
তাহমিমা আনামের গুড মুসলিম উপন্যাসটা শেষ করলাম কয়েকদিন আগে। তার এর প্রথম বই এ গোল্ডেন এজ (সোনাঝরা দিন) যারা পড়েছেন তারা হয়ত এই বইটার জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেছেন। আমিও অনেক আগ্রহ নিয়ে বইটা পড়েছি। তাহমিমা আনামের লেখনী আমাকে যঠেষ্ট মুগ্ধ করেছে।
প্রথম বইটি ছিল ১৯৭১ নিয়ে। এই বইটি ১৯৭১ এর পরের ঘটনাবলী নিয়ে লেখা। সেই আগের মিসেস রেহানা এর পরিবারকে ঘিরেই। তবে আগের উপন্যাস এর প্রধান চরিত্র ছিল মিসেস রেহানা আর এটায় রেহানার মেয়ে মায়া হক। মুল গল্প ১৯৮৪ এর, এর ই ফাঁকে ১৯৭২ এর এর একটা ছবিও আমাদের সামনে তুলে দেয়া হয়।
বইটা মুলত মায়া হক এর মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে। তার একসময় মনে হয় কিছুই ঠিক হচ্ছে না। আরেক সময় মনে হয় যা আছে তা ভালোই। শেষে তা একটা পরিণতিতে এসে ঠেকে।
উপন্যাসটা তিনটা খন্ডে বিভক্ত। প্রথম খন্ডে দেখানো হয়েছে অবিশ্বাসী মায়া হক আর বিশ্বাসী সোহেল হক এর ধর্মের দিকে দৃষ্টিভঙ্গি, দেশের উন্নতির দিকে নজর না দিয়ে সবার নিজের উন্নতির দিকে নজর দেয়া, একে একে দেশপ্রেমিকার সংখ্যা কমে যাওয়া, সংবাদ নিয়ন্ত্রন এসব। এমনকি অনেকে মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধের পর পরই দেশ ছেড়ে বিদেশ চলে যাওয়াকেও কটাক্ষ করা যয়েছে। পুরো বিষয়টাকে দেখানো হয়েছে "her own country is cannibalizing itself" হিসেবে।
দ্বিতীয় খন্ডে আমরা জানতে পারি রেহানা হক এর ক্যান্সার এবং বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। ডাক্তার খুব একটা আশা দিচ্ছেন না। অন্যদিকে সোহেল নিয়মিত তার মায়ের জন্য মিলাদ মাহফিল এর আয়োজন করে যাচ্ছে। এসময় মায়া এর মনে হতে থাকে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে হয়ত তার মাকে বাঁচানো যাবে। একসময় তার মা বেঁচে যায় আর তখন তার মনে হতে থাকে এই কয়দিন সে তার নিজের বিশ্বাস এর সাথে প্রতারণা করেছে।
আর উপন্যাসের তৃতীয় খন্ডটা সবচেয়ে মজাদার ও আকর্ষনীয়। এখানে কি ঘটেছে তা আর নাই বললাম।
উপন্যাসের সাইড স্টোরি হিসেবে আছে সোহেলের ছেলে জাইদ এর গল্প। যদিও এটাকে সাইডস্টোরি বলা ঠিক হচ্ছে না। এই গল্পটা মুল গল্পের সাথেই যুক্ত। এটাতে শিধু একটা কথাই মনে আসে, "WHY MUST FIREFLIES DIE SO YOUNG!"
বইটা মুলত ঐতিহাসিক উপন্যাস। ইতিহাস কে ঠিকভাবে অনুসরণ করা ঔপন্যাসিক এর কাজ নয়। কিন্তু বইটাতে ১৯৭৩ থেকে এরশাদের ক্ষমতা লাভ পর্যন্ত ঘটনা সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি আশা করেছিলাম এগুলোও থাকবে। আমি ইতিহাস ঠিকমত জানিনা তাই। তাই বই এ অন্যান্য কোন ভুল আছে কিনা বলতে পারলাম না। তবে ইতিহাসের রেফারেন্স বই এ খুব কমই আছে।
যাই হোক বাংলাদেশ সম্পর্কে তাহমিমা আনামের ট্রিলজির দ্বিতীয় বই এটা। আমি তৃতীয়তার জন্যও অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করব।
আজ প্রথম আলোতে দেখলাম বইটা বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছে। মুলত এটা দেখেই লেখার ইচ্ছা জাগল। ইংরাজী ভার্শনটার দাম ৭০০ টাকা রেখেছে। আমার মতে এটা অনেক বেশি। ৩০৪ পেজ এর বই। ৩০০/৩৫০টাকা দাম রাখলেই পারত। আর বইটার কপিরাইট তাহমিমা আনামের কাছেই আছে। তাই কেউ যদি বলে এটা হার্পার কলিন্সের বেঁধে দেওয়া দাম তাহলে তার সেই যুক্তি খাটবে না। ইচ্ছে থাকলেই বইটার দাম কমানো যেত। এবং আমার মনে হয় এতে বিক্রি বেশি হত।