ছেলেটির নাম ইদ্রিস। বয়স কত আর হবে, বারো কিংবা তেরো। তবে সে এবার পিএসসি পরীক্ষায় ভালোভাবে পাশ করে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়েছে। ইদ্রিস তার মায়ের সাথে এক বস্তিতে থাকে। ইদ্রিসের মা সখিনা বেগম স্বপ্ন দেখেন ইদ্রিসকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবেন যেন ভবিষ্যতে সে একটা চাকরি করে সংসারের অভাব দূর করে। সখিনা বেগম প্রতিদিন সকালে ইদ্রিসকে স্কুলে পাঠিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করতে চলে যায়। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সে ছুটা বুয়া হিসেবে কাজ করে।
ইদ্রিসের বাবার সাথে সখিনা বেগমের আর কোন যোগাযোগ নেই। লোকমুখে শোনে ইদ্রিসের বাপ অন্য মহিলাকে বিয়ে করে নতুন সংসার গড়েছে। এসব শোনে সখিনার মনে ইদ্রিসের বাপের প্রতি ঘৃণা জন্মেছে তাই সে আর কোন যোগাযোগের চেষ্টায় করেনি।
ইদ্রিস লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ভাঙ্গারীর দোকানে কাজ করে। স্কুল থেকে ফিরে স্কুল ড্রেস ছেড়ে সে ভাঙ্গারীর দোকানের জন্য মাল কুড়াতে চলে যায়। দিন শেষে সে সেগুলো ভাঙ্গারীর দোকানে দিলে দোকানের মালিক তাকে বিশ-ত্রিশ টাকা ধরিয়ে দেয়।
নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর সে সবসময়ই মন খারাপ করে বসে থাকে। কারণ তার পোশাক দেখে স্কুলের সকলে হাসাহাসি করে। স্কুলে আসার জন্য তার একটি মাত্র পোশাক তাও অত্যধিক ব্যবহারে রং নষ্ট হয়ে বিবর্ণতায়ে ছেয়ে আছে। সে তার মাকে নতুন ড্রেস কিনতে বললে সখিনা বেগম জানায় এই মুহুর্ত্বে এত টাকা সে কোথায় পাবে যে টাকা দিয়ে ছেলের জন্য ড্রেস বানিয়ে দিবে। ছুটা বুয়া হিসেবে কাজ করে এবং ইদ্রিস ভাঙ্গারীর দোকান থেকে যা টাকা পায় তাতে দুজনের সংসারে কোনমতে দুবেলা খেতে পারে। এর বেশী চিন্তা করাওযে তাদের সাধ্যের বাহিরে।
সখিনা বেগম ইদ্রিসকে আর কিছুদিন পর নতুন জামা কিনে দিবে বলে মিথ্যে সান্ত্বনা দেয় আর আড়ালে চোখের পানি ফেলে। আর ইদ্রিস তার স্কুলের বন্ধুদের হাসাহাসির কারণে স্কুল ছেড়ে দিবে কিনা সেই চিন্তা করে।
----------------------------------------
উপরের ঘটনাটি কাল্পনিক তবে এরকম অনেক ইদ্রিস বাংলাদেশে রয়েছে যারা নতুন পোশাক না পেয়ে বন্ধুদের আচরণে স্কুল থেকে ঝরে পরে।
এখন ভিনদেশী বড় বড় পতাকা বানানোর প্রতিযোগিতায় মেতে আমরা যত টাকা অপচয় করছি সেই টাকা দিয়ে কতশত ইদ্রিসদের জন্য নতুন পোশাক কেনা যেত সেই হিসাব কষার দায়িত্ব আপনাদের।
আপনার মনে কখনোই প্রকৃত তৃপ্তি আসবেনা যতক্ষণনা পর্যন্ত আপনার প্রতিবেশী অসহায় এসব মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। কার পতাকা কত বড় হলো সেই প্রতিযোগিতায় না মেতে কে কতগুলো অসহায় শিশুর মুখে হাসি ফুটাতে পারলো সেই প্রতিযোগিতায় মাতুন। দেখবেন তখন আপনার মতো সুখী মানুষ পৃথিবীতে আর নেই।
সবশেষে এটাই বলব,
"আপনাকে বড় বলে বড় সে নয়- লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়"