জাতীয় স্মৃতিসৌধ-আমাদের সংগ্রাম ও বিজয়ের প্রতীক
লাল ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা চারদিক। মাঝখানে প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতেই সরাসরি চোখ চলে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের উঁচু মিনারের দিকে আর মনে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী অসংখ্য শহীদদের স্মরণে তৈরী বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্যের মধ্যে প্রধানতম সাভারের এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ।এই স্মৃতিসৌধ আপামর জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।সাভারে নির্মিত এই সৌধ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধ আমাদের অস্তিত্ব আর জাতীয়তাবোধের প্রতীক। আমাদের ইতিহাসের স্মারক। প্রতিবছর স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসে জাতীয়ভাবে এ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ শুধু মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি স্মরণের জন্যই নয়, এর মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের আরও ইতিহাস। যে ইতিহাস, যে ঘটনা আমাদের স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে দ্রুত গতিতে এবং স্বল্প সময়ে। আমরা হয়ে উঠেছি অপ্রতিরোধ্য। একটি স্বাধীন দেশের নেশায় বাংলার নারী-পুরুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধে, ছিনিয়ে এনেছে বিজয়।
যা কিছু আছে স্মৃতিসৌধে
জাতীয় স্মৃতিসৌধ-সামনে থেকে
স্মৃতিসৌধে প্রবেশের পর প্রথমেই চোখেপড়ে শ্বেতপাথরে উৎকীর্ণ একটি লেখা। ‘বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা/এর যত মূল্য সে কি ধরার ধূলোয় হবে হারা’-এর একটু সামনেই শ্বেতপাথরের ভিত্তিপ্রস্তর। এরপরেই ডানদিকে রয়েছে নজরকাড়া উন্মুক্ত মঞ্চ। সোজা হেঁটে গেলে মূল স্মৃতিসৌধ।
১৫০ ফুট বা ৪৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট স্মৃতিসৌধটিতে রয়েছে ৭টি ফলক। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাতটি পর্যায়কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সাতটি পর্যায়ের প্রথমটি সূচিত হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এরপর চুয়ান্ন, আটান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুথানের মাধ্যমে অগ্রসর হয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা বিবেচনা করে এবং মুক্তিযুদ্ধকে সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচনা করে রূপদান করা হয়েছে ।বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সৌধটি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দৃষ্টিগোচর হয় ।স্থপতি মইনুল হোসেন সৌধের মূল কাঠামোটি কংক্রিটের এবং কমপ্লেক্সের অন্যান্য স্থাপনা লাল ইটের তৈরি করেন ।মূল সৌধের গাম্ভীর্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য এই পার্থক্য। এর দ্বারা রক্তের লাল জমিতে স্বাধীনতার স্বতন্ত্র উন্মেষ নির্দেশ করা হয়েছে ।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্খপতি খ্যাতনামা স্খপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন। এছাড়া আশেপাশের অন্য সকল নির্মাণ কাজের স্খাপত্য নকশা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ সরকারের স্খাপত্য অধিদপ্তর। মূল স্মৃতিসৌধের বাম পাশে রয়েছে সৌধ চত্বর। যেখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নাম না জানা দশজন শহীদের সমাধি। আর ডান পাশে রয়েছে একটি পুস্পবেদী। যেখানে এক সময় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হতো।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ-আকাশ থেকে
মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক দিয়ে কেউ যখন এ এলাকায় প্রবেশ করেন তখন তিনি প্রথমেই স্মৃতি সৌধটি চোখের সামনে দেখতে পান । যদিও সৌধ পর্যন্ত যেতে হলে তাকে অনেক দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয় । এই পথের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো উঁচু নিচু চত্বর । এই চত্বরগুলো পার হতে হলে তাকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি দিয়ে বেশ কয়েক বার ওঠা নামা করতে হয় ।তারপর পার হতে হয় বড় একটি কৃত্রিম জলাশয় । জলাশয় পার হওয়ার জন্য রয়েছে সেতু ।এই পথের দু'পাশে রয়েছে গনকবর।এই প্রতিটি চত্বর ও সিঁড়ি লাল ইটের তৈরি ।স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য জাতিকে যে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে,চড়াই উতরাই পার হতে হয়েছে।তার প্রতীক এই দীর্ঘ হাঁটা পথ ।স্বাধীন স্বদেশ পাওয়ার জন্য যে রক্ত দিতে হয়েছে তার প্রতীক লাল ইট ।জলাশয় অশ্রুর প্রতীক । আর গণকবর স্মরণ করিয়ে দেয় শহীদদের আত্মদানের ইতিহাস ।
