somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসা দিবসের গল্পঃ যে কারণে ভালবাসি বলা হয় না {পর্ব-২}

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বের জন্য এখানে ক্লিকানঃ

ভালবাসা দিবসের গল্পঃ যে কারণে ভালবাসি বলা হয় না{পর্ব-১}

ছয়।
উত্তেজিত মা।

দুপুর ২.২০।
-আম্মু।
-বল।
-সরি।
-কেন?
-আমার জন্য আজ আব্বুর এই দশা।
-ধুর বোকা।কে বলল তোকে এই কথা?এসব বাজে কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
-চাচ্চুর সাথে আমার কথা হয়েছে।
আম্মু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।–কি বলছে ও?
-বলল আজ সকালে তোমার আর আব্বুর ঝগড়ার কথা।
আম্মু চুপ করে থাকে।
-আম্মু।
-কি?
-চুপ করে থেকো না।কিছু বল।
-কি আর বলব?যা বলার সবতো ওই গাধাটাই বলে দিছে।এত করে বললাম চুপ থাকতে, কিন্তু না।উনার পেটে কোন কথা চাপা থাকে না।কোনটা বাচ্চাদের বলতে হবে আর কোনটা হবে না সেই সেন্সটাও নাই।
-আম্মু।
-কি?
-তোমরা আমাকে ভাবটা কি?আমি এখন আর বাচ্চা নাই।আমারও সব জানা উচিত।আমারও কিছু বলার থাকতে পারে।এই পরিবারেরতো আমিও একজন সদস্য।সায়মার ব্যপারে তোমাদের আপত্তি থাকলে আমাকে বল।সেটা নিয়ে চাচ্চুর সামনে ঝগড়া করার তো কোন মানে হয় না।
আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
-রাফসান তুই এখান থেকে যা।তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।
আমার নিজের ওপর ভয়ানক রাগ লাগে।আমার হয়েছেটা কি?আজকে সবার সাথে বেয়াদবী করছি,কোনভাবেই নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারছি না, সবাই আমার ওপর রাগ করছে।
আম্মুর পাশে বসি আমি।
-আম্মু।
-আবার কি?
-সরি।
-ঠিক আছে।
-আসলে আমি মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারছি না।
-তুই ঠিক তোর বাপের উল্টা।
হঠাৎ এই কথা শুনে আমি অবাক হই।
-তোর বাপ সব সময় বলত আমার ছেলেটা আমার মত হবে না।
-তাই নাকি?
-হ্যা।
-কেন?
-দেখ তোর বাপ অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে।সে চায় নাই তোর জীবনটা সেরকম হোক।
-তো আমি কোন দিক দিয়ে আব্বুর থেকে আলাদা?
-তোর বাপ ভীষণ শান্ত আর চাপা স্বভাবের।সহজে রাগে না, নিজের দুঃখকষ্টগুলো সব নিজের মধ্যেই চেপে রাখে।অনেক ভেবে চিন্তে কথা বলে আর অনেক বেশী দায়িত্বশীল।
