ভানু বাবু গিন্নির সাথে পারিবারিক আলাপচারিতায় মগ্ন। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ভগ্নী গৃহে গোবিন্দের প্রবেশ-
গোবিন্দঃ জামাই বাবু, দিদি --- ঠিক করে ফেললাম।
গিন্নি,ভানু সমস্বরেঃ কি ?
গোবিন্দঃ আমি ইলেকশনে নাব্বো।
ভানুঃ ইলেকশনটা কি কুয়া না পুস্কুন্ডি যে নাববা?
গোবিন্দঃ কি যে বলেন জামাই বাবু, ইলেকশনে নামা বুঝি আপনি পছন্দ করেন না?
ভানুঃ তা করি , তবে তোমার মত গরু দাঁড়ায় এটা চাইনা।
গিন্নিঃ কি বললে? গোবিন্দ গরু?
ভানুঃ সরি! ব্যাকরণ ভুল হইছে। গরু না ষাঁড়, ষণ্ড।
গিন্নিঃ খবরদার ওভাবে কথা বলবে না। হ্যাঁ রে গোবিন্দ জিততে পারবিতো?
গোবিন্দঃ নিশ্চয়! ও তুমি দেখে নিও।
ভানুঃ জিতা কি করবা?
গোবিন্দঃ কেন ? এমপি হব।সংসদে ঢুকবো।
ভানুঃ সংসদে তো দেশের আইন তৈরি হয়, তুমি শালা মুখ্য ওখানে গিয়া কি করবা? -- তা এবার আসল কথায় আসো, তোমারে ইলেকশনে নামাইতে চায় কোন কন্ট্রাক্টর?
গোবিন্দঃ কন্ট্রাক্টর নামাতে চাইবে কেন? আমি নিজেই নামবো।
ভানুঃ হেঁ হেঁ আমারে একজন নামাতে চাইছিল কিনা তাই বলছি।
গোবিন্দঃ বিষয়টা কি বলুন তো!
ভানুঃ আরে ওই কামাক্ষ্যা বাবু, ঐযে মোড়ে বাড়ি। আরে ওই যে সরকারী টেন্ডারে বাড়ি বানায় আর দেয়ালে সাইনবোর্ড ঝুলায়, দেয়ালে ধাক্কা দিবেন না, দেয়ালে হেলান দিবেন না।
গোবিন্দঃ ধাক্কা আর হেলান দিবেন না কেন?
ভানুঃ হেঁ হেঁ কাদামাটির গাথনী আর রডের বদলে বাঁশের পিলার, ছাদ। বোঝলানা হেলান বা ধাক্কা দিলেই কাইত। সেই কামাক্ষা বাবু আমার কাছে আইসা কাইন্দা পইড়া কয় কি- বাবু আপনি ইলেকশনে খাড়ান সব খরচ আমার।আপনি শুধু খাড়াইয়া আমারে বাঁচান, খাড়াইবো কি অর কথা শুইনা তো আমি বসার থেকে শুইয়া পড়লাম। জিগাইলাম আসল কথাটা কি কওতো? কি কয় জানো?
গোবিন্দঃ কি?
ভানুঃ কয় এই এলাকায় শুধু রামকৃষ্ণ গয়াল খাড়াইছে,আর কেউ একজন না খাড়াইলেতো ভোট কেন্দ্রের দরকার হইব না,অন্তত দুইজন খাড়াইলে ভোট কেন্দ্রের দরকার।আর সেরকম হইলেই সে ভোট কেন্দ্র তৈরির কন্ট্রাকটা পায়,এবার বুঝ নিঃস্বার্থ দেশ সেবার ঠেলা!
--- গোবিন্দঃ মোদ্দা কথা হইল ইলেকশনে দাঁড়াবো যখন স্থির করেছি দাড়াবোই।এবং আপনাকেও সাহায্য করতেই হবে।
ভানুঃ সাহায্যতো তোমাকে করতে হবেই, নইলে যে উঠতে বসতেই অশান্তি অইব।
গিন্নিঃ মেলা বক বক করেছো,কি করলে গোবিন্দর ভাল হবে তাই বলে দাও।
ভানুঃ বেশ! প্রথম নম্বরে হইল টাকা।শশুর মশাই গত হইছেন পরে টাকার সুরাহাতো কইরাই ফালাইছো!
গিন্নিঃ ও মা সব নিজের টাকা খরচ করতে হবে নাকি?
