somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বাতাসে বোমার গন্ধ{একটি ভয়ঙ্কর থ্রিলার- না পড়লে মিস করবেন}

০১ লা মে, ২০১১ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক।
সময়ঃ১৮ই আগস্ট ২০০৫, সকাল দশটা
স্থানঃএকটি স্কুল।বাংলা ২য় পত্র ক্লাস

স্যার ক্লাসে ভাবসম্প্রসারন পড়াচ্ছেন।

"ত্যাগেই প্রকৃত সুখ"স্যার বললেন"ত্যাগ করলেই গরবে ভরে ওঠে বুক।সবাই বুঝছ?"
ছাত্ররা সবাই চেচিয়ে বলে,"জ্বি স্যার"
"ভাল"
“স্যার”হঠাৎ এক ছাত্র দাঁড়িয়ে যায়।কথার মাঝখানে বাধা পড়ায় স্যার বেশ বিরক্ত হন।ভ্রু কুচকে বলেন,"কিরে তুইও কি আবার ত্যাগ করতে যাবি নাকি?
স্যারের কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে।বেচারা ছেলেটা চুপ হয়ে যায়।
স্যার অবাক হয়ে লক্ষ করেন ছেলেটা কিভাবে যেন পেট মোচড়াচ্ছে।দেখে স্যার এর মায়া হয়।“ আহারে” মনে মনে ভাবেন তিনি।মরনিং শিফট।সকাল সাতটা থেকে ক্লাস।আর আজকালকার পো=লাপানগুলা যে কি।একটাও তাড়াতাড়ি ঘুমাবে না।ঘুমে ও কুলায় না,আবার ঠিকমত নাস্তা, বাথরুম- এসবও করতে পারে না।অথচ নিজেদের সময় তারা সবাই ছিলেন ভদ্র সন্তান।“আফসোস, ব্যাপক আফসোস” মনে মনে ভাব্লেন তিনি। “দেশটা এক্কেবারে শ্যাষ”
“স্যার”ছেলেটার ডাকে বাস্তবে ফিরে এলেন তিনি। এখনও আগের মত পেট মোচড়াচ্ছে।সমস্যা কি? ডায়রিয়া নাকি?
“এদিকে আয়”ছেলেটাকে ডাকলেন তিনি।আস্তে করে জিজ্ঞেস করলেন্,“টয়লেটে যাবি?”
ছেলেটা কিছু বলে না। বোধহয় সবার সামনে কিছু বলতে লজ্জ পাচ্ছে।শুধু মাথা উচুনিচু করে।অরথাৎ হ্যা।
“একটু চেপে রাখ।দশ মিনিট।ক্লাসটা শেষ হোক।কেমন?”
ছেলেটা কিছু বলে না।স্যার তার মুখের দিকে তাকান।ঘামে ভিজে গেছে।অবস্থা মনে হয় সিরিয়াস।প্রেশার অনেক বেশি।“আচ্ছা যা”
ছেলেটা যেন উড়ে গেল।

