পর্দা একটি ইবাদত, সালাত যেমন ইবাদত।এটি আল্লাহর নির্দেশ।বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণএবং সময়োপযোগী। আল্লাহ তাআলা কুরআনে মাজীদে এরশাদ করেন,” হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বল, তারা যেন
তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়। তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে।ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।” (সূরা আহযাবঃ ৬০)
বেপর্দা আর নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা সমাজে কেমন বিরূপ পরিস্থিতির
সৃষ্টি করেছে এবং নারীকে কীভাবে ভোগ্য-পণ্যের বস্তুতে পরিণত করেছে তা আমরা আমাদের চারদিকে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই। পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, দাম্পত্য-কলহ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিবাহ-বিচ্ছেদ, নারী- নির্যাতন ইত্যাদি সবকিছুর পেছনেই একটি প্রধান কারণ হলো পর্দাহীনতা এবং নর-নারীর অবাধ
মেলা-মেশা।যদিও ইসলামের পর্দা- ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা অথবা এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে না বুঝার কারণে কেউ কেউ একে পশ্চাৎপদতা, সেকেলে, নারীকে শৃঙ্খলিতকরণের পন্থা, উন্নয়নের অন্তরায় এবং নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি বৈষম্য
সৃষ্টির প্রয়াস বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। মূলতঃ এই ভুল বুঝাবুঝির জন্য মুসলিম বিশ্বের কতিপয় এলাকায় ইসলামের সত্যিকার শিক্ষার অপপ্রয়োগ আর পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকাই দায়ী। পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের এটা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ইসলামের কথা উঠলেই তার প্রতি একটা কুৎসিৎ আচরণ প্রদর্শন করা হয়। আর তাদের এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে আমাদের এই অঞ্চলেও অনেকে পর্দাপ্রথা সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করে থাকেন। একজন খ্রীষ্টান ‘নান’ বা ধর্মজাজিকা যখন লম্বা গাউন আর মাথা-ঢাকা পোশাক পড়ে থাকেন তখন তা আর পশ্চাৎপদতা, উন্নয়নের অন্তরায় বা নারীকে শৃঙ্খলিতকরণের প্রয়াস বলে বিবেচিত হয় না। বরং তা শ্রদ্ধা, ভক্তি বা মাতৃত্বের প্রতীক রূপেই বিবেচিত হয়। অতএব, ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থা নারীকে শৃঙ্খলিত করার পরিবর্তে তাঁকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ- ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। ইসলাম নারীকে কিরূপ আসনে অধিষ্ঠিত
করেছে বা পর্দাপ্রথা নারীকে কী মর্যাদা দিয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে আসুন আমরা দেখি, তথাকথিত প্রগতি, নারী-স্বাধীনতা, নারী-পুরুষের অবাধ
মেলামেশা সমাজকে বা নারীকে কী দান করেছে। বর্তমান যুগে, বিশেষত পাশ্চাত্য- বিশ্বে নারীকে তাঁর নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা রূপে আখ্যায়িত করা হয়। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সাথে তাল-মিলিয়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের তুলনায় অধিকতর যোগ্য বা efficient বলেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সত্যিই কি নারী লিঙ্গ-বৈষম্যকে অতিক্রম করে পুরুষের সমান মর্যাদা লাভ করতে পেরেছে?
‘কলঙ্কময় অতীতের’ নিগ্রহ ও দমন-নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেয়েছে? তথাকথিত নারী-
স্বাধীনতা কি নৈতিকতা সম্বৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ একটি নতুন সমাজ-ব্যবস্থার ইঙ্গিত প্রদান করে? সত্যিই কি নারী প্রকৃত সামাজিক ন্যায়- বিচার লাভে সমর্থ হয়েছে? আমরা যদি বর্তমান
পাশ্চাত্য-সমাজের দিকে তাকাই তাহলে এর উত্তর হবে : ‘না’. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হলেও পাশ্চাত্যের সমাজ-ব্যবস্থা আজ এক ভয়াবহ সঙ্কটের সম্মুখীন। তাই এককালের ‘সেকেলে’ বা ‘out dated family concept’ বা পারিবারিক প্রথা নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীগণ নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। নারী-নির্যাতন, শিশুহত্যা, পতিতাবৃত্তি, ধর্ষণ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, লিভিংটুগেদার, মাদকাসক্তি, কুমারী-মাতৃত্ব বা single mother, ইত্যাদি সমস্যা আজ পাশ্চাত্য-সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কেবল পাশ্চাত্য বা উন্নত বিশ্বই নয়, আজ আমাদের সমাজেও এ-সকল ব্যাধির ক্রমশ সংক্রমন ঘটছে। বাহ্যিক চাকচিক্য আর উন্নতির খোলস ভেদ করতে পারলেই আমরা সেই অন্তর্নিহিত সমস্যা গুলো দেখতে পাই। প্রচলিত সাধারণ ধারণায় বিংশ শতাব্দি, বিশেষ করে দ্বিতীয়-বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত সময়কে নারী স্বাধীনতার স্বর্ণযুগ বলে আখ্যায়িত করা হলেও এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, এই সময়ে বিশ্বে নারী-নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা পঁচিশ ভাগ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫৫