ঘটনাটা ২০০৮ সালের মাঝামাঝি।মাত্রই ১-২ শুরু হয়েছে। ১-১ এর মারাত্মক রেজাল্টের পর তখন রীতিমত ক্লান্ত এবং হতাশ।
এরই মাঝে হঠাৎ জানতে পারলাম যারা ২০০৭ সালে এইচ এস সি তে এ প্লাস পেয়েছে (চট্টগ্রাম থেকে), চট্টগ্রাম সমিতি তাদের বৃত্তি দেবে।
তো অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম সংগ্রহ করলাম। তাতে এইচ এস সির রেজাল্টের সাথে হলের প্রভোস্ট আর ডিপার্টম্যান্টের হেডেরও সাইন লাগবে। প্রভোস্ট স্যার সাইন দিয়ে দিলেন। কোন সমস্যা হল না।সমস্যা বাধল ডিপার্টম্যান্টের হেডকে নিয়ে।
প্রথমদিন স্যারের কাছে গেলাম ফর্ম নিয়ে।
স্যার- কি চাই?
আমি- স্যার বৃত্তির ফর্মে সিগনেচার।
স্যার- ১-১এ রেজাল্ট কি?
আমি(ভয়ে ভয়ে)-৩.**
স্যার(চেচিয়ে)- তোমরা যদি সব বৃত্তি নিয়ে যাও তাহলে ভাল ছাত্রদের কি হবে?
আমি- স্যার, এটা আঞ্চলিক বৃত্তি আর দেয়া হচ্ছে এইচ এস সি'র রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে।
স্যার(মুখ বাকিয়ে, বিরক্ত হয়ে)- অ। দেখি, ফর্ম দাও। আর তোমার আইডি।
উল্লেখ্য, তখনো বুয়েটে নতুন। আইডি কার্ড সাথে রাখার চেয়ে রুমে রেখে আসাটাই নিরাপদ ভাবতাম(এখন বুঝি বিষয়টা বেকুবি ছাড়া আর কিছুই ছিল না)।
আমি(মাথা চুলকে)-স্যার, আইডি কার্ডতো হলে।
স্যার-তাহলে আইডি নিয়ে এসো।তারপর সাইন দেব।
পরেরদিন আইডি নিয়ে আবার স্যারের কাছে গেলাম। এবার স্যারের নতুন প্রশ্ন- হলের তোমার কাছে হলের কোন পাওনা আছে?
আমি- না স্যার।
স্যার-কিভাবে বুঝব? যাও হল থেকে "কোন পাওনা নেই"- এরকম একটা লেখা নিয়ে এসো। এদিনও স্যার সিগনেচার দিলেন না।
পরের দিন আবার হল থেকে "কোন পাওনা নেই" মর্মে একটা কাগজ নিয়ে গেলাম স্যারের কাছে।আজকে স্যারের কাছে কোনভাবেই আটকাব না(কারন সাথে আইডিও ছিল)-এরকম একটা ধারনা ছিল।
তো সেদিন স্যারকে বলার পর তিনি বললেন- দেখি, তোমার ফর্ম।
আমি ফর্ম এগিয়ে দিলাম।
স্যার ফর্ম হাতে পেয়েই চেচিয়ে উঠলেন।তিনদিন আগের ডেট কেন? এখন এই ফর্মে আমি পুরনো ডেট দিয়ে সাইন করব।
ইচ্ছা হচ্ছিল স্যারকে তখন বলি- আমিতো ফর্ম পাওয়ার সাথে সাথেই ফিলাপ করছিলাম। আপনি সামান্য একটা সিগ্নেচারের জন্য তিনদিন ঘুরাচ্ছেন বলেই তিনদিনের পুরনো ডেট।
কথাগুলো বলা হয় নাই।বলার অবশ্য দরকারও হয় নাই। কেননা কোন এক অজানা কারনে স্যার সেদিন আমাকে নতুন ফর্ম নিয়ে আসতে আর বলেন নাই। পুরনো ফর্মে পুরনো ডেটেই সিগনেচার করে দিয়েছিলেন।
সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম বুয়েটের স্যাররা কি জিনিস। একাডেমিক দিক দিয়েতো বটেই, এর বাইরেও তারা বাশ দেয়ার একটা সুযোগ পেলেও মিস করেন না (কিছ ব্যতিক্রম সবখানেই থাকে।তাদের কথা বাদ)।
===============================================
ঘটনাটা স্ট্যাটাস হিসেবে একদা আমার মূল একাউন্ট ("আমি তুমি আমরা" থেকে না) থেকে দিয়েছিলাম। এই মাসে কোন পোস্ট দেয়া হয় নাই, তাই ভাবলাম এটাই পোস্ট হিসেবে দিয়ে দেই।
===============================================
বুয়েট নিয়ে আরো কিছু মজার ঘটনাঃ
বুয়েট: যখন মনে হয় কেউ আমারে মাইরালা
বুয়েটের এক স্মার্ট শিক্ষক ও তার পিছনে আমার ঘুরার গল্প
পৈশাচিক প্রতিশোধ
বুয়েটের Kung fu Panda
একটি আঠারো প্লাস মুড়ি খাওয়ার গল্প
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২১