somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাঁকিব খানের পর বাংলা সিনেমায় নতুন বুয়েটিয়ানের আগমন

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আশা করি ব্লগার ভাইরা কেউ আমাদের বুয়েটিয়ান ছাঁকিব খান ভাইয়ের সেই ঐতিহাসিক মুভির কথা ভুলে যান নাই। ল্যাম্প পোস্টের আলোয় তার পড়ালেখা কিংবা তার মহত্বের কথা {দুইটা পোলারে পড়ায় মাগার কোন টাকা নেয় না, হাজী মুহাম্মদ মুহসীনের আব্বা লাগেন কিনা তিনি X( X( }। আহা বড়ই মোহনীয় দৃশ্য ছিল সেগুলা। তবে সেরা দৃশ্য ছিল মুভির শেষ দিকে অপু বিশ্বাস আর লেডিস খানের সেই ঐতিহাসিক দৃশ্য আর অপু বিশ্বাসের সেই কালজয়ী ডায়লগ "তুমি ওকে করেছ পাগল আর আমাকে করেছ . . . "।



যাক, বাদ দেই সেই কথা। যে কারনে এই পোস্ট। বাংলা সিনেমায় বুয়েট সর্ব্দাই অবহেলিত। ২০০৭ সালে কিং খান(!!!!!!!!!) বুয়েটকে পাদপ্রদীপের আলোর নিচে নিয়ে আসেন। কিন্তু তারপর আবার সেই অন্ধকার।অবশেষে আবার বুয়েট আলোয় ফিরেছে "আমার পৃথিবী তুমি" মুভির মাধ্যমে।তাহলে শুরু করি আমার পোস্ট "আমার পৃথিবী তুমি ফিচারিং বুয়েট"

