আজকের লেখায় যা লিখব সবই সরাসরি।কোন রাখঢাক নাই।বুয়েটে এখন আমাদের তিন বছর চলছে।হিসেব অনুসারে আমাদের ষষ্ঠ সেমিস্টার চলার কথা।কিন্তু আমরা এখনও পঞ্চম সেমিস্টারে আটকে আছি।এই সেমিস্টার শেষ হবে এই বছর শেষে।অর্থাত তিন বছরে আমরা পিছিয়ে পড়ছি ছয় মাস।
তাতে সমস্যাটা কি?
প্রথমত, আমরা আমাদের ব্যাচের(যারা একসাথে এইচ. এস. সি. দিয়েছি) অন্যান্য ইউনির্ভাসিটির ছেলেপেলেদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছি।তারা আমাদের আগেই জব মার্কেটে ঢুকে পড়ছে।ফলে আমরা যখন পাস করে চাকরী জয়েন করছি ততদিনে তারা আমাদের সিনিয়র হয়ে পড়ছে।তাদের চেয়ে ভাল একাডেমিক ক্যারিয়ার থাকা সত্তেও আমরা তাদের জুনিয়র-এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
দ্বিতীয়ত, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েশন (চার বছরের কোর্স) ঠিক সময়ে শেষ সময়ে শেষ না হলে বাইরের কোন ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ বা এডমিশন পাওয়া খুবই কঠিন হয়।যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ না পাওয়া, তাও এমন একটা কারণে যার জন্য আপনার কোন দায় নাই, এটা কতটা কষ্টের তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না।এক বড় ভাইয়ের কথা শুনেছিলাম যার সিজি ছিল ৩.৯৯(এক টার্মে ৩.৯৮, বাকি ৭ টার্মে ৪)।কিন্তু তিনি MITতে চান্স পান নাই কারণ তিনি ৪ বছরের কোর্স সম্পন্ন করেছিলেন সাড়ে পাচ বছরে। MIT এর যুক্তি ছিল সাড়ে পাচ বছরে যে কেউ ৩.৯৯ সিজি নিয়ে কোর্স কমপ্লিট করতে পারবে।অথচ তারা বুঝতেই চায় নাই সাড়ে পাচ বছরে তিনি আটটা টার্মই কমপ্লিট করেছেন।কোন কোর্স রিটেক করে সিজি বাড়ান নাই।
বুয়েট কেন যথাসময়ে কোর্স সম্পন্ন করতে পারছে না?
বুয়েট বাংলাদেশের সেরা ইউনিভার্সিটি- এ ব্যাপারে আমার মনে হয় না কোন দ্বিমত থাকবে।সেই প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে কোর্স সম্পন্ন করতে পারছে না।কারণ বুঝতে হলে আসুন আমরা প্রথমে বুয়েটের টার্ম প্ল্যান দেখি।বুয়েটে বছরে হয় দুটো টার্ম।প্রতিটা টার্ম হয় নিম্নলিখিতভাবে।
৭ সপ্তাহ ক্লাস +১ সপ্তাহ মিডটার্ম ছুটি+ ৭ সপ্তাহ ক্লাস + ২ সপ্তাহ পিএল(প্রিপারেটরী লিভ) + ৫ সপ্তাহ পরীক্ষা + ৪ সপ্তাহ টার্ম শেষে বন্ধ = ২৬ সপ্তাহ।
অর্থাৎ ২৬ সপ্তাহে ১ টার্ম শেষ হয়।সুতরাং ২ টার্ম শেষ হবে ২৬*২=৫২ সপ্তাহে।এক বছরে ৫২ সপ্তাহ।সুতরাং পুরো বছর শেষ। এই ৫২ সপ্তাহের সাথে যখন ২ ঈদের ৫ সপ্তাহ ছুটি (৩সপ্তাহ+ ২ সপ্তাহ) আর দূর্গা পূজার ১ সপ্তাহ যোগ করি তাহলে দুটো টার্ম শেষ করতে লাগে ৫২+৫+১=৫৮ সপ্তাহ।সুতরাং এক বছরে আমরা পিছিয়ে পড়ছি ৬ সপ্তাহ মানে দেড় মাস।
অলরেডি পিছিয়ে পড়লাম দেড় মাস।আবার প্রতি টার্মে পরীক্ষা পেছায় ২ সপ্তাহ করে।অর্থাত দুই টার্মে চার সপ্তাহ মানে এক মাস।মানে এক বছরে পিছিয়ে পড়লাম আড়াই মাস।ফলে চার বছরে পেছাই ২.৫*৪=১০ মাস।এর সাথে অন্যান্য ফ্যাক্টর যেমন বিশ্বকাপের বন্ধ ১ মাস যোগ করলে একটা ব্যাচ পিছিয়ে পড়ে মোট ১১ মাস।সৌভাগ্যের বিষয় কিছু ছুটি ওভারলেপ করে যায়।ফলে হয়ত কিছু সময় বেচে যায়।তারপরও প্রতিটা ব্যাচ ৮ থেকে ১০ মাস পিছিয়ে পড়ে।বর্তমানে বুয়েটে যে ৫টা রানিং ব্যাচ আছে তারা সবাই(০৫,০৬,০৭,০৮,০৯) শিডিউলড সময় থেকে পিছিয়ে আছে।
প্রশ্ন হল কি করা যায়?