পুরো এলাকাটি ৩৪ হেক্টর এলাকা নিয়ে নির্মিত । এর চারপাশে আরো ১০ হেক্টর জায়গা জুড়ে রয়েছে সবুজ ঘাসের বেষ্টনী।এই সবুজ বেষ্টনী সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের প্রতীক । বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস সহ বিশেষ জাতীয় দিবসে এখানে লাখো জনতার ঢল নামে।মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি নিবেদিত হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান কিংবা নেতৃস্খানীয় ব্যক্তিরা যখন এদেশে আসেন, এদেশের জাতীয় বীরদের শ্রদ্ধা জানাতে তারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান এবং সফরের স্মৃতিস্বরূপ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে রোপণ করেন বিভিন্ন গাছের চারা। এসব ছাড়াও স্মৃতিসৌধে রয়েছে হেলিপ্যাড, মসজিদ, অভ্যর্থনা কক্ষ, ক্যাফেটেরিয়া। তাছাড়া আছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ সব সময়ই সঙ্গ দেয় এর দর্শকদের।
সাতটি স্তম্ভ দিয়ে যা বোঝায়
সাতটি স্তম্ভ দিয়ে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
যারা শুধু স্মৃতিসৌধের সামনের ছবি দেখেছেন, তারা কখনোই এর গঠন সম্পর্কে জানতে পারবেন না, বুঝতে পারবেন না এটা কীভাবে আর কী ইতিহাস মাথায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। এটা বুঝতে হলে সৌধের খুব কাছে যেতে হবে, পাশ থেকে দেখতে হবে। ভালোভাবে দেখলেই বোঝা যাবে স্মৃতিসৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজ নিয়ে গঠিত।অনেক বয়স্ক মানুষও জানেন না, জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাত জোড়া দেয়াল স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ভিন্ন পর্যায় নির্দেশ করে। পর্যায়গুলো হলো :
১. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।
২. ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন।
৩. ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন।
৪. ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন।
৫. ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন।
৬. ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং
৭. ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসেবে বিবেচনা করেই সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সাতটি ধাপ ধাপ বেয়ে আকাশ ছোয়ার চেষ্টা
এই সাত সংখ্যাটি একটু অন্যভাবেও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এই সালটির দুটি সংখ্যার যোগফল ৫+২= ৭। আবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ০৭ তারিখেই। আমাদের বিজয় দিবস হচ্ছে- ১৬ ডিসেম্বর। এই তারিখের দুটি সংখ্যার যোগফলও কিন্তু ১+৬= ৭।আবার স্কুলে থাকতে আমরা পড়েছিলাম (নবম শ্রেনীর English For Today বই দ্রষ্টব্য) ৭ দিয়ে বোঝানো হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠকে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইতিহাস
১৯৭১ এর ডিসেম্বরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ,মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত বিজয়,তাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগ স্মরণ করে স্মৃতি সৌধ সাভারে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ।১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নবীনগরে এই স্মৃতি সৌধের শিলান্যাস করেন। স্থান নির্বাচন,রাস্তা নির্মাণ ও ভূমি উন্নয়নের পর স্থাপত্যের নকশা নির্বাচনের জন্য দেশ জুড়ে শিল্পী,স্থপতি ও ভাস্করদের কাছ থেকে নকশা আহ্বান করা হয় ।১৯৭৮ সালের জুন মাসে নকশা জমা দেওয়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ।৫৭টি সেরা নকশার মধ্য থেকে স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনের নকশাকে নির্বাচন করা হয়।১৯৮২ সালের কিছু পর স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো,কৃত্রিম লেক এবং উদ্যান তৈরির কাজ সমাপ্ত হয় ।২০০২ খ্রিস্টাব্দে গৃহীত প্রকল্প অনুযায়ী এখানে একটি অগ্নিশিখা , ম্যুরাল এবং একটি গ্রন্থাগার স্থাপনের পরিকল্পনা আছে।
