বাড়ির কর্তা গিন্নিদের সাথে নিয়ে সাজানো ছাদে কিংবা বাগান বাড়িতে অবসর সময়ে কাটাইতো
কথার কাটাটাকির ফাঁকে সুরের প্রতিযোগিতাও হতো বা জমিয়ে কবিতার আড্ডাটায় কে কতটা এগিয়ে!
মাঝেসাঝে বাহিরের নামি দামি কবিরাও আসিতেন।
শখের বসে জল খাবারের সাথে হাস্যোজ্জ্বল এক বিকেল আড্ডায়,
আসর জমাইতে সবাই যেমন নিজের লেখা কবিতা পড়িয়া শুনাইতে উদগ্রীব হইয়া থাকিতো
তেমনি নেহাত শ্রোতারাও কম যাইতো না,
লেখা মুগ্ধ হইয়া শুনিয়া প্রশংসার সাথে ভুল গুলোও শুধরাইয়া দিতেন।
এই চায়ের আড্ডার কবিরাও নিজের প্রশংসা কুড়াইবার জন্যি হপ্তা করে সংবাদপতত্রে নিজের লেখা দিতেন।
কারো তো আবার লিখিতে লিখিতে নেশা ধরে যেত,
সয়ং আঙ্গুলির যদি কথা বলার ক্ষমতা থাকিতো;
প্রভুর কাছে তাহার শেষ জীবনখানা ভিক্ষে চাইতো।
শিক্ষিত মসাইদের একা নিরাসে অবসর সময় কেটে যাইতো বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে।
ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার হইয়া যেত অবশ্য তবু বইয়ের পাতায়ই যেন সমস্ত ক্ষুদার সমাধান।
কেউ তো আবার প্রিয় মানুষটাকে রাত জাগিয়া কবিতা শুনাইতো।
প্রেম পত্রেরও ছন্দে কবিতার আভাস নিছক ছক কেটে থেকে যেত।
সেই কতশত পত্র জমিয়ে তৈয়ারি হইয়েছে এই আজকালকালার পাঠক সেরা বই।
একেলে আর কবিতা আসর হয় না
প্রতিযোগিতা হতো শুনিয়াছি তাহাও এখন আর শিক্ষালয় দেখা যায় না।
মাঝেসাঝে কোথাও কবিতার দৃশ্য রেকর্ড শুনা গেলেও
তাহা এখন নামে মাত্র কেউ কেউ শখের বসে করিয়া থাকে।
আবার আজকাল কোন প্রেমিক পথ না লিখিলেও
কবিতার ছন্দ খুঁজিয়ে দু চার খানা প্রেমিকাকে উৎসর্গঃ করিতে দেখা যায় তবে তাও একন্ত ক্ষনিকের প্রেম লুটিয়া লইবার জন্যি।
বলি কি নিজের জন্য কবিতা ভালোবাসেই বা কজন?
দেশি বিলেতি গানের সুরের মূর্ছনায় নিমজ্জিত শ্রোতাদের আর মুগ্ধ হইয়া কবিতা শোনা হয়।
কাহাকেও জোর করিয়া দু চাইর লাইন কবিতা শুনাইলেও
বড়জোড় মুচকি হাসিয়া কবিতাখান সুন্দর হইছে, আপনি লিখেছে বুঝি?
বলিয়া চলিয়া যায়। তাহার হাসিতে কবিতার মর্ম না বুঝার মর্মান্তিক ছাপ স্পষ্টত বটে।
আবার,ভুল ত্রুটি ধরিয়া শুধরাইয়া দিবার বালাই ও নাই!
এই যে আমি সয়ং কবিতা লিখিতে চাইয়া মাথা মুন্ডু লিখেলিখে
সাধু-চলিত, শুদ্ধ-অশুদ্ধ মিলাইয়া ছন্দ পাকাইকার চেষ্টা করি
এ যেনো জেশে জেশে ভুল সাহিত্যের চাক্ষুস অপমান করছি!
তাহার পরেও ইচ্ছে হয় সেকেলের মত আসর বসুক কবিতার
কেউ আমার মুগ্ধ শ্রোতা না হউক,
অন্তত অপমানিত ভাবে হলেও ভুল গুলো ধরে ব্যাঙ্গ করুক,
আপনি মনে না হয় ভুল বুঝিতে পারিয়া শুধরাইয়া নিলাম।
ঘরে ঘরে মুঠোফোনে আর দেয়ালের দূরেক্ষণে সীমাবদ্ধ রাত জাগা বিষন্ন মানুষগুলো বইয়ের পাতায় মুখ লুকিয়ে কবিতা হারিয়ে যাক।
সহজলভ্য কলমের কালিতে প্রেমিকার জন্য হলেও রচিত হোক শত শত কবিতা,
যাহা হউক পরবর্তী প্রজন্মের বেঁচে থাকার অক্সিজেন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১:৫২