somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরেকটা স্বপ্নের অধীর অপেক্ষা!

১৩ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত তখন অনেক। মানে দশটা বেজে ৫৫ মিনিট।

একা একা হেটে বেড়াচ্ছি। অবশ্যই ধানমন্ডির অলিতে গলিতে না। হেটে বেড়াচ্ছিলাম গ্রামের পথে। একটা আইলের উওর দিয়ে মাঠ পাড়ি দিচ্ছিলাম। মনে আছে শীতকাল। কুয়াশাচ্ছন্ন সবকিছু। আর কনকনে ঠান্ডা। আকাশে ঝাপসা মেঘ আর চাঁদের কিঞ্চিৎ আলোও ছিল। কিন্তু আমার রাস্তা একেবারে স্বচ্ছ। কোথায় কোন দিকে যাচ্ছি তা আমার জানা। অনেকবার এই পথ দিয়ে দিনের বেলায় যাওয়া আসা করেছি।

আইলের দু'পাশে ধানক্ষেত। খালি। পুরো খা খা করছে। কোথাও কোন লোকজন নেই। আসেপাশে কমপক্ষে কয়েক মাইল অন্ধকার। অথচ আমার রাস্তা স্পষ্ট। এমনি একসময় সামনে আকস্মিক একটা পরিচিত লোকের ডাক শুনে আঁতকে উঠলাম। আমাদের বাড়ির কেয়ার টেকার। এতরাতে তার এখানে থাকার কথা না। আমারও না। এইজন্যই তো ভয়। আমি শহুরে নান্দনিক হতাশা দূর করার জন্য নাহয় রাতে সবার অজান্তে বেড়িয়েছি। তাতে কার কী? এখানে হারানো অত সোজা না। আর সবথেকে বড় কথা এইখানে এই নির্জনতায় ছিনতাইকারীর কোন ভয় নেই।

যাহোক ডাক পেয়ে কাছে যাচ্ছি। লোকটার আবছা দেহ আমার চোখে পড়েছে তখন। এগিয়ে যেতেও লোকটা স্পষ্ট হয়ে এলো। তার হাত পা মুখ সব কিছুই দেখতে লাগলাম। তখনই আমার রক্ত হিম হবার পালা। এ আমাদের কেয়ার টেকার নয়। এই গ্রামের এক পাগল। সারারাত জেগে থাকে। যদিও কোনদিন কারও ক্ষতি করেছে বলে শুনি নাই। কিন্তু লোকটির ইতিহাস ভাল না। তার দুই ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে লোকে বলাবলি করে। তারপর থেকে সে পাগল।

আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় লোকটি বলল, "ভয় নাই, আপনাকে মারবো না বা ধরবো না, আমার একটা কাজ করে দিতে হবে"।

লোকটার কথা অনেক সাবলীল। আমি অনায়াসে বলতে পারতাম আমার বাড়ি যেতে হবে, কিন্তু বাঁধ সাধলো লোকটার হাতে চমকে ওঠা রামদা।

বললাম," কী করতে হবে চাচা বলেন"?

-পুকুর দেখা যাইতেছে না?
-জ্বি
-ওখানে নেমে আমাকে দুইটা শাপলা তুলে দেবে বাবা?
-আমি যে সাতার জানি না।

লোকটা আমার দিকে তাকালো যদিও চাদ অনেক আবছা বুঝতে পারলাম সবই। লোকটা একটা লম্বা দির্ঘশ্বাস ফেলে পুকুরে ফুটে থাকা শাপলার দিয়ে অসহায় ভাবে চেয়ে বলল, "আমার রাতে খাওয়ার কিছু নাই"।

তখন আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। আমাদের নান্দনিক হতাশার যুগে এ সমস্ত কথা বজ্রপাতের মত মনে হয়। আমাদের যে একটা হৃদয় আছে তা আমরা ভুলে যাই। তখন মনে পড়ে।

আমি আস্তে করে পুকুরের পাড়ে গেলাম। তারপর সিড়ি বেয়ে নেমে পড়লাম পুকুরের পানির আরও কাছে। লোকটা আমাকে বলল, "থাক, তোমার ঠান্ডা লাগবে"।

আমার গায়ে তখন দুইখানা সোয়েটার জাড়ানো। আর পায়ে একখানে উলের স্লিপিং প্যান্ট। আর লোকটার গায়ে কিছু নেই। শুধু একটা লুঙ্গি তাও ছেড়া ক্ষতবিক্ষত। আমি সোয়েটার দু'টো খুলে বললাম, "দাঁড়ান আমি এনে দিচ্ছি"।

ঠান্ডা পানিতে পা রাখতেই সারা শরীর শীতে কুকড়ে উঠে। চোখ খুলি, কিছুক্ষণ চিন্তা করি, তারপর লেপটা ভালো ভাবে টেনে নিয়ে ওপাশ করে চোখ বন্ধ করে আরেকটা স্বপ্নের জন্য অধীর অপেক্ষা করছি। আর গায়ে তখন দুইটা সোয়েটার, একটা উলের প্যান্ট আর লেপ! অনেক ঠান্ডা!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১১:৫১
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×