গত দুইদিন ধরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ব্লগ-ফেসবুক মারাত্মক গরম হয়ে উঠেছে। স্পষ্টতই যারা এ বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন তারা দুটো দলে ভাগ হয়ে পড়েছেন।
একদল বলছেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক কারনে আশ্রয় দেয়া উচিত। কেউ কেউ এর সাথে এও যোগ করছেন এরা আমাদের মুসলিম ভাই।এদের বিপদের দিনে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য।কেউ কেউ এখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত এক কোটি বাংলাদেশীকে আশ্রয় দিয়েছিল- একথাটাও তুলে আনছেন। আর ব্লগার দাসত্ব তার পোস্টে বলেছেন রোহিঙ্গা পুরুষদের না হলেও নারী ও শিশুদের আশ্রয় দেয়া যায় কিনা???
আর দ্বিতীয় দল বলছেন বাংলাদেশ নিজে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল কোন দেশ নয়। যেখানে সে নিজের ষোল কোটি জনগনের চাহিদা পূরন করতে পারছে না, সেখানে বাড়তি রোহিঙ্গাদের জন্য অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব না।তাই সহানুভূতি থাকলেও বাংলাদেশের পক্ষে এই পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়।
আসি প্রথম পক্ষের কথায়।
এক. রোহিঙ্গাদের মানবিক কারনে আশ্রয় দেয়া উচিত।
রোহিঙ্গারাও মানুষ।শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারনে নিজ দেশে তারা এমন অন্যায় নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে- এটা সত্যিই দুঃখজনক।তাই মানবিক দিক থেকে দেখলে মনে হয় মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের সীমান্ত খুলে দেয়া উচিত, তাদের এদেশে আশ্রয় দেয়া উচিত।
কিন্তু মানবিকতার চেয়েও এই মূহূর্তে বড় ও গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল বাস্তবতা।আসুন দেখে নিই বাস্তবতা কি বলে।
বাংলাদেশে গত বিশ বছরে যে অলমোস্ট পাচ লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে তাদের বেশিরভাগই কিন্তু নিজ দেশে ফিরে যায়নি। বরং কক্সবাজার আর পার্বত্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে আর বসে বসে বাংলাদেশের অন্ন ধ্বংস করছে।তাহলে এখন আবার নতুন করে যদি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়, তারা দাঙ্গা শেষে নিজে দেশে ফিরে যাবে- এই গ্যারান্টি কি আছে?
আমি বলব নেই। আমার ধারনা এ মূহূর্তে নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ করলে তারাও দাঙ্গা শেষে বাংলাদেশে থেকে যাবে এবং বসে বসে আমাদের অন্ন ধ্বংস করবে। যেখানে বাংলাদেশ নিজেই তার জনগনের মৌলিক চাহিদা পূরন করতে পারছে না, সেখানে এই বাড়তি শরনার্থীর চাপ নেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গারা যে তাদের দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী নয় তার আরেকটা উদাহরন দেই। বেশ কয়েকমাস আগে(দিন-তারিখ মনে নেই) প্রথম আলোর আলোকিত চট্টগ্রামে একটা রিপোর্ট ছাপানো হয়েছিল রোহিঙ্গাদের ওপর। রিপোর্টারের মূল ফোকাস ছিল কিভাবে রোহিঙ্গারা কিভাবে এদেশে তাদের খুটি গেড়ে বসে পড়ছে সে বিষয়ে।