আসছে ১৫ই জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৬৯তম গোল্ডেন গ্লোবের রাজকীয় আসর, এরপর বাফটা ফিল্মস অ্যাওয়ার্ড থেকে শুরু করে ক্রিটিকস চয়েস অ্যা্ওয়ার্ড, ডিরেক্টরস গিল্ড, প্রডিউসারস গিল্ডসহ আসছে বেশ কয়েকটি নামী দামী অ্যাওয়ার্ড সিরেমনী এবং সবশেষে বহুল প্রতিক্ষীত অস্কার।তাই ঠিক করেছি, এখন ২০১১ এর যেই ভালো মুভিগুলো দেখা বাকি রয়েছে তা ঝটপট দেখে ফেলবো।যদিও বেশ কয়েকটি মুভির ব্লু রে এখনো বের হয় নি,তারপরেও যেগুলো বের হয়েছে তা দেখে ফেলবার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
গত এক সপ্তাহে ২০১১ এর চারটি নতুন মুভি দেখে শেষ করছি।সেগুলো নিয়েই এখন একটি ছোটোখাটো রিভিউ পোস্ট দেবার ট্রাই করছি।অনেকেই হয়তো এগুলো দেখে ফেলেছেন, আর যারা দেখেন নি তাদের জন্য ডাউনলোড লিংক শেয়ার করলাম, আশা করছি পোস্টে ভালোই আলোচনা হবে।আসুন শুরু করা যাক,
১।The Help (2011):
আমেরিকার লেখিকা Kathryn Stockett এর সাড়াজাগানো "The Help" উপন্যাসকে অ্যাডাপ্ট করে এই মুভিটি বানানো হয়েছে।উল্লেখ্য, বইটি ছিলো তার ডেব্যু নভেল, এই বইটিতে তিনি ১৯৬০ সালের তদকালীন আমেরিকার সিভিল রাইটস মুভমেন্টের সময়কে তুলে ধরেছিলেন।তখনকার সময়ে আফ্রিকান-আমেরিকান হাউজমেইডদের উপর সাদা চামড়ার মানুষদের দুর্বিষহ এবং হৃদয়বিদারক বর্ণবাদী আচরনকে ঘিরে উপন্যাসের গল্পটি আবর্তিত হয়।দীর্ঘ ৫ বছর গবেষণার পর ২০০৯ সালে অবশেষে লেখিকা বইটি বের করেন এবং এ পর্যন্ত ৩৫ টি দেশে বইটি সর্বমোট তিনটি ভাষায় পাবলিশ হয়েছে, শুধু তাই না, এ পর্যন্ত বইটির অন্তত ৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে এবং The New York Times এর Best Seller list এ বইটি ১০০ সপ্তাহেরও বেশিসময় ধরে জায়গা করে নেয়।
এবার আসি, মুভিটির প্লটের ব্যাপারে।৬০ এর দশকে তখন আমেরিকায় চলছে African-American Civil Rights Movement, তখনই মিসিসিপির এক সাদা চামড়ার তরুনী (স্কিটার) গ্র্যাজুয়েশান শেষ করে রাইটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে যোগ দেয় একটি স্থানীয় পত্রিকায়।কালো চামড়ার মানুষদের প্রতি সাদা চামড়ার মানুষদের রেসিয়াল অ্যাটিচিউড দেখে ভীষনরকম নাড়া খায় স্কিটার। মনস্থির করে, সেখানকার কালো চামড়ার হাউজমেইডদের অনুভূতি বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে, সিদ্ধান্ত নেয় তাদেরকে ইন্টারভিউ করে একটি বই ছাপানোর।
প্রথমে সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডের কাজের মহিলা Aibileen কে দিয়ে ইন্টারভিউ শুরু করে।কিন্তু তখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে গোটা কাজটিই করতে হতো গোপনে।আর অন্যান্য মেইডরা এই ব্যাপারে একেবারেই অনাগ্রহী এবং ভীতু ছিলো,কারন তারা জানে, মালিকরা জানলে তাদের চাকরি চলে যাবে।ঐদিকে পাবলিশারসরা বলে, মিনিমান ১২-১৩ জন হাউজমেইডদের স্টোরি কালেক্ট করতে না পারলে বইটি ছাপানো যাবে না।ঘোর বিপদে পড়ে যায় স্কিটার। একসময় Aibileen কে সাহায্য করতে তার বান্ধবী Minny এগিয়ে আসে, আস্তে আস্তে স্কিটার জানতে পারে সেই কালো চামড়ার মানুষগুলো Aibileen কিংবা Minny সবারই রয়েছে না জানা অনেক দুঃখ, অনেক কষ্ট, অনেক অভিমান ।কিন্তু তাদের সামাজিক মর্যাদা আর অর্থনৈতিক দৈন্যদশার দরুন এতোদিন তারা নীরবে নিভৃতেই চোখের পানি ফেলতো। স্কিটারকে নিয়ে তারাও একদিন দিনবদলের স্বপ্ন দেখে, যাদের বাচ্চাদের এতো স্নেহ-মমতা দিয়ে তারা বড়ো করে, যাদের ঘরের সবকাজ বিনাবাক্য ব্যয়ে সম্পন্ন করে শুধুমাত্র গায়ের রং কালো হওয়াতেই কিনা এতো বৈষম্য !!!
