শিক্ষা কি প্রগতি নাকি অবনতি?
(আমার যতো দেখাবেলা!)
.....
অনেকদিন থেকেই কিছু লিখবো কিছু লিখবো বলে তাড়না অনুভব করছিলাম।
কিন্তু,অলস মস্তিষ্ক বলে যেহেতু একটা কথা আমার বেলায় খুব খাটে তাই আর লেখা হয়ে উঠেনি।
....
মাধ্যমিক পর্যায় ছাড়িয়ে যখন উচ্চ মাধ্যমিকের জগতে প্রবেশ করেছিলাম তখন আমার চেতনার অংশ তখনও নিম্ন মাধ্যমিক কিংবা প্রাইমারী পর্যায়ে বহাল তবিয়তে বর্তমান ছিলো।
হুম্ম,নামাজ আর রোজার এক বিষেদাগার আমাকে আটকে রেখেছিলো ধর্মীয় গৃহকোণে।হাতে ছিলো বিভিন্ন হুজুরে বুযুর্গায়েনে কেরামের কয়েকশ করে তাবিজ।
এখনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে খুব হাসি পায়।
বহু দূরদূরান্ত থেকে হুজুরদের কাছ থেকে কলম পড়িয়ে আনতাম।
বিশ্বাস ছিলো,কোনো কিছুই পড়া লাগবে না।
আমার "বিশ্বাসী কলম"ঠিকই পরীক্ষার খাতায় লিখে দিবে।
আমার শ্রদ্ধেয় নানাভাই(মৃত) ছিলেন কোনো এক নামকরা মসজিদের জুম্মার নামাজের ইমাম।নানাভাই যেহেতু মসজিদের ইমাম ছিলেন তাই মাও ছিলেন ধার্মিক।যদিও মা ছিলেন আদতে নিরক্ষর আর পতিভক্তা এক মহিলা।
আর,আমার নানু তো ছিলেন সেই মাপের নামাজী মহিলা।এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যেতো না যে কিনা কখনো শুনেছে আমার নানুর কোনো নামাজ কাজা হয়েছে।
এমন এক রিলিজিয়াস পজিটিভ পরিবারের মেজো মেয়েটির বিয়ে হলো সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী এক পরিবারের মেজো ছেলের সঙ্গে।
হ্যাঁ,আমার বাবার কথাই বলছি।
কথিত আছে,আমার দাদাভাই নাকি কখনোই মসজিদের দিকে ফিরে উপুড় হয়ে আছাড় খাননি।আর,বাবা ছিলেন সংশয়বাদী।
সপ্তাহান্তে তিনি যেতেন মসজিদে আর রোজার সময় লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার।মানে,বাবা সোজা কথায় লোকদেখানো ধার্মিক।
কিন্তু,মা যেহেতু ছিলেন ধার্মিক পরিবারের মেয়ে তাই বাবার এই কদাচার তিনি সহ্য করতে পারতেন না।
তিনি প্রথমত বাবার বিষয়টি নানার পরিবারকে জানান।হয়তো,নানাভাই বিষয়টিতে কোনো হস্তক্ষেপ করে থাকবেন।
কিন্তু,বাবা ছিলো রগচটা,একগুঁয়ে আর স্বাধীনচেতা।
কেউ তার কোনো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক এটা তার পছন্দের তালিকায় ছিলো না।তাছাড়া,চারপাশের মানুষের উপর কর্তৃত্ব করার একটি বিষয় তার মধ্যে সবসময় ছিলো।তাই,নানাভাইয়ের উপদেশ তিনি সহ্য করতে পারেন নি।
আর,আমার মা ছিলেন একটু বাড়তি কথা বলার মানুষ।তিনিও সমানে সবার কাছে বাবার নামাজ না পড়ার কথা আর রোজার সময় লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার কথা চাউর করে দিতে থাকলেন।
আমি এমনও দেখেছি,তিনি বাবাকে রমজানে খাবার দিয়ে এসেছেন আর দরজায় বসে আছেন।কেউ আসলে স্রেফ বলে দিলেন,এখন খাচ্ছে।
বিষয়টি,বাবার কাছে লাগার কথাই।কারণ,নামাজ না পড়া আর রোজা না রাখার জন্য তিনি লোকের বিভিন্ন কটুক্তি সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি।আর,এলাকায় তখন তিনি তথাকথিত "ফেরাউন" আখ্যা পেতে থাকলেন।
আমি ছিলাম অন্য ডিফারেন্ট কাইন্ড অফ।মাঝেমাঝে নামাজ পড়তাম আর মাঝেমাঝে পড়তাম না।কখনো রোজা রাখতাম আর কখনো বাবার সাথে খেতে বসে পড়তাম।
তাই,আমিও মাঝেমাঝে "ফেরাউনের সুপুত্র" আখ্যা পেয়েছি।
হয়তো ভাবছেন,শিক্ষা নিয়ে কথা বলতে এসে পরিবার নিয়ে কেনো পড়লাম।জানা আছে নিশ্চয়ই,শিক্ষার শুরু পরিবারের হাতে ধরেই।
তো,এমন এক পরিবারের কাছে থেকে,দেখে দেখে,শিখে শিখে আমার ধর্মচর্চার শুরু হয়।
....