নির্মীয়মান স্মৃতিসৌধ-১৯৮২ সাল
জাতীয় স্মৃতি সৌধ নির্মাণের কাজ তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় ।প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ১৯৭২ সালে।সে সময় ২৬ লাখ টাকা খরচ করে ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়ক নির্মাণের কাজ করা হয়।দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৭৪ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত কাজ চলে।এ সময় ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা খরচ করে গণকবরের এলাকা,হেলিপ্যাড,গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান,চত্বর ইত্যাদি নির্মিত হয় ।১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে শুরু হয় মূল স্মৃতি সৌধ তৈরির কাজ ।৮৪৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় স্মৃতি সৌধ ।এর পর এখানে তৈরি হয় কৃত্রিম লেক,সবুজ বেষ্টনী,ক্যাফেটেরিয়া,রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য আবাসিক এলাকা ইত্যাদি ।
স্মৃতিসৌধের স্থপতি মইনুল হোসেন
স্মৃতিসৌধের স্থপতি মইনুল হোসেন
জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেনের জন্ম ১৯৫২ সালের ৫ মে। জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ীর দামপাড়া গ্রামে। তার বাবা মুজিবুল হক ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ইতিহাস পড়াতেন। ছেলেবেলায় মাইনুল চেয়েছিল প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে। ঢাকায় তখন গণঅভ্যুত্থানের ডামাডোল চলছে। ওই সময় মাইনুলকে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ১৯৭০ সালে তিনি ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসে সিট পেলেও সেখানে তার মন টিকত না। সুযোগ পেলেই চলে যেতেন ধানমন্ডির খালার বাসায়।
১৯৭১ সালে দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায় বুয়েটে। মাইনুল তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর দামপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেন। খুব কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করেন তিনি। ১৬ ডিসেম্বরের পর সৈয়দ মাইনুল হোসেন ফিরে যান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসে।
১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হন। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে EAH Consultant Ltd-এ জুনিয়র স্থপতি হিসাবে যোগ দেন। কয়েক মাস পর চাকরি ছেড়ে ওই বছরের আগস্টে যোগ দেন 'বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেড'-এ। তার কর্মজীবন বেশ বৈচিত্র্যময়।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরপর নকশা আহ্বান করা হয়। তখন ২৬ বছরের তরুণ স্থপতি মাইনুল স্মৃতিসৌধের নকশা জমা দেন। প্রায় ১৭-১৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তিনি প্রথম হয়ে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার পান। আর তার করা নকশা অনুসারে ঢাকার অদূরে সাভারে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
এরপর তিনি স্থপতি সংসদ লিমিটেড, শহীদুল্যাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং কুয়েতের আল ট্রুট লিমিটেডে কাজ করেন।
১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সৈয়দ মাইনুল হোসেন ৩৮টি বড় বড় স্থাপনার নকশা করেন। এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, IRDP ভবন কাওরানবাজার, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন, চট্টগ্রাম ইপিজেড, বাংলাদেশ চামড়াজাত প্রযুক্তির কর্মশালা ভবন, উত্তরা মডেল টাউন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদামের নকশা, কফিল উদ্দিন প্লাজা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ভবন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের নকশা করেছেন তিনি।
নিজের সৃষ্টির সাথে স্থপতি মইনুল হোসেন
২০১৪ সালের ১০ই নভেম্বর ৬৩ বছর বয়সে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তিনি মৃত্যুবরন করেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মহান এই স্থপতি একুশে পদক লাভ করেন।
মালদ্বীপে বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকা স্থাপন
মালদ্বীপে বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকা উদ্বোধন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিহিসেবে সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি স্থাপিত হলো মালদ্বীপের আদ্দু সিটিতে।
