অন্তু ১০ আনা বিস্ময়ের সাথে ৬ আনা দুঃখ মেশানো দৃষ্টিতে বাইরে থেকে উড়ে এসে ঘরের ভেতর আটকে যাওয়া দোয়েলটার দৌড়াদৌড়ি দেখছে । দোয়েল পাখি ঢুকে পড়েছে এজন্য সে বিস্মিত হয়নি । তার ঘরের আশপাশ এমনিতেই অনেকটা খোলামেলা, তাই মাঝেমাঝেই তাই চড়ুই পাখি ঘরের মাঝে এসে পড়ে আবার জানালা খুলে দিলেই আবার সুড়ুত করে বেরিয়ে যায় ।
কিন্তু এই দোয়েলটা বের হতে পারছে না । আলমারির উপর বসে আছে । একটু পর পর হুড়হুড় করে উড়ে এসে জানালার কাছে দিয়ে চক্কর মেরে আবার আলমারির ওপর ফিরে গেল ।
আর একারণেই অন্তুর বিস্ময় ও দুঃখ । কয়েকদিন আগেই সে তার সাধারন জ্ঞানের বইতে পড়েছে, দোয়েল বাংলাদেশের জাতীয় পাখি । এটা ভেবেই অন্তুর মন আরো খারাপ হয়ে গেল । একটা দেশের জাতীয় পাখি কেন এত ভুদাই হবে? না, না , ভুদাই বলা যাবে না । মা অন্তুকে এসব ভাষায় কথা বলতে মানা করে দিয়েছে । তাহলে কি বলা যায়, “সিলি দোয়েল!” ভাবল অন্তু ।
কিছুদিন পরের কথা, শহরের অন্য প্রান্তে অন্তুর বাবা নতুন বাসা বানিয়েছেন, অল্প কয়েদিন পরেই মালপত্র গুছিয়ে সেখানে অন্তুরা চলে যাবে । বাসা ছেড়ে যাওয়ার কথা শুনে কয়েকদিন ধরেই অন্তুর মন খারাপ । অন্তুর কাছে এই বাসাটাই বেশ লাগে, চারদিক খোলা-মেলা, চড়ুই পাখি ভয়ডর ছাড়া একেবারে কাছাকাছি ছোট ছোট লাফ দিয়ে চলে, দেখতে বেশ লাগে অন্তুর । বাসা বদল করার কথা মনে হতেই আরেকটি ঘটনা মনে পড়ে গেল অন্তুর ।
বেশ কয়েকদিন আগের কথা, বাসার দক্ষিণদিকের জানালার ফাঁক গলে একটি বুলবুলি দম্পতির আনাগোনা শুরু হয়েছিল । তারা ঢুকত আর একটু পরে বেরিয়ে যেত, হুটোপুটির শব্দ শুনে অন্তু গিয়ে বুলবুলি পাখিগুলোর কান্ডকারখানা দেখত । তারা ছোট ছোট লাফ দিয়ে ঘুরে ঘুরে বাসা বানানোর উপযুক্ত জায়গা খুঁজত । পছন্দমত জায়গা বেছে তারা বাইরে থেকে নানা রকম খড়কুটো, ছেঁড়া কাগজ, ফিতা ইত্যাদি দিয়ে একটা কাঠামো বানাত, তাদের ঘর বানানো দেখে অন্তুর ভাল লাগলেও বাসার কাজের বুয়ার ততটা লাগেনি । কারণ অনেক সময় খড়কুটো নিচে পড়ে ঘর নোংরা হত, আর মাঝে মাঝে পাখিদের ‘পটি’ও থাকত । তাই একদিন স্কুল থেকে এসে অন্তু দেখে পাখিদের বাসা সমূলে উচ্ছেদ করা হয়েছে । অন্তু ভাবল, তারা বুঝি আর আসবে না ।
কিন্তু না, তারা আবার এল । আগেরবারের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তারা খড়কুটো বারবার নিয়ে এসে বাসা না বানিয়ে একবারে অনেকখানি কাঁচামাল নিয়ে এসে তারপর ঘর বানাত । পাখিদুটির বুদ্ধি দেখে অন্তুর বিস্ময়ের সীমা রইল না । কিন্তু আবার একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখতে পায় আবার পাখির বাসার জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে । এমন করে প্রায় তিন-চারবার করা হল । প্রতিবারই অন্তু ভাবে, পাখি দুটি বোধহয় আর ফিরবে না । কিন্তু তারা একটু পরেই ফিরে আসে ।
একদিন হল কি, পাখি দুটো আর ফিরে এল না । অন্তু রোজ পাখি দুটোর জন্য অপেক্ষা করে । কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি ।
বাসা ছেড়ে দেয়ার সময় পাখি দুটোর কথা খুব করে মনে পড়ছে অন্তুর, না জানি বাসা ভেঙ্গে দেয়ার পর তাদের কতটা খারাপ লেগেছিল । অন্তু মনে মনে ঠিক করল, তাদের নতুন বাসায় যদি কোন পাখি যদি বাসা বানাতে আসে তাহলে সে সেই বাসা কিছুতেই আর ভাংতে দেবে না, কিছুতেই না ।