মুভিটার নাম আমি প্রথম জানতে পারি আইএমডিবি টপ ২৫০ লিস্ট ঘাঁটতে গিয়ে।ফরেন ল্যাংগুয়েজের নামটি দেখে তার আইএমডিবি প্রোফাইলে ক্লিক করি।ফার্স্ট ইম্প্রেশানেই মুভিটি আমার ওয়াচলিস্ট তালিকায় চলে এলো।কারন মুভিটার প্রোফাইল পোস্টারটি ছিলো ভীষন রকমের অদ্ভূত। কেমন জানি গা ছমছম করা ব্যাপার আছে।একটা কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর মুভিটার নাম লেখা, আর উপরে একটা ছোট্ট বক্সে একটা মহিলার চোখের ভয়াল চাহনী----সবই যেনো কেমন কেমন !!!!! আজই ডাউনলোড করে দেখে ফেললাম।এক কথায় মাস্টারপিস মুভি।শুধুমাত্র মুভির রিলিজ টাইমের কথাই যদি বিবেচনা করেন তাহলে রীতিমতো টাষ্কি খেতে হয়।১৯৫৫ সালে এমন অসাধারন লেভেলের মুভি বানানো চাট্টিখানি কথা নয়।
যাই হোক, মুভির নাম তো আগেই বলেছি, এই মুভিটার অরিজিনাল টাইটেল হলো Les diaboliques, ইংরেজীতে The Devil ।মুভিটি ফ্রান্সের, ভাষাটাও ফ্রেন্চ।রানিংটাইম বেশ লম্বা, প্রায় ১১৪ মিনিট।মানে প্রায় দুই ঘন্টার কাছাকাছি।কিন্তু এইরকম সাসপেন্স থ্রিলার মুভি তিন ঘন্টা হলেও আমার কোনোরকম আপত্তি থাকবে না।কাহিনী বেশ এনগেজিং আর টোটালি ইনটেন্স একটা মিস্ট্রি থ্রিলার।সাসপেন্স রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, হররেরও একটা ফ্লেভার পাওয়া যাবে আর সাথে ফিল্ম নয়েরের ট্যাগলাইন তো রয়েছেই।এমন একটা মুভি কেনো আরো আগে দেখলাম না সেটা নিয়ে বেশ আক্ষেপ হচ্ছে।তারপরেও বেটার লেট দ্যান নেভার।যারা এই টাইপের ইনটেন্স মিস্ট্রি থ্রিলার দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য হাইলি রেকমেন্ডেড।
এবারে, কাহিনীর দিকে একটু নজর দেয়া যাক।মুভিটি সাদাকালো।Pierre Boileau এবং Thomas Narcejac এর "Celle qui n'était plus" নভেল থেকে বানানো হয়েছে।এই ব্যাপারে একটা মজার তথ্য শেয়ার করি, এই নভেলের purchasing rights কেনার ব্যাপারে আলফ্রেড হিচককের অসীম আগ্রহ ছিলো, কিন্তু তিনি তা কিনবার কয়েক ঘন্টা আগেই ফরাসী পরিচালক Henri-Georges Clouzot সেই স্বত্ব কিনে ফেলেন। এবং তিনি ১৯৫৫ সালে Diabolique মুভিটি বের করেন।মুক্তির পরপরই এটা ফ্রান্সের লোকাল বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
যাই হোক, মুভিটির শুরুতে দেখা যায় ফ্রান্সের একটি ছোটোখাটো বোর্ডিং স্কুলের একজন বদরাগী হেডমাস্টারকে (Michel Delassalle)।সাথে রয়েছে তার স্ত্রী (Christina), যে কিনা ঐ বোর্ডিং স্কুলেরই মালিক ও সেখানকার একজন শিক্ষিকা। আরো রয়েছে ঐখানকার আরেক শিক্ষিকা (Nicole ) যার সাথে সেই হেডমাস্টারটির সম্পর্ক ছিলো।উল্লেখ্য Michel Delassalle এর সাথে স্ত্রী Christina এর দাম্পত্য জীবন খুবই খারাপ ছিলো, Michel Delassalle এর চরিত্র ছিলো খুবই খারাপ, ভীষন বদমেজাজী আর মেন্টালী স্যাডিস্টিক।প্রায়ই গায়ে হাত তুলতো আর যাচ্ছেতাই ব্যবহার করতো।এমনকি Nicole এর সাথেও তার সম্পর্ক ছিলো একই রকম।প্রতিনিয়ত মেন্টালী আর ফিজিক্যালি টর্চারড হতে হতে তাদের দুইজনেরই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যেতে থাকে।আর সইতে না পেরে তারা প্ল্যান করে তাদের জীবন থেকে Michel Delassalle কে সরিয়ে দেবার।সোজা বাংলায় খুন। কিভাবে একটি পারফেক্ট ক্রাইম করবে তার একটা নিখুঁত পরিকল্পনা করে তারা। এবং পরিকল্পনা মাফিক তা করতে সক্ষমও হয়।কিন্তু লাশটি লুকানোর পর থেকেই ঘটতে থাকে আশ্চর্যজনক সব ঘটনা।মুহূর্তেই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়, শুরু হয় উৎকন্ঠা আর সাসপেন্স। আর কিছু বলবো না, বাকিটুকু নিজেরাই দেখে নিন।তবে এটুকু বলে রাখি, মুভিটার শেষের দিকে একটা চরম টুইস্ট আছে, যা একটি মিস্ট্রি থ্রিলার মুভির জন্য অতীব দরকারি একটা জিনিস, তার পুরো শতভাগ আপনি পাবেন এই মুভিটিতে।