-আর আমি কি ঠিক তার উল্টা?
-হ্যা।
আমার ভীষণ রাগ লাগে।তবুও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করি।
-তার মানে আমি অশান্ত আর দায়িত্বহীন?
-সবসময় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
আমি মনে মনে নিজেকে বলি, কুল ডাউন।
-কোন কোন ক্ষেত্রে?
-উদাহরণ দেব?
-প্লিইইইজ। আমার কণ্ঠে একটা ব্যাঙ্গের সুর থাকে।
আম্মু আমার এই ব্যাঙ্গকে অগ্রাহ্য করে বলে,আজকের কথাই ধর।তুই কখন জানলি তোর হাসপাতালে?
-চাচ্চু বলল।
-কখন?
-দুপুরে?
-তোর বাপ স্ট্রোক কখন করল?
-সকালে।
-তাহলে পুরো সকাল তোমার সাথে যোগাযোগ করা গেল না?
-আরে আশ্চর্য আমিতো ক্লাসে ছিলাম।
-মানলাম তুমি ক্লাসে ছিলা।হয়ত তুমি কোন কল রিসিভ করতে পারতা না।কিন্তু তোমার ফোনে কোন কলই ঢুকে নাই।তোমাকে তো কোন ম্যাসেজও দেয়া যায় নাই।তোমার ফোন বন্ধ ছিল।আশ্চর্য যদি বন্ধই রাখবা তাহলে আর মোবাইল ইউজ করার মানে কি?
-আশ্চর্য আমিতো ক্লাসে ছিলাম ফোন বন্ধ রাখব না?
-বন্ধ কেন রাখবা? সাইলেন্ট রাখলেই তো হয়।
আমি চুপ করে থাকি।আব্বু সিসিইউতে আর আম্মুর সাথে আমি এগুলা কি নিয়া কথা বলতেছি?
-আরো শুনবি ?
-না।
-না কেন?আম্মু উত্তেজিত হয়ে পরে। হাসপাতালের বাগানে তুই তোর চাচার সাথে চেচামেচি করলি কেন?তাও আবার পারিবারিক ব্যাপার স্যাপার নিয়ে? যারা তোদের আশে পাশে ছিল সবাই এসব নিয়ে ফিসফাস করতেছে।সবার ধারণা আমরা স্বামী-স্ত্রী সারাদিন শুধু ঝগড়াই করি।
আম্মু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে।কি হল চুপ কেন?তুমি না অনেক বড় হইছ?সব না তোমার জানা উচিত?তাহলে নিজের দোষগুলাও ভাল করে জেনে নাও যাতে সামনে আর কেউ এভাবে তোমাকে বলতে না পারে।
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি।
চাচ্চু হঠাৎ ছুটতে ছুটতে আসে।
-ভাবী জলদি চল।
-কি হইছে?আম্মু জানতে চায়।
-ডাক্তার তোমাকে ডাকে।
-কেন?
-জানিনা।
-আমিও আসব?আমি জানতে চাই।
-তুই খাইছস?চাচ্চু জানতে চায়।
-না। আমি জবাব দেই।
-তাহলে তুই খেয়ে আয়।এই হাসপাতালে ভাল ক্যন্টিন আছে।
অন্যসময় হলে আমি রাগারাগি করতাম।আজ আমি নিঃশব্দে মেনে নেই।আম্মু আর চাচ্চু চলে যায়।আমি ক্যান্টিনের দিকে রওয়ানা দেই।

