হাজার বছর আগে, এথেন্সের রাস্তায় দুই কবির দেখা হল।
একজন জানতে চাইল, কি হে, কেমন আছ? নতুন কিছু লিখলে নাকি?
শুনে অপরজন গর্বের সাথে জবাব দিল, আমি মাত্রই আমার জীবনের সেরা কবিতাটা লিখেছি। এটাই সম্ভবত গ্রীক ভাষার সেরা কবিতা।আমি এই কবিতাটা লিখেছি জিউসকে নিয়ে।
এরপর পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে বলল, কবিতাটা আমার সাথেই আছে। তোমাকে পড়ে শোনাই।
এরপর কবি তার সুদীর্ঘ কবিতা পড়তে শুরু করলেন।
শুনে দ্বিতীয় কবি বললেন, অসাধারন লিখেছ। যুগের পর যুগ তোমার এই কবিতা টিকে থাকবে। আর তার সাথে টিকে থাকবে তোমার নাম।
শুনে প্রথম কবি খুশি হলেন।জানতে চাইলেন, আর বল, তুমি ইদানীং কি লিখছ?
দ্বিতীয় কবি জবাব দিলেন, আমি সম্প্রতি বলতে গেলে কিছুই লিখিনি। খালি সেদিন একটা বাচ্চাকে বাগানে খেলতে দেখে আটটা লাইন লিখেছি।
এই বলে আমি তুমি আমরা দ্বিতীয় কবি তার লেখা আটটা লাইন আবৃত্তি করলেন।
শুনে প্রথম কবি বললেন, খারাপ না। চালিয়ে যাও।
এরপর দুজন দুই পথে চলে গেলেন।
আজ দুই হাজার বছর পর, সেই আটটা লাইন প্রতিটি শিশুর মুখে মুখে। এই লাইনগুলো গেয়ে তারা হাসে, খেলে, আনন্দ করে।
প্রথম কবির কবিতাটাও আজও বেচে আছে।, কিন্তু সেটা শুধুই লাইব্রেরীতে, বইয়ের পাতায়।না কেউ কবিতাটা ভালবাসে, না কাউকে সেটা পড়তে দেখা যায়।
♣♣♣♣THE OLD, OLD WINE♣♣♣♣
অনেককাল আগে ছিল এক বিশাল ধনী। তার ছিল ওয়াইনের বিশাল সংগ্রহ।এর মধ্যে খুব দামী আর বিরল প্রজাতির ওয়াইন ছিল।তার ইচ্ছা ছিল জীবনের সবচেয়ে দামী উপলক্ষ্যে সে এই বোতলটি খুলবে।
একদিন তার বাড়িতে তাদের প্রদেশের গভর্নর এল।লোকটা ভাবল, সামান্য গভর্নরের জন্য ওয়াইনের এই দামী বোতলটা খোলা যাবে না।
একদিন তাকে দেখতে এল বিশপ। লোকটা ভেবে দেখল বিশপের জন্য ওয়াইনের এই বিশেষ বোতলটা খোলা যাবে না।না ওয়াইনের সৌরভ বিশপের নাকে পৌছাবে, আমি তুমি আমরা না বিশপ এর মূল্য বুঝবে।
এরপর একদিন তার বাড়িতে এল দেশের যুবরাজ। লোকটার মনে হল, ওয়াইনের বোতলটা খোলা যাবে না। দেশের যুবরাজেরও এতটা সম্মান প্রাপ্য নয়।
একদিন তার ভাতিজার বিয়ে হয়ে গেল। সেদিনও সে বোতলটা খুলল না।সামান্য অতিথিদের জন্য এটা অনেক বেশি হয়ে যায়।
এভাবে বছরের পর বছর চলে গেল। লোকটা একদিন বুড়ো হয়ে মরে গেল।
লোকটাকে কবর দিয়ে আত্মীয় আর প্রতিবেশিরা তার ঘরে এসে বসল আর লোকটার সংগ্রহের ওয়াইনের বোতল খুলে ভাগাভাগি করে খেতে লাগল।
কারোরই এই ওয়াইনের বয়স বা তার বিরল প্রজাতি সম্পর্কে ধারনা ছিল না।
তাদের কাছে এটা কেবলই এক বোতল ওয়াইন।
♣♣♣♣BUILDERS OF BRIDGES♣♣♣♣
আসি(assi) নদী যেখানে সাগরের সাথে মিশে গেছে, সেখানে একটা ব্রীজ বানানো হল নদীর দুই পাড়ের মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি আনতে। ব্রীজ বানানো হল পাথর দিয়ে, পাহাড়ের বুক থেকে খচ্চরের পিঠে করে বয়ে এনে।
ব্রীজ বানানো শেষ হলে তার প্রবেশ মুখে একটা পাথর বসিয়ে দেয়া হল। পাথরের ওপর গ্রীক আর আরামিক ভাষায় লেখা হল, এই ব্রীজটি তৈরি করেছেন রাজা দ্বিতীয় এন্টোনিও।
সেই থেকে লোকজন ব্রীজটি ব্যবহার করছে।
এক বিকেলে, উষ্কখুষ্ক চুলের এক তরুন, সেই পাথরের ওপর বসে, কয়লা ঘষে লেখাগুলো মুছে দিয়ে তার ওপর লিখল, আমি তুমি আমরা এই ব্রীজের পাথরগুলো পাহাড় থেকে বয়ে এনেছে একদল খচ্চর। তোমরা ব্রীজের ওপর হাটছ না, হাটছ সেইসব খচ্চরের পিঠের ওপর, যারা এই ব্রীজটি তৈরী করেছে।
লোকেরা যখন সেই ক্ষ্যাপাটে তরুনের লেখা পড়ল, তখন কেউ কেউ মুগ্ধ হয়ে গেল। বাকিরা হেসে বলল, আমরা খুব ভাল করেই জানি কে এই ব্রীজটি বানিয়েছে।
একদিন সেই ব্রীজের ওপর দিয়ে পিঠে বোঝা যাওয়ার সময় সেই ক্ষ্যাপাটে তরুনের লেখা দেখে এক খচ্চর তার পাশের খচ্চরকে বলল, তোমার কি মনে আছে পাহাড় থেকে পাথর বয়ে আনার সেই দিনগুলোর কথা?অথচ লোকেরা এখনও ভাবে রাজা এন্টোনিও এই ব্রীজটা বানিয়েছে।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
আমার অনুবাদ করা কাহলিল জিবরানের আরো কিছু গল্পঃ
১.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-১: The Field of Zaad
২.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-২: The Eagle and the Skylark
৩.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৩: The King
৪.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৪: History and the Nation
৫.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৫: She Who Was Deaf
৬.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৬: Lady Ruth
৭.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৭: SATAN
৮.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৮: THE KING OF ARADUS
৯.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের দুইটি গল্প
১০.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-১
১১.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-২
১২.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-৩
১৩.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-৪
১৪.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের চারটি গল্প
১৫.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-১
১৬.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-২
১৭.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-৩
১৮.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-৪
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৪৩