কিছুদিন আগে পুরানো একটি মুভি একজনকে দেখাতে গেলে সাদাকালো মুভির প্রতি তার অনাগ্রহ দেখে চিন্তা আসে বর্তমান প্রজন্মের আসলেই পুরানো মুভি সম্পর্কে কোন আগ্রহ আছে কিনা! যে প্রজন্মের কাছে ৯০ দশকের মুভিগুলোই পুরানো মুভি এরা হয়ত অনেকেই জানে না প্রচুর পুরানো মুভি আছে যেগুলো আজও এভারগ্রীন হয়ে আছে, এই প্রজন্মেরও কারো এই মুভিগুলো দেখতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হওয়ার কথা না। বর্তমান প্রজন্মের জন্য এরকমই তিনটা মুভি নিয়ে আজকের এই পোস্ট।
*The Apartment (1960)
নামকরা এক লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী কেরানি সি. সি. ব্যাক্সটারকে নিয়ে কাহিনী। চাকরীর উন্নতির জন্য যে কোনকিছু করতে প্রস্তুত ব্যাক্সটার তার বসদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তার পিছনের কারন কিন্তু ব্যাক্সটারের অক্লান্ত পরিশ্রম নয়, বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জিনিস। বসদের খুশি করতে ব্যাক্সটার তার অ্যাপার্টমেন্টকে লাভ হোটেলের রুমের মত ব্যাবহার করতে দেয়, তার বসরা ইচ্ছামত সময়ে তাদের পছন্দের মেয়েদের নিয়ে তার অ্যাপার্টমেন্টে সময়(!) কাটাতে যায়। বসদের খুশি রাখতে প্রায় সারাদিনই ব্যাক্সটার নিজের অ্যাপার্টমেন্ট তাদের দিয়ে রাখে, ফলে অনেক সময় কাজ শেষ হওয়ার পরও নিজের অ্যাপার্টমেন্টে যেতে পারে না; মাঝে মাঝে তাকে পার্কেও ঘুমাতে হয়, যার ফলে তার সর্দি লেগেই থাকে। আর তার অ্যাপার্টমেন্টে প্রচুর মেয়ের আনাগোনা দেখে ব্যাক্সটারের সাথে তার প্রতিবেশীদেরও সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়, তাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে ব্যাক্সটার একজন প্লেবয়। কিন্তু এর সুফল পেতেও তার দেরী হয় না; কোম্পানির সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তির কাছে এই অ্যাপার্টমেন্টের খবর চলে যাওয়ার কারনে ব্যাক্সটার খুব দ্রুত প্রমোশন পেয়ে কর্মকর্তা হয়ে যায়। সবকিছু ভাল চলছে দেখে যখন সে তার পছন্দের মেয়েকে প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবতে থাকে ঠিক সেসময়ই একদিন ব্যাক্সটারের পছন্দের মেয়েকে নিজের সঙ্গিনী করে তার অ্যাপার্টমেন্টে এসে হাজির হয় ব্যাক্সটারের কোম্পানির সর্বোচ্চকর্তা।
টানটান কাহিনী আর দুর্দান্ত অভিনয় এই মুভিটিকে নিয়ে গেছে সর্বকালের সেরা মুভির তালিকায়। আর ব্যাক্সটারের ভুমিকায় অভিনয়কারী জ্যাক ল্যামনের অভিনয় দেখলে সেটার কাছে আপনার টম হ্যাংক্সের অভিনয়ও সাধারণ মনে হবে।
*Going My Way (1944)
একটি সাধারণ কাহিনী কিভাবে অসাধারণ হয়ে ওঠে তার উদাহরণ এই মুভি। নতুন এক ফাদারের চার্চে যোগ দেওয়ার পর সেই চার্চকে ঘিরেই অসাধারণ এক কাহিনী। নতুন কম বয়স্ক ফাদার ও’মেললি চার্চে যোগ দেওয়ার আগে ছিল বর্ণিল জীবন কাটাতে অভ্যস্ত, সে গলফ খেলতে ভালবাসে, গানের গলা চমৎকার, তার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে এখনও তার সম্পর্ক ভাল। এসবকিছুর ফলে তার দৃষ্টিভঙ্গিও প্রাচীনপন্থী মানুষদের থেকে আলাদা। কিন্তু তার এই উদার দৃষ্টিভঙ্গির ফলেই আবার চার্চের বয়স্ক প্রাচীনপন্থী ফাদারের সাথে তার লেগে যায় ব্যক্তিত্বের সংঘাত। তবে এরপরেও চাক ও’মেললি প্রমান করে দেয় তার চিন্তা-ভাবনা আর দৃষ্টিভঙ্গিই