সাত।
হাসপাতালের ক্যান্টিন।

দুপুর ২.৩০।
দশ মিনিট ধরে অর্ডার দিয়ে বসে আছি।খাবার আসার কোন নাম গন্ধ নাই। মেজাজ সেরকম খারাপ হচ্ছে।
পাশ একটা ক্যান্টিন বয় হেটে যায়।
-এই।আমি ডাকি।
-আমাকে বলেন?ছেলেটার চোখে প্রশ্ন।
-তো আর কাকে বলব?
-বলেন।ছেলেটা এগিয়ে আসে।
-কাকে যেন অর্ডার দিলাম, দেখতো সে কোথায়?
-কারে দিছেন?
-নাম জানিনা।
-তাইলে অপেক্ষা করেন।অর্ডার যখন দিছেন খাবার তখন আসবে।
মাথা সিরিয়াস গরম হয়ে যায়।
-যা বললাম তাইই কর।আমি চেচিয়ে উঠি।জলদি গিয়ে ছেলেটাকে খুঁজে বের কর আর বল আমার খাবার আনতে।
ছেলেটা চলে যায়।অবাক লক্ষ্য করি ক্যন্টিনের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
শিট।আম্মু ঠিকই বলছে।আমি আসলেই একটা গাধা।ছেলেটাকে আমার সরি বলা উচিত।ছেলেটা চলে যাচ্ছিল ।আমি ডাকি তাকে।
-এই।
ছেলেটা ফিরে তাকায়।বলেন।
-সরি।আসলে আমার এখন মাথা ঠিক নাই।বাপ অসুস্থ।কিছু মনে কোর না।
ছেলেটার মুখে হাসি ফোটে।আমি কিছু মনে করি নাই।আমি দেকতাছি আপনের অর্ডার কেডা নিছে।
ছেলেটা চলে যায়।পাচ মিনিটের মধ্যে আমার খাবার চলে আসে।
বাহ।ভাল ব্যবহারের তো বেশ দাম আছে।
আমি খাওয়া শুরু করি।ভালোই খিদে পেয়েছে।
হঠাৎ মোবাইল বেজে ওঠে।শরিফ।
-বল।
-তুই কই?
-হাসপাতালে।কেন?
-আঙ্কেল অসুস্থ?
-হ্যা।কে বলল?সায়মা?
-হ্যা।
-আর কি বলল?
-তোদের মধ্যে কি কোন সমস্যা হচ্ছে?
-সায়মা কি তোকে তাই বলল?
-না।
-তাহলে?
-আমার মনে হইল।
-কেন এমন মনে হইল?
-গোয়েন্দার মত প্রশ্ন করছিস কেন?
-সাধারণ একটা প্রশ্ন।গোয়েন্দাগিরির কিছু নাই।জবাব দে।
-সায়মা বলল তুই নাকি ওর সাথে মিসবিহেভ করছিস।
-হুম।
-হুম মানে?
-মানে আমার এখন মাথা ঠিক নাই। যাকে যাইই বলি না কেন সেটা আমার মনের কথা না।এটা ওর বোঝা উচিত।বাইরের কারোর সাথে এসব নিয়ে কথা বলার তো মানে নাই।
-তার মানে আমি বাইরের কেউ?
-আমি তো সে কথা বলি নাই।
-তোর কথার মানে তো তাই দাঁড়ায়।
-আজব।কি বলি আর কি বুঝস?পাগল হয়ে গেলি নাকি?এত সেন্টি হওয়ার তো কোন দরকার নাই।
-রাফসান।
-কি?
-আঙ্কেল যে হাসপাতালে এটা আমাকে বলিসনি কেন?
-বললে কি হত?
-বললে আমি বুঝতাম তুই আমাকে বন্ধু ভাবিস আর তাই বিপদের সময়ে আমাকে পাশে চাস।কিন্তু আমিতো বাইরের মানুষ।ওকে। ভাল থাকিস।
-শরীফ শোন...
লাইন কেটে যায়।শিট।
ধুর শালা, খাবোই না। আমি উঠে পড়ি। সায়মা ফোন দেই।
-হ্যালো।
-শরীফকে তুমি কি বলছ?
-কখন?
-একটু আগে।
-কেন?সায়মা অবাক।ও কিছু বলছে তোমাকে?
-আমাদের মধ্যে যদি ঝগড়া হয় সেটা আমাদেরই সলভ করা উচিত। অন্য কাউকে এতে ইনভলভ না করাই ভাল।
-তোমার কি হইছে?
-শোন, আমার কোন ব্যাপার তোমার অপছন্দ হলে বা আমার কোন কথায় বা কাজে কষ্ট পাইলে তুমি আমাকে চার্জ করবা। জনে জনে বিচার দিবা না।
-তুমি এমন করতেছ কেন? সায়মা কেঁদে ওঠে।
আমি ফোন কেটে দেই।
আম্মু আর চাচ্চু দাঁড়িয়ে ছিল।আমি তাদের দিকে এগোই।
-কি বলল ডাক্তার?আমি জানতে চাই।
আম্মু কিছু বলে না।শুধু আম্মুর গালে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রু দেখতে পাই।
-এদিকে আয়।চাচ্চু বলে।
আমি আর চাচ্চু একটু দূড়ে এগোই।
-রাফসান।
-কি?
-তোর বাপের আবার জ্ঞান ফিরেছিল।
-ফিরেছিল মানে? এখন আবার সেন্সলেস?
-হ্যা।
-শিট।ডাক্তার তাহলে ডাকল কেন?
-যখন জ্ঞান ফিরল তোর বাপ একজনকে দেখতে চেয়েছিল।
-আম্মুকে?
-না।
-তাহলে কাকে?আমাকে?
-না।
-তো কাকে?
-তোর বাপের সাবেক প্রেমিকাকে।
-হোয়াট?


