এক।
ওহ শিট।
দুপুর ১.০০।
ক্লাস শেষ।বাইরে বেরিয়ে এলাম।
হঠাৎ সায়মা ডাক দিলো।এই।
আমি ঘুরে তাকাই।কি?
-বিকালে ফ্রি আছ?
-কেন?
-আজকে কেএফসি যাব।
আমি একটু মাথা চুলকে নিলাম।-আজকে বাদ দেয়া যায় না?
ও রেগে যায়।কোমরে হাত দিয়ে বলে, কেন?
-আরে ভাই মাসের শেষ সপ্তাহ চলে।হাত একদম খালি।
সায়মার মুখ রাগে লাল হয়ে যায়।
আমি বলি, কি?
-আমি কি খালি তোমার টাকায় খাই?আমি কখনো তোমাকে খাওয়াতে পারি না?
-তা পার।কিন্তু হঠাৎ?
সায়মা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।বুঝতে পারি ওর রাগ বাড়ছে।কিন্তু কারণটা কি?আমি কি কিছু ভুলে যাচ্ছি?
-কি?আমি আবার জানতে চাই।
-আজ কত তারিখ?
আজ কত তারিখ?আমি মাথা চুলকাই।
মনে পড়ে না।
আজ কি সায়মার জন্মদিন?
নাতো।কয়েকদিন আগেই তো দুজন মিলে ওর জন্মদিন উদযাপন করলাম।
তাহলে? ঘটনা কি?
-দিন তারিখের হিসাব নাই তোমার? সায়মা আরও রেগে যায়।
-কি আশ্চর্য।তুমি রাগ করতেছ কেন?আমি ওকে শান্ত করার চেষ্টা করি।
-রাগ করব না?আজকের দিনটা তুমি কি করে ভুলে গেলা?রাগ করব না আমি? সায়মার কন্ঠ আরও কর্কশ শোনায়।
তখনই কি মনে করে যেন আমি মোবাইলটা অন করি।আর তখনই স্ক্রীনে রিমাইন্ডার ভেসে ওঠে।
ওহ শিট।আজ ২৪শে জুন।এইদিন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল।
শিট। শিট। শিট। আমি ভুলে গেলাম কি করে?
পাশে তাকিয়ে দেখি সায়মা নেই।বাসার পথে হাটা শুরু করেছে।
-সায়মা।আমি ডাকি।
কোন জবাব নেই।ও হাটতেই থাকে।
-এই সায়মা।
এবারও কোন জবাব নেই।
আমি ওকে কল দেই।মনে মনে প্রার্থনা করি প্লিজ কল রিসিভ কর।
কিন্তু না। ও কেটে দেয়।
নিজের ওপর ভয়ানক রাগ লাগে।ধুর শালা।
ওকে ম্যাসেজ পাঠাই।খালি দুটো ওয়ার্ড।সরি জান।
দুই।
প্রথম পরিচয়।
সায়মার সাথে আমার প্রথম পরিচয় বাসে।আব্বুর সাথে রাগারাগি করে হাতখরচের টাকা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম।এদিকে টাকা ছাড়া চলেও না।এক বন্ধুকে বলে যোগাড় করলাম টিউশানি।সমস্যার আপাত সমাধান।
বাসে করে প্রথম দিন যাচ্ছিলাম টিউশানিতে।মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম আমার পাশে কোন সুন্দরী মেয়ে বসুক।প্রার্থনা কবুল হল।আমার পাশে এসে বসল সায়মা।
সময়টা ছিল বর্ষাকাল।বাইরে ব্যাপক বৃষ্টি।আমি তাকিয়ে ছিলাম বাইরে।ও কোথায় তাকিয়ে ছিল জানিনা।কথা বলতে চাইছিলাম ওর সাথে।কিন্তু বলার কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
আমার স্টপেজ এসে গেল।
আমি ওকে বললাম,আপু শুনছেন?
ও অবাক হয়ে বলল,আমাকে বলছেন?
-জ্বি।
-আমি কি আপনাকে চিনি?
-না।
-আপনি কি আমাদের এলাকায় থাকেন?
-না।
-আপনি কি আমার আত্মীয়?
-না।
-তাহলে আমার সাথে কি কথা?
-না মানে বলছিলাম বাইরে তো খুব বৃষ্টি।
-তো?
-আমার কোন ছাতা নাই।
-তো?ছাতা ছাড়া বের হলেন কেন?
-আসলে তাড়াহুড়ায় খেয়াল করা হয়নি।
-তো?
