এক খেয়ালী রাজকুমার।হঠাৎ ইচ্ছে হল সাগরের বুকে একটা দ্বীপ বানাবেন। মানুষের তৈরী পাম গাছের আকৃতির কৃত্রিম দ্বীপ। ঘোষনা দিলেন কৃত্রিম দ্বীপ বানানো হবে। ফান্ড রেইজিং শুরু হয়ে গেল। বিখ্যাত সব ধনী আর সেলিব্রেটিরা তাদের বাড়ির জন্য বুকিং দিয়ে ফেললেন। দলে দলে ইঞ্জিনিয়ার আর ওয়ার্কার আসা শুরু হলে। শুরু হয়ে গেল মানব ইতিহাসে সর্ববৃহৎ কৃত্রিম দ্বীপ তৈরীর কাজ।
পরিকল্পনা করা হয় দুবাই উপকূলে পাশাপাশি তিনটি পাম গাছের আকৃতির কৃত্রিম দ্বীপ তৈরী করা হবে যাদের প্রত্যেককে ঘিরে থাকবে বৃত্তাকার রিং। এই তিনটি কৃত্রিম একত্রে পাম আইল্যান্ড নামে পরিচিত।
পাশাপাশি পাম আকৃতির তিনটি কৃত্রিম দ্বীপঃ
শুরুতে আর্কিটেক্টদের প্ল্যান ছিল এরকমঃ
পাম জুমায়রা
পাম জেবেল আলি
পাম দেইরা
পাম আইল্যান্ড-আকাশ থেকেঃ
পাম জুমায়রা
পাম জেবেল আলি
পাম আইল্যান্ড-মূল ভূখন্ড থেকেঃ
পাম আইল্যান্ডের বাড়িঘর ও রাস্তা
রাতের বেলা সাগরের বুকে আলোর ঝলকানিঃ
পাম জুমায়রা
পাম দ্বীপ তৈরী করা হয়েছে বালি আর পাথর দিয়ে। প্রথমে মরুভূমি থেকে বালি আনার পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা বাতিল করা হয় কেননা মরুভূমির বালির ওপর কোন বিশাল স্ট্রাকচার তৈরী করা সম্ভব হবে না। এই দ্বীপের জন্য বালি আনা হয়েছে দুবাই উপকূল থেকে ৬ নটিক্যাল মাইল দূরে সমুদ্রের তলদেশ থেকে। কেবল পাম জুমায়রা তৈরী করতেই প্রয়োজন হয় ৯৪ মিলিয়ন ঘনমিটারের অধিক বালির।
এই বালি স্প্রে করা হয়েছে জাহাজের মাধ্যমে। বালি সঠিক অবস্থানে পড়ছে কিনা তা মনিটর করা হয়েছে জিপিএস (Global Positioning System) এর মাধ্যমে। কেননা সঠিক স্থানে বালি স্প্রে না হলে আকাশ থেকে পাম এর শাখাগুলোর আকৃতি স্বাভাবিক মনে হবে না। এই পদ্ধতিকে বলা রেইনবোইং (rainbowing)। জাহাজ থেকে বালি স্প্রে করার সময় রংধনুর মত অর্ধবৃত্ত সৃষ্টি হয় বলে এই পদ্ধতির এরকম নামকরন করা হয়েছে।
জাহাজ থেকে বালি স্প্রে করা হচ্ছে। এই বালি এসেছে গালফ থেকে।
এই বালি যাতে স্রোতের সাথে ভেসে না যায় তাই বালির চারপাশে ব্যবহার করা হয়েছে বিশাল সব পাথর খন্ড। শুধুমাত্র পাম জুমায়রা তৈরী করতে প্রয়োজন ৭০০ টনের অধিক পাথর। প্রত্যেকটা পাথর বসানো হয়েছে আলাদা আলাদা করে ক্রেন ব্যবহারের মাধ্যমে। পাথরের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে জিপিএস এর মাধ্যমে।
বালির স্তরের চারপাশে পাথর বসানো হচ্ছে
এক্ষেত্রে প্রথমে তৈরী করা হয়েছে পাম গাছকে ঘিরে রাখা গোলাকার রিং টাকে। এরপর তৈরী করা হয়েছে রিং এর ভেতরকার পাম গাছ আকৃতির দ্বীপ।
চারপাশে পাথর দিয়ে পানির সাথে বালির ভেসে যাওয়া রোধ করা গেলেও এর ওপর কোনরকম বিশাল স্ট্রাকচার তৈরী করা সম্ভব ছিল না। তাই বালিকে চাপ প্রয়োগ করে ঘন সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে যাতে ভেতরে কোন শূন্যস্থান না থাকে।
বালি ঘন সন্নিবিষ্ট করা হচ্ছে
ধীরে ধীরে পাম আইল্যান্ড তার আকার নেয়া শুরু করল
পাম আইল্যান্ডঃ কাজ শেষ হওয়ার পরঃ
পাম জুমায়রা
পাম জেবেল আলি
নির্মানের বিশেষত্ব হল এই দ্বীপ তিনটি নির্মানে কোন কনক্রিট বা স্টীল ব্যবহার করা হয়নি। পুরো দ্বীপ দাঁড়িয়ে আছে বালি আর পাথরের ওপর ভর করে। এই কাজ করা হয়েছে দুবাইয়ের যুবরাজের আদেশে, পাম আইল্যান্ডের আইডিয়াও তার ছিল।
পাম আইল্যান্ডের মূল সমস্যা ক্ষয়। সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিমূহূর্তেই দ্বীপের বালিক্ষয় হচ্ছে। ফলে পাম গাছের মত আকার বজায় রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। তাছাড়া কৃত্রিম দ্বীপ নির্মানের ফলে সমুদ্র উপকূলের ইকোলজিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসে। গবেষনায় দেখা যায় দ্বীপ নির্মানের সময়কালে উপকূলে প্রচুর পরিমানে মাছ আর সামুদ্রিক প্রানীর মৃত্যু হয়।
এছাড়া এই কৃত্রিম দ্বীপ নির্মানের ফলে নতুন বাধার কারনে উপকূলের ঢেউয়ের প্যাটার্নেও পরিবর্তন আসে। তাই নির্মানের শুরুতেই এই প্রজেক্ট পরিবেশবাদী ও প্রানী অধিকার রক্ষা সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখে পরে।
দেখে নিন পাম আইল্যান্ডের ওপর একটি ডকুমেন্টারীঃ
=============================================
সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
পর্ব-১:বুর্জ আরবের শীর্ষে টেনিস কোর্টঃ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক দূর্দান্ত নিদর্শন
পর্ব-২:জার্মানীতে নদীর ওপর নদীঃ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অবিশ্বাস্য নিদর্শন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