বাঙ্গালির মধ্যে মনে হয় ব্যাঙ স্বভাব প্রবল। বৃষ্টি দেখলে আমাদের আনন্দের সীমা থাকেনা। পারলে যে যেখানে আছি ওখানেই ভিজতে শুরু করি আর না পারলে চেষ্টা করি একটা দৌড় দিয়ে কোন ভাবে বৃষ্টিতে গিয়ে পড়ার। কে দেখল, কে কি বলল কিছুই মাথা থাকেনা। বাসায় ঢুকে লজ্জা মাখা গলায় বলি “কি যে বৃষ্টি! আসার পথেই বৃষ্টি তে পড়ে গেলাম!” আর কারো কথা জানিনা কিন্তু আমি এই কাজ অনেকবার করেছি।
কেউ কদম গাছের তলায় বসে ভেজে আর কেউ রিকশার হুড ফেলে। আর কেউ কেউ তো পারলে রাস্তায় শুয়ে পড়ে হা করে যাতে বৃষ্টি কিছু গায়ে লাগার সাথে সাথে মুখের ভিতরেও যায়! এক কথায় আমাদের শুধু শরীর ভেজালে হয়না, বৃষ্টিতে মন ও ভেজাতে ইচ্ছা করে। অন্য কারো খবর তো জানিনা কিন্তু আমার এই রোগ একজনের তৈরি করা...... হুমায়ুন স্যার এর। আর আমি যখন থেকে দেখছি সবাই তার গল্পের মত করে মানে গাছের তলায়, পার্কে বা রিকশায় হুড ফেলে ভিজতে পছন্দ করে......চেষ্টা করে যাতে বৃষ্টি সব দুঃখ,কষ্ট আর মনের ময়লা ধুয়ে ফেলে।
আর বাঙ্গালির প্রেম তো বৃষ্টির সাথে একেবারে মাখামাখি অবস্থায় আছে। বৃষ্টি নিয়ে যেসব গান বা কবিতা আছে সেগুলোর বেশিভাগের ই মূল ব্যাপার হল বৃষ্টি দেখে কারো জন্য মন উদাস হওয়া। আর বাংলা বা হিন্দি সিনেমার গান শুনলে তো মনে হয় বৃষ্টি তে নিশ্চয়ই এমন কোন কেমিক্যাল আছে যা শরীরে জলন ধরায়। আর আমি তো প্রেমিক পুরুষ। আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে প্রেম করা আর ঘন ঘন প্রেমে পড়া। যেটাকে অনেকে হিংসা করে অন্য অনেক নামে ডাকে। যদিও নিন্দুকের কথায় আমার কখনো কিছু যায় আসেনি।
প্রথম কারো হাত ধরে ভিজি ক্লাস সিক্সে। উনি ক্লাস ফাইভ এ পড়তেন। (আমার মনে হয় মাথায় কোন কেমিক্যাল ডিসফাঙ্কশন ছিল। কেউ চাইলে ইঁচড়ে পাকা ও বলতে পারেন।) বৃষ্টি এলেই দুইজন ছাদে চলে যেতাম আর পাশাপাশি বসে হাত ধরে বৃষ্টি তে ভিজতাম।
এরপর তো অনেকের সাথেই ভিজলাম। কারো সাথে ভিজতে ভিজতে কান্তজী মন্দিরে যেমন গিয়েছি আবার অন্য কারো সাথে ভিজতে ভিজতে ফেরত এসেছি। কারো সাথে গ্রামের বাজার থেকে কেনা কোন অজানা ফল খেতে খেতে রিকশার হুড ফেলে বগুড়া শহরে ফিরেছি। একজনের সাথে প্রায় ৩০০ মানব সন্তানের সামনে “আশিকি ২” স্টাইল এ ভিজেছিলাম রাজশাহীর জিয়া পার্ক এ। টি এস সি তে বৃষ্টিতে ভিজে গরম চা খাওয়া আবার হাত ধরে রিকশায় বসে তার গান শুনতে শুনতে ভিজে অর্ধেক ঢাকা ঘুরে ফেলা। বৃষ্টিতে হাঁটতে গিয়ে পা মচকে ফেলা কাউকে আবার কোলে করে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। আরও অনেক কিছু। সব বলতে গেলে তো ব্লগ না বলে সেটাকে উপাখ্যান বলতে হবে।
গত কয়েকদিনের দিনের বৃষ্টিতে তো হাত নিশপিশ করছে কারো হাত ধরে ভেজার জন্য। দুঃখের ব্যাপার হাত গুলো আজ সব ই দূরে। ভর দুপুরে সূর্যের তীব্রতাকে ঢেকে ফেলা মেঘ দেখলেও মন উদাস হয়। আর বৃষ্টি আসার আগেই ভিজব কি ভিজব না ভাবতে ভাবতে মনে হয় কাউকে কল দিয়ে বলি “ এখনি হয়ত বৃষ্টি নামবে। হাতে হাত রেখে সব দুঃখ-কষ্ট, মান-অভিমান ধুয়ে ফেলার জন্য বৃষ্টিতে ভেজার নিমন্ত্রণ দিলে আসবে কি? ”
(কোন ঘটনা কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী না)