রেসিয়াল অ্যাগ্রেসনের বিরুদ্ধে মুভিটির বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বচ্ছ, আজকে আমাদের সমাজেই তাকিয়ে দেখুন না, ধর্ম কিংবা চামড়ায় রংয়ের পার্থক্য আমাদর একজন আরেকজনকে কতোটা দূরে সরিয়ে দেয়।যার উপর বৈষম্য করা হচ্ছে শুধুমাত্র সেই জানে সেই বিষের কতো জ্বালা।মুভিটির স্টোরি,স্ক্রিপ্ট এবং প্রেজেন্টেশান খুবই শক্তিশালী, আর কাস্টিংয়ের ব্যাপারে কি বলবো, অ্যাবিলিন এবং ম্যানি চরিত্রে দুইজনই মাইন্ডব্লোয়িং অভিনয় করেছেন,আমার ধারনা এরা দুইজনই এইবারের অস্কারে নমিনেশান পাবেন এবং মিনির চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সাপোর্টিং অ্যাক্টরেস ক্যাটাগরীতে Octavia Spencer অস্কার জিতবেন।আরেকটি জিনিস, স্কিটারের চরিত্রে এমা স্টোনের অভিনয়ের প্রশংসা না করলেই নয়, হালের রোমান্টিক কমেডি ছেড়ে এইরকম সিরিয়াস মুভিতে এমা স্টোনকে দারুন মানিয়েছে।
মুভিটি বক্স অফিস এবং ক্রিটিক উভয় মহলে ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে।আসন্ন গোল্ডেন গ্লোবে সেরা ছবি সহ মোট ৫ টি ক্যাটাগরীতে নমিনেশান পেয়েছে।আর মুভিটি ওয়ার্ল্ডওয়াইড প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের মতো ব্যবসা করেছে।মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮,আমার পার্সোনাল রেটিং ৯/১০, একটা কথা বলে রাখি, সো ফার এই মুভিটি আমার কাছে ২০১১ এর সেরা মুভি বলে মনে হয়েছে।
ডাউনলোড লিংক:
Click This Link
২।The Ides of March: [/sb
এই মুভিটি মূলত একটি পলিটিক্যাল ড্রামা।এই মুভিটির প্রথম যেদিকটি আমাকে আকৃষ্ট করেছিলো তা হলো এটি পরিচালনা করেছেন জর্জ ক্লুনি স্বয়ং। তাছাড়া অভিনয়ে জর্জ ক্লুনি তো আছেই, সাথে রয়েছে রায়ান গসলিং। এই রায়ান গসলিংকে গত দুইবছর ধরে লক্ষ্য করছি, বেটা যেটাতেই অভিনয় করে সেটাতেই একেবারে ফাটিয়ে দেয়।The Ides of March মুভিটিও তাই, অনেকদিন পর একটা ইনটেনস পলিটিক্যাল ড্রামা মুভি দেখলাম।
মুভিটির প্লট আবর্তিত হয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপার্থী জর্জ ক্লুনির নির্বাচনী ক্যাম্পেইনকে ঘিরে, সাথে রয়েছে কিছু টিপিক্যাল পলিটিক্যাল মারপ্যাঁচ, স্ক্যান্ডাল কিংবা বিট্রেয়াল---সবমিলিয়ে বেশ এনগেজিং পলিটিক্যাল মুভি।মুভিটির মেকিং বেশ গোছানো, তবে একটা জিনিসে একটু ঘাটতি রয়েছে তাহলো মুভিটির ফ্রেইমওয়ার্ক, একটি রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন আরেকটু বড়ো করে দেখানো যেতো, তবে মুভিটির সবচেয়ে বড়ো দিক হলো মুভিটির কাস্টিং, মারিসা টমেই, ফিলিপ সাইমুর হফম্যান, পল জিয়ামাটির পারফরম্যান্স বেশ মানানসই ছিলো, রায়ান গসলিং আর ক্লুনির অভিনয় কেমন হয়েছে সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না !!!