আট।
পুরোনো গল্প।

দুপুর ২.৪০।
-চাচ্চু।
-বল
-আব্বুর কোন প্রেমিকা ছিল?
-হ্যা।
-কখন?
-যখন ভাইয়া ভার্সিটিতে পড়ে।
-আব্বুর ক্লাসমেট ছিল?
-হ্যা।
-তুমি জানতা?
-হ্যা এবং আমি তাকে চিনতাম ও।
-কেমন ছিলেন উনি?
-ভালই।
-খুব সুন্দর ছিলেন?
-খুব কিনা জানিনা, তবে সুন্দর ছিলেন।
-আম্মুর চেয়েও সুন্দর?
-জানিনা।
-বোধহয় আম্মুই বেশি সুন্দর।
-কেন তোর এরকম মনে হল?
-আম্মু সুন্দর বলেই হয়ত আব্বু তাকে বিয়ে করেছে।
-রাফসান।
-বল।
-নিজের বাপকে এতদিনে এই চিনলি?
-কেন?কিছু কি ভুল বললাম?
-তোর কি ধারণা তোর বাপ বাইরের সৌন্দর্য দিয়ে মানুষ বিচার করে?
আমি চুপ হয়ে যাই।মুখের লাগাম টেনে ধরা দরকার।
-রাফসান।
-হু।
-জবাব দিলি না যে।
আমি চুপ।
চাচ্চু হেসে ওঠে।
-কি হল?
-কিছু না।
-হাসো কেন?
-এমনি।চল ওনাকে ফোন করি।
-তোমার কাছে ওনার নম্বর আছে?
-হ্যা।
-কিভাবে?
-কারণ ওনার সাথে আমার মাঝে মাঝেই যোগাযোগ হয়।
-কেন যোগাযোগ কর?তুমিও কি উনার প্রেমে পড়ছ?
-যদি বলি তাই?
আমি চুপ হয়ে যাই। কি বলব আমি?
-রাফসান।
-বল।
-কথাবার্তায় আরেকটু স্মার্ট হ।তুই খুব সহজেই বোল্ড হয়ে যাস।
-ঠিক আব্বুর মত। তাই না?
-হ্যা।
-জানতাম তুমি এটাই বলবা।
-তাই?
-হ্যা।
-গুড।চাচ্চুর মুখে হাসি।
-এমন সময়ে তোমার হাসি আসে কি করে?
-বাজে কথা বাদ দে।আয় আমরা ফোন করি।
-তার আগে তুমি ক্লিয়ার কর কেন তার সাথে তোমার এখনও যোগাযোগ হয়?
চাচ্চু আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
-রাফসান।
-বল।
-তুই বোধহয় বিশ্বাস করছিস যে আমি উনার প্রেমে পড়ছি?
আমি চুপ।আমার আসলেই মনে হয় চাচ্চুও উনার প্রেমে পড়েছিল।
-উনি একটা এনজিওতে চাকরী করেন।একবার আমাদের অফিসে আসছিলেন একটা কাজে।তখনই উনার সাথে আবার যোগাযোগ হয়।
-আবার মানে? তার মানে কি আগে যোগাযোগ ছিল, তারপর আবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হইছিল?
-হ্যা।ভাইয়ার সাথে যখন উনার সম্পর্ক ছিল তখন তো আমিই দুজনের পোস্টম্যান ছিলাম।
-রিলেশন ভাঙল কেন?
-উনার আব্বা রাজী ছিলেন না।
-আর দাদা-দাদী?
-আমাদের দিক থেকে কোন সমস্যা ছিল না।