সেই রিপোর্টেই উঠে এসেছিল রোহিঙ্গা পুরুষরা ভোটার লিস্টে তাদের নাম তোলার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে। আর চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের মেয়েদেরকে এদেশের ছেলেদের কাছে বিয়ে দিতে, যাতে করে কখনো নিজেদের ফিরে হলে তাদের সন্তানরা যাতে এদেশে থেকে যেতে পারে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কমন অভিযোগ তারা এদেশে এসে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।কক্সবাজারে প্রায়ই এরা নানা অপকর্ম করে বলে পত্রিকা টিভিতে দেখতে পাই।এদের বিরুদ্ধে খুব কমন অভিযোগ হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা।বাংলাদেশে ইয়াবার প্রবেশ ও বিস্তার কিন্তু এসব রোহিঙ্গাদের হাত ধরেই। শুধু মাদক ব্যবসাই নয়, চোরাচালানেও এরা সিদ্ধহস্ত বলে শুনতে পাই।
শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও এরা নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।রোহিঙ্গা বা মধ্যপ্রাচ্য- কোনটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমাদের এসব নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কেননা এই রোহিঙ্গারা মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে।ফলে তাদের এসব অপকর্মের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বে নাম খারাপ হচ্ছে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশী শ্রমিকদের।ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ হারাচ্ছে তার শ্রমবাজার।যার প্রভাব পড়ছে আমাদের অর্থনীতিতে।
সুতরাং নতুন শরনার্থীকে আশ্রয় দেয়ার পুর্বে মানবিকতার সাথে সাথে বাস্তবতার এইসব দিকও খেয়াল রাখতে হবে।কেননা এদের পূর্বসুরীরা যা করে গেছে-এরাও সেই পথে হাটবে-এই সম্ভাবনাই বেশী।
এ প্রসংগে একটা বিখ্যাত বানী মনে পড়ে গেল।কোন এক বিখ্যাত মনিষী বলেছিলেন, অন্যের উপকার কর, তবে নিজের ক্ষতি করে নয়। আমাদেরও এই কথাটা কোনভাবেই ভোলা উচিত নয়।
দুই. এরা আমাদের মুসলিম ভাই।এদের বিপদের দিনে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য।
এরা অবশ্যই আমাদের মুসলিম ভাই এবং এদের বিপদের দিনে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য।তবে যারা শুধুমাত্র এই কারনেই সীমান্ত খুলে দিতে বলছেন তাদের প্রতি আমার প্রশ্নঃ
যেহেতু মায়ানমার আমাদের প্রতিবেশী আর মায়ানমারের মুসলমানদের সহায়তা করা আমাদের কর্তব্য, তাহলে ভারতও আমাদের প্রতিবেশী আর ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি আমাদের একই কর্তব্যবোধ থাকা উচিত। গুজরাটে যখন দাঙ্গায় এতগুলো মুসলমানকে হত্যা করা হল আর মুসলিম মেয়েদের ধর্ষন করা হল- তখন কোথায় ছিল এই কর্তব্যবোধ? তখন আপনারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কি গুজ্রাটী মুসলমানদের জন্য কিছু করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন?
ভারত বাদ দিন। এতদিন ধরে সিরিয়ায় সরকারী মদদে নিরীহ মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে আর ফিলিস্তিনিরাতো গত ৭০ বছর ধরেই একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য রক্ত দিয়ে যাচ্ছে।এদের ক্ষেত্রে আপনার ভ্রাতৃত্ববোধ আর দায়িত্ববোধ জেগে ওঠে না???
এটাও বাদ দিন। বাংলাদেশে যখন কোন মুসলমান ঠিক আপনার ঘরের পাশেই না খেয়ে বা সন্ত্রাসের স্বীকার হয়ে মারা যান- তখন তখন কি আপনারা তার পরিবারকে অর্থনৈতিক সাহায্য দেন বা তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করেন?তখন কোথায় থাকে আপনাদের এই ধর্মীয় দায়িত্ববোধ?