-আমি টিউশানিতে যাব।
-যান।আমিতো আপনাকে ধরে রাখিনি।
-তা রাখেননি।কিন্তু একটা সমস্যা।
-কি?
-আমি তো ভিজে যাব।
-একদিন নাহয় ভিজলেন।
-আমাকে তো ঐ ভেজা কাপড় নিয়ে পড়াতে হবে।
-পড়াবেন।এ আর এমন কি?
-আমার আবার ঠান্ডার ধাত।বুঝতেই পারছেন ভিজলেই টনসিল ফুলবে।
-তো আমি কি করব?আমি কি ডাক্তার?
-না বলছিলাম যদি আপনার ছাতাটা আমাকে ধার দিতেন।
-আহা।শখ কত।তাহলে আমি ভিজে যাব না?
-বৃষ্টি বোধহয় থেমে যাবে।
-ফাজলামি পাইছেন?আমার ছাতা ফেরত পাব কিভাবে?
-আপনার ফোন নম্বরটা যদি দেন।
ভেবেছিলাম ও আমাকে থাপ্পড় দেবে।কিন্তু অবাক করে ও আমাকে নম্বর দিয়েছিল।অনেকদিন পর ওর কাছে কারণ জানতে চেয়েছিলাম।ও কিছু বলেনি।শুধুই হেসেছিল।
মাঝে মাঝে যখন এসব ভাবি তখন অবাকই হই।মানে হয় পৃথিবীর সব ভালবাসার গল্পই কি এমন অদ্ভুত?
তিন।
চাচামিয়ার ফোন।
দুপুর ১.১০।
আব্বুর সাথে রাগারাগি না হলে হয়ত সেদিন আমি সায়মার দেখা পেতাম না।কিন্তু আজকের গোলমালটাও তো হল আব্বুর জন্যই।
ঘটনাঃ কয়েকদিন আগে ছিল সায়মার জন্মদিন।সারাদিন দুজন মিলে ঘুরলাম।মুভি দেখলাম।আমি ওকে ট্রিট দিলাম।সমস্যা হল আব্বুর এক বন্ধু আমাদের দেখে ফেলল।এবং যথারীতি আব্বুকে বলে দিল।শুধু বলে ক্ষান্ত হলেও একটা কথা।আব্বু-আম্মুর মাত্রাতিরিক্ত আদর-ভালবাসার কারণেই যে আমি এসব করতে সাহস পাচ্ছি এবং এর ফলে ভবিষ্যতে আমার যে নৈতিক অবক্ষয় হবে সে বিষয়েও তিনি বিস্তারিত ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করলেন আর আমাকে এসব থেকে ফিরিয়ে আনতে করণীয় বিষয়েও তাদের উপদেশ দিলেন।
ব্যাটার ভাগ্য ভাল আমি তখন বাসায় ছিলাম না।নাহলে ব্যাটাকে ধরে দিতাম একদম।
ফলাফল:আব্বুর সাথে রাগারাগি।মাথা ছিল গরম।রাতে ঘুমালাম দেরীতে।
আফটার ইফেক্ট: রাতে মোটেই ভাল ঘুম হল না।সুতরাং সকালে ঘুম ভাঙলও দেরীতে। আজ সকালে ক্লাস হল মিস আর সায়মার সাথে হল গ্যান্জাম।শালা।চারিদিক দিয়ে ধরাটা খাইলাম আমি।
এসবই ভাবছিলাম।হঠাৎ দেখি শরিফ ডাকে।ওই।
-কি?
-অ্যাসাইনমেন্ট কখন করবি?
-রাতে।বাসায় আসিস।
-ওকে।
শরিফ চলে যাচ্ছিল হঠাৎ ঘুরে দাড়ায়।শোন।
-বল।
-সায়মার সাথে তোর কোন সমস্যা হচ্ছে?
-কেন?
-তখন দেখলাম সায়মা একা চলে গেল।তুই এগিয়ে দিলি না।
-না।আর কিছু?
-হ্যাঁ।
-একটু আগে তোর চাচা ফোন করেছিলেন।
-তোকে?
-হ্যাঁ।
-কখন?
-ধর ঘন্টাখানেক আগে।
-হুম।কি বলল?
-বলল তোকে ফোনে পাচ্ছে না।
-সেটাইতো স্বাভাবিক।আমি তো ক্লাসে ফোন বন্ধ রাখি।
-তোর চাচা হয়ত সেটা জানেনা।
-তাই হবে।
-তোকে কল ব্যাক করতে বলছে।
-আচ্ছা।
-গেলাম তাহলে।
-ওক্কে।
শরিফ চলে যায়।আমি চাচা মিয়ার নম্বর ঘোরাই।
-চাচা মিয়া নাকি?
