বেশ কয়েক বছর আগে একটা ডিভিডি কিনেছিলাম।তখন অবশ্য নেটের কানেকশান অতোটা ভালো ছিলো না যে মুভি ডাউনলোড করে দেখবো, ডিভিডি কিনাই ছিলো একমাত্র ভরসা।যাই হোক, যে ডিভিডির কথা বলছি,তা ছিলো,২০০৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বেস্ট ফরেন মুভির ক্যাটাগরিতে অস্কার পাওয়া ৬ টি মুভির কালেকশান।কিন্তু সেই ডিভিডির সবকয়টা মুভি অবশ্য দেখা হয়ে ওঠে নি।কিছুদিন আগে মিডিয়াফায়ার লিংকে ২০০৭ এর অস্কার পাওয়া সেই ফরেন মুভিটির ব্লু রে রিপ এর প্রিন্ট আপলোড হলো।উল্লেখ্য এই মুভিটি ছিলো সেই না দেখা মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম।তাই দেরি না করে ডাউনলোড করে ফেললাম।আর আজকে সন্ধ্যায় তা দেখেও ফেললাম।বলছি, The Lives of Others (2006) মুভির কথা।
যার অরিজিনাল টাইটেল Das Leben der Anderen। এটি একটি জার্মান মুভি,যার কাহিনী আবর্তিত হয়েছে ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৯ সালকে ঘিরে।মূলত ড্রামা ধাঁচের হলেও এটিতে প্রতিফলিত হয় তৎকালীন জার্মানির ইতিহাস ও রাজনীতির সংমিশ্রণ।তবে সেই মিশ্রণটির কাহিনী সনাতন স্টাইলে না হেঁটে শুধুমাত্র কিছু মানুষের উপর আলোকপাত করাতে যেন একটা আলাদা মাত্রা পেল সিনেমাটি।ইতিহাসের গভীরে না গিয়ে,রাজনীতির ছায়া না মাড়িয়েও পরিচালক অদ্ভুত দক্ষতার সাথে সেই সময়কার প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তুলেছেন।তাই একে শুধু ড্রামা না বলে পলিটিক্যাল ও হিউম্যান ড্রামা বলা উচিৎ,যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার।
যাই হোক,আসুন এবার কাহিনীর দিকে একটু নজর দেয়া যাক।সিনেমাটির সমস্ত চরিত্রই পূর্ব জার্মানির।শুরুতে আমরা দেখবো জর্জ ড্রেইমেন আর তার প্রেমিকা ক্রিস্টা মারিয়াকে।জর্জ পেশায় একজন নাট্যনির্মাতা এবং বেশ ভালো একজন লেখক আর মারিয়া একজন পপুলার অভিনেত্রী।জর্জ হচ্ছেন সেই গুটিকয়েক ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন যিনি কিনা একই সাথে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির কাছে সমাদৃত।যাই হোক, জর্জের একটি ড্রামার প্রিমিয়ারে Culture Minister ব্রুনোর কুনজরে পড়েন মারিয়া।কিন্তু যেহেতু জর্জ তার প্রেমিক তাই তাকে এলিমিনেট করতে চায় ব্রুনো।সে তখন তৎকালীন Stasi (Secret police of East Germany) এর Lieutenant-Colonel এ্যান্টন আর Captain ওয়েইসলার কে দায়িত্ব দেয় যেকরেই হোক জর্জকে এলিমিনেট করতে হবে। তারা প্ল্যান করে জর্জের বাড়িতে আড়ি পাতার।গোটা বাড়িটি বাগ করে তারা।নজরদারীর ভার পড়ে ওয়েইসলারের উপর।আড়ি পাততে গিয়ে সে টের পায় জর্জের পূর্ব জার্মানির প্রতি বিশেষত Deutsche Demokratische Republik (DDR government) এর প্রতি তেমন আনুগত্য নেই।ওদিকে জর্জ প্ল্যান করে DDR government এর কুকীর্তির কাহিনী বহির্বিশ্বের কাছে প্রকাশ করবার।এ ব্যাপারে জর্জ ও তার বন্ধুরা সাহায্য নেয় একজন পাওয়ারফুল West Germans এর, যে কিনা তাকে একটি নন ট্রেসেবল টাইপ রাইটার সরবরাহ করবে।জর্জ সিদ্ধান্ত নেয় পুর্ব জার্মানির হাই সুইসাইড রেট নিয়ে সে ছদ্মনামে একটি লেখা ছাপাবে পশ্চিম জার্মানির একটি বহুল প্রচারিত এক সাপ্তাহিকে যা DDR government ১৯৭৭ সাল থেকে গোপন করে আসছিলো।
ওদিকে আড়ি পাততে পাততে ওয়েইসলার মানের অজান্তে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়তে থাকে জর্জ আর মারিয়ার জীবনে।তাদের প্রেমময় জীবন আর সৎ উদ্দেশ্য তাকে দ্বিধাবিভক্ত করে তোলে।একদিকে হাতেনাতে প্রমান এবং সেই সাথে বিশাল প্রোমোশনের লোভ আরেকদিকে সততা আর বিবেকের টান, কোন পথে হাঁটবে ওয়েইসলার? বিবেকের টানে যে বাধা হয়ে উঠবে গোটা DDR government, সে পথে কি হাঁটা এতোই সহজ? নাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে সে তার নিজ জীবনের কথা ভেবে জর্জকে ধরিয়ে দিবে? জানতে হলে দেখে ফেলুন The Lives of Others মুভিটি।
মুভিটি এককথায় অসাধারন যার পুরা কৃতিত্ব আমি পরিচালককে দেবো।দারুন ব্যাপার হলো এটি ছিলো Florian Henckel এর ডিরেক্টরিয়াল ডেব্যুট ফিল্ম।তবে আসল ইতিহাসের সাথে মনে হয় না কাহিনীর কোনো লিংক রয়েছে তবে মুভিটির ফ্লো অসাধারন।তেমন কোনো আপস এন্ড ডাউনস নেই তবে আপনাকে ধরে রাখবে গোটা সময় ধরে।এন্ডিংয়েও তেমন বড়ো চমক নেই তবে মুভিটি শেষ হবার পর অদ্ভূত লেভেলের ভালো লাগবে।কখন যে সেই সাধারন মুভিটি অসাধারন হয়ে উঠবে টেরও পাবেন না।
মুভিটির IMDb রেটিং ৮.৫ এবং টপ ২৫০ এর মধ্যে ৫৭ তম স্থানে রয়েছে। আমার মতো ইতিহাসে কম জানা ব্যাক্তিদের জন্য পারফেক্ট পলিটিক্যাল ড্রামা এই The Lives of Others (2006) মুভিটি।দেখে ফেলুন, ভালো লাগবে আপনারো।এটি একটি রেটেড R মুভি।তাই কাউকে সাজেস্ট করার আগে ভেবে নিবেন।
মুভিটির মিডিয়াফায়ার ডাউনলোড লিংক: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১১ রাত ১:০২