মুভিটি এইবারের গোল্ডেন গ্লোবের আসরে সেরা মুভি সহ মোট চারটি ক্যাটাগরীতে নমিনেশান পেয়েছে,এরমধ্যে সেরা পরিচালকের জন্য ক্লুনি এবং সেরা অভিনেতা ক্যাটাগরীতে রায়ান গসলিং নমিনেশান পেয়েছেন।মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.৪, আমার পার্সোনাল রেটিং ৭.৫।
ডাউনলোড লিংক:
http://adf.ly/4GheM
http://adf.ly/4GheW
http://adf.ly/4Ghef
৩।The Debt:
এই মুভিটা দেখে আমি টোটালি হতাশ হয়েছি।যদিও তেমন একটা হাই এক্সপেক্ট্যাশান ছিলো না, তারপরেও মুভিটির প্রথমদিকে বেশ খানিকটা দেখার পর মনে হচ্ছিলো সামনে বোধহয় আরো জমজমাট কিছু হতে যাচ্ছে, কিন্তু কিসের কি? মুভিটা শেষ করেও তেমন কোনো বড়ো চমক কিংবা টুইস্ট পেলাম না, কাহিনীটা খুবই সাদামাটা লেগেছে, নরম্যালি এই টাইপের থ্রিলারধর্মী ড্রামা মুভিগুলোতে যেই রকম সাসপেন্স থাকা দরকার সেটার বিন্দুমাত্র পাইনি। এইজন্য অবশ্য প্লটকে অনেকাংশেই দায়ী করা যায়।
কাহিনীতে দেখানো হয়,১৯৬৫ সালে পূর্ব জার্মানীর কুখ্যাত নাজি যুদ্ধাপরাধী ভোগেলকে অপহরন করার দায়িত্ব বর্তায় ইজরাইলের তিনজন সিক্রেট এজেন্টের উপর।কিন্তু তারা মিশনটি অলমোস্ট সাকসেসফুল করতে পারলেও শেষের দিকে ছোট্ট এক ভুলে ভোগেল পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।কিন্তু দেশের স্বার্থে তারা গোটা বিষয়টি গোপন রাখে এবং প্রচার করে, পালিয়ে যাবার সময় তারা ভোগেলকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।এরপর দীর্ঘ ৩০ বছর পর হঠাৎ সবকিছু পাল্টে যায়।ততোদিনে তারা সকলেই রিটায়ার্ড করে ফেলেছেন, তাদের কাছে খবর আসে,সেই ভোগেল পালিয়ে গিয়ে ইউক্রেনে বসবাস করছেন এবং সেখানকার এক স্থানীয় সাংবাদিক ভোগেলকে হত্যার ব্যর্থ মিশনটি সবার সামনে তুলে ধরতে যাচ্ছেন।সেই সাংবাদিক আর ভোগেলকে থামানোর জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠে, আর এইভাবেই নাটকীয় কিছু টার্নএরাউন্ডের মাধ্যমে মুভিটি শেষ হয়।
মুভিটি টাইমপাস হিসেবে মোটামুটি মানের লেগেছে।সাদামাটা হলিউডি মুভি, সারাক্ষন এক্সপেক্ট করছিলাম এই বুঝি দারুন কিছু হতে যাচ্ছে, কিন্তু সবশেষে হতাশা ছাড়া কিছুই পেলাম না।মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৭/১০,আমার পার্সোনাল রেটিং ৬/১০।
ডাউনলোড লিংক:
http://safelinking.net/d/8e93ab8641
http://safelinking.net/d/adc90a3647
http://safelinking.net/d/0e398c2cfb
http://safelinking.net/d/3e11426703
৪।Warrior (2011):