আমার প্রস্তাবঃ ৭ সপ্তাহ ক্লাস +১ সপ্তাহ মিডটার্ম ছুটি+ ৭ সপ্তাহ ক্লাস + ২ সপ্তাহ পিএল(প্রিপারেটরী লিভ) + ৩ সপ্তাহ পরীক্ষা = ২০ সপ্তাহ।
অর্থাৎ ২ টার্মে ২*২০=৪০ সপ্তাহ।এর সাথে যোগ হবে ৬ সপ্তাহ টার্ম শেষে বন্ধ।বন্ধ হবে (৪+২) ফর্মেটে।যে টার্মে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং থাকবে সেবার হবে ৪ সপ্তাহ বন্ধ আর অন্য টার্মে ২ সপ্তাহ বন্ধ।
তাহলে মোট হল ৪০+৬=৪৬ সপ্তাহ।বাকি থাকে ৬ সপ্তাহ।এই সময়ের মাঝে আমাদের ২ ঈদ ও পুজার ছুটি ম্যানেজ করতে হবে।ফর্মেট হতে পারে ৩সপ্তাহ( ঈদুল ফিতর)+২সপ্তাহ(ঈদুল আযহা)+১ সপ্তাহ(দূর্গা পুজা)।
৫২ সপ্তাহ শেষ।প্রশ্ন হল যদি কোন অনাকাঙ্খিত কারণে ভার্সিটি বন্ধ হয় তাহলে কি হবে?
সেক্ষেত্রে হাতে কোন সময় নাই।ছেলেপেলে এম্নিতেই পিছিয়ে পড়বে।তাই প্রথম চেষ্টা থাকবে ঈদ ও পূজার ছুটিকে যেন অন্য ছুটির(টার্ম শেষের ছুটি বা মিডটার্মের ছুটি) সাথে ওভারলেপ করানো যায়।তাহলে আমরা হাতে কিছু অতিরিক্ত সময় পাব।আর দ্বিতীয় চেষ্টা হবে কোন অনাকাঙ্খিত ছুটি না পড়ে সেজন্য সজাগ থাকা ও চেষ্টা করা।আর কোন জাতীয় দূর্যোগের(প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক) কারণে বন্ধ হয়ে গেলে কিছু করার নাই।সেটা কপালের দোষ।
প্রশ্ন হল ছেলেপেলে কিভাবে ২ সপ্তাহ পিএল নিয়ে ৩ সপ্তাহে পরীক্ষা দেবে?সিলেবাস তো বিশাল।
সমাধান খুব একটা কঠিন নয়। অনেকেই বলবেন মিডটার্ম পরীক্ষা দিতে।এরপর মিডটার্মের সিলেবাসটুকু ফাইনাল থেকে বাদ দিতে।এতে সিলেবাস ছোট হয়ে যায়।ফলে ছোট সিলেবাসে ৩ সপ্তাহে পরীক্ষা দেয়াই যায়।
আমি মিডটার্মের ঘোর বিরোধী।কিন্তু কেন?
দুটো কারণ।
এক, এক্ষেত্রে ছেলেপেলে দুটো পিএল চাইতে পারে।
দুই, আমরা এই সিস্টেমে অভ্যস্ত না।
সেক্ষেত্রে প্রস্তাবনা কি?
