ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৬নং ওয়ার্ড কমিশনার ও বিএনপি রমনা থানা শাখার সভাপতি চৌধুরী আলমকে গত ২০ জুন র্যাব প্রথম দফায় আটক করেছিল। র্যাব হেড কোয়ার্টারের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে কর্মরত এএসআই বিল্লাল হোসাইনের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা ওইদিন তাকে আটক করেছিল বলে পুলিশের পক্ষ থেকে রাজধানীর গুলশান থানায় করা একটি সাধারণ ডায়রিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশের ওই জিডির কপি উপস্থাপন করে চৌধুরী আলমের আইনজীবীরা গতকাল সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের ১নং হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চৌধুরী আলমকে র্যাব প্রথম দফায় ২০ জুন আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সাধারণ পথচারী ও গুলশান থানা পুলিশের সহযোগিতায় তিনি রেহাই পান।
নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যরা তাকে আটক করার সময় র্যাব কর্মকর্তা বিল্লাল হোসাইন গুলশান থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পরে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে বিল্লালকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার পর চৌধুরী আলম ৬ দিন র্যাবের নজরদারিতে ছিলেন। ২৬ জুন সাদা পোশাকের র্যাব সদস্যরা আবার ফার্মগেট এলাকা থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, অ্যাডভোকেট শাহনূর ইসলাম প্রমুখ।
গুলশান থানার এসআই মোহাম্মদ আলী গত ২০ জুন ২১/২৫/১৭৪৮ নং জিডিতে উল্লেখ করেছেন, ‘২০ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গুলশান এভিনিউ ৯০নং রোডের মাথায় আসার পর একজন লোক দু্রত আমাদের পুলিশের গাড়ির কাছে এসে জানায়, গুলশান ৭২নং রোডে ১৫-১৬ জন লোক তাকে প্রাইভেট কার থেকে নামিয়ে গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।
এ সংবাদের ভিত্তিতে আমরা এভিনিউ রোডের ওপর ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা সংবাদদাতার শনাক্ত মতে একটি মোটরসাইকেলে লাল রঙের হাফহাতা শার্ট গায়ে বসা লোককে দেখে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করি। তখন ওই লোক আমার সঙ্গে কথা না বলে বারবার অজ্ঞাত লোককে মোবাইল করতে থাকে। আমি বারবার তার পরিচয় জানতে চাইলে সে উত্তর দেয়নি। আমি সংবাদদাতা ও শনাক্তকারীর পরিচয় জানতে চাইলে সে নিজের নাম চৌধুরী আলম এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার বলে পরিচয় দেয়। ইউনাইটেড হাসপাতালে মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে দেখতে গিয়েছিল বলেও সে জানায়। মোটরসাইকেল আরোহীসহ ১৫-১৬ জন তার গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে।’
জিডিতে এসআই মোহাম্মদ আলী আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি মোটরসাইকেলে থাকা ব্যক্তিকে তল্লাশি করে আমার হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। বিভিন্নভাবে ৩০ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদের পর সে নিজেকে র্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেয়। প্রথমে তার নাম ও পদবি বলতে চায়নি। সে আমার সঙ্গে জনগণের সামনে উগ্র আচরণ করে। বিষয়টি আমি তাত্ক্ষণিকভাবে থানার চার্জ অফিসার শেখ মাসুদ করিমকে জানাই এবং জেমিনি-৮১ টিমের সহায়তা চাই।
এক পর্যায়ে সেখানে ২০০-২৫০ জন পথচারী উত্তেজিত হয়ে সাদা পোশাকে থাকা র্যাব সদস্য পরিচয়দানকারীকে মারতে উদ্যত হয়। আমি ৩ জন ফোর্স নিয়ে পথচারীদের থামাতে হিমশিম খাই। তখন তার মোবাইলে একটি ফোন এলে সে নিজেকে র্যাব সদস্য এবং এএসআই বিল্লাল হোসাইন বলে জানায়। তার পরিচালক আমার সঙ্গে কথা বলবে বলে জানায়।
আমি মোবাইলে কথা বলে বুঝতে পারি যে, ওই ব্যক্তি র্যাব হেড কোয়ার্টারের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সদস্য। আমি উত্তেজিত লোকজনকে সরে যেতে বললে তারা যেতে চায়নি। আমি র্যাব সদস্য বিল্লাল হোসাইনের আইডি কার্ড তার কাছ থেকে জোর করে নিয়ে জনগণকে দেখাই।
তখন তারা চলে যায়। তার আইডি কার্ড নং-৩১৪৭৭২ এবং পিইআর নং-৪০১৬৮০১। পদবি এএসআই। তাত্ক্ষণিকভাবে এ ঘটনা আমি র্যাব হেড কোয়ার্টারে জানালে বিল্লাল হোসাইনকে র্যাবের মোবাইল পার্টির কাছে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। আমি এ বিষয়টি আমাদের গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামালউদ্দিনকে জানাই। এডিসিকেও জানাই। তাদের অবহিত করে ভবিষ্যতের জন্য অন্তর্ভুক্ত করে রাখলাম।
ওই চৌধুরী আলম বর্তমান ৫৬নং ওয়ার্ড কমিশনার। তার মোবাইল দিয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে তার নির্দেশে ডাইরিতে নোট করে রাখলাম।’
গুলশান থানায় সংরক্ষিত এ জিডির ফটোকপি সরবরাহ করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, চৌধুরী আলমের পরিবার ও আমরা তার আইনজীবীরা বার বার বলে আসছি, চৌধুরী আলমকে সাদা পোশাকের র্যাব সদস্যরা আটক করে নিয়েছে।
তিনি র্যাব হেফাজতেই রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ জিডির সূত্র ধরেই সরকার চৌধুরী আলমকে র্যাব হেফাজত থেকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলাও বিচারাধীন রয়েছে বলে তিনি জানান
সূত্র : http://www.bdtodaynews.com/?p=9793