন।
সভায় ২০১৪ সালে সমাপ্ত আর্থিক বছরের আর্থিক ও পরিচালকদের প্রতিবেদন এবং শেয়ারধারীদের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে শেয়ারধারীদের জন্য মোট ৫৫০ শতাংশ বা প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ৫৫ টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ১০০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের মোট ৬২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। কোম্পানিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
সভায় আরও জানানো হয়, ২০১৪ সালে কোম্পানি বেসরকারি খাতের সর্বোচ্চ করদাতা ছিল। ওই বছর এককভাবে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি কোষাগারে বিভিন্ন ধরনের কর বাবদ ৯ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা দিয়েছে।
ভয়াবহ খবর। একটি সিগারেট বিক্রেতা কোম্পানি বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একক সর্বোচ্চ করদাতা, বিভিন্ন খাতে সরকারকে তারা বছরে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা কর দিচ্ছে!!!
আমি ভেবেই পাইনা যে কোম্পানি বছরে এতগুলো টাকা কর দেয়, তারা বছরে কত কোটি টাকার সিগারেট বিক্রি করে আর তা থেকে বছরে তাদের কত কোটি টাকা লাভ হয়। লাভের কথা বলতে গেলে লক্ষ্য করুন ২০১৩ সালে তারা তাদের শেয়ারধারীদের লাভ দিয়েছে ৬২০ শতাংশ আর ২০১৪ সালে ৫৫০ শতাংশ। লাভে লাভে পুরাই লাল হয়ে গেল কোম্পানিটা।
এটাতো গেল শুধু একটা কোম্পানির কথা। এর সাথে যদি আমরা অন্যান্য সিগারেট বিক্রেতা কোম্পানির নাম যোগ করি আর তার সাথে যোগ হয় এদেশের বিড়ির ভোক্তারা-তাহলে সত্যিই একটি ভয়াল চিত্র আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। কি বিশাল এদেশের ধূমপানের বাজার!
প্রতিটা সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে "ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর"। টিভিতে বা সিনেমায় যেকোন ধূমপানের দৃশ্যেও স্ক্রীনে একই কথা ভেসে ওঠে। স্কুলে থাকতে আমরা রচনা মুখস্থ করতাম - ধূমপানে বিষপান। ধূমপানবিরোধী ক্যাম্পেইন-বিজ্ঞাপন নির্মানও কম হয়নি। তবুও এদেশে দিন দিন ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে, বড় হচ্ছে এদেশের সিগারেটের বাজার।
শুধুমাত্র তরুনরা বা বয়স্করাই নয়- কিশোর এবং মেয়েরাও জড়িয়ে পরছে ধূমপানে। একবার করলে কিছু হয় না/আমি শুধু অভিজ্ঞতার জন্য একবার সিগারেট টানব/ বন্ধুবান্ধবদের পাল্লায় পরে একবার খেয়ে ফেলেছি- এভাবেই দিন দিন বাড়ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা।
হাস্যকর হলেও সত্যি অনেকের ধারনা- ধূমপান না করলে স্মার্ট হওয়া যায় না। সিগারেট ঠোটে দিয়ে একটা প্রোফাইল পিকচার দিলে নাকি তাদের বেশ 'কুল' লাগে।
সমস্যা হচ্ছে আমাদের নাটক-সিনেমায় আর সাহিত্যে নায়কদের ধূমপায়ী হিসেবে উপস্থাপন করার একটা প্রবনতা আছে। শার্লক হোমস উত্তেজনার জন্য ধূমপান আর মাদক নিতেন- পাইপতো শার্লক হোমসের ট্রেডমার্ক। ফেলুদা নিয়মিত ধূমপান করেন, অসুস্থ বোমকেশ একটা সিগারেটের জন্য স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে, সিগারেট না খেলে অর্জুনের মাথা পরিস্কার হয় না, এমনকি আমাদের হিমু আর মিসির আলীও ধূমপায়ী। আর জনসমক্ষে আমাদের মন্ত্রীরাও ধূমপানে পিছপা হন না।
স্বাভাবিকভাবেই তাই 'সিগারেট না খেলে কুল হওয়া যায় না'-এমন ধরনা অনেকেরই মাথায় গেথে যায়।
আসুন নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা শপথ নেই ধোঁয়ার প্রতি এই ভালবাসা ত্যাগ করব-কেবল শারীরিক ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্যই নয়, সাথে আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য, পরিবেশটাকে পরিচ্ছন্ন আর দূষণমুক্ত রাখার জন্য।
সবশেষে আমার দেখা ধূমপানবিরোধী সেরা বিজ্ঞাপনঃ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