বিপ্লব সবাই চাই আমরা। তবে তা নিজের সুখ শান্তি বা আরামের অন্য কথায় বলতে গেলে নিস্তরঙ্গ জীবনের বিনিময়ে না। বিপ্লব নিয়ে কথা বলতেও আমরা পছন্দ করি। এতে করে গা টা একটু গরম হয়, বুঝতে পারি এখনও মানুষ আছি...সরীসৃপ হয়ে যাইনি। চা এর দোকানের আড্ডায়, পত্রিকায়, ফেসবুকে বা ব্লগে দেশ বদলের বুলি ই আমাদের একমাত্র এন্টিবায়োটিক বিবেকের দংশনের বিরুদ্ধে। নইলে তো কবেই দল ধরে লেমিংদের মত তুরাগ এর পানিতে ঝাপ দিতে হত।
সারাবছর সন্ধ্যার আড্ডায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে গলা ফাটাই। পরে বাসায় গিয়ে ইলিশ মাছের পেটি দেখে সব ভুলে যাই। ঈদের সময়ে লঞ্চডুবি আর সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে মিডিয়া গরম থাকে। দুইদিন পর সব ভুলে সেই মিডিয়া ঐশ্বরিয়ার বাচ্চার গায়ের রঙ কালো কেন তা নিয়ে গবেষণামূলক খবর প্রচার করে আর অপেক্ষায় থাকে আগামি ঈদের। আমরাও ভাবি যাক আমার কেউ তো মারা যায়নি, আলহামদুলিল্লাহ্।
সংখ্যালঘু (আমার মতে এই শব্দটাই তুলে দেয়া উচিৎ অভিধান থেকে) পল্লীতে ১২ বছরের মেয়েকে ধর্ষণকারী নরপশুদের ফেসবুকে থুতু দিতে দিতে রাত গভীর হলে টিনপর্ণ লিখে সার্চ দিয়ে থুতুটা অন্য কোথাও ব্যাবহার করি। এম পি, মন্ত্রীদের দুর্নীতি দেখে দেখে তো এখন এসব স্বাভাবিক মনে হয়, মনে হয় এসব তো তাদের অধিকার। আমাদের মত বলদদের কত কিছু বুঝিয়ে তারপর এই সুযোগ তারা পেয়েছেন। একটু না খেলে খারাপ দেখায়। হাজার হোক জনগণের পেছনে দেয়া শ্রমের একটা মূল্য আছেনা!!?
কোথায় যেন শুনেছিলাম সরকারকে জনগন ভয় পাবেনা, সরকার জনগণকে ভয় পাবে। সরকার আর সরকার দলীয় লোকদের ভয়ে দিনদিন কেন জানি কেঁচো হয়ে যাচ্ছি আমরা। দিক আমার বোনের ওড়নাতে হাত, নিক আমার জমি। তাও যে গুম করে দিচ্ছেনা সেটাই তো বেশী। সত্রাসের বিরুদ্ধে যা বলার তা নাহয় ব্লগেই বলব!!
সরকার বিরোধী ব্লগ ভেবে যারা খুশী হচ্ছেন তাদের বলি যে এটা বর্তমান সরকার বিরোধী না, অতিতেরও কোন সরকার এর বিরোধী না। যেসব বিরোধী দল একসময় সরকারে ছিল তাদেরও বিরোধী না। এটা জনগন বিরোধী লেখা। আপনার বিরুদ্ধে লেখা , আমার বিরুদ্ধে লেখা ।
৭১ পরবর্তী সময়ে কোথায় যেন বাঙ্গালীর সাহসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আমরা মেনে নেয়া শিখে গেছি ভালমতো। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সড়ক দুর্ঘটনা, হলুদ সাংবাদিকতা, রাজনীতিবিদদের কথা না রাখা, লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, লঞ্চডুবি এমন আরও অনেক কিছু এখন তিনবেলা পেটপূজো করার মতই স্বাভাবিক। কোন ভবন ভেঙ্গে পড়লেও আমরা সেটা নিয়ে ব্যাবসা করতে পারি, আবার আমাদের প্রায় অশিক্ষিত চাচাতো/মামতো ভাইয়েরা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও যখন কোটি টাকার মালিক হয় তাকে নিয়েও গর্ব করতে পারি। লজ্জা ব্যাপারটা কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে দিনদিন।
আন্দোলন যদি শুরু ও হয় কিছু নিয়ে সেটাকেও কিভাবে নষ্ট করা যায়, কলুষিত করা যায়, কিভাবে সেই আন্দোলন কে ব্যাবসায়িকভাবে রাজনৈতিকভাবে ব্যাবহার করা যায় তা আমাদের থেকে ভাল কেউ মনে হয় না জানে। সব কিছুতেই আমরা স্বার্থ খুঁজি, মোটিভ খুঁজি। আমি যেহেতু সাহস করছি না তাহলে যারা করছে নিশ্চয়ই তাদের কোন স্বার্থ আছে! কাঁকড়া স্বভাব!!
কথা বলে নাকি কিছুই হয়না। কিন্তু আমার বিশ্বাস পুরোপুরি উল্টো। কথা দিয়েও মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব, সমাজ পরিবর্তন সম্ভব। এই লেখাতে ৯৯ জনের কিছুই হয়ত যায় আসেনা। আমার ঐ একজন দরকার যে এক মিনিট হলেও ভাববে। যেমন আমি অন্য কারো লেখা পড়ে, কথা শুনে ভেবেছি। আমূল পরিবর্তন তো অসম্ভব। ধীরে হোক তবুও পরিবর্তন হোক এটাই আশা। অনেক তো ঘুমালাম......এবার সময় এসেছে চোখ খোলার।