এবার আমার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে মুভিটার বিশ্লেষন শুরু করি।মুভিটির একমাত্র পুঁজি হলো সাসপেন্স। আর পরিচালক সেটা অসাধারন দক্ষতার সাথে গোটা মুভিটিতে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।সেজন্য Henri-Georges Clouzot কে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতে হয়।আর পরিচালকের মুন্সীয়ানা নিয়ে প্রশ্ন তুলার কোনো অবকাশই নেই, কারন এই মুভিটি ছাড়াও তিনি The Wages of Fear (1953) এবং Le Corbeau: The Raven (1943) সহ অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্র আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন।মুভিটির শুরু থেকে একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা রয়েছে মুভিটিতে।কিছু আলাদা আলাদা মুহূর্তের কথা না বললেই নয়।যেমন Michel Delassalle কে মারার সময় যখন মদের ভিতর হাইলি সিডেটিভ মিশানো হয়েছিলো ঐটা খাওয়ার আগ মুহূর্ত এবং খাওয়ার পরের ঘটনাপ্রবাহ অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে দেখানো হয়েছে।তারপর সুইমিং পুলে লাশ খুঁজে বেড়ানো, হাসপাতাল মর্গের সেই দৃশ্য আর শেষের দশ মিনিটতো পুরাই সাসপেন্সে ভরপুর।এতোটা হাই ইনটেন্সড এন্ডিং খুব কমই দেখেছি।মুভিটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হওয়ায় একা একা বিশেষ করে রাতের বেলা লাইট অফ করে দেখবার জন্য টোটালী পারফেক্ট।
এইবার আসি কাস্টিংদের পারফরম্যান্সদের ব্যাপারে।বদরাগী হেডমাস্টারের চরিত্রে অভিনয় করা Paul Meurisse কে স্যালুট।তার অভিনয় এতোটাই অনবদ্য যে আমার নিজেরই তাকে খুন করতে ইচ্ছা করছিলো।আর নিকোল আর ক্রিস্টিনার চরিত্রে অভিনয় করা Simone Signoret আর Véra Clouzot এর পারফরম্যান্সও ছিলো দুর্দান্ত।
কাহিনীর শুরুটা একটু শ্লো, কিন্তু একবার যখন ফ্লো চলে আসবে মনে হবে যেনো রোলার কোস্টার রাইড।কোনো মুভি কতোটা দর্শক ধরে রাখতে পারে তা ডিপেন্ড করে মূলত তার প্লটের উপর।সেদিক দিয়ে Diabolique মুভিটা বেশ শক্তিশালী।কারন এর মিস্ট্রিটা বেশ কোয়ালিটিসম্পন্ন আর গোটা মুভিখান যেনো একটা টোটাল সাসপেন্স প্যাকেজ।
মুভিটি টোটালি একটা মাস্টারপিস।আমাদের পেয়ারা হলিউড ১৯৯৬ সালে এই মুভিটার একটা অখাদ্য রিমেক বের করেছিলো একই নামে , যা ভয়াবহ লেভেলের ফ্লপ খেয়েছিলো।আমার ভাগ্য অতি+অন্ত ভালো যে এইবার আমি অরিজিনালটা আগে দেখছি।অনেক অনেক দিন আগে কানে ধরছিলাম, কোনো মুভির হলিউডি ভার্সন দেখবার আগে অবশ্যই অবশ্যই তার অরিজিনাল ভার্সনটা আগে দেখতে হবে।
Diabolique (1955) মুভিটার পুরষ্কার আর সম্মানের তালিকাটি সংক্ষেপে একটু বলে নেই, মুভিটা New York Film Critics Circle Awards এবং Edgar Allan Poe Awards এ সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রে পুরষ্কার লাভ করে।এছাড়া Louis Delluc Prize এর জন্য পরিচালক Henri-Georges Clouzot পুরষ্কৃত হন।মুভিটির আইএমডিবি রেৎিং ৮.৩, আর টপ ২৫০ তালিকায় ১৭৭ তম অবস্থানে রয়েছে, আর রটেন টোমাটোসে অ্যাপ্রুভাল রেটিংয়ে ৯৬% ভোট পেয়েছে।এছাড়া ২০০৭ সালে মুভিটি টাইম ম্যাগাজিনের মনোনীত সর্বকালের সেরা ২৫টি হরর সিনেমার তালিকায় স্থান পেয়েছে।
মুভিটির ব্যাপারে আমার পার্সোনাল রেটিং ৮.৫/১০।যারা মিস্ট্রি, থ্রিলার, হরর কিংবা সাসপেন্স টাইপ মুভি পছন্দ করেন তাদের জন্য মাস্ট সি।
মুভিটির সিংগেল ডাউনলোড লিংক:
http://www.fileserve.com/file/eTMR96F
সাবটাইটেল: Click This Link
মাল্টি ডাউনলোড লিংক:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
অতি সম্প্রতি মুভিটির ব্লুরে বের হয়েছে।যারা টরেন্ট ইউজ করেন তাদের ব্লু-রে রিপ লিংকটি দিলাম,
Click This Link