দুই।

উফফ… আজ সকাল থেকেই খালি পেইন খাচ্ছি।কাল সারারাত টিভি দেখছি।অবশ্য উপায়ও ছিল না।কাল সারাদেশে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হইছে।একটু পর পর খবর আসছিল অমুক জেলায় বোমা হামলা হইছে, তমুক জেলায় বোমা হামলা হইছে।সারা শহরে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা।টিভিতে শুধুই খবর দেখলাম।এম্নিতে আমি খবর দেখি না। দেশে বিদেশে কি ঘটছে তা নিয়ে আমার তেমন কোন আগ্রহ নাই।কিন্ত এমন ধুন্ধুমার কিছু ঘটলে আমি টিভি গলায় ঝুলিয়ে বসে থাকি।এম্নিতে আপুর সিরিয়ালের জ্বালায় কিছু দেখতে পারি না।কিন্তু এমন একটা ইস্যু পেলে রিমোট কন্ট্রোল্টা আমার আর টিভির সামনে আমি।আপুকে ব্যাপক পেইন দেয়া যায়।
কিন্তু এখন আমি নিজেই পেইন খাচ্ছি।রাতে ঘুম ভাল হয় নাই, আজকে সকালে আবার ক্লাস।ঘুম থেকে উঠতেই খবর হয়ে গেল।কোনরকমে চোখ খোলার চেষ্টা করছি তখন শুনি আম্মার চিৎকার,“এই রাফাত ওঠ।স্কুলে যাবি না?”
গতকাল জান নিয়ে স্কুল থেকে ফিরে আসার পর আম্মা জড়িয়ে ধরে বলল,“আমার বাবাটা সহিসালামতে ফিরে আসছে।আমার আর কিছু চাওয়ার নাই” আর একদিন যেতে না যেতেই এই ব্যবহার?
ধুর শালা।আর ভাল্লাগে না।নিরুদ্দেশ হয়ে যাব।
কিন্তু যাব কই?
ভাবলাম পরে দেখা যাবে।আগে তো এই জাহান্নাম থেকে বের হই।
কিন্তু না।আমি পারলাম না।আব্বু ঠিকই আমাকে রিকশা করে স্কুলে দিয়ে গেল।এক জাহান্নাম থেকে আরেক জাহান্নামে।ঊ ঊ ঊ(মনের দুঃখে কাদলাম)।
শুরু হল ক্লাস।আমি পিছনে বসে যথারীতি ফাকি দিচ্ছি।
সকাল ১০টা।আখলাক স্যারের ক্লাস।বাংলা ২য় পত্র।
স্যার ক্লাসে ভাবসম্প্রসারন পড়াচ্ছেন।"ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।"
হঠাৎ পাশ থেকে হাবিব বলল,"ক্লাস শেষে কিন্তু ম্যাচ।"
আমি অবাক হয়ে বললাম,"কাদের সাথে?"
“ক্লাস টেন”
“আজকে?”
“হ্যা।তুইইতো ম্যাচ নিয়েছিলি।মনে নাই?”
আমার সব মনে পড়ল।আমরা ক্লাস নাইন।স্কুল ফাইনালে ক্লাস টেনের কাছে হারলাম।ওদের এক সালমানই আমাদের হারিয়ে দিল।তাই সেই সালমান যখন জ্বরে পুড়ে মরতেছে তখন প্রতিশোধের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে আমি ওদের চ্যালেঞ্জ করে বসলাম।জানি সালমান ছাড়া ওরা হারবে।
“তো কি হইসে?”
“সালমান আজকে স্কুলে আসছে।"
“কি?”
“আস্তে বল।স্যর শুনবে।"
“এখন কি করবি?”
“জানি না” হাবিব নিজের পড়ায় মন দেয়।
এখন আমার কি হবে?আজ হারলে আমি তো পুরাই শ্যাষ।ক্লাসে আর মুখ দেখাতে পারব না।কি করি?
হঠাৎ প্রেশার বেড়ে গেল।রিলিজ করে আসতে হবে।এখুনি যাওয়া দরকার।
“স্যার”আমি উঠে দাড়ালাম।
স্যার বেশ বিরক্ত হলেন মনে হয়।ভ্রু কুচকে বলেন,"কিরে তুইও কি আবার ত্যাগ করতে যাবি নাকি?”
স্যারের কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে।বেচারা আমি চুপ করে থাকি।

তিন।

অবশষে শান্তি।
আমি টয়লেটে পৌছে গেলাম।
এবার আমিও ত্যাগের মহিমা বুঝব।মনে মনে হাসলাম আমি।
দরজা খুলে টয়লেটে ঢুকে গেলাম।
কিন্তু এ কী?

চার।

ছেলেটা দৌড়ে ক্লাসে ঢুকল।প্রচন্ড রকম হাফাচ্ছে।
স্যার ছেলেটার দিকে তাকালেন।“কিরে তোর এই দশা কেন?প্যান্ট ভেজা, চেইনও লাগাসনি।”
স্যারের কথায় সবাই হেসে উঠল।কিন্তু সেদিকে তাকানোর মত মনযোগ ছেলেটির নেই।
“স্যার”
“কি”
“আসেন আমার সাথে”
“কি হইসে?” জানতে চাইলেন স্যার।
“আপনি সেন আমার সাথে”
“কি হইসে এটাতো বল”
“স্যার বোমা”
প্রচন্ড অবাক হলেন স্যার।“কি?”
“বোমা”
পুরো ক্লাসে এই কথা শুনে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল।“এই সবাই শান্ত হয়ে বোস।”ছেলেটার দিকে ফিরলেন তিনি।“কোথায় বোমা?”
“টয়লেটে”
“তুই নিজে দেখেছিস?”
“হ্যা স্যার”
“কিরকম দেখতে?”
“একটা টিনের মধ্যে।লাল রঙের কস্টেপ দিয়ে মোড়ানো।”
“কিভাবে বুঝলি ওটা বোমা?”
“গতকাল স্যার এভাবেইতো জে এম বি সারাদেশে বোমা হামলা চালালো।”
“হোয়াট?”

(চলবে)

লেখকের কথাঃ অনেকদিন আগে এটা লিখেছিলাম।আমাদের ওখানে সত্যিই এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল।ওটার ওপর base করে লেখা।দেখি কিভাবে ফিনিশিং দেয়া যায়।

লেখাটা আগেও একবার সামুতে দিছিলাম।ফ্লপ মারছিল।যেহেতু আমি হিটখোড় ব্লগার-তাই আবার পুস্টাইলাম।কিছু ফাও হিট কামানোর লাইগা।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×