-উনার আব্বু রাজী ছিলেন না কেন?
-কারণ উনারা আমাদের চেয়ে ধনী ছিলেন।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।
-কি হইল?
-এটা কি বাংলা সিনেমা? ছেলে ধনী না, সো বিয়ে হবে না।আজব পুরা।নিজেরা বিয়ে করে ফেললেই পারত।
-আমি তোকে বলছি সত্তরের দশকের ঘটনা।তোদের জন্য হয়ত এখন এটা সাধারণ ব্যাপার কিন্তু তখন আমরা এভাবে ভাবতেই পারতাম না।তারচেয়ে বড় কথা বিয়ে করে রাখবে কোথায়? আমাদের নিজেরদের অবস্থাই তখন খারাপ, নতুন একজন ঘরে আসলে তাকে খাওয়াব কি?
-অবস্থা খারাপ মানে?
-আজকে আমাদের যে অবস্থা তুই দেখছিস আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগে কিন্তু আমরা এরকম অবস্থায় ছিলাম না।তোর দাদা ছিল কৃষক।কতইবা আর তার আয়?আব্বা-আম্মা থাকতেন গ্রামে।আমি তখন কলেজে পড়ি আর উনাদের বাসায় লজিং থাকি।
-মানে আব্বুর প্রেমিকার বাসায় লজিং থাকতা?
-সাবেক।চাচ্চু আমাকে মনে করিয়ে দেয়।
-ও হ্যা।সাবেক।তুমি উনাদের বাসায় লজিং থাকতা?
-হ্যা।ভাইয়া আমাকে মাঝে মাঝে দেখতে আসত।
-আব্বু তখন কি করত?
-তোর বাবা আর উনি-দুজনেই তখন ভার্সিটিতে। দুজনের পরিচয় হল, তারপর তোদের ভাষায় যাকে বলে অ্যাফেয়ারও হল।
-বেশ সিনেমেটিকতো।
-হ্যা।উনাকে সরাসরি তো আর লেখা যায় না, তাই উনার চিঠিগুলা ভাইয়া আমার নামে পোস্ট করত।আমি চিঠিগুলো উনাকে পৌছে দিতাম।
-তারপর?
-তারপর আর কি?উনি একদিন চিঠিসহ উনার মার কাছে ধরা পড়লেন।যে সময়ের কথা বলছি তখন প্রেম করাটা একটা মেয়ের জন্য বিশাল অপরাধ।
-সুতরাং উনার বিচার বসল?
-হ্যা।ভাইয়া ঘরে ডেকে অপমান করে তাড়িয়ে দিল।
-আর তুমি?তোমার কি হল?
-আমার আর কি হবে?আমাকে লজিং থেকে বের করে দিল।
-শিট।তাহলে তোমার পড়ালেখা?
-সে ভা অন্য কাহিনী।পরে কোন একদিন বলব তোকে।
-হুম। তারপর?
-আরেকজনের সাথে উনার বিয়ে হয়ে গেল।
-আর আব্বু?
-তোর বাপ আর কি করবে? পাস করল, তারপর চাকরী নিল। তারপর তোর মাকে বিয়ে করল।তারপর তোর জন্ম।আর কিছু জানতে চাস?
-তুমি ফোন কর উনাকে।
চাচ্চু নম্বর ডায়াল করে।আমি ওখান থেকে সরে যাই।