পিতৃকল্যানে প্রাইমারি সেকশনে মাত্র দুই ক্লাস পড়ার পর আমি কিন্ডারগার্টেন সেকশনে ঢুকে পড়ি।
যেখানে "আধুনিক দ্বীনি শিক্ষা"র নাম করে এক অভিনব কায়দায় ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে ধরার জন্য পরবর্তী জিহাদী সৈনিক গড়ে তোলা হয়।
তথাকথিত কিন্ডারগার্টেন এর শিক্ষকদের চেতনার অংশ জুড়ে ছিলো "কুরআন বিজ্ঞানময় কিতাব"।তাই,মহানুভব মহানবী,নবীয়ে কারীম,দ্য গ্রেট সায়েন্টিস্ট এর বৈজ্ঞানিক মতবাদ গুলোই ছিলো কিছু জামায়াতী শিক্ষক কর্তৃক রচিত বিজ্ঞান বই।
সেইসব বিজ্ঞান বই থেকে আমার অর্জিত জ্ঞান হলোঃ-
১.পৃথিবী সমতল,রুটির ন্যায়।
মহান পৃথিবী নামক গ্রহকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নক্ষত্র ঘূর্ণায়মান।
২.মহান আল্লাহপাক পাহাড় পর্বতসমূহকে স্থাপন করেছেন পেরেকের ন্যায়,যাতে ভূকম্পে পৃথিবী একপাশে পড়ে না যায়।
৩.আকাশ সাতটি।কিন্তু,আল্লাহপাকের মাজেজা বোঝা বড়ই
কষ্টসাধ্য।তিনি আকাশকে স্থাপন করেছেন খুঁটি ছাড়াই।
৪.ঈসা মসীহকে তুলে রাখা হয়েছে চতুর্থ আসমানে।কিয়ামতের চল্লিশ বৎসর পূর্বে তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হবে।
(ইহা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সহ পড়া )।
৫.ইস্রাফীলের আখেরী ফুৎকারে "দ্য মমি সিরিজ"এর কবরের বাসিন্দাদের মতো যতো মূর্দা(কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তি) আছে সব একসাথে উঠে আসবে।জমায়েত হবে।
৬.মানুষ মাটি হতে তৈরী।মাঝেমাঝে বলেছে,জমাট রক্তবিন্দু থেকে।আবার,মাঝেমাঝে শুক্রবিন্দু হতে।এখানেও মতভেদ আছে,
কেউ বলে সেই শুক্রবিন্দু মস্তিষ্ক থেকে উৎপন্ন আবার কেউ বলে মেরুরজ্জু আর অস্থিরজ্জু থেকে।
৭.দিনের বেলায় চাঁদ আল্লাহর আরশের নিচে সেজদায় থাকে আর রাতের বেলায় সূর্য।চাঁদের ডিউটি রাতে আর সূর্যের ডিউটি দিনে।
ইত্যাদি ইত্যাদি।
.....
আর,সেই সময়ে আমাদের কিন্ডারগার্টেনে যে দৈনিক পত্রিকাটি রাখা হতো তার নাম ছিলো "সংগ্রাম".(জানেন নিশ্চয়ই পাকিস্তানের মওদুদীকে নিজ জন্মদাতা মেনে এই পত্রিকার হাতেখড়ি হয়।)
২০০৪ এ আমার কিন্ডারগার্টেনে প্রবেশ, ২০০৮ এ মুক্তি।
নেহায়েত বাচ্চা ছিলাম নাহলে দাঁড়ি না রাখার জন্য যে কি পরিমান মার খেতাম আল্লাহ মালুম।
নিষিদ্ধ জিনিসে মানুষের আগ্রহ বেশি।তাই,নামাজ না পড়াতেই আমার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
একটি মাসিক পত্রিকা ছিলো এবং এখনো আছে "কিশোরকন্ঠ" নামক।
এই পত্রিকায় সাহসী মানুষের গল্প,উপন্যাস,আলোকিত মানুষ ছাড়াও ছোট্ট শিশুমনে জিহাদী চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য ছিলো কুরআনের আলো,হাদিসের আলোয় যৌনলিপ্সু,স্বর্গলিপ্সু এক ধরণের আত্মঘাতী বম্ব বানানোর কৌশল।
এমনভাবে ব্রেইন ওয়াশ করতো যে আমার স্পষ্ট মনে আছে,
যখন আমি ক্লাস টেনে তখন ব্লগার রাজিব হায়দার এর ধর্মীয় কটুক্তির ব্যাপারটি মিডিয়ায় আসে।আমি তখন অন্য হাইস্কুলে পড়ি।তো,পাশের বাসার এক পিচ্চি যে ওই কিন্ডারগার্টেনে পড়ে,বাসায় এসে বলে,
"আম্মু,আমাকে দোয়া করে দাও,আমি জিহাদ করতে যাবো।"
যেই ছেলেটি জিহাদের বানানটাই ঠিক মতো করতে পারবে না।
তার ব্রেইন কি পরিমাণ ওয়াশড হলে সে জিহাদের কথা বলতে পারে।
(আজ প্রাইমারী সেকশন পর্যন্তই থাকুক,
লিখতে কষ্ট হচ্ছে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৫