আমরা আমাদের ক্লাস টেস্টের আয়তন ও নম্বর দুটোই বাড়াই।তার আগে বলে নেই বুয়েটের বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে।আমাদের ল্যাব ও এই সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপার অর্থাৎ ল্যাব টেস্ট, কুইজ, ভাইবা, প্রেজেন্টেশন সবই যে ১৪ সপ্তাহ ক্লাস চলে তার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।ফলে ল্যাব নিয়া কিছুই বলার নাই।কারণ এতে কোন সমস্যা নাই।
আসি থিওরীর ব্যপারে।মোট নম্বরের ১০% ক্লাস উপস্থিতিতে, ২০% ক্লাস টেস্টে, ৭০% টার্ম ফাইনালে। ক্লাস টেস্টে যা থাকে তার কিছুই বাদ দেয়া হয় না।ফলে সিলেবাস হয় বিশাল।পড়তে গিয়ে ছেলেপেলের মাথা হয় নষ্ট।পিএল এক্সটেন্ড করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
তাই আমার মনে হয় নম্বর ডিস্ট্রিবিউশান পরিবর্তন করা উচিত।আমার প্রস্তাবঃ১০% ক্লাস উপস্থিতিতে, ৪০% ক্লাস টেস্টে, ৫০% টার্ম ফাইনালে।ক্লাস টেস্টে যা থাকবে তা টার্ম ফাইনাল থেকে বাদ দেয়া হবে।ফলে টার্ম ফাইনালের সিলেবাস কমে যাবে।তখন আর কম পিএল বা ৩ সপ্তাহে পরীক্ষা দিতে সমস্যা হবে না।
অনেকের অভিযোগ ক্লাস টেস্টের প্রশ্ন সবসময় মানসম্মত হয় না।স্যাররা একটামাত্র ম্যাথ দিয়েই ক্লাস টেস্ট নেন।সেক্ষেত্রে পড়ালেখার মান নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে।সমাধান কি?
আমার প্রস্তাবঃ
*ক্লাস টেস্ট সরাসরি ডিপার্টম্যান্ট মনিটর করবে।যেহেতু প্রথম ২ সপ্তাহে সেরকম পড়ালেখা হয় না আর শেষ ২ সপ্তাহে কুইজ, ভাইবা ইত্যাদির প্রেশার থাকে তাই সমস্ত ক্লাস টেস্ট হবে মাঝের ১০ সপ্তাহে(৩য় থেকে ১২তম)।প্রতি সপ্তাহে ২ টা করে ক্লাস টেস্ট হলে ১০ সপ্তাহে ১০*২=২০ টি ক্লাস টেস্ট হবে। এক টার্মে ৫টি ৩ ক্রেডিটের কোর্স থাকলে মোট ক্লাস টেস্ট ২০ টাই হওয়ার কথা।
*টার্মের শুরুতে ডিপার্টম্যান্ট ক্লাস টেস্টের রুটিন দিয়ে দেবে আর তা কোনভাবেই পরিবর্তনযোগ্য নয়।অর্থাৎ ক্লাস টেস্টের তারিখ পেছানো যাবে না।যেদিন যেই স্যারের পরীক্ষা সেদিন তা হয়ে যাবে।সাধারণত শনিবার(ছাত্ররা বৃহস্পতি ও শুক্রবার বন্ধ পাবে) ও বুধবার(মাঝে রবি, সোম ও মঙ্গলবার সময়) ক্লাসটেস্ট নেয়া যেতে পারে।প্রথম পিরিয়ডে টেস্ট হবে।ফলে অন্যান্য পিরিয়ডে ছাত্রদের মনযোগ নষ্ট হবে না।এজন্য শনিবার ও বুধবার প্রথম পিরিয়ডে কোন ক্লাস দেয়া যাবে না।
*প্রত্যেক কোর্স টিচারকে তার কোর্স ৩৫%-৪০% এবং ৬৫%-৬০% এই দুইভাগে ভাগ করতে হবে।প্রথম ভাগ হবে ক্লাসটেস্টের জন্য ও দ্বিতীয়ভাগ টার্ম ফাইনালের জন্য।প্রথম ভাগ থেকে কোন প্রশ্ন টার্ম ফাঈনালে আসবে না।
*ক্লাস টেস্টে মোট নম্বর হবে ৪০।সময় হবে এক ঘন্টা।প্রশ্নের কোয়ালিটি যাতে ভাল হয় সেজন্য টিচারদের ইন্সট্রাকশন দেয়া হবে।বেস্ট অব থ্রী কাউন্ট করলে মোট নম্বর হবে ৪০*৩=১২০।
*টার্ম ফাইনাল হবে বাকি ৫০% নম্বরে।
আরও কিছু প্রস্তাবনা ছিল।এখন লিখার মুড নাই।টাটা।
--------------------------------
কোনরকম অপ্রাসঙ্গিক বা অপমানসুচক মন্তব্য কাম্য নয়।প্রাসঙ্গিক ও গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৪৮