২৭ শে জুন ২০১৫সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড মোড়পার্ক ।অস্ট্রেলিয়ায় বছরের এই সময়টাতে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে ।বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৫ ফাইনাল ।মুখোমুখি স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ ।অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট ততোটা জনপ্রিয় না যতটা জনপ্রিয় সুকার কিংবা রাগবি ।তারপরও ফাইনাল বলে কথা ।৪৬ হাজার দর্শক ধারনক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে অর্ধেক ইতিমধ্যে ভরে গেছে ।সাদা কালো বাদামী হরেক জাতির সংকর অস্ট্রেলিয়ানরা অদ্ভুত সাজে শব্দে গ্যালারী মাতিয়ে তুলছে ।দিবা রাত্রির খেলাটি স্থানীয় সময় দুপুর ৩ টায় শুরু হবে ।লাল সবুজের স্রোত বইতে শুরু করেছে মাত্র ।এক এক করে পতাকা ব্যানার ফেস্টুন বাশি অদ্ভুত সব মুখোশ পড়ে মাঠে আসতে শুরু করেছে বাঙ্গালী সমর্থকরা ।তাদের শোভাযাত্রায় কি নেই ,বাংলার ঐতিহ্য পুরোটাই তারা নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার বর্গমাইল দুরের এই দেশটিতে ।লুঙ্গি গামছা মাথায় কৃষানীর টুপি পড়া কৃষক,জেলে,বাউল সবই আছে ।আর সবার হাতে আছে একটি করে বাঘ ।হাজারো ফেস্টুনের মধ্যে একটার উপর চোখ আটকে গেল “দুটো ছবি পাশাপাশি একটাতে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ অন্যটিতে বাংলাদেশের এগারো জন ক্রিকেটার ।গায়ে কাটা দিয়ে উঠল ।অস্ট্রেলিয়ার লাল নীল সাদা পতাকার জেীলুশ কমিয়ে দিয়েছে আমাদের লাল সবুজ পতাকা।মনে হয় লক্ষ মাইল দুরে এ এক ছোট্ট বাংলাদেশ ।হাজার হাজার বাঙ্গালীর এক অপুর্ব মিলন মেলা ।কেউ এসেছে আমেরিকা থেকে,কেউ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে । আবার মধ্যপ্রাচ্যের অভিজাত বাঙ্গালী পাড়ার মানুষও নেহাত কম নয় ।দেশ থেকেও কয়েকশ মানুষ হাজির হয়েছে ।আনিসুল হক ,আব্দুল্লাহ আবু সাইদ জাফর ইকবালকে দেখা যাচ্ছে লাল সবুজের টি শার্ট আর মাথায় গামছা বেধে বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করতে ।কয়েকজন মন্ত্রী এমপিও এসেছেন তবে তারা ভি আই পি বলে আমার চোখে পড়ছে না ।হয়ত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে স্কচে গলা ভেজাচ্ছেন ।বেবী নাজনীন আর আসিফ কে দেখা যাচ্ছে সমানে চিতকার করছে ।“আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল গো মরার কোকিলে “ নড়ে উঠল গ্যালারী ।সম্মিলিত কোরাসে গলা মিলাচ্ছেন আনিসুল হক ।ফাহমিদা নবী, এস আই টুটুল,আয়ুব বাচ্চু,মানাম আহমেদ গ্যালারির এক প্রান্তে বসে আছে ।হয়ত প্রস্তুতি নিচ্ছে জ্বলে উঠবার ।হটাত চোখে পড়ল আন্দালিব রহমান পার্থ আর জাহিদ হোসেন রাসেল ধুতি পান্জাবী পড়ে মাঠে হাজির ।চোখে পড়ক পড়ছে না একি অবস্থা আজ বাংলাদেশের ।
