এক দল ভন্ড প্রোপাগান্ডা মানুষদের দাবী যে সুন্দরবনে হয়ে মংলা বন্দরে প্রতি দিন শত শত জাহাজ আসা যাওয়া
করছে তাতে সুন্দরবনের ক্ষতি যখন হয় নাই তাহলে রামপাল বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন হলেও ক্ষতি হবে না ।ধরে নিলাম তাদের কথা তাদের কথাই সত্যি যে সুন্দর বনে রামপাল বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন হলে দেশের লাভ হবে । এবার একটু লাভের মাত্রটা হিসাব করে দেখি
ধরা যাক কলিম আর সলিম দুই বন্ধু মিলে একটি মুরগীর ফারাম দিবে আর এতে যে অর্থ ব্যয় হবে তা দুইজনেই সমান দিবে যেমন,কলিম দিবে ৫০ টাকা আর সলিম দিবে ৫০টাকা সমান ১০০ টাকা । এবার দোকান হবে সলিমের জায়গায় মুরগী পায়খানা করবে সলিমের জায়গায়,আর সে মলও পরিস্কার করবে সলিম এক কথায় সব কিছুই সলিমের জায়গার উপরে আবার অর্থ ব্যয়ও সমান সমান,তাহলে পাঠক লাভ কি সলিমের বেশি নাকি কলিমের ?
ইন্টাারনেেটের বিভিন্ন তথ্য থেকে লাাভের আর একটু বিস্তারিত তুলে ধরলাম
ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাবহারের জন্য পশুর নদী থেকে প্রতি ঘন্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার করে পানি প্রত্যাহার করা হবে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শীতলিকরণ সহ বিভিন্ন কাজে ব্যাবহারের পর অবশিষ্ট পানি পরিশোধন করে ঘন্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে আবার নদীতে ফেরত দেওয়া হবে। ফলে নদী থেকে প্রতি ঘন্টায় কার্যকর পানি প্রত্যাহারের পরিমাণ হবে প্রায় ৪০০০ ঘনমিটার। ইআইএ রিপোর্টে এভাবে পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৪০০০ মিটার পানি প্রত্যাহারের ফলে পানির লবণাক্ততা, নদীর পলি প্রবাহ, প্লাবন , জোয়ার ভাটা, মাছ সহ নদীর উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগৎ ইত্যাদির উপর কেমন প্রভাব পড়বে তার কোন বিশ্লেষণ করা হয়নি এই যুক্তিতে যে ৪০০০ ঘনমিটার পানি পশুর নদীর শুকনো মৌসুমের মোট পানি প্রবাহের ১ শতাংশেরও কম। দুর্ভাবনার বিষয় হলো, প্রত্যাহার করা পানির পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম দেখানোর জন্য পানি প্রবাহের যে তথ্য ব্যাবহার করা হয়েছে তা সাম্প্রতিক সময়ের নয়, ৮ বছর আগে, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ণ বোর্ড কর্তৃক সংগ্রহীত। (পৃষ্ঠা ২৮৫) অথচ এই ইআইএ রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে নদীর উজানে শিল্প, কৃষি, গৃহস্থালি সহ বিভিন্ন উন্নয়ণ কর্মকান্ড ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে নদী থেকে দিনে দিনে পানি প্রত্যাহারের পরিমাণ বাড়ছে যার ফলে শুকনো মৌসুমে দিন দিন পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে যা পশুর নদীর জন্যও একটি চিন্তার বিষয়।(পৃষ্ঠা ২৫০)। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের সময় লাগবে সাড়ে ৪ বছর এবং অপারেশনে থাকবে অন্তত ২৫ বছর। তাহলে এই দীর্ঘ সময় কাল জুড়ে পশুর নদীর পানি প্রবাহ ইআইএ রিপোর্ট অনুসারেই ২০০৫ সালের অনুরুপ থাকার কথা না। ফলে ওই সময়ে পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৪ হাজার মিটার পানি প্রত্যাহার করলে তা পশুর নদীর পানি প্রবাহের উপর কি কি প্রভাব ফেলবে তার গভীর পর্যালোচনা ছাড়া স্রেফ নদীর হাইড্রোলজিক্যাল বৈশিষ্টের কোন পরিবর্তন নাও হতে পারে ।
যতই পরিশোধনের কথা বলা হউক, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি নির্গমন হলে তাতে বিভিন্ন মাত্রায় দূষণকারী উপাদান থাকবেই যে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেলায় ‘শূণ্য নির্গমণ’ বা ‘জিরো ডিসচার্জ’ নীতি অবলম্বন করা হয়। যে এনটিপিস রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে, সেই এনটিপিসি যখন ভারতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে তখন ‘জিরো ডিসচার্জ’ নীতি অনুসরণ করে যেমন: ভারতের ছত্তিশগড়ের রায়গড়ের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে: “Zero Discharge concepts will be followed”. (রায়গড় ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ, এক্সিকিউটিভ সামারি, পৃষ্ঠা ই-১২ ).
