প্যারিসের অভিজাত champs elysées এলাকায় এক সপ্তাহের জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে আয়নাবাজি। বাংলাদেশের হলগুলোতে সিনেমাটির প্রচুর দর্শক সমাগম থাকলেও এখানে বিপরীত চিত্র! পরিচালক অমিতাভ রেজা ১৭ তারিখ 'প্রিমিয়ার শো' তে উপস্থিত ছিলেন। সেদিন আমন্ত্রিত অতিথি থাকায় হল হাউসফুল মনে হলেও সত্যিকার অর্থে ছবিটি প্যারিসে দর্শক টানতে ব্যর্থ।
৪০/৫০ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস ফ্রান্সে ছুটির দিনে হলে দর্শক সমাগম আশা করেছিলাম। ৩০০ আসনের বিপরীতে রোববার সর্বসাকুল্যে ৮০ জনের মত দর্শক ছিলেন তার মধ্যে বিদেশী হাতে গোনা কয়েকজন।
এতবড়ো হলে আজ (২১শে নভেম্বর) দর্শক সংখ্যা মাত্র ১২ জন। সারাদিনে একটিমাত্র শো, তাতেও আয়নাবাজি দর্শক শুন্যতা যাচ্ছে! এতে করে ফরাসীরা এবং হল কতৃপক্ষের কাছে বাংলা সিনেমা সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা পৌছাবে। যথাযথ প্রচারের অভাবই মূল কারণ বলে মনে করি। দর্শকদের হলমূখী করার বিষয়টি সিনেমা মুক্তির আগে পরিবেশকের ভাবা উচিত।
১৪৪ মিনিটের 'আয়নাবাজি' সিনেমা সম্ভবতো আন্তর্জাতিকমানের করতে গিয়ে 'কাটছাট' করে ৯২ মিনিট দেখানো হচ্ছে প্যারিসে।
দেশে যারা ছবিটি দেখেছে তারা যদি এই 'কাটছাট' আয়নাবাজি দেখে, মেজাজ বিগড়ে যাবে সন্দেহ নেই। মুভির গান বাদ দিয়েছে সমস্যা নাই কিন্তু শেষ দৃশ্যে আয়নার জেল থেকে কৌশলে পলায়নের মুহুর্তটি নাই হয়ে গেছে। এখানকার দর্শক বুঝলো পরিশেষে আয়না'র ফাঁসি হয়েছে।
কিন্তু মূল গল্পে আয়না রাজনীতিকের জন্য জেলখাটতে গিয়ে ফেঁসে গেলেও রক্ষীকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বেরিয়ে আসে!
একজন পেশাদার সাংবাদিকের হাতে কখনো সংবাদের মৃত্যু হয়না। সাংবাদিক চরিত্রে পার্থ বড়ুয়াকে এখানে দর্শক এলকোহলিক এবং ব্যর্থ সাংবাদিক হিসাবে পেয়েছে। তার হতাশার পিছনে পারিবারিক সমস্যা বা বউয়ের সাথে সেপারেশন, মেয়েকে কাছে না পাওয়ার দৃশ্য সহ অনেক দৃশ্যই প্যারিসের প্রদর্শনীতে বাদ গেছে।
রেগুলার প্রাইসে টিকেট কেটে মুভি দেখতে আসা প্রবাসীদের ৫২ মিনিট ছোট করা 'আয়নাবাজি' দেখিয়ে, পূর্ণাঙ্গ ছবি দেখা থেকে বঞ্চিত করা কতোটা যৌক্তিক? এমনকি হলের প্রবাসী দর্শক জানতেও পারছেনা এটি ৯২ মিনিটের সিনেমা নয়।
এক ভারতীয় বন্ধুকে ছবিটি দেখার আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম। সে তার মুঠোফোনে একটি পোষ্টার দেখিয়ে বললো ইন্ডিয়ান raghav raman সিনেমার পোষ্টারের নকল আয়নাবাজি'র পোষ্টার। Changsoo বা Tumbleweed সিনেমা থেকে আয়নাবাজি কপি করা শুনার পর 'আয়নাবাজি' দেখার আগে সেই কোরিয়ান মুভিটি দুইবার দেখেছি।
অমিতাভ রেজাকে যতটুকু চিনি বিশ্বাস ছিলো, এই মেধাবী নির্মাতা নিজের প্রথম সিনেমা নকলবাজী করে বানাবেননা। কোরিয়ান সেই মুভির সাথে সামান্য মিল হচ্ছে- 'অায়না' এবং 'চাংসু' দুজনেই টাকার বিনিময়ে জেল খাটে। তবে অায়নাবাজি ভিন্ন গল্প, সম্পূর্ণ অালাদা।
হল কতৃপক্ষের ওয়েবসাইটে আয়নাবাজি'র সিনোপসিজ এ বাংলাদেশের রাজধানীর নাম ভুলভাবে লেখা আছে। এমনিতেই পুরনো Dacca শব্দটি এখনো মাঝে মধ্যে দেখতে পায়, এবার নতুন করে দেখছি Dakka নামটি!
মুক্তির পর আয়নাবাজি ফেসবুক লাইভে কেউ কেউ দেখিয়েছে। ইন্টারনেটে এখনো পুরো মুভিটি দেখা যায়। পাইরেসি সম্পূর্ণভাবে ঠেকানো সম্ভব হচ্ছেনা। তবুও দেশে মানুষকে হলমুখী করতে পেরেছে আয়নাবাজি।
বাংলাদেশের সিনেমা ইউরোপের মাল্টিপ্লেক্স হলে মুক্তি পাওয়া অানন্দের বিষয়। দর্শকদের প্রশংসা পাচ্ছে ছবিটি। প্রথম ছবি হিসাবে পরিচালক সফল বলা যায়। ভালো গল্প, নিপুন অভিনয়, দৃশ্যধারন চমৎকারভাবে তুলে ধরতে পেরেছে পরিচালক।
দেশীয় সিনেমা বিদেশের মার্কেটে প্রবেশের জন্য অবশ্যই ভালো মানের হতে হবে। প্রিমিয়ার শো'র দিন হাউসফুল দেখিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাওয়ার পাশাপাশি দর্শককে কিভাবে নিয়মিত হলমূখী করা যায় সেই বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী বলে মনে করি।