আমি এক ছোটখাটো চাকরিজীবী। থাকি এক ছোটখাটো বাসায়। থাকি বলতে কেবল রাত্রিযাপন করি। ভোর হতেই গোছল সেরে অফিসের উদ্দেশ্যে ছুটি ও রাত্রি হলে অফিস শেষে বাসায় ফিরি। একরুমে একা শোয়ে ঘুমিয়ে রাতটুকুও কেটে যায়। আর খাওয়া, রান্না নিজেরটুকু নিজেই করে নিই আবার অনেকদিন হোটেলে খেয়ে আসি।
ব্যাচেলর থাকার এই এক সুবিধা কি খাচ্ছি না খাচ্ছি তা দেখার কেউ নেই, আপত্তি জানানোরও কেউ নেই। আল্লাহ তায়ালা সম্ভবত ব্যাচেলরদের কথা ভেবেই বাজারে আলু ও ডিমকে সহজলভ্য করে দিয়েছেন এবং আলু দিয়ে কিভাবে আলু ভর্তা বানাতে হয়, ডিম দিয়ে কিভাবে দুই মিনিটেই ডিম ভাজি রান্না করতে হয় তা তিনি শিখিয়েছেন। তাই আমারও প্রিয় খাদ্য এই ডিম ও আলু। মাসের শুরুতেই আমি অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি ডজন দুয়েক ডিম ও কেজি পাঁচেক আলু কিনে রাখি। একসাথে অনেকগুলো ডিম ও আলু কেনায় দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়। এভাবেই আমার দিনগুলো খারাপ যাচ্ছিল না।
হঠাৎ একদিন আমি অপ্রত্যাশিত আগন্তুকের খপ্পরে পরলাম। আগন্তুক কোথা থেকে আগমন করলো তা আমি টের পেলাম না, টের পেলাম না তার অস্তিত্বও। আমি কেবল তার কণ্ঠস্বর শোনতে পেলাম। ভূতের ভয় আমার কোনকালেই ছিলনা। গ্রামের থাকতে গভীর রাতে একা একা অন্ধকার জঙ্গলে ভূতের সন্ধান চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছি আর এই আলোক উজ্জ্বল কংক্রিটময় ঢাকা শহরে ভূত আসবে তাও আমার কক্ষে তা আমি কিভাবে বিশ্বাস করি।
যাহোক ঐ অপ্রত্যাশিত আগন্তুক আসার প্রথম রাতে আমি একটি মুরগীর বাচ্চার কিচির-মিচির শব্দ শোনতে পাই। প্রথম রাতে এটিকে পাত্তা দিই নি। দ্বিতীয় রাতে আবারো মুরগীর বাচ্চার কিচির-মিচির শব্দ তবে আজ একটি নয় অনেকগুলো। এবার চিন্তা করলাম বিষয়টিকে অবশ্যই পাত্তা দিতে হবে। তাই আমার কক্ষের আশেপাশে মুরগীর বাচ্চার সন্ধান চালালাম। কিন্তু কোথায় মুরগীর বাচ্চার সন্ধান পেলামনা। ততক্ষণে কিচির-মিচির শব্দও থেমে গিয়েছে। তৃতীয় রাতে আবারো মুরগীর বাচ্চার কিচির-মিচির শব্দ, তবে এবার শব্দ আরো জোরালো। আমি ভাবলাম তবেকি সত্যিই ভুত রয়েছে, আর আমার কক্ষে যেটি আছে সেটি মুরগী ভূত। তবে কি আমি এই মুরগী ভূতের ভয়ে কক্ষ ছেড়ে পালাবো? কিন্তু আমি যে শেষ না দেখার আগে পালাতে রাজি নই।
আমি আমার কক্ষের সমস্ত জিনিসপত্র এলোমেলো করে মুরগী ভূতের সন্ধান চালালাম। কিন্তু কোথাও মুরগী ভূতের পালকেরও সন্ধান পেলাম না। অবশেষে আমি আমার রান্নার জিনিসপত্রের দিকে এগুলাম। কয়েকদিন যাবত বাহিরে খেয়ে আসায় রান্নাঘরের দিকে আসা হয়নি। এখানেও খুঁজে যখন ব্যর্থ হয়ে রণে ভঙ্গ দেব ঠিক তখনই ডিম রাখার কার্টুনের দিকে আমার নজর যেতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। আমি যা দেখেছি তা হয়ত কেউ বিশ্বাস করবেনা তবুও এটিই সত্য। যা দেখলাম তা হলো আমার কিনে আনা মুরগীর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে কার্টুনে বসে বসে ঝিমুচ্ছে আর মাঝে মাঝে চিঁ-চিঁ করে ডাকছে।
আমরা জানি মুরগী ডিমকে তা দিলে তা থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। কিন্তু এভাবে মুরগীর তা দেওয়া ছাড়াই বাচ্চা জন্মের ঘটনা অবিশ্বাস্য। অতঃপর ভেবে দেখলাম দেশে যেরকমের গরম পরেছে তাতে ডিমকে আর মুরগীর তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ডিম এখন নিজেই ফুটে বাচ্চা বের করতে পারে।