সাহিত্য নিয়ে তাড়া হুড়ো আমার কখনও ই ছিল না। আমি সাহিত্যকে সময় দিতাম। সাহিত্য থেকে সময় নিতাম। মনে করতাম এবং আজও করি , সাহিত্য আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। তা নিয়ে খুব উচ্চকন্ঠ হবার কি আছে ?
আমি বিশ্বাস করি কাজই মানুষের প্রধান ব্রত হওয়া উচিৎ , কন্ঠ নয়।
কারণ- বৃথা সময় নষ্ট করার মতো প্রহর বোকাদের হাতেই থাকে ।
কাহলিল জিবরান পড়ে তা আমি জেনে গিয়েছিলাম অনেক আগেই।
না - প্রিয় পাঠক , আমি তত্ত্বের ঝুলি খুলে লেখার ওজন বাড়াবার প্রয়াসী নই মেটেও। আমি যথাসাধ্য সম্ভব প্রধান এবং প্রাসংগিক কথাগুলোই তুলে ধরতে চাই।
১৯৯২ সালের বিলাত সফরের শেষ পর্যায়ে ডিসেম্বর মাসে আমি সিলেটের
উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমি নিয়মিত লিখতাম ঢাকার
বিভিন্ন কাগজেও। এর মাঝে অন্যতম ছিল সে সময়ের খুব জনপ্রিয়
সাপ্তাহিক খবরের কাগজ। এবং একই গ্রুপের দৈনিক আজকের কাগজ।
সেই লেখাগুলো আমাকে ব্যাপক পরিচিতি দেয় গোটা বাংলাদেশেই।
মনে পড়ছে , সেই ডিসেম্বর মাসেই ঢাকায় যাই আড্ডা দিতে। দৈনিক আজকের কাগজের অফিসে বসে যেদিন আড্ডা দিচ্ছিলাম , সেদিনই
আজকের কাগজের উপসম্পাদকীয়তে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছিল।
আজকের কাগজ এর আবীর হাসান ( পটুয়া কামরুল হাসান এর আত্মজ)
এবং আবু বকর চৌধুরী ( বার্তা সম্পাদক , আজকের কাগজ ) বলেছিলেন,
আজকে তো ফকির ইলিয়াস আমাদের উপসম্পাদক । তাই তার সম্মানেই
চা চক্র টা হয়ে যাক। আমার সাথে থাকা কবি বন্ধু মোহন রায়হান মাতিয়ে
রেখেছিলেন সেই প্রাণবন্ত আড্ডা।
..............................
৯২ এর ডিসেম্বরের ই আরেকটি বিকেলের ঘটনা । দৈনিক সিলেটের ডাক
থেকে আড্ডা দিয়ে বেরিয়েছি। সেদিনের ডাকে ই একটা ছোট সংবাদ ছাপা
হয় একটি প্রকাশনা উৎসবের । গ্রন্থটির নাম - এক মুঠো রোদ্দুর । লেখক - আহমদ ময়েজ।
প্রকশনা উৎসব অনুষ্টানের সংবাদ টি আমাকে নাড়া দেয়। কারণ এই বইটিরই একটা আলোচনা আমি লিখেছিলাম লন্ডনের নতুন দিনে। সে কথা মনে পড়ে। সিদ্ধান্ত নিই , কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ
সোলেমান হলে সেই প্রকাশনা উৎসবে যাবো।
রিকশা নিয়ে সেখানে পৌঁছি বিকেল চারটার দিকে। আমার স্বভাবজাত
ভংগিতে আমি এবং আমার সাথে থাকা আরেকজন, আমরা দর্শক সারির
মাঝামাঝি তে বসে থাকি।
সেখানে সবাই ই সবার পরিচিত । শুধু আগন্তুক আমরা দুজন। কেউ কেউ
আগ্রহের চোখে তাকান ও আমাদের দিকে। একসময় আহমদ ময়েজ নিজেই এগিয়ে এসে নিজেই কথা শুরু করেন আমার সাথে। তার ধারণা ছিল, হয়তো তারই কোনো অতিথি।
আমি সবিনয়ে আমার নাম বলি । তা শুনেই তিনি জড়িয়ে ধরেন আমাকে।
আরে আপনি ! কবে এসেছেন ?
নতুন দিনে লেখার কপি টা পৌঁছে গিয়েছিল তার কাছে আগেই। ফলে আমার আলোচনা টি দেখেছিলেন তিনি।
এই প্রকাশনা অনুষ্টান টির মডারেটর / সন্চালক এর দায়িত্বে ছিলেন
মাশুক ইবনে আনিস। খবরটি তার কাছেও পৌঁছে যায় মুহুর্তে। তিনি
মাইকে বারবার আমার নাম ঘোষনা করতে থাকেন। অভিধা দিয়ে
খবরের কাগজ কিংবা দৈনিক সিলেটের ডাকে প্রকাশিত আমার লেখাগুলোর
উদ্বৃতি ও দিতে থাকেন।
উল্লেখ করা দরকার , সে সময় সিলেটের ডাকে আমার লেখা
যুক্তরাষ্ট্রের রোজমানচা কলাম টি ১৪০ পর্বের ও বেশী ছাপা
হয়ে গিয়েছিল । সে সময় তা ছিল বেশ জনপ্রিয় একটি কলাম।
বেশ কিছুদিন পর সিলেটের কোনো জমজমাট অনুষ্টানে যোগ দিতে পেরে
বেশ ভালোই লাগছিল আমার।
আহমদ ময়েজ ও মাশুক ইবনে আনিস এর সাথে সেই অনুষ্টানেই আমার
প্রথম দেখা।
...............................
সেই অনুষ্টানে বইটির আলোচনায় অংশ নিই আমি। বইটি প্রকাশ করে
করে সপ্তর্ষী (আমার জানা মতে, সাত বন্ধু মিলে গ্রামভিত্তিক একটি প্রকাশনা করা হয়েছিল। আর এই সাত ঋষি হচ্ছেন মনি হক, সৈয়দ ওবায়দুল হক, মাশুক ইবনে আনিস, আহমদ আলী, শেখ আনোয়ারুল ইসলাম বদরুল, সৈয়দ আবুল আহমদ)।
একমুঠো রোদ্দুর - ছিল প্রকাশনা সংস্থাটির প্রথম প্রকাশনা।
( চলবে ............. )
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:১৫