হলিউডে প্রায় প্রতিবছর অন্তত একটি করে ভালো মানের বক্সিং রিলেটেড মুভি হচ্ছে।আর সবচেয়ে আনন্দের কথা হলো, বক্সিং রিলেটেড সবকটি মুভিই এককথায় দারুন। গতবছর ক্রিশ্চিয়ান বেল আর মার্ক ওয়ালবার্গের দ্যা ফাইটার মুভিটার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে।এককথায় ব্রিলিয়ান্ট লেগেছিলো মুভিটা। এই ওয়ারিওর মুভিটিও বক্সিংকে ঘিরেই বানানো ।আর এজ ইউজ্যুয়াল এই মুভিটাও দারুন লেগেছে।
মুভিটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে দুই ভাই এবং পাঁচ মিলিয়ন ডলারের প্রাইজমানির একটি বক্সিং টুর্নামেন্টকে ঘিরে। এই দুইভাইয়ের বাবাও একসময় বক্সিং করতেন, কিন্তু তার অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য তাদের জীবনে ঝড় নেমে আসে, কালক্রমে তাদের পরিবারে ভাঙ্গন ধরে, দুইভাই আলাদা হয়ে যায়, কিন্তু এতো কিছুর পরেও এই টুর্নামেন্টকে ঘিরেই তাদের বাবা স্বপ্ন দেখেন সেই ভেঙ্গে পরা সংসারকে জোড়া লাগানোর।
এইবারে মুভিটির ব্যাপারে কিছু কথা বলি। এটি একটি রক্ত গরম করা মুভি, ২ ঘন্টা পর্যন্ত সবাই জানবে কি হতে যাচ্ছে, কিন্তু শেষে কি হয় তা জানতে মন আনচান করবেই। মুভিটা শুধুমাত্র একটি অ্যাকশান প্যাক বক্সিং সিনেমাই নয়, বরং প্রতিটি পান্চের সাথে এক একটি ইমোশনাল গল্পও ছুঁড়ে দেয়।মুভিটির কাস্টিং অসাধারন,দুইভাইয়ের চরিত্রে অভিনয়কারী Joel Edgerton আর Tom Hardy দারুন পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। মুভিটির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আউটস্ট্যান্ডিং লেগেছে, আর রয়েছে ব্রিলিয়ান্ট মেকিং স্টাইল।বক্সিং রিংয়ের অ্যাকশানগুলো দেখতে দারুন লেগেছে। লিডিং রোলে দুইভাই নমিনেশান পাবে বলে মনে হয় না,কারন তাদের চেয়ে বেশ উঁচু কম্পিটিশনের লোক আছে এ বছর, তবে সাপোর্টিং অ্যাক্টর ক্যাটাগরীতে দুইভাইয়ের বাবা চরিত্রে অভিনয়কারী Nick Nolte নমিনেশান না পেলে তার প্রতি নিতান্তই অবিচার করা হবে।
আশ্চর্যজনক হলেও এইবারে গোল্ডেন গ্লোবে এই মুভিটি কোনো ক্যাটাগরীতে নমিনেশন পায়নি।তবে আমি বাজি ধরে বলতে পারি বাফটা কিংবা অস্কারে বেশ কয়েকটিতে মুভিটি নমিনেশন পাবে এবং শুধু তাই না,কেনো জানি মনে হচ্ছে Nick Nolte এই রোলের জন্য অস্কার জিতবেন। মুভিটির আইএমডিবি রেটিং বেশ শক্তিশালী, ৮.৩ রেটিং নিয়ে এটি আইএমডিবি টপ ২৫০ তালিকায় ১৪০ তম স্থানে রয়েছে।আমার পার্সোনাল রেটিং ৮/১০।
যারা জমজমাট বক্সিংপ্যাক অ্যাকশান মুভি দেখতে ভালোবাসেন তাদের জন্য হাইলো রেকমেন্ড করছি।
মুভিটির ডাউনলোড লিংক:
http://www.mediafire.com/?18momg812rttt
আজ এপর্যন্তই, সামনে আরো কিছু নতুন মুভির রিভিউ নিয়ে হাজির হবো।সবাই ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:৫৪