নয়।
নতুন বিপদ।

দুপুর ৩.০০।
-রাফসান।
-বল।
-ভদ্রমহিলা একটু পরেই আসবেন।
-হুম্ম।
-তোর মা কই?
-দাড়াও, দেখছি।
আমি আম্মুকে খুজতে বের হই।আম্মু একা বসে ছিল বারান্দায়।
-আম্মু।আমি ডাকি।
আম্মু ফিরে তাকায়।
-কি?
-কি কর?
-কিছু না।তোর বাবার জ্ঞান ফিরেছে ?
-না।তুমি কিছু খাইছ?
-না।
-খাবা না?
-না।খিদে নাই।
আমি আম্মুর পাশে বসি।
-তুমি কি আগে থেকে জানতা?
-কি?
-তোমাদের বিয়ের আগে যে আব্বুর একটা রিলেশন ছিল?
-বিয়ের পর তোর আব্বু বলছিল।
-সত্যি?
-হ্যা।তোর বাপ আমার কাছে কিছুই লুকায় নাই।
-তারপর?
-তারপর কি?আম্মুর চোখে প্রশ্ন।
-তোমার রিঅ্যাকশান কি ছিল?
-প্রথমে শকড ছিলাম।পরে মেনে নিয়েছিলাম।
-মেনে নিলা?কেন?
-কারণ তোর বাপ আমার কাছে কিছু লুকায় নাই।সব স্বীকার করছে।সে চাইলে সব চেপে যেতে পারত।সে তা করে নাই।আর তাছাড়া তখন তুই আমার পেটে।তোকে নিয়ে সব ছেড়ে ছুড়ে আমি যাব কোথায়?
আশ্চর্য।সব কিছুর দায় শেষ পর্যন্ত আমার উপরই কেন বর্তায়?
-তুমি কি উনাকে নিয়ে ইনসিকিউরড ছিলা?
-না।
আমি অবাক।
–কেন?
-কারণ আমি তোর বাবাকে বিশ্বাস করি।
আমি উঠে দাড়াই।
-কোথায় যাচ্ছিস?আম্মু জিজ্ঞেস করে।
-একটু হেটে আসি।
আমি ওখান থেকে সরে যাই।
ফোনটা হঠাৎ বেজে অঠে।শরীফ।
-বল।
-কই তুই?
-এখনও হাসপিটালে।
-একটা খারাপ খবর আছে।
-কি?
-সায়মা ওর বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
-কি?
-হ্যা।
-কেন?
-জানিনা।
-ও কোথায় এখন?
-আমার পাশে।
-তোর পাশে?তোরা কোথায়?
-টেক্সীতে।
-কেন?
শরীফ কোন জবাব দেয় না।
-কোথায় যাচ্ছিস?
-তোর কাছে।
-মানে?
-মানে সায়মা ওর ঘর থেকে বের হয়ে গেছে।ও এখন তোর কাছে আসবে।তুই যদি ওকে গ্রহণ না করিস তাহলে ও আত্মহত্যা করবে।
-হোয়াট?
-হ্যা।
-সায়মাকে ফোন দে।
-ধর।
-হ্যালো।আমি সায়মার কন্ঠ শুনতে পাই।
-কই তুমি?
-শরীফ তো বললই।আমরা টেক্সীতে।
আমার মাথা গরম হয়ে যায়।কথা বলার ঢং দেখো।আমি এদিকে নিজের জ্বালায় বাচি না, আর উনি আসছেন নতুন ঢং করতে।
-এই পাগলামি করার অর্থ কি?আমি শান্ত কন্ঠে জানতে চাই।
-এটা তোমার কাছে পাগলামি মনে হচ্ছে?সায়মার কন্ঠ উত্তেজিত।
-হ্যা।আমার তাই মনে হচ্ছে।আমি আরও শান্ত কন্ঠে জবাব দেই।
-ঠিক আছে।
-কি ঠিক আছে?
-আমি তোমার কাছে আসব না।আমাকে যদি তোমার ঝামেলা মনে হয় তাহলে আর কেন তোমার কাছে আসব?দুচোখ যেদিকে যায় চলে যাব।