বিশ্বে অনেক মুসলমান দেশ আছে, যাদের এক ফুঁকে এই সমস্যা মুহুর্তেই শেষ হয়ে যেতে পারে।সৌদি বাদশাহ, কাতার-কুয়েতের আমীর - মুসলমানদের এইসব অভিভাবক এখন কোথায়? হারেম থেকে বেরিয়ে তারা কেন রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে না? অর্থসাহায্য দিলেও তো হয়। তা তো না, উল্টো ইরানের পেছনে আঙ্গুল দেওয়ার জন্য বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে অস্ত্র কিনছে।মানবতা নিয়ে কথা বলুন কিন্তু ধর্ম টেনে আনা ঠিক নয়।
তিন. মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত এক কোটি বাংলাদেশীকে আশ্রয় দিয়েছিল। সুতরাং বাংলাদেশেরও উচিত বর্ডার খুলে দেয়া।
প্রথমেই আমাদের বোঝা উচিত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আর ২০১২ সালের মায়ানমারের পরিস্থিতি এক নয়। ১৯৭১ সালে আমাদের লড়াইটা ছিল স্বাধীনতার জন্য। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।আর বর্তমানে বার্মায় যা হচ্ছে তা হল সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় একটি বিশেষ ভাষাভাষী ও ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নিধনের প্রচেষ্টা।তাই দুটো পরিস্থিতি কোনক্রমেই তুলনীয় নয় বলেই আমি মনে করি।এর বাইরেও প্রধান কারনগুলো হচ্ছেঃ
ভারত প্রথমেই নিশ্চিত করছিল বাংলাদেশীরা দীর্ঘদিন ভারতে থাকবে না। যুদ্ধা শেষে তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে। তাই বাংলাদেশীরা ভারতে প্রবেশের সাথে সাথেই ভারত তাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছিল।এরপর বাংলাদেশীরা দেশে ফিরে এসে যুদ্ধ করেছে, দেশ স্বাধীন করেছে এবং নিজ দেশে ফেরত এসেছে। ভারতে থেকে যায় নি। কিন্তু এই রোহিঙ্গারাতো এমন নয়। তারা একবার বাংলাদেশে ঢুকতে পারলে আর ফিরে যাওয়ার নাম নেয় না।কেননা মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ।অতিরিক্ত ৮-১০ লক্ষ মানুষের দায়িত্ব নেয়ার শক্তিশালী অর্থনীতি এমূহুর্তে আমাদের নেই।
বার্মা সামরিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের তুলনায় শক্তিশালী।তাই যদি এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ মায়ানমারের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে- তবে সেই যুদ্ধ চালিয়ে নেয়ার ও এই অতিরিক্ত জনগোষ্ঠীর ভার বহন করার মত অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বাংলাদেশের নেই।
বাংলাদেশীদের মূল লক্ষ্য ছিল একটা স্বাধীন ভূখন্ড। আর তার জন্য সাত কোটি বাঙ্গালী এক হয়ে লড়েছিল।রোহিঙ্গারাতো নিজদের রক্ষা করার চেষ্টাই করছে না। লড়াই করে টিকে থাকার কোন ইচ্ছা বা চেষ্টাই তাদের নেই।তাদের লক্ষ্য হচ্ছে কোনক্রমে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নিজের জীবন রক্ষা করা। যারা নিজেরাই নিজেদের রক্ষায় উদ্যোগী নয়, তাদের রক্ষায় আমরা কেন উদ্যোগ নেব???
চার. রোহিঙ্গা পুরুষদের না হলেও মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের আশ্রয় দেয়া হোক।
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট রোহিঙ্গারা যেসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে তার দায় মূলত রোহিঙ্গা পুরুষদের। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের এদেশে আশ্রয় দেয়া হোক। কিন্তু তাতেও বেশ ভাল সমস্যাই সৃষ্টি হবে।কেননা এদেশে আশ্রয় পেলে হয়ত নারী আর শিশুরা হয়ত নিরাপদ থাকবে, কিন্তু পুরুষগুলো বার্মা সেনাবাহিনীর হাতে মরতে থাকবে একে একে।পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হারানোর পর এই আশ্রয় নেয়া নারী ও শিশুদের দায়িত্ব কে নেবে???