বুয়েট স্টুডেন্ট ইমন ভ্যানে চড়ে গ্রামে যাচ্ছেন বন্ধুর বিয়েতে। রাস্তার পাশে সাহারাকে দেখে তাঁর চোখ আটকে যায়। নায়িকা শালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে। উপর থেকে বৃষ্টির মতো বেলিফুল ঝরে পড়ছে তাঁর শরীরে। বড় বড় শালগাছেও বেলি ফুল হয়_এ ছবি না দেখলে এই মহান আবিষ্কারের কথা অজানাই থেকে যেত! বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে ইমন নিজের বিয়ের বীজ বুনে এলেন। শহরে এসে দেখলেন, বুয়েটেরই স্টুডেন্ট সাহারা। একে অপরের পেমে [প্রেম নয়, ডিপজলের ভাষায়] পড়লেন। থানার দারোগা ডিপজল। অল্প পড়াশোনা জানা এই লোক সিপাহি হিসেবে পুলিশে ঢুকেছেন। থাকেন প্যালেসে, গলায় মোটা সোনার চেইন, দামি গাড়িতে চড়েন, তাঁর বউ রেসি আবার কলেজে ইতিহাসের শিক্ষক। তাঁর শরীর আগা-গোড়া সোনা দিয়ে মোড়ানো। হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো তিনি সব সময় মেকআপ করে ফিটপাট হয়ে থাকেন। তাঁর চরিত্রের বড় অংশজুড়ে রয়েছে স্বামী ডিপজলের কদমবুচি করা, আর দেবর ইমনের কান টেনে দুষ্টু শাষণ করা। এক দিন রেসি কদমবুচি করছিলেন, দাঁড়ানো ডিপজলের চোখ গড়িয়ে টপাটপ পানি পড়ছে তাঁর জুতার ওপর। এর পরই একটা দুঃখমিশ্রিত গানে চলে গেলেন তাঁরা। কিসের এত দুঃখ তাঁদের, সেটা অবশ্য বোঝা গেল না। তবে এটা বোঝা গেল, পরিচালকের জ্যামিতিক জ্ঞানে সমস্যা আছে। চোখ ও জুতার মাঝখানে যে বিশাল একটা ভুড়ি আছে! সেটা অতিক্রম করে তো পানি নিচে পড়ার কথা না। ছবির মাঝামাঝি এসে জানা গেল, সৎ ও আদর্শবান এ দারোগা পৈতৃকসূত্রে বিশাল সম্পত্তির মালিক। ঢাকা শহরের ১০০ ধনীর তালিকায় তাঁর নামটিও থাকবে। ১৪টি বাড়ি আছে তাঁর। সম্মানের জন্য তিনি পুলিশের চাকরি করেন। আইজি সোহেল রানার মেয়ে সাহারা। কিছুতেই একজন দারোগার ভাইয়ের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন না তিনি। পুরো ছবিতে এ নিয়েই দ্বন্দ্ব।
গল্পে যদিও নতুন কিছুই নেই, গতানুগতিক। তবু গল্প নিয়ে আপত্তি নেই। আপত্তি শিল্পিদের চরিত্র নিয়ে। প্রতিটি চরিত্র ভোগবাদী। নিজের স্বার্থে টান লাগলেই চরিত্রগুলো চরিত্র হারিয়ে ফেলে। একেবারে মার্কিনি চরিত্র। সাহারার জন্মদিনে সোহেল রানা বাড়িতে পুলিশি পাহারা বসান। ডিপজলই পাহারার দায়িত্ব পান। কারণ তখনই বানোয়াট একটা আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা করা যাবে। সোহেল রানার সঙ্গে বেয়াদবির অপরাধে ইমনকে ভরা মজলিসে শায়েস্তা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ভাই ডিপজলকে। একজন আইজি কাউকে প্রেপ্তার করার আদেশ দিতে পারেন, মেরে আহত করার হুকুম দিতে পারেন না। যেদিন জায়েদ খানের সঙ্গে সাহারার বিয়ে, ওই দিন কোনো পাহারাই নেই! যেন নির্বিঘ্নে মারামারি করা যায়। পুলিশ আসে যথারীতি মারামারির পর। গল্পে একটি চরিত্রের সঙ্গে আরেকটি চরিত্রের সম্পর্কে কোনো বাস্তবতা নেই, পুরোটাই ফিল্মি। ঘটক বলতেই যেমন সিনেমায় দেখানো হয়, হাতে ছাতা, মুখে পান, ছাগলা দাড়ি_অনেকটা তেমনই। কাবিলা ও নাসরিন না থাকলে এ ছবির কোনো ক্ষতি তো হতোই না, বরং ভালোই হতো।
একটি টিভি অনুষ্ঠানে ছবির পরিচালককে দেখা গেল ডিপজলের অভিনয় প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এমন কোনো অভিনয় নেই, যেটা নাকি ডিপজল পারেন না। প্রশংসিত 'প্রেমের তাজমহল' ছবির পরিচালকের এমন মন্তব্যে মনে সন্দেহ তৈরি হয়। এখানেও মার্কিনি কূটচাল। বাচনিক, আঙ্গিক, আহার্য ও সাত্তি্বক_অভিনয়ের এ চার রীতির প্রথমটাতেই তো ডিপজল ফেল। বাকিগুলো তো আসে পরে। তাঁর প্রতিটি সংলাপেই 'হাচা কতা কইচ', 'মাগার', 'পাইচালাম', 'কেঠা কইচে', 'পরমান' [প্রমাণ]; এ ধরনের শব্দ পাওয়া যাবে। শুধু এ ছবিতেই যদি এমন বাচনভঙ্গি থাকত, ব্যাপার ছিল না। সব ছবিতেই তিনি একরকম। এর মানে প্রতিটি ছবিতেই তিনি নিজের চরিত্রে অভিনয় করেন! সাহারার অভিনয়ে শাবনূরের ছাপ স্পষ্ট। এখন দেখা যাচ্ছে, দিন দিন মুটিয়ে যাওয়ার শিক্ষাটাও তিনি শাবনূরের কাছ থেকেই পেয়েছেন। ইমনের ঝুলিতে খুব কম 'এঙ্প্রেশন'-ই আছে। দুঃখ ও কষ্টের অভিব্যক্তি যদি একই মনে হয়, তাহলে তো বিরাট সমস্যা। নিয়ম করে আয়নার সামনে বসে অভিব্যক্তিগুলো ঠিক করে নেওয়া উচিত।
ছবির গানগুলো ভালোই। এন্ড্রু কিশোরের এবার থামা উচিত। আর কত? চড়া সুরগুলো কেমন যেন ফাটা ফাটা মনে হয়। 'জলের ভেতর জল' গানটি ভালো। কাবিলা আর নাসরিনের গানটিতে 'অবিচার' ছবির 'ও যাদুরে দেখলে কেমন মজার খেল'-এর সুর পাওয়া যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে হিন্দি মিউজিক কেন? লাইট ভালো হয়নি। প্রথম গানের লাইট দেখে মনে হয়েছে, যাত্রার প্যান্ডেলের লাইটে শুট করা হয়েছে। মারামারির দৃশ্যেও নতুনত্ব নেই। কোরিওগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্বই চোখে পড়েনি। নির্মাণেও নেই নতুনত্ব।

ব্যবচ্ছেদ
ছবির নাম : আমার পৃথিবী তুমি
পরিচালক : গাজী মাহবুব
অভিনয়ে : ডিপজল, সোহেল রানা, আনোয়ারা, সাহারা, রেসি, ইমন, মিশা সওদাগর, আহমেদ শরীফ প্রমুখ
মুক্তির তারিখ : ৩১ আগস্ট
রেটিং : ২/৫

মুভিটার ইউটিউব লিঙ্ক খুজে পাই নাই। তাই কোন ভিডিও যোগ করতে পারলাম না।

মুভি রিভিউ নেয়া হয়েছে আজকের কালের কন্ঠ থেকে

পূর্বে আমার পার্সোনাল ব্লগে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০৭
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×