এদিকে বাংলাদেশে আজ অঘোসিত সরকারী ছুটি ।প্রধানমন্ত্রী তার বিদেশ সফর বাতিল করেছেন ।সকল দাপ্তরিক কাজও বন্ধ।সংসদ ভবনের সামনে বিশাল বড়ো প্রজেক্টর লাগানো হয়েছে ।এম পি, মন্ত্রী সহ গুরুত্বপুর্ন ব্যাক্তিবর্গ এখানে আজ একসাথে বসে খেলা দেখবে ।চারিদিকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ।ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি বিপনি বিতান বন্ধ।মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন ।টি এস সি,ফার্মগেট,গুলিস্তান,গুলশান সব মিলিয়ে কমপক্ষে ১০০ টি স্পটে আজ বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে ।প্রধান মন্ত্রী গতকাল ঘোষনা দিয়েছেন আজ বাংলাদেশের কোথাও কোন লোডশেডিং হবে না ।যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল ।শুধু ঢাকা নয় সারা বাংলাদেশেই আজ একই অবস্থা।সুর্য মাথার উপর আসতেই প্রস্তুতির তোড়জোড় ।হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে টেলিভিশন দেয়া হয়েছে ।জেলখানাতে বিশেষ ব্যাবস্থায় খেলা দেখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে ।এ এক নতুন বাংলাদেশ ।খুব ভাল এবং ভয় লাগছে ।প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির কি মিল ঘটবে ? ছেলেরা কি পারবে আজ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান হতে ।যদিও ফাইনাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কারো দয়ায় চড়ে আসেনি ।যোগ্যতার প্রমান দিয়ে এসেছে ।এইতো সেমিফাইনালে শ্রীলংকাকে হারালো ৫২ রানে হেসে খেলে ।কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়েত খেলার মুল্যায়ন হয় না ।কোটি মানুষের এইযে আশা আকাংখা উল্টো ছেলেদের উপর চাপ না হয়ে যায় ।খেলা শুরু হতে বেশীক্ষন নেই ।দেশ থেকে মা ফোন দিল “বাবা নামায পড়ে দোয়া করছিস তো ?বাড়ীতে ৩ খতম দিছি ,আল্লাহ ভরসা আমরা আজকে জিতবোই ।বুকটা ধক করে ওঠে ।যদি কিছু না হয় ।
টস করতে মাঠে প্রবেশ করল মাইকেল ক্লার্ক এবং মুশফিকুর রহিম ।সাড়ে ৬ ফুটি ক্লার্কের সামনে ৫ ফুট ৩ ইন্চির মুশফিককে বড্ড বেমানান দেখাচ্ছে।সুনিল গাভাস্কার হেড টেলের মুদ্রাটি নিক্ষেপ করলেন ।টস ভাগ্য ক্লার্কের।ফ্লাড উইকেন তাছাড়া তাদের বোলিং মুলত পেস নির্ভর আর শেষ বিকেলে সিমাররা উইকেট থেকে বেনিফিট পাবে ।যে কোন অধিনায়কই এই উইকেটে চোখ বুজে ব্যাটিং নিবে ক্লার্কও ব্যাতিক্রম হলো না ।বিষন্ন বদনে মুশফিক প্যাভেলিয়নের দিকে ফিরছে ।বড্ড অসহায় লাগছে ।ভাগ্য হয়ত আজ সহায় হবে না ।খেলোয়ারদের নিয়ে বক্সে ঢুকে দরজা বন্ধ করল মুশফিক ।টেবিলে ছড়িয়ে দিল লাল সবুজের পতাকা ।সবার দিকে একবার তাকিয়ে প্রশ্ন করল এই পতাকাটার জন্য কে কি করতে পার ?ঘর জুড়ে পিনপতন নিস্তবদ্ধতা ।সামনে এগিয়ে এল মাশরাফি লাল বৃত্তের মাঝে মুষ্টিবদ্ধ হাত রেখে বলল সব কিছু ।এগিয়ে এল সাকিব।একে একে সবাই হাত রাখল।সেনাপতির মতো মুশফিক সবার সামনে গিয়ে গেয়ে উঠল আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ।শুধু ঠোট না পুরো শরীর যেন কেপে উঠল সবার ।দরজায় কড়া নাড়ছে পাইবাস ।মাঠে নামতে হবে ।সবাই যেন ব্যক্তিগত কিট বক্স থেকে কি যেন পকেটে ভরছে ।মুশফিকের বাবার টুপি,সাকিবের মায়ের দেয়া তাবিজ,রাজ্জাকের ভাগ্নির স্টিকার,মাশরাফির মেয়ের ফুল তোলা রুমাল।
খেলা শুরু হল শেন ওয়াটশন আর বেলী ইনিংসের গোড়াপত্তনে মাঠে নামলেন ।বোলিং প্রান্তে মাশরাফি ।প্রথম বল অফ স্টাম্পের কিছুটা বাইরে বেলী ঝুকি নিলেন না ।দেখে শুনে ছেড়ে দিলেন ।ওভারের ৩য় আর ৫ম বলে দু দুটো চার ।স্টেডিয়ামের অস্ট্রেলিয়া অংশ নেচে উঠল ।পরের ওভার নাজমুল মাত্রই ইনজুরি কাটিয়ে উঠেছে।২য় ওভারে একটি ৬ সহ সবমিলিয়ে ১১ ,ওয়াটশন বেলীর তান্ডবে ৮ ওভার শেষে দলীয় রান ৫৬ বিনা উইকেটে ।বাঘের গর্জন কিছুটা স্তিমিত লাগল ।মুশফিকের কপালের ভাজও স্পষ্ট হতে লাগল ।বল তুলে দিবেন দীর্ঘদিনের যোদ্ধা সাকিবের হাতে ।সেমিফাইনালে উইকেট শুন্য ছিল আজ যদি কিছু হয় ।করলেন ,মামুলি পেস বোলিং এর পর স্পিন আক্রমনে কিছুটা বিপর্যস্ত লাগল অসি ওপেনারকে ।দেখে শুনে খেললেন।ওভারে মাত্র ২ রান।তৃপ্তির ঢেকুর তুলল সাকিব।সবকিছু ঠিকঠাক মতো হচ্ছে।অন্যপ্রান্তে রাজ্জাক ।লেফটি স্পিনের প্রথম কুইকারে সরাসরি বোল্ড ওয়াটশন ।হাজার মাইল দুর থেকেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের উম্মাদনা।গ্যালারী উত্তাল ।পরের ওভার সাকিব তুলে নিলেন আরো একটা উইকেট।উইকেট পড়ছে তবে রানের চাকা আটকানো যাচ্ছে না ।২০ ওভার শেষে দলীয় রান ১৩৪ দুই উইকেটের বিনিময়ে ।ফসকে যাচ্ছে খেলাটি।মাশরাফি পকেটে হাত দিয়ে মেয়ের ফুলতোলা রুমালটি বের করলেন।কল্পনায় ভেসে উঠল মায়শার মুখ যেন আর্তনাদে বলছে বাবা কিছু একটা কর ।কপালের ঘাম নয়ত চোখের পানি কিছু একটা পড়ল বুঝলাম ।মুশফিকের কাছে বল চাইল।১৩০/৩৫ গতির পেস এই মুহুর্তে কোন কাজেই আসবে না ক্রিকেট বোদ্ধাদের অভিমত।কিন্তু মুশফিক বাজী রাখলেন মাশরাফিতে ।হয়ত চোখের পানিতে বলের শাইন ফিরাল প্রথম দুই বলে দুই উইকেট ।বাংলা আবার উত্তাল ।৫৬ হাজার বর্গমাইল কেপে উঠল ।স্কোর বোর্ড ১৩৪/৪ ,আবার খেই হারাল বাংলাদেশ ।রানের গতি কমছে না উইকেট মাঝে দুই একটা যাও পড়ছে।একসময় স্কোর দাড়াল ২০৯/৫ ,ক্রীজে ডেভিড হাসি আর শন মার্শ ।তুলে মারতে শুরু করেছেন ।পরিকল্পনা ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে।মুশফিক ঠিকই দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশকে।রিকশাওয়ালা রিকসা থামিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সিটের উপর দাড়িয়ে শো রুমের টিভিতে খেলা দেখছে ।রং পতাকা হাতে উতসবের জন্য বসে আছে ছোট ছোট বাচ্চারা ।সাকিব রিয়াদকে কাছে ডাকলেন ।কি যেন পরামর্শ করলেন আর পকেট থেকে বের করে কিছু একটা দিলেন ওদের হাতে ।রিয়াদ মুঠো খুলে দেখে ছোট্ট একটা পতাকা ।তিনজনই তিনজনের দিকে তাকালেন অধিনায়ক ঘোষনা দিলেন স্পিন অলআউট এটাক হবে।হয় খেলায় ফিরব নয়ত ছিটকে যাব ।আর মাত্র ২ টা উইকেট পড়লেই ওদেরকে ২৫০ এর ঘরে আটকে রাখা যাবে ।অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে বেশী দেরি করল না সাকিব রিয়াদ ।২ টা স্লিপ একটা গালি শর্ট মিড উইকেট আর শর্ট ফাইন্ড লেগে ফিল্ডার রাখা হল ক্রিকেট বোদ্ধারা হায় হায় করে উঠল ।একি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত !৩ টি উইকেট ভাগ করে নিল সাকিব রিয়াদ আর রাজ্জাক ।৫০ ওভারে ৯ উইকেটে রান দাড়ালো ২৬২ ।
আড়মোড় ভাঙ্গছে বাংলাদেশ।এই রানতো অজেয় নয় ।আমরাতো এখন দিব্বি ২৫০/৩০০ রান করছি ।তাহলে ভয় কি ।আজকে ঠিকই হবে ।অধিনায়ক তার সৈনিকদের নিয়ে আবার রুদ্ধদ্বার আলোচনা ।প্রোটোকল ভেঙ্গে লুকিয়ে সবাইকে ২ মিনিট সময় দেয়া হল বাড়ীর সাথে কথা বলতে ।তামিম সাকিবের মাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাবে না কারন তারা আজ খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নামায ছেড়ে উঠবেন না ।মুশফিকের বাবা রোজা রেখেছেন ।আনামুলের মুক্তিযোদ্ধা বাবা কম্পিত কন্ঠে বললেন বাবারা যদি জয়ী হয়ে ফিরিস তবে এই মুক্তি কমান্ডার তোদের স্যালুট দিবে ।চেতনা ফিরল ক্রিকেটারদের ।ওপেনিং এ নামল তামিম আর জুনায়েদ ।বোলিংগার আর সিডেলস বলে আগুন ঝড়াচ্ছে ।আমাদের তামিমও কম যায় না ।ওভারের ৩য় বলে সপাটে ব্যাট চালালেন ।৪,স্টেডিয়াম জুড়ে হুংকার ।জুনায়েদও আজকে মরনপন যুদ্ধ করবেন বলে ব্রত করেছেন শেষ বলে আবার ৪ ,মাঝে মাঝে ৪ দুই একটা সিংগেল নিয়ে রান ভালই হচ্ছিল ।৫ ওভার শেষে রান দাড়াল বিনা উইকেটে ৩২ ,কেউ রান বাড়াচ্ছে না সবাই গুনছে আর কত লাগবে ।হটাত এক ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ল উইকেট ভেঙ্গে গেল স্বপ্ন ।এক ওভারেই তামিম জুনায়েদ আউট ।স্টেডিয়ামের বাংলাদেশ অংশে পিনপতন নিরাবতা ।বাংলাদেশের স্বপ্নহোতা মানুষগুলোর মুখ রাতে অন্ধকারের চেয়ে কালো হতে লাগল ।রিতী ভেঙ্গে ব্যাট হাতে নামলেন মুশফিক ।আরে একি একি ওর তো আরো নিচে খেলার কথা !গেল সব গেল বলে আর্তনাদ করে উঠল টিম ম্যনেজমেন্ট।গায়ে মাখালো না অধিনায়ক ।সে সাত সাগরের মাঝি,যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বুক পেতে তাকেই দাড়াতে হবে ।এক দুই এক দুই করে স্কোরে রান যোগ হতে লাগল ।মাঝে আরো দুইটা উইকেট পড়ল কিন্তু মুশফিক আগলে রইল এক প্রান্ত।মাঠে নামলেন দলের কান্ডারী সাকিব ।নামার সময় একটা প্লেকার্ড দেখলেন লেখা সাকিব আল হাসান আমাদের নুর হোসেন ।জেদ চেপে গেল মনের মধ্যে ।সাকিব মুশফিক ভালোই চলছিল ।স্কোর দাড়াল ৪ উইকেটে ১৩৮। ২৯ ওভার শেষ ।পরিসংখান দাড়াল ১২৬ বলে ১২৭ রান ।উইকেট হাতে ৬ টি ।হিসাব মেলাতে না মেলাতেই মুশফিক ফিরে গেল ৪২ রানে ।যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটল পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে।রিয়াদ সাকিব বল হিসাব করে করে খেলতে লাগল একসময় রিয়াদও ফিরে গেল যখন রান প্রয়োজন ৬২ বলে ৭৮ রান ।রাজ্জাক নামতে চাইলেন কিন্তু অধিনায়ক পাঠালেন মাশরাফিকে ।নেমেই ছোট খাট একটা ঝড় বইয়ে দিলেন ডর্থি আর বেয়ারের উপর ।বল আর রানের সমতা ফেরালেন ।৪২ বলে ৪৮ রান রেখে মাশরাফিও সাজঘরের পথ ধরলেন ।৪২ বলে ৪৮ উইকেট হাতে ৩ টি ।এবার সাকিব হাল ধরলেন ।দেখে শুনে নিজেই স্ট্রাইক বারবার নিয়ে দুই এক করে রান নিলেন ।বল আর রানের পার্থক্য আবার বাড়তে লাগল ।১৮ বলে ২৮ রান ।স্ট্রাইকিং প্রান্তে রাজ্জাক ।থমকে আছে বিশ্ব থমকে আছে বাংলাদেশ ।ইতিহাস কি নতুন করে লিখা হবে নাকি ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হবে ।শ্বাস আটকে আছে সবার ।কোথা থেকে যেন অশরীরী ভর করল রাজ্জাকের উপর ।লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা ।ওয়াটশনের মুখের চওড়া ভাবটা মুছতে শুরু করেছে ।