এবার আসি দ্বিতীয় দলের কথায়।
দ্বিতীয় দলের কথা আর ব্যাখ্যা করার তেমন কিছু নাই।প্রথম দলের কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়েই আমার মনে হয় পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার করতে পেরেছি।
এবার আসি রোহিঙ্গাদের কি করা উচিত সে বিষয়ে।
রোহিঙ্গাদের বোঝা উচিত নিজেদের কর্মকান্ডের জন্যই তারা এদেশে থাকার অধিকার হারিয়েছে।তাই কিছু একটা হলেই সীমান্ত পাড়ি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের প্রবণতা তাদের ত্যাগ করা উচিত। রোহিঙ্গারা মুসলমান হতে পারে, তারা বাঙ্গালী হতে পারে, কিন্তু তারা বাংলাদেশী নয়- বাংলাদেশ তাদের ভূমি নয়। চিরকাল তারা এদেশে থাকবে আর আমাদের অন্ন ধ্বংস করবে- এটা কোন ক্রমেই বাংলাদেশীরা হতে দেবে না।
রোহিঙ্গাদের তাই লক্ষ্য হওয়া উচিত ঘুরে দাঁড়ানো, নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করা। কেননা কেউ কাউকে অধিকার দেয়া না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়।সারভাইবেল অফ দি ফিটেস্ট । পৃথিবীতে নিজের স্থান নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। নয়তো শ্রেফ মুছে যাবে।বিদেশে শরনার্থী ক্যাম্পে অপমানের জীবনের নিজের দেশে বীরের মৃত্যু অনেক বেশী সম্মানজনক।তাই রোহিঙ্গাদের এবার হাতে অস্ত্র তুলে নেয়া উচিত।কেননা পিঠে গুলি খেয়ে মরার চেয়ে বুকে গুলি খেয়ে মরা অনেক বেশী সম্মানের।
এই ব্যাপারে একটা মুভির কথা মনে পড়ে গেল। মুভিটার ট্যাগ লাইন ছিল, “When you have no where else to run or hide, you fight or you die”। রোহিঙ্গাদেরই এখন ঠিক করতে হবে তারা কি লড়বে না শুধুই মরবে???
এর বাইরে রোহিঙ্গাদের উচিত নিজেদের দুঃখ-দূর্দশার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরা, নিজেদের পক্ষে জনমত তৈরী করে মায়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু কপাল এমন খারাপ এদের, অধিকাংশ রোহিঙ্গাই অশিক্ষিত। মিয়ানমারের বাইরে যেসব রোহিঙ্গা আছে এদের মধ্যে কোন মেধাবী- শিক্ষিত প্রতিনিধি নাই , সম্ভবত কোন নেতৃত্ব ও নাই যাতে তারা নিজভূমির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিরোধ আন্দোলন করতে পারে।
এখানে মনে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য মনে হয় অং সান সূচীর কথা। এই মহিলা গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দুই দশক গৃহবন্দী থাকলেন, মৃত্যুর আগে নিজের স্বামীকে দেখতে পারলেন না, পুরো দেশকে তিনি তার বুকে ধারন করে আছেন-সেই তিনি আছেন এখন ইউরোপ সফরে। তাই তার সামনে সুযোগ সবচেয়ে বেশী ছিল বহির্বিশ্বের সামনে রোহিঙ্গাদের ওপর রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতন-নিষ্পেশনের কথা তুলে ধরে জনমত তৈরী করা আর জান্তা সরকারের ওপ চাপ তৈরী করা। সেই তিনি কি করলেন? সূচীর ভুমিকায় সবচেয়ে বেশী হতাশ।
আর সবশেষে বাংলাদেশ সরকার ও আমরা বাংলাদেশীরা যা কিছু করতে পারিঃ
• বাংলাদেশ সরকারের সীমান্ত খুলে দেয়ার মত ভুল করা মোটেও উচিত হবে না।কেননা এই রোহিঙ্গাগুলা বাংলাদেশে একবার ঢুকলেই সিন্দাবাদের সেই বুড়ো ভূতের মত আমাদের কাধে চিরকালের মত চেপে বসবে।জাতিসংঘ বা অন্য যেকোন দেশই সীমান্ত খুলে দেয়ার আহবান জানাক- তাতে বাংলাদেশের কান দেয়া উচিত হবে না।এজন্য সীমান্তে আরো বেশী সংখ্যক সেনা মোতায়েন করে রোহিঙ্গাদের এদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা নিশ্চিত করতে হবে।
