অফিস সময়ের শুরু এবং শেষের দিকে মেট্রো ট্রেনে ভীড় থাকে। ভীড়ের মধ্যে ট্রেনে উঠেছি, সাথে দেশ থেকে ইংল্যান্ড হয়ে আসা দুজন গেস্ট।
ট্রেনের দরজা খোলার সাথে সাথে এক লোকের দুটো টিকেট পড়লো আমার পায়ের পাশে।
সে টিকেট কুড়িয়ে নিবে কিন্তু ভাব দেখাচ্ছে আমার জুতার নিচে রয়েছে তার টিকেট। এই ইস্যুতে সে ঝামেলা বাঁধিয়ে আমার পা ধরে সরানোর চেষ্টা করছে।
নিচে তাকিয়ে নিশ্চিত হলাম আমার জুতা মোটেও তার টিকেটের উপরে নয়, সে কোনো কথাও বলছেনা।
প্রতিদিন মেট্রোরেলে চলি কিন্তু এমন অস্বাভাবিক আচরন করতে কাউকে দেখিনি। সন্দেহ হওয়ায় তখনই পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার ফোন খোয়া যায়নি।
দরজা বন্ধ হওয়ার আগ মুহুর্তে লোকটি ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলো, এরপর তার হাতে থাকা ছাতা দিয়ে আমাকে মারতে উদ্ধত হলো।
আমি ঠেকানোর জন্য হাত বাড়ালাম,
তখনই ট্রেনের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো...
এধরনের পরিস্থিতিতে আশেপাশে থাকা যাত্রীরাও বুঝতে পারেনি সে কেনো এমন আচরন করেছে বা আমার সাথে কি হচ্ছে!
লোকটি নেমে যাওয়ায় পর ট্রেনের যাত্রীরা জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে?
তখনই বুঝলাম আমার আরেক পকেট ফাকা,
মানে ওয়ালেট মেরে দিয়েছে চোর।
একশো ইউরোর মতো ক্যাশ, ব্যাংক কার্ড, মেডিকেল কার্ড, ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল প্রেস কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র হারালাম।
ঘন্টাখানেক পর পিএসজি ক্লাব দেখিয়ে গেস্টদের নিয়ে ফিরছি, ভীড়ের মধ্যে ছেলেমেয়েদের একটা গ্রুপ আমাদের সাথে ট্রেনে উঠে।
ওদেরকে দেখেই আমার মেহমানদের সাবধান করলাম।
ট্রেন ছাড়ার আগেই ওরা নেমে গিয়েছে কিন্তু এর মধ্যে আরেক ঘটনা, যা আমার গেস্ট পরে বলেছেন...
গ্রুপের মধ্যে শাল পরা এক মেয়ে ছিলো।
সে শাল দিয়ে হাত ঢেকে মহিলা গেস্ট এর ব্যাগ ধরে টানছিল। চোরের গ্রুপের অন্যজন আমার সাথে থাকা অপর মেহমানের পকেট হাতাচ্ছিল।
আরেকজন ট্রেনের দুই দরজার মাঝখানে দাঁড়িয়ে দরজা যাতে বন্ধ না হয় সেই চেষ্টা করেছিল।
এই হচ্ছে প্যারিসের অবস্থা...
অনেকবছর আগে ব্যাংকে চেক জমা দেওয়ার সময় টেবিলে রাখা ওয়ালেট মেরে দিয়েছিল চোর, কিন্তু কিছুদিন পর আমার এড্রেসে ডকুমেন্টসগুলো ফেরত এসেছিল। তবে এই চোরের কাছ থেকে ডকুমেন্টস পাওয়ার আশা করছিনা।
প্যারিসে চোরের খপ্পরে পরে পরিচিত অনেকেই বিভিন্ন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চমৎকার সুন্দর এই নগরে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে কারণ আইন তেমন কঠোর নয়।
City of Love, City of Light (Paris) Became City of Thief...
কথায় বলে বিপদ যখন আসে চারিদিক থেকে আসে...
এই লেখা যখন লিখছি তখন দেশ থেকে আমার স্ত্রী ফোন করে জানিয়েছে ঔষধের দোকানে গিয়ে তার মোবাইল সহ পার্স চুরি হয়েছে।
এরপর চুরি হওয়া মোবাইলে কল দিলাম, ফোন রিসিভ করেছে এক সার্জেন্ট।
আশ্চর্যজনকভাবে উনি জানালেন মহিলা চোরের একটা গ্রুপকে তারা ধরেছেন, আরো কিছু জিনিসপত্রের সাথে এই মোবাইলটা পাওয়া গেছে। পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে মোবাইল ফোন পাওয়া যাবে...