somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

@নবী-রাসূলদের সাথে তাঁদের জাতির লোকদের বিবাদ-সংঘাতের মূল বিষয়: তাওহীদ বা একত্ববাদ(১)

২৪ শে মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

@ সকল নবী-রাসূলের দাওয়াতের মূল ভিত্তি: তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতে একত্ববাদ
গ্রহণযোগ্যতা একটা অর্জনের ব্যাপার, এ অর্জন সাধিত হয় মানুষের নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নতির মাপকাঠিতে। নৈতিকতা ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার অনেকাংশই নির্ভরশীল মৌলিকত্বের উপর, তারপর অর্জিত শিক্ষার আলোকে নিজেকে সংশোধন এবং তারপর অতিরিক্ত পাওনা সমাজ-সংস্কৃতির প্রভাব। কিন্তু যুগে যুগে মানব জাতিকে সঠিক পথ পদর্শনের জন্য প্রেরিত নবী-রাসূলগণের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা'আলা বিশেষ তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করেন। কেননা, নবী-রাসূলগণ মানব জাতির জন্য শিক্ষক স্বরূপ, শিক্ষা স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত এবং এ শিক্ষকও সরাসরি আল্লাহ্ তা'আলা কর্তৃক নিযুক্ত ও তাঁরই প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রিত। তাই তাঁদের ব্যাপার স্যাপারই অনেক উচ্চ মানের হয়ে থাকে। তথাপি পৃথিবীর স্বল্প জ্ঞান সম্পন্ন, অবিবেচক ও মূর্খ মানুষেরা নবী-রাসূলগণের প্রায় প্রত্যেকের সাথেই বিবাদ-বিসম্বাদে লিপ্ত হয়। কখনো তাদেরকে গালাগাল করে, কখনো উন্মাদ, কবি, গণক ইত্যাদি খেতাবে ভূষিত করে, কখনো স্বদেশ থেকে বের করে দিয়ে, কখনো বয়কট করে, কখনো হত্যা প্রচেষ্টা চালিয়ে এমনকি কখনো কখনো হত্যা পর্যন্ত করতে পিছপা হয়নি।

নবী-রাসূলগণ কি আকাশ থেকে অলৌকিক পন্থায় প্রেরিত হয়েছেন? না, বরং ওনারাও ছিলেন যুগের প্রজন্মের একজন সদস্য, ওনাদেরও পিতা-মাতা ছিলেন, সমাজে শিশু হয়ে জন্মেছেন, কৈশর পেরিয়েছেন, যৌবন অতিবাহিত করেছেন, বার্ধক্য হয়ে অবশেষে পরপারে চলে গেছেন। একজন পরিপূর্ণ মানুষ ব্যতীত ওনাদের মধ্যে সর্বসাধারণ থেকে যে পার্থক্য, যে মহত্ব, যে অসাধারণত্ব ছিল, তা এ ছাড়া আর কিছু নয় যে,
{قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً }الكهف110
((বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি ওহী বা প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ।)) [সূরা আল-কাহ্ফ: ১১০]

সরাসরি স্রষ্টা ও প্রতিপালকের তত্ত্বাবধানে থাকায় নবী-রাসূলগণের মধ্যে বড় ধরনের কোন অন্যায়-অপরাধের কথা তো চিন্তাই করা যায় না; বরং ছোট-খাটো ত্রুটি বিচ্যুতি থেকেও আল্লাহ্ ওনাদেরকে হেফাযত করেছেন। তাই নবী-রাসূলগণ মা'সূম বা নিস্পাপ। এ যে শুধু আল্লাহর হিসেবে তা নয়; বরং মানুষের বিবেকের কাছেও তারা ছিলেন সর্বোত্তম ব্যক্তি, সর্বোত্তম আমানতদার, সর্বোত্তম আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষকারী, সর্বোত্তম ব্যবহারের অধিকারী, ন্যায় ও ইনসাফের দৃষ্টান্ত, নযীরবিহীন দানশীল। তাঁদেরকে ডাকা হতো 'আল-আমীন' বা অনন্য বিশ্বস্ত, অসাধারণ সততার অধিকারী, পরিপূর্ণ বিশ্বাসী। শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ত পূর্বেকার চল্লিশ বছরের জীবনে তিনি কুরাইশদের নিকট ছিলেন বিরাট শ্রদ্ধার পাত্র, তিনিই যৌবনে গঠন করেছিলেন রক্তক্ষয়ী "ফুজ্জার যুদ্ধের" নিরসণকল্পে "হিলফুল ফুযূল" নামক শান্তি রক্ষা সংগঠন। একমাত্র তাঁর উপরই কুরাইশরা আস্থাশীল হয়েছিল কা'বার কোণে কালো পাথর সংস্থাপনের গৌরব অর্জন নিয়ে বিবদমান বিতণ্ডার মীমাংসায়। অতএব, প্রমাণিত সত্য যে, নবুয়তের পূর্ব পর্যন্ত নবী-রাসূলগণ স্বীয় জাতির নিকট সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হতেন।