• তাহলে প্রশ্ন এসেই যায় মায়ানমারে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তাতে কি আমাদের কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। সীমান্তে বাংলাদেশ পানি আর খাবার মজুদ করে সীমান্তে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে সরবরাহ করতে পারে যাতে খাবারের অভাবে এদের মৃত্যু না হয়। তাছাড়া সীমান্তে যতটুকু সম্ভব এদের চিকিতসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আর সরকারের যা কিছু করা উচিতঃ
• ঢাকাস্থ মায়ানমারের দূতকে তলব করে তার রাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যার দাবী করা।আর মায়ানমারকে জানিয়ে দেয়া একটি বিশেষ গোষ্ঠীর এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বাংলাদেশ সাপোর্ট করে না।
• জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সাধারণ পরিষদেও বিষয়টিকে আমাদের তুলে ধরতে হবে। জাতিসংঘতো খালি বাংলাদেশের প্রতি সীমান্ত খুলে দেয়ার আহবান জানিয়েই শেষ।সার্বিক বিষয়টি জাতিসঙ্ঘঘের সামনে তুলে ধরা উচিত। মায়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্ট করা ছাড়া বাংলাদেশের সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই।
• মায়নমারের আরকানে এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে জাতিসংঘ এবং চীনকে অন্তর্ভূক্ত করা। কারণ অতীতে সেই ১৯৯১ এর দিকে আসা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে মায়ানমার ফিরত নেয়নি। তাই তাদের মাধ্যমে মায়ানমার হতে অঙ্গীকার নেওয়া।
• রোহিঙ্গারা যেন আশ্রয় ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে যেন বাংলাদেশী না হতে পারে তথা ন্যাশনাল আইডি ও পাসপোর্ট নিতে না পারে সে জন্য তাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাতের আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া। এই বিষয়ে বাংলাদেশের একটি কম্পিউটার ডেটাবেজ তৈরি করা উচিত। এটা আমাদের সীমান্তে ঢুকার সাথে সাথে করতে হবে। তাহলে এরা কেউ বাংলাদেশী সাজতে পারবে না।
• জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এদের কাছ হতে দীর্ঘ মেয়াদী শরণার্থী সহায়তার নিশ্চয়তা নেওয়া।
(প্রস্তাবনাগুলো নেয়া হয়েছে ব্লগার দাসত্বের পোস্টে ব্লগার বাংলাদেশ জিন্দাবাদের করা কমেন্ট থেকে।)
প্রশ্ন আসতেই পারে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের বিরোধীতা করছি, তাহলে তাদের জন্য কিছু করার কথা বলছি কেন?
উত্তরটা পাবেন ব্লগার অনিক আহসানের পোস্টে করা ব্লগার প্রজন্ম ৮৬ এর কমেন্ট থেকে। রোহিঙ্গাদের যেই কন্ডিশন এটা যদি শুধু বিশ্বে প্রচার হয় তাহলে মুহুর্তেই জনমত তৈরী হয়ে যাবে ওদের পক্ষে। এই কাজটা হয় নাই এতদিন কারন প্রথমত মিয়ানমারের রাজনীতি, রোহিঙ্গাদের কোন প্রতিনিধিই নাই নিউইয়র্ক-ওয়াশিংটন-লন্ডনে, রোহিঙ্গারা মুসলিম, রোহিঙ্গারা প্রচন্ড দরিদ্র।
কিন্তু এখন সময় বদলানোর সময় হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আমরা লবি করতে পারি, আমরা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিয়ে ওদের পক্ষে প্রচারনা চালাতে পারি। বার্মিজ আইনে রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার যেন নিশ্চিত করা হয়, এই লক্ষ্যে বাঙ্গালী কাজ করলে এটা অবশ্যই সম্ভব।
আমরা দায়িত্ব না নিলে রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব কেউই নিব না, ওরা হয় ধ্বংস হইবো নাইলে আল-কায়েদা'র সমর্থনে নিজেরাই কিছু করবো, কিন্তু আল-কায়েদার ব্যাকাপে কিছু হইলে সেইটা আমাদের জন্য বড় সমস্যা হবে, সুতরাং আমাদের দায়বদ্ধতা প্লাস বাস্তব হিসাব থেকেই রোহিঙ্গাদের কন্ট্রোল নেয়া দরকার। ওদের বেওয়ারিশ হিসেবে ছাইড়া রাখা অনৈতিক এবং বিপদজনক!