somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনস্টাইনের অপ্রকাশিত 'ঈশ্বর চিঠি' এবং সকল ভ্রান্তির অবসান !

০৯ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন এ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ঈশ্বর বিশ্বাস একটি বহুল আলোচিত বিষয়। ধর্মীয় বিশ্বাসের পক্ষের এবং বিপক্ষের সবাই তাকে নিজেদের একজন ভাবতে ভালবাসে। আইনস্টাইনের জগদ্বিখ্যাত উক্তি "ঈশ্বর পাশা খেলতে পছন্দ করে না" ধর্মীয় এপলোজেটিকদের একটি অত্যন্ত প্রিয় উক্তি। তিনি আদতেই কোন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন কিনা এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানের ক্রম উন্নতির সাথে সাথে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কিত ধর্মীয় তত্বগুলির ক্রমশ: দূরত্ব বাড়তে থাকায় এপলোজেটিকদের কাছে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন এটা দেখাতে পারলে তারা পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পায়, বিশেষ করে আইনস্টাইনের মত বিখ্যাত বিজ্ঞানী হলে তো কথাই নেই।

এমাসের ৮ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত ই-বে ডট কম নামক ওয়েব সাইটে মৃত্যুর এক বছর আগে জার্মান ভাষায় আইনস্টাইনের নিজের হাতে লেখা অপ্রকাশিত একটি চিঠি নিলাম করা হবে । এই ব্যক্তিগত চিঠিটি সর্ব মহলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে কারণ এই চিঠিতে আধুনিক বিজ্ঞানের এই মহারথী ঈশ্বর এবং ধর্ম সম্পর্কে তাঁর একান্ত নিজস্ব কিছু ধ্যান-ধারণা ব্যক্ত করেছেন। ইহুদী ধর্মাবলম্বী দার্শনিক এরিখ গুটকিন্ড তাঁকে নিজের লেখা একটি বই পাঠিয়েছিলেন পড়বার জন্য। বইটির নাম ছিল "চুজ লাইফ: দ্য বাইবেল কল টু রিভোল্ট"। এই বইটি পড়ার পর আইনস্টাইন ১৯৫৪ সালে ৩ জানুয়ারি জার্মান ভাষায় এরিখ গুটকিন্ডের কাছে লেখা এই চিঠিতে ঈশ্বর এবং ধর্ম সম্পর্কে তার মতামত ব্যক্ত করেন। এ চিঠি সম্পর্কে যারা আগে থেকেই অবগত আছেন তাদের কাছে চিঠিটি 'ঈশ্বর চিঠি' (God Letter) নামে পরিচিত। ঈশ্বর সম্পর্কে তার ধারণার পাশাপাশি এটি আরেকটি কারণে বেশ গুরুত্ব, তা হল ইহুদী জাতিগোষ্ঠীকে তিনি অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর থেকে আলাদা কিছু মনে করেন না। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে তাঁর বিরুদ্ধে জায়নবাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থনের যে অভিযোগ আছে তা ভ্রান্ত।

ইবে তথ্য থেকে আরও জানা যাচ্ছে যে নিলামে চিঠিটির প্রাথমিক মূল্য ধরা হয়েছে ৩ মিলিয়ন ডলার। চিঠিটির বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ ইংরেজিতে অনুবাদ করে ইবে'তে প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠকদের জন্য সেই উল্লেখযোগ্য অংশগুলোর বঙ্গানুবাদ আমি এখানে তুলে দিলাম। মূল চিটিতে যাওয়ার আগে আরেকটি কথা বলে নেই। রিচার্ড ডকিন্স তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই নিলাম এবং চিটির সংবাদ প্রকাশ করেছেন এবং সাথে চিঠি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে নিজস্ব মতামত দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য ডকিন্সের সেই মতামতটিও এখানে তুলে দিলাম।

এ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে নিজেদের একজন ভাবার কারণে ধর্মীয় এপোলজিস্টদেরকে পুরোপুরি দোষ দেয়া যাবে না। উনি কিছুটা দায়িত্বহীন ভাবেই "ঈশ্বর" কে কাব্যিক রূপক হিসাবে উদ্ধৃত করতে পছন্দ করতেন। তবে আইনস্টাইনের প্রতি পক্ষপাতহীন হয়ে বলতে হয় যে আজকের দিনের এই অসৎ উদ্দেশ্যে উদ্ধৃতি-ব্যবহার করা সম্পর্কে অনুমান করা তার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। তাই তার মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে লেখা এই চিঠিটা দেখে ভাল লাগছে যা চিরদিনের জন্য আইনস্টাইন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন এই কল্পকথাকে নিস্তার দেবে। অন্যান্য আরও সূত্রের সাথে এই চিঠিও শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত করে যে, পৃথিবীর যে কোন বাস্তব বোধের প্রেক্ষিতেই, আইনস্টাইন ছিলেন একজন নাস্তিক। যখন ২০০৮ সালে লন্ডনে চিঠিটা নিলামে ওঠে, আমি রিচার্ড ডকিন্স ফাউন্ডেশনকে উপহার হিসাবে দেয়ার উদ্দেশ্যে চিঠিটা কেনার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলাম। যে দামে চিঠিটা শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল তার খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশ আমি প্রস্তাব করতে সমর্থ হয়েছিলাম। কিন্তু সেই বিক্রি দামটাও ছিল বর্তমানে ধার্য সর্বনিম্ন দাম ৩ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেকই কম। আমি আশা করব যে যিনিই এই নিলাম জিতুক না কেন তিনি এটি ইংরেজির সাথে সাথে অন্যান্য ভাষায় সম্পূর্ণ অনুবাদ সহকারে খুব স্পষ্টতার সাথে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন।
-- রিচার্ড ডকিন্স