সঠিক। সাধারণ প্রাচীনপন্থী চিন্তা-ভাবনার বাইরে থেকে চাক তার এলাকার বিভিন্ন সমস্যার সুন্দর সমাধান দেয়। এলাকার সবচেয়ে দুর্দান্ত অস্থিরমতি ছেলেপেলেরা যারা কখনও কাউকে মান্য করে না, তারাও চাক ও’মেললিকে অন্যরকম দেখে তাকে মান্য করা শুরু করে। সেই ছেলেগুলোকে নিয়ে চার্চেই গানের আসর বসায় চাক। এসব দেখে বিরক্ত হয়ে মেইন অফিসে নালিশ করতে যায় বয়স্ক প্রাচীনপন্থী ফাদার। এরপর বিভিন্ন ঘটনার মাঝে বয়স্ক ফাদারের সাথেও চাকের সুন্দর এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সবকিছু যখন ঠিকভাবে চলছে ঠিক তখনি একদিন চার্চে লেগে যায় আগুন।
সাধারণ কাহিনীর অসাধারণ এই মুভি আপনি কিন্তু একবার মনোযোগ দিয়ে দেখতে বসলে আপনার পক্ষে ওঠাই কষ্টকর হবে। অভিনেতা-অভিনেত্রী সবার পারফর্মেন্সই দুর্দান্ত বিশেষ করে বিং ক্রসবির। বিং ক্রসবির নিজের গাওয়া সুন্দর একটি গানও আছে এই মুভিতে Too-Ra-Loo-Ra-Loo।
*Roman Holiday (1953)
এই মুভির নাম জানে না কে? কিন্তু আমার পরিচিতদের মধ্যেই অনেককে দেখলাম নাম জানলেও এই মুভিটি এখনও দেখেনি আর কাহিনী সম্পর্কেও ধারণা নেই। যাইহোক, বাসা থেকে পালানো এক প্রিন্সেস আর এক সাংবাদিককে নিয়ে কাহিনী।
প্রিন্সেস অ্যান নাম না জানানো এক দেশের প্রিন্সেস। রোম ভিজিট করতে আসার পর রাজকীয় জীবনের উপর বিরক্ত অ্যান একদিন সাধারণ জীবনের স্বাদ নিতে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। রাতে অনেকক্ষণ ঘুরে ক্লান্ত হয়ে একটি পাবলিক বেঞ্চে ঘুমিয়ে পরার পর অ্যানকে খুজে পায় এক আমেরিকান সাংবাদিক জো ব্রাডলি। অ্যানকে চিনতে না পারলেও জো অ্যানের বেসামাল অবস্থা দেখে এক ট্যাক্সি ড্রাইভারকে কিছু টাকা দিয়ে অ্যানকে বাসায় পৌঁছে দিতে বলে। কিন্তু ট্যাক্সি ড্রাইভার এই ঝামেলা নিতে রাজি না হওয়ায় অ্যানের সেফটির কথা চিন্তা করেই তাকে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যায় জো। পরদিন তার প্রিন্সেস অ্যানের ইন্টার্ভিউ নেওয়ার কথা থাকলেও এই ঝামেলার কারনে পরদিন জো-এর ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে যায়। অ্যানকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখেই অফিসে যেয়ে মিথ্যা কথা বলতে গিয়ে জো জানতে পারে অ্যান বাসা থেকে পালিয়েছে আর ছবি দেখে নিশ্চিত হয় তার বাসায় ঘুমন্ত মেয়েটিই প্রিন্সেস অ্যান। জুয়া খেলে প্রায় ফতুর হয়ে যাওয়া জো কাউকে না জানিয়ে এই ঘটনা থেকে ফায়দা তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সাধারণ মানুষ হিসাবে প্রিন্সেস অ্যানের রোম ঘোরার এক্সুসিভ রিপোর্ট ছবিসহ তার পত্রিকায় ভাল দামে বেচার পরিকল্পনা করে। এরপরই শুরু হয়ে যায় টানটান এক কাহিনী।
রোমান হলিডেকে সর্বশ্রেষ্ঠ রোমান্স মুভিগুলোর একটা শুধু শুধু বলা হয় না। আর অভিনয়ের কথা কি বলব, এই মুভিতে গ্রেগরী পেক আর অড্রে হেপবার্নের পারফর্মেন্স তো ইতিহাস হয়ে আছে। যারা এখনও দেখেননি তারা জানেনও না কি মিস করছেন।
আগে দেখা না থাকলে কখনও সময় হলে যে কোন একটা মুভি দেখে নিয়েন; নিশ্চয়তা দিচ্ছি হতাশ হবেন না। মুভির নামের সাথেই টরেন্টের লিঙ্ক দেওয়া আছে, নামিয়ে নিতে আশা করি সমস্যা হবে না। সাবটাইটেল নিয়ে সমস্যা হলে এখান থেকে সাবটাইটেল নামিয়ে নিতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:১৫