-কই তুই?
-ক্যাম্পাসে?
-এখনও?
-হ্যাঁ।মাত্র ক্লাস শেষ হল।
-তুই কিছু জানিস না?চাচার কণ্ঠ বিস্ময় মাখা।
-কোন ব্যাপারে?
-তোর আব্বা স্ট্রোক করছে।এখন সিসিইউতে আছে।
-হোয়াট?মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দই বের হয়। কখন?কিভাবে? আমি জানতে চাই।
-অত কথা বলার সময় নাই।তুই জলদি হাসপাতালে আয়।
-আচ্ছা।
মুহূর্তে রাতে আব্বুর সাথে ঝগড়ার কথা মাথা থেকে দূর হয়ে যায়।আমি হাসপাতালের দিকে দৌড় দেই।
চার।
হাসপাতালে।
দুপুর ২.০০।
টেক্সী থেকে নামলাম।
হাসপাতালের ভেতরে ঢুকলাম।আম্মু একটা চেয়ারে বসে আছে।
পুরোপুরি বিধ্বস্ত লাগছে আম্মুকে।
-আম্মু।আমি ডাকলাম।
আম্মু বোধহয় শুনল না।
-এই আম্মু।আবার ডাকলাম।
এবারও একই ফলাফল।
হঠাৎ দেখি ছোট চাচা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
-এখন ডাকিস না তোর মাকে।ভীষণ টায়ার্ড।
-আব্বুর কি অবস্থা?আমি জানতে চাইলাম।
-আগের মতই।
-মানে?
-এখনও সেন্স লেস।
-স্ট্রোক করার পর থেকেই?
-হ্যাঁ।
আমার হঠাৎ মনে হল যদি আর আব্বুর আর কখনও সেন্স না ফেরে?আব্বুর সাথে কি আমার শেষ স্মৃতি হবে আমরা দুজন ঝগড়া করছি?কখনও কি আর আব্বুকে দেখব না?ভাবতেই চোখে পানি এসে গেলো।
-কিরে কাঁদিস কেন?চাচা আমার কাঁধে হাত রাখলেন।
-কিছু না।আমি চোখ মুছলাম।ডাক্তার কি বলল?
-সবসময় যা বলে আর কি... আমরা চেষ্টা করছি... আপনারা ঘাবড়াবেন না... এসব আর কি... তুই ভাবিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।
-চাচ্চু।
-কি?
-তোমার কি মনে হয় আমি এখনও বাচ্চা?ইউনিভার্সিটিতে পড়ি।আমাকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিও না।
চাচা মিয়া চুপ।
-আব্বুর চান্স কতটুকু?
চাচা অবাক হয়ে বললেন, মানে?
-মানে আব্বুর বেচে থাকার চান্স কতটুকু?
-জানি না।ডাক্তার বলল ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না।
আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম।
-কি হল?
-কিছু না।
-চল আমরা বাইরে যাই।
আমি চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
-চল আমরা বাইরে যাই।ভাল লাগবে তোর।
-চল।
দুজনে হাসপাতালের সামনে বাগানে নেমে এলাম।
-রাফসান।চাচ্চু ডাকলো আমাকে।
-কি?আমি জবাব দিলাম।
-ভাল লাগছে?
-জানি না।
চাচা মিয়া চুপ।দুজন পাশাপাশি নীরবে হাটতে লাগলাম।কারো মুখে কোন কথা নেই।
-রাফসান।
-বল।
-তুই সায়মা নামে কাউকে চিনিস?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম।চাচ্চু কিভাবে জানে?
-চিনিস?
আমি চুপ।
-তোর নীরবতাকে আমি হ্যাঁ হিসেবেই ধরে নিলাম।
আমি এবারও চুপ।
-ওর সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
-মানে?আমি রেগে গিয়ে জানতে চাইলাম।
-দেখ, তুই বড় হয়েছিস।তোর নিজের পছন্দ থাকতেই পারে।কিন্তু এমন কাউকে পছন্দ করিস না যাকে তোর বাবা-মা পছন্দ করবে না।
আমার ভয়ানক রাগ লাগে।সায়মার মধ্যে খারাপ কি আছে? কেন ওকে অপছন্দ করবে আব্বু-আম্মু?
-চাচ্চু।
-বল।
-তুমি কোন পক্ষে?
-মানে?অবাক হয়ে জানতে চাইল চাচ্চু।
-মানে তুমি কি আমার পক্ষে না আব্বু আম্মুর পক্ষে?
