চাকুরী সংক্রান্ত কোটা পদ্ধতি বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি/নাতনি পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে! মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের ছেলেমেয়ে পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু বিপত্তি বাধল যখন নাতি পর্যন্ত গড়াল!! সিস্টেমটা এখন বহুত জটিল হয়ে গেল, বুঝতেছেন না তাই তো!! তাহলে বুঝাইয়া কই-
আমার বন্ধু(!)(ক্লাসমেট, স্কুলে একসাথে পড়েছি) মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের এলাকার সবাই জানে সে রাজাকারের নাতি! তার দাদা যুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জামাতের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল আর এলাকার শান্তি কমিটির প্রধান ছিল। সংগত কারণেই এলাকার সবাই জানে ওর দাদা রাজাকার ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাহলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেল কেমনে!! কাহিনী তো এখানেই, তার নানা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। (মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকার ফ্যামিলিতে কেমনে বিয়া হইল মাথায় ডুকে না, যদিও আমাদের দেশপ্রেমিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ের শ্বশুর পক্ষও রাজাকার ছিলেন!! তাই বোধ হয় সমস্যা নেই!)। কিন্তু তার নানার বাড়ি অনেক দূরে, মানে অন্য জেলায়। কাজেই তার নানা মুক্তিযোদ্ধা এটা আমাদের এলাকায় কেউ জানতো না। চাকুরী পাওয়ার পর যখন কেমনে কেমনে সবাই জানল যে সে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চান্স পাইছে! সবাইতো থ! রাজাকারের নাতি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চান্স কেমনে পাইলো!!
বর্তমান প্রজন্ম (কিছু ছাগু ব্যতিত) মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল এবং তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতেও সক্রিয় কিন্তু তারপরও অধিকাংশ তরুন/তরুনী মনে হোচট খায় এই কোটা ব্যবস্থার বৈষম্যতায়!! চাকুরী প্রত্যাশি অনেক দেশপ্রেমিক তরুনকে বলতে শুনি আমারা তো কোটায় পরিনা, আমাদের কি চাকুরি হবে, আমরা তো রাজাকার!! কথাগুলো নিশ্চয়ই হতাশা থেকে বলা, যদিও তারা আগের যে কোন প্রজন্ম থেকে দেশপ্রেমে বেশি উদ্ভুদ্ধ। অনেকে হয়তো আমার এই পোস্ট নিয়ে প্যাঁচানোর চেষ্টা করবে কিন্তু তাদের জন্য কথা হলো আপনি নিজেই আপনার আশে পাশে যারা পরিচিত তরুন আছে, যারা ছাগ প্রজাতির না, তাদের জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন এই কোটা পদ্ধতির ব্যাপারে তাদের মতামত কি!!!!!
পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ বর্ণ বৈষম্য, ধর্ম বৈষম্য, আয় বৈষম্য ইত্যাদির কারনে যেন সমাজে কোন বৈষম্য তৈরি না হয় তার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু বৈষম্য জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছি!! আমি জানি না দেশে এখন জীবিত আছেন এমন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত। মনে হয় না ৫/১০ লাখের বেশি হবে। এই ৫-১০ লাখ লোকের জন্য ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে চাকুরীতে ৩০ ভাগ পর্যন্ত কোটা তাও আবার বংশ পরম্পরায় চলতে থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত, বুঝিনা!! ছেলে মেয়ে পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু নাতি নাতনি পর্যন্ত......!!!! এই ব্যবস্থাটা একটা ইমোশনার ব্ল্যাকমেইলের মতো!
জীবিত মুক্তিযোদ্ধা যারা আছেন তাদের মাঝে যারা যারা অসহায় অসচ্ছল তাদের সংখ্যা কত হবে, সরকার কি পারে না উনাদের ঘর বাড়ি্র ব্যাবস্থা করে দিতে, কর্মসংস্থান করে দিতে আর যাদের কিছু করার নেই তাদের জন্য সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করতে! দরবেশ বাবারা দেশের শেয়ার বাজার থেকে যে পরিমান টাকা মেরে খাইছে, বর্তমানে আর অতীতের নেতা, মন্ত্রীরা দূর্ণীতি করে যে পরিমান টাকা আত্মসাত বা পাচার করছে তার চিটে ফোঁটা পরিমানও তো লাগেনা উনাদের পুনর্ভাসন করতে!
এই বৈষম্য মূলক কোটা পদ্ধতিটা বিসর্জন দেয়ার সময় কি এখনও আসেনি দেশে? আর কতকাল চলবে!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৩৫