সার্ক সম্মেলনকে স্মরণীয় করে রাখতে আদ্দু সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ১০টি ভাস্কর্য তৈরির অংশ হিসেবে আদ্দুর হিথাদোতে বাংলাদেশের স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকাটি স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উন্মোচন করেন। ইস্পাতের তৈরি ১১৯ কেজি ওজনের রেপ্লিকাটি দৈর্ঘ্যে ৯ ফুট ও প্রস্থে ৪ ফুট।
স্থপতি সৈয়দ মনিরুল হোসেনের নকশায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে ইস্পাতের রেপ্লিকাটি তৈরি করেন ভাষ্কর হামিদুজ্জামান খান। তিনি নিজে এজন্য মালদ্বীপে গিয়েছিলেন। স্থপতি হামিদুজ্জামান খান তার শিল্পকর্ম সম্পর্কে বলেন, ‘হিথাদোতে স্থাপিত রেপ্লিকার নিচে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতি হিসেবে সাভারে স্থাপিত মূল জাতীয় স্মৃতিসৌধের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা হয়েছে।’তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বিজয় দিবস উদযাপনকালে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাভারে স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এ কথাটিও লেখা রয়েছে।হামিদুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘মূল স্মৃতিসৌধের ৭টি স্তরের বর্ননাও এতে লেখা রয়েছে।’ খুব অল্পসময়ের মধ্যেই এটি তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কীভাবে যাবেন :
আগে ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধে সরাসরি যাওয়ার তেমন ভালো কোন পরিবহন ব্যবস্খা ছিল না। কিন্তু এখন যাতায়াতের সুবন্দোবস্ত রয়েছে। সম্প্রতি চালু হয়েছে বিআরটিসি বাস সার্ভিস। যা মতিঝিল-গুলিস্তান থেকে শাহবাগ, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যামলী, গাবতলী, সাভার হয়ে স্মৃতিসৌধে যায়। ভাড়া ২০ টাকা। উল্লেখ্য, প্রিমিয়াম ও বিআরটিসি সার্ভিসের রুট প্ল্যান একই।
পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু আরামে যেতে চাইলে যাওয়া যেতে পারে ট্যাক্সি ক্যাবে। সেক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশী পড়বে। সব মিলিয়ে খুব সহজেই ঘুরে আসা যায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে। যেখানে গেলে শুধু প্রকৃতির কাছেই যাওয়া যাবে না তার সাথে নিজের মত করে উপলব্ধি করা যাবে মহান মুক্তিযুদ্ধকে।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশের জন্য কোন প্রবেশ মূল্য নেই। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত(এই তথ্যটা আমি শিওর না। এক জায়গায় দেখলাম সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত) সৌধে বেড়ানো যায়।চাইলেই যে কোনো দিন আপনারা সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
যা কিছু করবেন না
##চকলেট আর চিপস খেয়ে প্যাকেটগুলো যেখানে সেখানে ফেলে দেবেন না। বরং পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা তুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলতে পা্রেন।
##আর গাছ থেকে ভুলেও কখনো ফুল ছিঁড়বেন না।
##অনেকেই স্মৃতিসৌধের পাশে থেকে হেটে হেটে সৌধের উপরে উঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু মনে রাখবে্ন এটা কিন্তু একেবারেই অনুচিত কাজ। কারণ এতে স্মৃতিসৌধের অসম্মান হয় আর স্মৃতিসৌধকে অসম্মান করা মানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অসম্মান।
প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ এই স্মৃতি সৌধ দেখতে যান এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। যদি আজো ওখানে যাওয়া না হয়ে থাকে, তাহলে আর দেরি না করে আজই না হয় বেরিয়ে পড়ুন বাড়ির সবাইকে নিয়ে; দেখে আসুন মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত আমাদের জাতীয় স্মৃতি সৌধ।
সংযুক্তিঃ
১.জাতীয় স্মৃতিসৌধ-ফেসবুক পেজ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ-উইকিপিডিয়া
২.http://www.bd-pratidin.com/print_news.php?path=data_files/423&cat_id=3&menu_id=25&news_type_id=1&news_id=71985
৩.http://bengali.cri.cn/461/2011/12/22/41s118691.htm
৪.http://kidz.bdnews24.com/bishesh_rochona.php?bisheshrochonaid=137
সমস্ত ছবি নেয়া হয়েছে ইন্টারনেট থেকে গুগুল মামুর কল্যানে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৭