৪র্থ বলে আবার ৪ ।১২ বলে ১৫ রান ।১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি চোখ আটকে আছে টেলিভিশনের পর্দায় ।প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে বিদ্যুত নাই ব্যাটারি দিয়ে খেলা দেখছে বাড়ীর ১০০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা।কিছুই হয়ত বুঝে না তাই দোয়া করে আল্লাহ বাচ্চা গুলান যা চায় তুমি তাই দিয়া দিও ।ঢাকা টি এস সি লোকারন্য ।যে যাকে পারছে শক্ত করে ধরে রাখছে যেন এতে সাকিবের হাতে একটু জোর আসবে ।নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সব ভুলে চোখ বড় পর্দায়।সংসদ ভবন এলাকায় ভীর জমাতে শুরু করেছেন সরকারী বেসরকারী সর্বদলীয় লোকজন ।গনভবন ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী বেড়িয়ে এলেন ।খোল জীপে দাড়িয়ে সংসদ ভবনের স্ক্রীনে চোখ আটকে রাখলেন ।ওদিকে সিডনি মাঠের অবস্থা আরো কম্পিত ।আনিসুল হক আর জাফর ইকবল বেচারারা কিছুক্ষন পরপর চোখ মুছছেন ।হাত পা কাপছে ।আসলেই কি কিছু হবে ।আসিফ ব্যাস্ত স্থানীয় বাঙ্গালীদের নিয়ে কোরাস গাইতে বেশ বেশ বেশ সাবাশ বাংলাদেশ,বেচারা হার্টের রুগি আপ্রান চাচ্ছেন টেনশন না নিতে ।কিন্তু পারছেন কই ।ব্যাট হাতে স্ট্রাইকিং প্রান্তে সাকিব বল হাতে দেীড়ে আসছে জনসন।পার্থ রাসেলের হাত শক্ত করে ধরে আছে।চোখে পলক পড়ছে না নি:শ্বাস আটকে আছে ।প্রথম বলেই সাকিব স্কুইপ ! কিপারের মাথার উপর দিয়ে ৪ ।১১ বলে ১১।নো,২ টি সিঙ্গেল কয়েকটি ডট বলের সর্বশেষ সমিকরন দাড়ায় ৩ বলে ৪ রান ।স্ট্রাইকে রাজ্জাক ।প্রধানমন্ত্রীর গাড়ীর পাশে আর একটি গাড়ী এসে থামলো ।পাশ ফেরার সময় নেই তারপরও দেখি সেটা বিরোধী দলীয় নেত্রীর গাড়ী ।তিনিও আজ এসেছেন জনতার কাতারে ।হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী ।আজ আর ফেরালেন না বিরোধী দলীয় নেত্রী।হাত মেলালেন ।লক্ষ মাইল দুর থেকেই যেন রাজ্জাক দেখতে পেল সব ।সপাটে ব্যাট চালালেন ।ব্যাটের কোথায় লাগল খেয়াল করলাম না তবে বল চলে গেল সিমানার বাইরে ।রাজ্জাক ব্যাট হাতে যে দেীড় শুরু করল তা আর থামলোই না ।সারা মাঠ জুড়ে দেীড়াতে লাগল।একসময় থেমে গেল ছেলেটা হুস হারিয়ে ফেলেছে ততক্ষনে সাকিব মাঠেই সেজদা দিল পশ্চিম দিক ফিরে।তারপরই ঝরঝর করে কান্না ।আরে বাচ্চাগুলো সব কাদে কেন ।আজতো ওদের খুশির দিন।বাংলাদেশ ২০১৫ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ান ।আতাহার আলী খান ,আকরাম খান,বুলবুল,হাবিবুল বাশার সব যেন আজ শিশু হয়ে গেছে ।কেউ কারো সাথে নেই ।সবাই উম্মাদ সবাই উত্তাল।সে দেশেই হোক কিংবা বিদেশেই হোক ।শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী আর বিরোধী দলীয় নেত্রী ।রাজপথে লক্ষ মানুষেল ঢল ।আজ কোন কথা হবে না শুধুই উম্মাদনা ।যা খুশি তাই ।যা ইচ্ছা তাই ।
বি:দ্র: উপরোক্ত ঘটনার প্রতিটি চরিত্র এবং ঘটনা সম্পুর্ন কাল্পনিক যদি ঘটনাটা যদি বাস্তব হতো তবে আমাদের চেয়ে কেউ খুশি হয়ত হতো না ।১৬ কোটি বাঙ্গালীকে এক করতে পারিস তোরা ১১ জন ।দেখনা, যদি কিছু হয় !জয় বাংলা ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৬:২০