[এক]
... আদ্রিতা। রাজধানী শহরের শিল্পপতি বাবার একমাত্র মেয়ে। কথাবার্তায় যেমন আহ্লাদে আটখানা দেখতেও তেমনি মাশাল্লাহ। ছোটবেলা থেকেই বাবা চাওয়া পাওয়ার কমতি দেননি কিছুই। আর এ নিয়েই তো আদ্রিতার মায়ের যত অভিযোগ। আদর দিয়ে দিয়ে মেয়েকে একদম বাদর বানিয়েছে। এইতো সেদিন মাঝরাতেই হঠাত বায়না ধরে বসল সে নাকি বিশাল সাইজের একটি ক্যাডবেরি না হলে কিছুতেই ঘুমুতে যাবে না। রায়হান সাহেব কত করে বুঝালেন যে সকাল হলেই আনিয়ে দিবেন এখন তো ড্রাইভার ঘুমিয়ে পড়েছে। নাহ তার এক কথা। এখন যে করেই হোক ক্যাডবেরি এনে দিতেই হবে। চার চারবার সিআইপি হওয়া ভদ্রলোক নিতান্তই একজন ভাল মানুষ তাই ড্রাইভারকে আর বিরক্ত না করে গাড়ি নিয়ে নিজেই বেরিয়ে পড়েছিলেন।
[দুই]
আজ ৭ই জুলাই। আদ্রিতার ২০ তম জন্মদিন। সে এখন একটি নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ছে। ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই তার মেজাজটা অতিরিক্ত মাত্রায় খারাপ হয়ে আছে। ভেবেছিল রাতে সবাই উইশ না করে ঘুমিয়ে গেলেও সকালবেলা ঠিকই করবে। কিন্তু কিসের কি! সবাই দিব্যি নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। অথচ তার গত বার্থডে টা কত মজা করেই না হয়েছিল! বাবা রাতেরবেলাই ঘুম থেকে তোলে প্রথম দফা কেক কাটিয়েছিল। আর ছোট ভাইটা কি সুইট একটা টেডি বিয়ার গিফট করেছিল। ওইটাও এখন আর সবার মত বজ্জাত হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবছে আদ্রিতা। নাহ আর এক মুহূর্তও ভাল লাগছে না বাসায়।
- কিরে মা এতো সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিস?
- এইতো আব্বু ভার্সিটিতে।
- তাই বলে এতো সকালেই যেতে হবে?
- উহু আব্বু আজ নুশিনের বার্থডে।
- ওহ। আচ্ছা সাবধানে যাও।
- আর কিছুই না?
- (মুখের সামনে থেকে পেপারটা সরিয়ে) আর কি? ওহ হা হা হা আচ্ছা বিএমডব্লিউ টা নিয়ে যাও। আমি ড্রাইভারকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।
ইশ আব্বুটা এমন কেন? নুশিনের বার্থডে এই মিথ্যাটা বলার পরও আজ যে আমার বার্থডে এই কথাটি তার একবারও মনে হল না! আর কিছু না বলে দ্রুত পায়ে লিফটের দিকে হাঁটা দিল আদ্রিতা। এসময় তার দিকে কেউ ভালমত তাকালে নিশ্চিত বুঝতে পারত রাগে গাল দুইটা একদম টকটকে লাল টমেটোর মত দেখতে হয়ে গেছে।
[তিন]
আদ্রিতা এখন বসুন্ধরা সিটির ফুড কোর্টে বসে আছে। নিজে থেকেই তার সকল বন্ধুদের ট্রিট দিচ্ছে। সবাই কত কিছু খাচ্ছে কিন্তু সে কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর কি যেন ভাবছে। আর কেউ ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও রিথেন ঠিকই ধরে ফেলেছে যে আদ্রিতার নিশ্চই কোন কারণে মন খারাপ। রিথেন সম্পর্কে এক কথায় বলতে গেলে সে ছেলে হিসেবে বেশ ভদ্র, অনেকটা মার্ক জুকারবার্গের মত কোঁকড়ানো চুল আর হাসিহাসি চেহারার। তবে রিথেনের ব্যতিক্রমধর্মী এক গুণ হচ্ছে কোন এক অদ্ভুত কারণে সে তার মেয়ে বন্ধুদেরকে তুই করে বলতে পারে না। এক অর্থে সেটাকে গুণ না বলে নারীফোবিয়াও বলা যেতে পারে।
খাওয়াদাওয়া শেষে চলে আসার সময় রিথেন আদ্রিতাকে আলাদা করে ডেকে এনে 'হ্যাপি বার্থডে আদ্রি। এই নাও এটা তোমার বার্থডে গিফট' বলেই রঙ্গিন কাগজে মোড়ানো কিছু একটা তার হাতে গুঁজে দিয়ে উল্টো পথে হাঁটা দিল। আদ্রিতা বলবে কি! সে তো পুরাই হতবাক। ভেবেই পাচ্ছে না আজ যে তার বার্থডে এটা এই ছেলে জানলো কোথা থেকে! ফেসবুকেও তো বার্থডেট হাইড করে রেখেছিল তাহলে! যাই হোক, হঠাত করেই আদ্রিতার মনটা বেশ ভাল হয়ে গেল।
_________________________________________________________________
....চলবে। তিন পর্বের প্রথম পর্বটি আজ প্রকাশ করলাম। বাকিগুলো শেষ করে এবং গুছিয়ে এনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকাশ করার আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সকলের নিকট দোয়াপ্রার্থী।