'ঈশ্বর চিঠির" কিছু অনুচ্ছেদ:

... আপনার বইয়ের শেষ দিনগুলির বেশিরভাগ অংশই আমি পড়েছি এবং আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বইটি আমাকে পাঠাবার জন্য। এ ব্যাপারে আমি যে জিনিষটি বিশেষভাবে অনুধাবন করেছি সেটি হল মানব সম্প্রদায় এবং জীবনের প্রতি বাস্তবভিত্তিক মনোভাবের দিক থেকে আমাদের মধ্যে প্রচুর মিল রয়েছে।

... "ঈশ্বর" শব্দটি মানুষের দুর্বলতা থেকে সৃষ্ট এবং ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ ছাড়া আর কিছুই না। বাইবেল হল কিছু গৌরবান্বিত পৌরাণিক কাহিনীর সমাহার যা অত্যন্ত শিশুতোষ। যে কোন নিগূঢ় অর্থই করা হোক না কেন তা আমার ভাবনায় কোন পরিবর্তন আনবে না। এই নিগূঢ় অর্থগুলি স্বভাব অনুযায়ীই নানা ধরণের হয়ে থাকে এবং প্রকৃত পাঠ্যাংশের সাথে কোন সামঞ্জস্য থাকে না। অন্যান্য সব ধর্মের মত ইহুদী ধর্মও প্রধানত: শিশুতোষ কুসংস্কারের অনুরূপ। আমি খুশি মনেই নিজেকে যাদের একজন বলে মনে করি এবং যাদের মানসের সাথে রয়েছে আমার গভীর সম্পৃক্ততা, সেই ইহুদী জনগোষ্ঠীরও অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় আলাদা কোন বিশেষ গুণাবলী আছে বলে মনে করি না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় তারা খুব বেশী উন্নতও না। যদিও ক্ষমতার অভাবে তারা সবচেয়ে খারাপ ধরণের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত আছে। এছাড়া আমি তাদের মধ্যে এমন কিছু দেখিনা যাতে তাদের নির্বাচিত (ঈশ্বর কর্তৃক) বলে মনে হবে।

সাধারণ অর্থ আমার জন্যে এটা ভাবা কষ্টদায়ক যে আপনি নিজেকে বিশেষাধিকার প্রাপ্ত দাবী করেন এবং আত্ম-অহমিকার দুটো দেয়াল দ্বারা সেটা রক্ষা করার চেষ্টা করেন। বাইরের দেয়ালটি একজন মানুষ হিসাবে এবং ভেতরের দেয়ালটি একজন ইহুদী হিসাবে। মানুষ হিসাবে আপনি সাধারণভাবে স্বীকৃত কার্যকরণের প্রয়োগ থেকে অব্যাহতি দাবী করেন এবং ইহুদী হিসাবে একেশ্বরবাদের বিশেষ সুবিধা দাবী করেন। সম্ভবত: আমাদের বিস্ময়কর স্পিনোজা সর্বপ্রথম সব ধরণের ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে সীমিত কার্যকরণ আসলে কোন কার্যকরণই না। এবং প্রকৃতি সম্পর্কিত ধর্মগুলির এনিমিস্টিক বিশ্লেষণ নীতিগত ভাবেই একচেটিয়া করণের কারণে বাতিল হয়ে যায় না। এই ধরণের দেয়ালের মাধ্যমে আমরা শুধু নির্দিষ্ট কিছু আত্ম প্রবঞ্চনাই লাভ করতে পারি। অন্যথায় এতে করে আমাদের নৈতিক প্রচেষ্টার আরও উন্নয়ন সাধিত হয় না।

এখন যেহেতু খোলাখুলি ভাবেই আমাদের মাঝে বিদ্যমান বুদ্ধিবৃত্তিক প্রত্যয়ের ব্যাপারে পার্থক্যগুলি বর্ণনা করেছি এতদসত্বেও আমার কাছে একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে মানুষের আচরণের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অপরিহার্য বিষয়গুলিতে আমরা যথেষ্ট কাছাকাছি। আমাদের যে জিনিষটা আলাদা করে, ফ্রয়েডের ভাষায় যাকে বলা যায় 'বুদ্ধিবৃত্তিক অবলম্বন এবং যুক্তিসহকরণ'। সুতরাং আমি মনে করি যে আমরা পরস্পরকে খুব ভালভাবেই বুঝতে পারব যদি আমরা নিরেট (বাস্তব) জিনিষ নিয়ে আলোচনা করি।

সর্বোচ্চ শুভকামনা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ধন্যবাদ সহ

বিনীত

এ. আইনস্টাইন





সূত্র:
রিচার্ড ডকিন্স ডট নেট
ই-বে ডট কম


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:৫৬
২৬টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×