আবুল মিয়া গ্রাম থেকে শহরে নতুন এসেছেন।জীবনে এই প্রথম শহরে আসা,গা থেকে এখনও মাটির গন্ধ মুছে যায়নি।যা দেখছেন তাতেই অবাক হয়ে যাচ্ছেন। ভাবছেন, আহা কি সৌন্দয।হাতে কিছু কাচা টাকা আছে।তাই সবকিছুই কিনে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু না।আবুল সবকিছু কিনবে না।কারন সে ভাল করেই জানে চকচক করলেই সোনা হয় না।যা কিছু সুন্দর তা-ই যে আবুলের কাজে লাগবে এমন কোন কথা নেই।তাছাড়া এগুলো তো আর আবুলের টাকা নয়।তার ভাইজানের টাকা।ইচ্ছেমত খরচ করা যাবে না।ভাইজানকে হিসাব দিতে হবে।
ওহহো... আবুলের বড় ভাই কাবুল মিয়ার কথাতো আপনাদের বলতে ভুলেই গেছি।কাবুল মিয়া আবুলের বছর পাচেকের বড়।নকল করে কোনরকমে এস এস সি পাস করেই পাড়ি জমিয়েছে দুবাই।মাসে মাসে টাকা পাঠিয়েছে যা দিয়ে সংসার চলেছে।এখনও তার আয়েই ঘর চলছে।
তো আসল কথায় আসা যাক।কাবুল মিয়ার বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেছে, দুবাই আছে আজ দশ বছরের বেশি সময় ধরে।পরিবার থেকে তার আর দূরে থাকতে ভাল লাগে না, কাজ শেষে ঘরে ফিরে তারও কারও সাথে সুখ দুখের কথা বলতে ইচ্ছে করে।আবুল ভেবেছিল ভাইজান হয়তো সবাইকে দুবাই নিয়ে যাবে, বিদেশ যাবে-এই ভেবে দারুন আনন্দিত হয়েছিল সে।কিন্তু আম্মা বুঝিয়ে দিলেন এই পরিবার তো আর সেই পরিবার নয়, এই পরিবার মানে বিয়ে।
সুতরাং কাবুলের বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল।কাবুলদের এখন অবস্থা ফিরেছে, তাই অনেকেই তার সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে চায়।কিন্তু কাবুল নিজে যেহেতু ডিগ্রীধারি( এস এস সি পাস) তাই তার বউও শিক্ষিত হতে হবে।গ্রামে ডিগ্রীধারি মেয়ে এক্টাই আছে, ফুলমতি- এটাও এস এস সি পাস।অতএব দুজনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।
কাবুল তার ছুটির তারিখ জানিয়ে দিল, বলে দিল সে কবে দেশে ফিরবে।সে হিসেবে বিয়ের তারিখ ঠিক হল।কিন্তু ঝামেলা বাধল অন্য জায়গায়।ফুলমতির বাবা জানিয়ে দিলেন বিয়ের পর মেয়েকে দুবাই নিয়ে যেতে হবে।কাবুল বলল, দুবছরের আগে সেটা সম্ভব নয়।তখন তিনি জানিয়ে দিলেন এই দুবছর মেয়েকে শহরে রাখতে হবে, নইলে তিনি মেয়ে বিয়ে দেবেন না।
ফুল্মতির বাবার দাবী মেনে নেয়া হল।
কাবুল বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পাঠিয়ে দিল, আবুলকে দায়িত্ব দেয়া হল শহরে বাসা খোজার।আবুল বাসা খুজে বের করল, ঠিক হল বিয়ের পর ভাইয়া-ভাবী এখানেই থাকবেন।কিন্তু শুধু বাসা ভাড়া করলেই তো হবে না, সেই বাসায় থাকতেও হবে।অতএব বাসা সাজানো দরকার, বাসার জন্য আসবাব দরকার।কাজে নেমে পড়ল আবুল।
খাট-পালঙ্ক আর সোফা কেনা হয়ে গেল।লাইট আর ফ্যান বাড়িওয়ালা দেবে।আবুল ভাবতে লাগল আর কি কেনা যায়।এমন সময় এল কাবুলের ফোন।
-হ্যালো, ভাইজান কেমুন আছেন?
-ভালা।তুই?
-আমিও ভালা।
-তোর সব কাম শেষ?
-খাটপালঙ্ক কিন্যা ফালাইছি।
-আর কিছু কিনস নাই?
-আর কি লাগব কন?
-টেলিভিশন কিনছস?
-না ভাইযান।কিনুম?
-এক্ষনি কিন্যা ফালা।
-আইচ্ছা।
-আর হোন।
-কন।
-ডিশের লাই নিয়া নিবি।
-এইটা আবার কি জিনিষ?