চাচ্চু রেগে উঠল।-যা বলবি স্পষ্ট করে বল।
-আমার কথা তুমি ভাল করেই বুঝছ।
-তার মানে কি তুই এক পক্ষ আর আমার ভাই ভাবী আরেক পক্ষ?ওরা তোর শত্রু?কবে থেকে এত লায়েক হয়ে উঠলি?
-তুমি আমার কথা ভুল বুঝছ।
-তাই?দুই পাতা বই পড়ে এত বিদ্বান হয়ে গেলি?
-আজব।সহজ একটা কথাকে কেন বাঁকাভাবে নিচ্ছ?আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
-রাফসান।
-আবার কি?
-সব বাবা-মাই সন্তানের ভাল চায়।
-তাই?তাহলে সায়মার ব্যাপারটাকে নিয়ে তোমরা এত জল ঘোলা করছ কেন?
-কারণ তোর বাপ এই রিলেশনে রাজি না।
-কেন?সমস্যাটা কি?
-আমি জানি না।
-চাচ্চু।
-কি?
-তুমি আমাকে এসব কথা এখন কেন বলতেছ?এটা তো ঠিক সময় না।আব্বু সুস্থ হোক, তারপর আমরা কথা বলি।
-না।
-না মানে?আমি ভয়ানক অবাক।
-তুই কি জানিস তোর বাপের স্ট্রোক কিভাবে করল?
-কিভাবে?
-তার আগে বল তুই কাল রাতে ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করেছিস?
-সায়মার ব্যাপারটা নিয়ে একটু রাগারাগি হয়েছিল।ঠিক ঝগড়া না।
-তারপর?
-তারপরতো আমি ঘুমায়া গেলাম।
-সকালে ভাইয়ার সাথে কথা হইছে?
-দেখা কথা কিছুই হয় নাই।
-হুমম।তোর মা কার সাইডে ছিল?
-আম্মু কোন কথা বলে নাই।
-সকালে ভাইয়া ভাবীর ঝগড়া হইছে।
আমি অবাক।
-কখন?
-তুই যাওয়ার পরে।
-তারপর?
-তোর মা তোর পক্ষ নিয়ে কথা বলল।দুজনের ব্যাপক ঝগড়া।
-তুমি কিভাবে জান?আম্মু বলছে?
-আমি তোদের বাসায় ছিলাম।ভাইয়া সকালে ফোন দিয়ে আসতে বলছিল।
-এরপর কি হল?
-চেঁচামেচির এক পর্যায়ে তোর বাপ সেন্স লেস হয়ে গেল। তারপরেইতো হাসপাতালে।
আমার কারণে আব্বু-আম্মুর ঝগড়া হল?সামান্য একটা ব্যাপার থেকে এত কিছু?আশ্চর্য।
-রাফসান?
-কি?আমি কোনরকমে জবাব দিলাম।
-ভাইয়া যদি আজ মরে যায় বা সারাজীবনে জন্য পঙ্গু হয়ে যায় তাহলে দায়ী কে হবে জানিস?
আমি শূন্য চোখে চেয়ে রইলাম।
-তুই।তোর জন্য আমার ভাইটার আজ এই দশা।
পাঁচ।
আরও বিপদ।
দুপুর ২.১৫।
ফোনটা বেজে উঠল।সায়মা।
বললাম, হ্যালো।
-কি কর?
-কিছু না।বসে আছি।
-রাগ করছ?
-কেন?
-তখন এভাবে চলে আসলাম।তোমার কলও কেটে দিলাম।
-না।
-সত্যি? সায়মা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।
-হ্যাঁ।আমি আস্তে করে বলি।
-আমি জানতাম তুমি আমার ওপর রাগ করতে পারবা না।
-তাই? আমি জিজ্ঞেস করি।
-জ্বি, তাই। ও আদর মাখা কণ্ঠে বলে।আমার জান্টুসকে আমি খুব ভাল করে চিনি।
ওর কণ্ঠে জান্টুস শুনে খুব ভাল লাগে।
-এই।
-কি?
-তুমি কোথায়?
-হসপিটালে।
-ধ্যাত।দুষ্টুমি কর কেন?সিরিয়াসলি বল তুমি কোথায়।আমি তোমার কাছে আসব।
-আমি সত্যিই হাসপাতালে।
-কেন? ওর কণ্ঠে উৎকণ্ঠা।কে অসুস্থ?
-আব্বু।স্ট্রোক করছে।
-কখন? আমাকে বল নাই কেন?