তাহলে এহেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগণ নবুয়ত প্রাপ্তির পর কি কারণে জাতির লোকদের একাংশের চরম শত্রুতে রূপান্তরিত হয়ে উঠেন? এ খুবই ভাবনার বিষয়। মানুষ স্বভাবতঃই কারো না কারো কাছে সাহায্য চাওয়া এবং কাউকে না কাউকে স্বীয় ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধকে নিবেদন করাতে সৃষ্টিগতভাবেই উৎসাহী। তার এই সাহায্যকারী ও শ্রদ্ধানিবেদনকারী কিংবা যাকে আমরা বলি ইবাদাতকারী সত্তা-এর নির্বাচনে সে একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। প্রভাব যা কিছুরই থাকুক না কেন, ব্যক্তি তার নিজ নিজ বুঝ অনুযায়ীই তার প্রভুকে নির্বাচন করে নেয়। এক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি ততক্ষণ পর্যন্ত তার নিকট ধরা পড়ে না, যতক্ষণ না সে তার আভ্যন্তর থেকে সত্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। আর এ উপলব্দিকেই আমরা ডাকি 'হেদায়াত'; যা একান্তভাবে বান্দার আগ্রহ ও প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা'আলা প্রদান করে থাকেন। তো উল্লেখিত সাহায্যকারী ও ইবাদাতকারী হিসেবে ব্যক্তির নির্বাচনকে যদি কেউ ভুল আখ্যা দিতে আসে, বিবাদের সূচনা তখনি ঘটে।

এক্ষেত্রে কেবলমাত্র তারাই সঠিক পথ পায়, যারা ভুল-শুদ্ধ বুঝার বিবেচনাশক্তি লাভ করে আপন প্রভুর নিকট থেকে। আর যারা বিবেক বিবেচনার ধার না ধেরে স্বীয় গোঁয়ারর্তুমিতে বহাল থাকতে চায়, তারা ধীরে ধীরে হয়ে পড়ে বিরুদ্ধবাদী সেই ব্যক্তির যে আন্তরিকভাবে তাদেরকে এ সত্য বুঝাতে আহ্বান করে যে, তোমরা যার ইবাদাত করছ ও যার কাছে সাহায্য কামনা করছ, প্রকৃতপক্ষে সে এসব দেয়ার ও নেয়ার ক্ষমতা এবং অধিকার রাখে না। বরং সকল কিছুর দাতা তো একমাত্র বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্ তা'আলা এবং সবটুকু ইবাদাতও কেবলমাত্র তাঁরই প্রাপ্য, কেননা তিনিই এর একমাত্র যোগ্য সত্তা। এই একক সত্তার দিকে যাবতীয় চাওয়া-পাওয়া এবং প্রশংসা-শ্রদ্ধাকে একত্রিভূত করারই ইবাদাত এবং এরই অপর নাম 'ইবাদাতে একত্ববাদ' বা 'তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্'। আর যুগে যুগে মানব জাতির জন্য প্রেরিত শিক্ষক নবী-রাসূলগণের সাথে তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কিছুসংখ্যক লোকের সাথে সংঘাত বাধে মূলত এই একটি বিন্দুতে এসেই যার নাম তাওহীদ বা একত্ববাদ।

সার সংক্ষেপ:
=নবী-রাসূলগণ শিক্ষক হিসেবে গ্রহণযোগ্য কেননা আল্লাহ্ তাঁদেরকে প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
=নবী-রাসূলগণ নিজ নিজ জাতিরই লোক ছিলেন।
=নবুয়তের পূর্ব পর্যন্ত নবী-রাসূলগণ থাকেন জাতির সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।
=বিবাদের সূচনা ঘটে তখনি যখন নবী-রাসূলগণ জাতির লোকদেরকে তাদের বিভ্রান্তি ছেড়ে তাওহীদ বা একত্ববাদ গ্রহণের আহ্বান জানান।


২৪.০৩.২০০৮, মদীনা মুনাওয়ারা, সউদী আরব।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০০৮ রাত ২:১১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×