-ডিশে সোন্দর সোন্দর পুগেরাম দেখায়।তোর ভাবী ওইগুলা পছন্দ করব।
-আইচ্ছা।
লাইন কেটে গেল।
দুই।
আজ আবুল টিভি কিনতে যাচ্ছে।রিকশা নিয়ে সোজা চলে গেল শোরুমে।ভিতরে ঢুকে পড়ল।অনেক্ষন ঘুরে ফিরে একটা টিভি তার পছন্দ হল।
এমন সময় একজন তার দিকে এল।
-স্যার।
শব্দ শুনে ঘুরে তাকাল আবুল।
-আমারে কন?
-জ্বি স্যার।আপ্নাকে কি কোনভাবে সাহায্য করতে পারি?
-হ ভাই।আমি এই টিভিটা, হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল আবুল, কিনতাম চাই।
লোকটা অবাক হয়ে একবার টিভির দিকে আর একবার আবুলের দিকে তাকাতে লাগল।
-কি অইল? বিরক্ত হয়ে জানতে চাইল আবুল।
-স্যার আপনি কি শিওর এটাই কিনবেন?
-আরে ভাই কবার কমু এটাই কিনুম।
-আপনার কোন ভুল হচ্ছে না তো?
-না।চেচিয়ে উঠল আবুল।
লোকটার মুখে এবার হাসি ছড়িয়ে পড়ল।
-অই মিয়া, কি অইল?
লোকটা এবার হাসতে হাসতে বলল, আপনি দয়া করে বেরিয়ে যান।আমরা নোয়াখাইল্যাদের কাছে কিছু বিক্রি করি না।
তিন।
পরদিন।
আবুলের মাথায় আগুন জ্ব্লছে।হারামজাদার এতবড় সাহস।নোয়াখালির লোকদের কাছে কিছু বিক্রি করবে না।দাড়া, দেখাচ্ছি মজা। বিক্রি না করে যাবে কোথায়?আমিও শালার খাটি নোয়াখাইল্যা- তোর থেকে ওই টিভি কিন্যা ছাড়ুম।
অতএব আবার সেখানে যাত্রা।
ঢুকেই এদিক ওদিক তাকাল সে।নাহ, আজকে ওখানে নতুন সেলস্ম্যান।গতকালেরটাকে দেখা যাচ্ছে না।
টিভির দিকে এগিয়ে গেল আবুল
-বাই।
-বলুন স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
- আমি ওই টিভিটা কিনতাম চাই। আঙ্গুল দিয়ে দেখাল সে।
লোকটা হতাশ হয়ে মাথা নাড়ল।
-স্যরি স্যার।আমরা নোয়াখাইল্যাদের কাছে কিছু বিক্রি করি না।
চার।
এ এক বিরাট ধাধা।শহরের প্রতিটা লোকই কি নোয়াখাইল্যাদের চেনে?
কিন্তু তা কি করে হয়? নোয়াখাইল্যাদের চেনা ছাড়া কি এদের আর কোন কাজ নেই?
আবুল ঠিক করল আজ সে ছদ্মবেশে যাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ।কাবুল গতবার আরবদের পোশাক নিয়ে এসেছিল।তাই পড়ে আর নকল দাড়ি গোফ লাগিয়ে সে যাত্রা করল।
ঢুকেই এদিক ওদিক তাকাল সে।নাহ, আজকে ওখানে নতুন সেলস্ম্যান।গত দুইদিনের একটাকেও দেখা যাচ্ছে না।
-আসসালামুয়ালাইকুম আমার মুসলিম ভাই।
সেলস্ম্যান এগিয়ে এল।
-বলুন স্যার কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
মুখে যথাসম্ভব আরবি টান এনে, আমি তুমার টিভি কিনতে চাই।
-কোনটা?
-ওইটা।আঙ্গুল দিয়ে দেখাল সে।
-হুম্ম।সেলস্ম্যান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।স্যরি স্যার।আমরা নোয়াখাইল্যাদের কাছে কিছু বিক্রি করি না।
-কিভাবে সম্ভব?কেমনে সবাই বুঝে আমি নোয়াখাইল্যা??
-কারন একমাত্র নোয়াখাইল্যারাই ওভেন দেখে সেটাকে টিভি বলে ভাবতে পারে।
আমার কথা: এটা নিছকই একটা গল্প।আমার মৌলিক গল্প না, শোনা গল্প।আমি শুধু নিজের ভাষায় লিখলাম।কাউকে হেয় করা বা কারো মনে আঘাত দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। কারও খারাপ লাগলে সেজন্য দুঃখিত।
আমার যত রম্য গল্পঃ
তথ্যমন্ত্রির ঘড়ি
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১২ রাত ২:৪৪