-বলব কি করে? আমি নিজেই তো একটু আগে জানতে পারলাম।
-যখন জানছ তখন কেন বললা না?
-আজব।তুমি তো আমার কলই রিসিভ করতেছিলা না।জানাব কিভাবে?
-তুমি কি আমার সাথে ঝগড়া করতে চাঁচ্ছ?
-না।
-তোমার কথা শুনে সেটাই মনে হচ্ছে।তুমি আমার ওপর রেগে আছ।
-বললাম তো না।এক কথা কয়বার বলব?
-আশ্চর্য।এভাবে কথা বলছ কেন?
আমি নিজেকে একটু শান্ত করার চেষ্টা করি।দেখো সায়মা,আমার বাপ স্ট্রোক করছে।এখনও জ্ঞান ফেরে নাই।আলটিমেটলি কি হবে তাও ডাক্তাররা বলতে পারতেছে না।আমার মাথা পুরাই খারাপ।এখন কি বুলতে কি বলব আমি নিজেও জানিনা।তুমি ফোনটা রেখে দাও।
ওপাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ আসে না।
-সায়মা।
ফুপিয়ে কান্নার শব্দ আসে।সায়মা কাঁদছে?
-এই সায়মা।
এবারও কোন জবাব নাই।লাইনটা কেটে যায়।
আমি মাথা চেপে ধরে বসে পড়ি।কিছুই ভাল লাগে না।হঠাৎ চাচ্চুর কণ্ঠ শুনতে পাই।
-রাফসান।
আমি উঠে দাড়াই।কি?
-কিছু খেয়েছিস?
-না।
-যা খেয়ে আয়।
-লাগবে না।এক বেলা না খেলে আমার তেমন কিছু হয় না।
-আমার ওপর রাগ করেছিস?
-রাগ করব কেন?
-তখন তোকে যা কিছু বললাম।
-না।
-রাগ করিস না বাবা।এমন সময় মাথা আসলে ঠিক থাকে না।
-হুম্ম।
বলার আর কিছুই থাকে না। চাচ্চু আর আমি পাশাপাশি দুজন চুপচাপ বসে থাকি।
হঠাৎ চাচ্চু বলে ওঠে, ধ্যাত।যা বলার জন্য আসছি তাই বলা হল না।
আমি বলি, কি বলবা?সায়মার ব্যাপারে কিছু?
চাচ্চু হেসে বলে, আরে না।তোর বাপের জ্ঞান ফিরছে।
-সত্যি?
-হ্যাঁ।তাইতো তোকে ডাকতে আসলাম।
-চল যাই।
আমরা দুজন এগোই।সিসিইউর বাইরে গার্ড বসা।সে আমাদের বাধা দেয়।
-কি সমস্যা?আমি জানতে চাই।
-ভিতরে মেমসাব গেছে।একজনের বেশী যাওন যাইব না।
অগত্যা আমি আর চাচ্চু বাইরে বসে আম্মুর জন্য অপেক্ষা করি।
অনেকক্ষণ হয়ে যায়।আম্মুর ভেতর থেকে বেরিয়া আসার কোন নাম গন্ধ নেই।
-কি ব্যপার?আম্মু আসে না কেন?আমি বলি।
-ধৈর্য ধর।বিপদে অধৈর্য হলে চলে না।চাচ্চু জবাব দেয়।
আমি চুপ হয়ে যাই।
নীরবতায় কেটে যায় অনেকক্ষণ।অবশেষে আম্মু বেরিয়ে আসে।
-কি অবস্থা আম্মু?কি বলল আব্বু?
আম্মু চুপ করে থাকে।ডাক্তার বেরিয়ে আসে।
-ডাক্তার সাহেব।চাচ্চু ডাকে।
-পেশেন্টের কন্ডিশন ভাল না।একটু আগে জ্ঞান ফিরেছিল, এখন আবার সেন্সলেস।কাউকে চিনতে পারছেন না।ভুল বকছেন।কি হবে বুঝতে পারছিনা।আল্লাহকে ডাকেন।
ডাক্তার চলে যায়।আম্মু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।আমি নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকি।
=============================================
দ্বিতীয় পর্ব
শেষ পর্ব
===========================================
আমার লেখা আরও কিছু গল্পঃ
গল্পঃ যে কারণে ভালবাসি বলা হয় না
গল্পঃ ভালবাসার বৃষ্টি
গল্পঃ প্রিয়তমা, তোমার জন্য... ...
গল্পঃ তোমার বসন্ত দিনে ... ...
গল্পঃ তামাশা
গল্পঃ অতিথি
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৩২