আজব।আমি রাগে পাগল হয়ে যাই।
-সায়মা।
-বল।
-একটা সত্যি কথা বলবা?
-জিজ্ঞেস করে দেখ?
-তুমি কি আমাকে ভালবাস?
-কোন সন্দেহ আছে?
-তাহলে এমন অবুঝের মত আচরণ কর কেন?
-আমার কোন কাজটা তোমার অবুঝের মত মনে হল?
-আমার বাপ স্ট্রোক করছে।তার জ্ঞান এখনও ফিরে নাই।কি হবে তাও ডাক্তার বলতে পারতেছে না। তুমি কি বুঝতেছ আমি কোন পরিস্থিতিতে আছি?
-রাফসান।
-বল।
-তুমি কি আমাকে ভালবাস?
-অ্যাঁ? আমি অবাক। মেয়ে দেখি আমার ডায়লগ দিয়ে আমাকে বোল্ড করতে চায়।
-কি হল? জবাব দাও।
-হ্যা,আমি তোমাকে ভালবাসি।
-আমাকে তুমি বোঝার চেষ্টা করছ?
-কি আজব?আমি পুরা বিরক্ত হয়ে গেলাম।এই সময়ে এসব প্রশ্ন কর কেন?
-তুমি জবাব দাও।
-জানিনা।
-এটাই তো সমস্যা।তুমি আমাকে কখনো বোঝার চেষ্টাই কর নাই।তোমার কি কখনো মনে হয় নাই তোমার বিপদে আমি তোমার পাশে থাকতে চাই , তোমাকে সাপোর্ট করতে চাই?
আমি চুপ।
-জানি তোমার কাছে কোন জবাব নাই।আসলে তুমি এমনই।প্রচন্ড স্বার্থপর একটা ছেলে, নিজের ব্যাপারগুলো ছাড়া আর কিছুই বুঝতে চাও না।ঠিক আছে , আমি ফোন রাখলাম।
-দাড়াও দাড়াও।
-আবার কি?
-শরীফ বলল তুমি নাকি ঘর থেকে বের হয়ে আসছ?
-হ্যা।
-কেন?
-আব্বু তোমার আর আমার ব্যাপারটা জেনে গেছে।
-তোমার আব্বুও?
-তারমানে আংকেলও জেনে গেছে?
-হ্যা।তারপরেই তো সব সমস্যার শুরু।
-মানে?
-মানে তুমি আগে এখানে আস, তারপর আমি বলতেছি সব তোমাকে।
-আচ্ছা।
-তোমার আব্বু জানল কিভাবে?
-জানিনা।আব্বুর চারিদিকে লোক আছে।
-কিন্তু তুমি বাসা ছাড়লা কেন?
-কারণ আব্বু বলছে হয় তুমি নাহয় আব্বু যেকোন একটা বেছে নিতে।
-আর তুমি আমাকে বেছে নিলা?
-হ্যা।
-আর তোমার মা?
-আম্মু কি?
-তোমার আম্মু কি বলল?
-তুমি জাননা?
-কি জানব?
-আমার আব্বু আম্মুর বহু আগেই ডিভোর্স হয়ে গেছে।আমি আব্বুর সাথে থাকি।বাসায় কি হচ্ছে আম্মু তার কিছুই জানেনা।

আমি আরো একবার ধাক্কা খাই। আজকে আমি এসব কি শুনতেছ
শেষ পর্ব


===========================================


আমার লেখা আরও কিছু গল্পঃ


গল্পঃ যে কারণে ভালবাসি বলা হয় না

গল্পঃ ভালবাসার বৃষ্টি

গল্পঃ প্রিয়তমা, তোমার জন্য... ...

গল্পঃ তোমার বসন্ত দিনে ... ...

গল্পঃ তামাশা

গল্পঃ অতিথি

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৪
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×