প্রতিটা মুহূর্তে আমাদের মনের কোণে হাজারো প্রশ্ন উঁকি দেয়। কোনোটা হয়তো উদ্ভট,কোনোটা হাস্যকর আবার কোনটা কেমন জানি যেগুলো মানুষকে জিজ্ঞেস করলে না জানে হাসে। এরকম কিছু হাবিজাবি প্রশ্ন নিয়েই আজকের এই পর্ব।
• শীতকালে শীত বা গ্রীষ্মকালে কেন গরম লাগে?
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে। এ ঘোরার সময় পৃথিবী সূর্যের দিকে সামান্য হেলে থাকে। পৃথিবী আবার তার নিজ অক্ষেও ঘোরে, তাই বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ কখনও সূর্যের কাছে চলে যায়, আবার কখনও উত্তর গোলার্ধ। যখন যে অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন সে অংশ খাড়াভাবে বেশিক্ষণ ধরে সূর্যের আলো ও তাপ পায়। আর তখন সেই অংশে বেশি গরম পড়ে। এসময় থাকে গ্রীষ্মকাল।
একটা অংশ সূর্যের কাছে থাকা মানে তার উল্টো দিকের অংশটা থাকবে সূর্য থেকে দূরে। আর দূরে থাকলে সেই অংশটা কম আলো ও তাপ পাবে। তখন সেই অংশে থাকে শীতকাল।
• পেঁয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে কেন?
পেঁয়াজে সালফারযুক্ত বিভিন্ন যৌগ থাকে এর মধ্যে এর মধ্যে অন্যতম হলো Amino Acid Sulphoxide. পেঁয়াজ কাটলে এর কোষের ভেতরের অ্যালিনেজ (allinase) নামক এনজাইম বের হয়ে আসে, যা amino acid sulfoxides যৌগগুলোকে উদ্বায়ী সালফোনিক এসিড এ পরিণত করে; যা চোখের পানির সংস্পর্শে আসামাত্র syn-propanethial-S-oxide নামক যৌগ তৈরী করে, এটিই চোখে পানি আনার জন্য দায়ী। চোখের পানির সংস্পর্শে মৃদু সালফিউরিক এসিড তৈরী হয়, তাই চোখ জ্বালাপোড়া করে।
• অন্য প্রাণিদের সাঁতার শিখতে হয় না কিন্তু মানুষের কেন শিখতে হয়?
সব প্রাণি তরল পদার্থের মধ্যে জন্মায়।আমরা মায়ের পেটে পুরোপুরি তরল পদার্থের মধ্যে থাকি। পানি বা তরল পদার্থের মধ্যে জন্মানোর কারণে কোনো প্রাণিকেই সাঁতার শিখতে হয় না,সব প্রাণিই জন্ম থেকে সাঁতার পারে।
কিন্তু সাঁতার একটা অভ্যাস। কেও যদি জন্মের পর দীর্ঘ দিন সাঁতার না কাটে তাহলে মস্তিষ্ক সেটা গ্রহণ করতে পারে না।মস্তিষ্ক ভেবে নে যে সে সাঁতার কাটতে পারে না।এজন্য শিশু অবস্থায় মানুষ দীর্ঘ দিন সাঁতার কাটে না বলে নতুন করে শিখতে হয়।
• কারও কারও অল্প বয়সে চুল পাকে কেন?
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও নানাবিধ অশান্তির কারণে মানুষের চুল পেকে যেতে পারে। শরীরের অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন হরমোন এ জন্য দায়ী।
অ্যাড্রেনালিন হচ্ছে বৃক্কীয় গ্রন্থি-নিঃসৃত এক ধরনের হরমোন। সাধারণত মানুষ ভীত বা রাগান্বিত হলে অ্যাড্রেনালিন হরমোন মানুষকে শান্ত ও স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। তবে অত্যধিক মানসিক চাপ বা অশান্তির সময় এ হরমোনের কারণে মানুষের চুলের রং পরিবর্তিত হয়ে যায়।
• লিফট দিয়ে নামার সময় নিজেকে হালকা মনে হয় কেন?
যখন লিফট ব্যবহার করে নিচে নামা হয় তখন স্থির অবস্থান থেকে একটি ত্বরণের সৃষ্টি হয় এবং লিফটের সাপেক্ষে সেই ত্বরণ অভিকর্ষজ ত্বরণের চেয়ে কম হয়। এ কম ত্বরণ নিয়ে আমরা লিফটের উপর আমাদের ওজনের চেয়ে কম বল প্রয়োগ করি।
ফলে আমরা হালকা বোধ করি। অর্থাৎ আমাদের ওজন কম মনে হয়।
এজন্য লিফট দিয়ে নিচে নামার সময় নিজেকে হালকা লাগে।
• নখ বা চুল কাটলে আমরা ব্যাথা পাই না কেন?
আমাদের শরীরে ‘কেরাটিন’ নামে একটি পদার্থ আছে। এদিয়ে নখ তৈরি হয়। আমরা জানি, অনেক কোষ দিয়ে আমাদের শরীর তৈরি। নখ, চুলও এক ধরনের কোষ। চামড়ার বাইরে বের হলে এই কোষগুলি দরকারি পুষ্টির অভাবে এক সময় মারা যায়। তাই নখ, চুল এক ধরনের মরাকোষ।
আঙুলের চামড়ার ভেতরে নখ থাকে। আবার নখের নিচের চামড়ার ভেতরে নখ থাকে। আবার নখের নিচের চামড়ায় এক ধরনের নরম সুতা বা আঁশ থাকে। এ আঁশগুলো নখের সাথে আটকে থাকে। নখগুলোকে জায়গা মতো ধরে রাখে। এজন্য নখ শক্ত হয়, নড়াচড়া করে না। মৃত বা মরাকোষ দিয়ে তৈরি বলে নখ কাটলে আমাদের ব্যাথা লাগে না।
চুলও চামড়ার ভেতরে খুবই নরম অবস্থায় থাকে। কিন্তু চামড়ার বাইরের দিকের চুল দরকারি পুষ্টির অভাবে শক্ত হয়ে যায় এবং একসময় মরে যায়। এ কারণে চুল কাটলেও আমাদের ব্যাথা লাগে না।
তথ্যসূত্রঃ Wikipedia,prothom-alo,Bissoy Answers,banglanews24,sattacademy etc