অথচ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ই্আইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে:
After treatment, effluent shall be discharged to the Passur River at a rate of 100 m3/hr. Effluent quality shall be monitored at different stage of discharge and intake.”
অর্থাৎ “পরিশোধন করার পর তরল বর্জ্য বা ইফ্লুয়েন্ট ঘন্টায় ১০০ ঘনমিটার হারে পশুর নদীতে নির্গত করা হবে। পানি নির্গমন ও গ্রহণ করার প্রতিটা স্তরেই ইফ্লুয়েন্টের গুনাগুনের উপর নজর রাখা হবে।“
আবার অন্যত্র বলা হয়েছে:
"To meet the water demand for plant operation, domestic water, environmental management 9,150 m3/hr (equivalent to 2.54 m3/s) surface water will be withdrawn from the Passur river and after treatment water shall be discharged back to the Passur river at the rate of 5,150m3/hr."
অর্থাৎ “প্ল্যান্ট পরিচালনা, ঘরোয়া ব্যাবহার, পরিবেশগত ব্যাবস্থাপনা ইত্যাদি কাজে পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার পানি সংগ্রহ করা হবে এবং পরিশোধন করার পর পানি পশুর নদীতে ঘন্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে নির্গমন করা হবে।“
ঘন্টায় ১০০ ঘনমিটার বা ৫১৫০ ঘনমিটার যাই হোক, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি নির্গমন করা হলে নির্গত পানির তাপমাত্রা, পানি নির্গমণের গতি, পানিতে দ্রবীভূতি নানান উপাদান বিভিন্ন মাত্রায় পানি দূষণ ঘটাবে যা গোটা সুন্দরবন এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করবে।
কার্বন ডাই অক্সাইড এর প্রভাবঃ
প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যাবহারে ঢাক ঢোল পেটানো হচ্ছে যদিও ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে এই প্রযুক্তি ব্যাবহারের ফলে সাধারণ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড কর্ম নির্গত হবে। এবং ৮০% লোড ফ্যাক্টর ধরে প্রতিবছর কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমণের পরিমাণ হবে ৭৯ লক্ষ টন সুন্দরবনের পরিবেশের উপর যার সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে একটা কথাও বলা হয় নি ইআইএ রিপোর্টে! কেবল আশ্বস্ত করা হয়েছে বাংলাদেশের সার্বিক কার্বন নির্গমণের পরিমাণ এর ফলে নাকি খুব বেশি বাড়বে না!(পৃষ্ঠা ২৮৪)
বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি
ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে ২৭৫ মিটার উচু চিমনী থেকে নির্গত গ্যাসীয় বর্জ্যের তাপমাত্রা হবে ১২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিমালা মেনে চিমনি তৈরী করার কারণে এই উচ্চতাপ স্থানীয় এলাকার তাপমাত্র বৃদ্ধি করবে না বলে ইআইএ রিপোর্টে ফাপা আশা প্রকাশ করা হয়েছে:
It is unlikely that the heated stack gas will increase local air temperature. (পৃষ্ঠা ২৭০)
বিষাক্ত ছাই
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে যে কয়লা পুড়িয়ে ফ্লাই অ্যাশ এবং বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে।সেই ফ্লাই অ্যাশ, বটম অ্যাশ, তরল ঘনীভূতি ছাই বা স্লারি ইত্যাদি ব্যাপক মাত্রায় পরিবেশ দূষণ করে কারন তাতে বিভিন্ন ভারী ধাতু যেমন আর্সেনিক, পারদ, সীসা, নিকেল, ভ্যানাডিয়াম, বেরিলিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, রেডিয়াম মিশে থাকে। (পৃষ্ঠা ২৮৭-২৮৮) উৎপাদিত ছাই যেন পরিবেশ দূষণ না করে সেজন্য ফ্লাই অ্যাশ চিমনি দিয়ে নির্গত হওয়ার আগেই ইএসপি সিস্টেমের মাধ্যমে ধরে রাখা হবে যদিও তারপরও কিছু উড়ন্ত ছাই বাতাসে মিশবে বলে স্বীকার করা হয়েছে ইআইএ রিপোর্টে:
“Despite efficient ash management system, some fugitive ash might be produced and dispersed to the surrounding area” (পৃষ্ঠা ২৭১)
“Very little portion of this ash might escape from the system as waste.”(পৃষ্ঠা ২৮৫)
কিন্তু আরো ভয়ংকর ব্যাপার হলো একদিকে বলা হয়েছে এই বিষাক্ত ছাই পরিবেশে নির্গত হলে ব্যাপক দূষণ হবে(পৃষ্ঠা ২৮৭) অন্যদিকে এই ছাই দিয়েই প্রকল্পের মোট ১৮৩৪ একর জমির মধ্যে ১৪১৪ একর জমি ভরাট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে!(পৃষ্ঠা ২৬৩) এই বর্জ্য ছাই এর বিষাক্ত ভারী ধাতু নিশ্চিত ভাবেই বৃষ্টির পানি সাথে মিশে, চুইয়ে প্রকল্প এলাকার মাটি এবং মাটির নীচের পানির স্তর দূষিত করবে যার প্রভাব শুধু প্রকল্প এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
উৎপাদিত বর্জ্য ছাই সিমন্টে কারখানা, ইট তৈরী ইত্যাদি বিভিন্ন শিল্পে ব্যাবহারের সম্ভাবনার কথা ইআইএ রিপোর্টে বলা হলেও আসলে কোন কারখানায় এর আদৌ কোন ব্যাবাহর হবে এরকম কোন নিশ্চিত পরিকল্পনা করা হয়নি । বড় পুকুরিয়ার মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেই উৎপাদি ছাই এরই উপযুক্ত ব্যাবহার বাংলাদেশে হচ্ছে না। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত দৈনিক৩০০ মেট্রিকটন বর্জ্য ছাই কোন সিমেন্ট কারখানায় ব্যাবহারের বদলে ছাই এর পুকুর বা অ্যাশ পন্ডে গাদা করে রেখে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চার বছরে ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৬১৩ টন ছাই পুকুরে জমা করে পুকুরের প্রায় পুরোটাই ভরে ফেলা হয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যও ১০০ একরের ছাইয়ের পুকুরের পরিকল্পনা করা হযেছে। অ্যাশ পন্ড বা ছাইয়ের পুকুরে গাদা করে ছাই বাতাসে উড়ে, ছাই মিশ্রিত পানি চুইয়ে মাটির নীচে ও আশাপাশের জলাভূমিতে বিষাক্ত ভারী ধাতুর মারাত্মক দূষণ ঘটাবে।
সূত্র,ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