ভানুঃ তোমার ভ্রাতার মত ক্যান্ডিডেটের তাই করতে অইব।উপযুক্ত লোকের জন্য সকলেই অর্থ যোগায় এবং শারীরিক খাটুনি দিয়াও সাহায্য করে। শোন গোবিন্দ, তোমারে ফেমাস হইতে অইব।
গোবিন্দঃ ঠিক বলেছেন, তা কিভাবে ফেমাস হব?
ভানুঃ উলটা পালটা কথা কইতে অইবো।অর্থাৎ এমন কথা কইবা নিজেও বুঝবানা, অন্যেতো কিছুই বুঝবেনা আর যতই বুঝবেনা ততই তোমারে দামি লোক অর্থাৎ ইন্টেলেকচুয়াল ভাববো।আরো একটা লাইন খোলা আছে ,একেবারে গম্ভীর হইয়া যদি যাইতে পার।খালি মৃদু মৃদু হাসবা, লোকে ভাববে তুমি জিনিয়াস!
গোবিন্দঃ গম্ভীর আমি হয়ে থাকতে পারবো।কিন্তু এতে করে লোকে চিনতেতো অনেক সময় লাগবে জামাই বাবু?
ভানুঃ তাতো লাগবোই। এখন এমন সব কাজ করতে থাক যেন খবরের কাগজে তোমার নাম উঠে।যত ঘন ঘন নাম উঠবো তত তাড়াতাড়ি লোকে চিনবো।
গিন্নিঃ ঠিক বলেছেরে গোবিন্দ তোর জামাই বাবু ঠিক বলেছে।
গোবিন্দঃ ঠিক তো বলেছেন কিন্তু কি করবো তাইতো ভেবে পাচ্ছিনা।
ভানুঃ এক কাম করতে পার, একটা লাল রঙের লেঙ্গুট পইরা একটা রাম দাও কাঁধে লইয়া রাস্তায় বাইরাইয়া পড়।
গিন্নিঃ এ মা ছিঃ ছিঃ ! এসব করলে কখনো কাগজে তোলে?
ভানুঃ তুলবো, আইজ কাইল সব খবরই কাগজে তোলে। তা তোমার প্রতীক কি নেবে ঠিক করেছো?
গোবিন্দঃ যদি মোমবাতি নেই জামাই বাবু?
গিন্নিঃ খুব ভাল খুব ভাল। লোককে আলো দেখাবে।
ভানুঃ হ,সেইটা ভাল চিন্তা করছো, যেইরূপ ইলিক্ট্রিক ফেইলের ধুম পড়ছে লোকদের সাপ্লাই দিলে তারা খুশি হইব। তবে তোমার চিন্তা সেটা না। তোমার চিন্তা আলোতে চোখ ধাধাইয়া দিয়া বেবাক রিলিপের মাল বাজারে চালান কইরা দেয়া। সেসব চিন্তা ছাড়, তোমার প্রতীক লও সিঁদকাঠি।
গোবিন্দঃ মানে?
ভানুঃ মানে দেশের জনগণরে তোমার উদ্দেশ্য আগেই জানায়া রাখলা !!
গোবিন্দঃ ছিঃ ছিঃ লোকে কি ভাববে?
ভানুঃ ভাববে নতুন ধরনের চোর! সত্য ভাষণের সাহস আছে।
গোবিন্দঃ ঠিক আছে, তার পর বলুন
ভানুঃ লাফালাফি করতে পার?
গিন্নিঃ না না লাফালাফি করবে কেন? শেষে হাত পা ভাঙবে।
গোবিন্দঃ লাফালাফির দরকারটা কি বুঝলাম না?
ভানুঃ লাফালাফিরইতো দরকার!এক ডাল থেইক্কা আরেক ডাল ধরতে অইবোনা ! আবার কিছুদিন পরে সেই ডাল ছাইড়া অন্য ডাল।
গিন্নিঃ কি বলছো এক ডাল থেকে আরেক ডাল?
ভানুঃ হেঁ হেঁ দলত্যাগ করতে অইবো না? তবেইতো পয়সা! যারা এক দল ধরে আজীবন পইড়া থাকে তাদের কোন বেইলই নাই। দল ত্যাগি আর কুল ত্যাগীগোইতো আজ কাল বাজার!
মুলঃ ভানু বন্দোপাধ্যায়।
(ঈষৎ পরিবর্তিত ও সংক্ষেপিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫১