বয়স তো কম হল না। জীবনের অর্ধেক তো পার করে দিলাম। “অর্ধেক জীবন” নাম দিয়ে একটা বই লেখার সময় হয়ে গেছে। এই সময়ে অনেক কয়টা সরকার আসলো গেল। যদিও খুচরা বাদ দিলে ঘুরেফিরে দল দুইটাই। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের সময়ে অনেক ছোট ছিলাম। কিছু না বুঝেই ধানের শীষ বলে স্লোগান দিতাম। অবশ্য তখন থাকতাম ও বি চৌধুরীর এলাকা মুন্সিগঞ্জে। তাই সেটাই স্বাভাবিক ছিল।
তাছাড়াও আমার পরিবারে বি এন পি ঘেঁষা ভাব ছিল। আমার চাচা বি এন পির উপজেলা চেয়ারম্যান তাই বাবার দিকের সবাই বি এন পি ছাড়া কিছু বুঝত না। আর মার দিকের মামা, খালা থেকে শুরু করে কাজিনরা সবাই কট্টর বি এন পি সমর্থক। শুধু আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হয়েও বি এন পি সমর্থন করতেন মেজর জিয়ার খাল কাটার কারণে আমার দাদার বাড়ীর এলাকাটা বেশ উন্নতি করে তাই।
আর তিনি সবসময় জিয়া, মুজিব দুইজনের ই ব্যাক্তিত্ব নিয়ে অনেক প্রশংসা করতেন। কিন্তু বাকশালি সময়ে অনেক খারাপ কিছু স্মৃতির কারণে আওয়ামীলীগ থেকে দূরে থাকতেন। আমিও বি এন পি পন্থি হিসেবেই বড় হই। যদিও ২০০১ এ জামাত কে কোলে বসানোতে একটু কনফিউসড হয়ে যাই। আর ২০০১-২০০৭ এর সময়ে পিরীতি সম্পূর্ণ চলে যায়। তাই আমার প্রথম ভোটটা ২০০৯ এ লীগকেই দেই। এক কথায় অনেক গুলো শাসনামল দেখলাম।
এত বড় ভূমিকার কারণ হল আজকে একজন জিয়ার সৈনিক আওয়ামীলীগ সরকারের সফলতা- ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল। আমিও কিছু সফলতা দেখালাম, সেও কিছু ব্যর্থতা দেখাল। ভাব সম্প্রসারণে না যাই কারণ কথা গুলো সেই পুরাতন চর্বিত চর্বণ যুক্তি সমৃদ্ধ। কিছু তর্ক হল কিছু সহমত। প্রায় ২ ঘণ্টার আড্ডা, মোট ৫ কাপ চা আর ১১ টা বেনসন এর পরে দুইজন একই সিন্ধান্তে (যেহেতু আমরা সমর্থক কিন্তু কট্টর না।) আসলাম যে সব সরকারই যতটুকু সুবিধা দিয়েছে কষ্ট দিয়েছে তার চেয়ে বেশি। কেড়ে নিয়েছে আরও অনেক বেশী।
ব্যাপারটা বুঝাতে একটা গল্প বলতেই হয়।
আবুল কারণে অকারণে বউ পেটাত। একদিন সকালে বউয়ের হাতে এক টাকা দিয়ে বাইরে গেল। কিছুক্ষণ পর এক ভিক্ষুক এসে আওয়াজ দিল “ মা ভিক্ষা দে। এক টাকা দিলে ৭০ টাকা পাবি। ” আবুলের বউ ভাবল জামাই তো হাতে টাকা দেয়না তাই এই সুযোগে কিছু টাকা যদি আসে। সে এক টাকা ভিক্ষুক কে দিয়ে দিল। সারাদিন বসে থাকল কিন্তু ৭০ টাকা আর আসেনা!! সন্ধ্যায় আবুল এসে টাকা চাইল। বউ দিতে না পারায় আচ্ছামত পেটাল। এমনি মার তো ছিলই কিন্তু ওই এক টাকার কথা বলে বলে জামাই যে মারটা দিত তাতে বউটা একদম মরমর হয়ে যেত।
এভাবে ৪/৫ দিন গেল। একদিন সকালে যেভাবেই হোক একদম অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে আবুলের বউ ৭০ টাকা পেল। কিছুক্ষণ পর এক ভিক্ষুক আসলো আর এসে সেই একই কথা “মা ভিক্ষা দে। এক টাকা দিলে ৭০ টাকা পাবি। ” আবুলের বউ তখন ভিক্ষুককে বলল, “হ বাবা!! ৭০ টাকা তো পাওন যায় । কিন্তু শরীর এ একটুও কুলায় না। ”
আমাদের একই হাল। অনেক কিছুর আশায় ১টা ভোট দেই। অপেক্ষা করি। অপ্রত্যাশিতভাবে একদিন সরকারের কোন ক্ষেত্রে সাফল্য আসে। কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে ততদিনে আমাদের সব তেল শেষ হয়ে যায়। সরকারের অসফলতার ভার নিতে নিতে যখন মৃতপ্রায় তখন চকমকে একটা কিছু সামনে এনে আবার আশায় বুক বাধতে বলে। আমারা আবার ৭০ টাকার আশায় ১ টাকা দেই। এই চক্র চলতে থাকে। আবুলের বউয়ের সাথে আমাদের পার্থক্য এইটাই যে সে একবারে বুঝে গেল যে শরীরে কুলায় না আর আমরা এতদিনেও বুঝিনা।
বি. দ্র. সবখানে ধরা খেয়ে শেষ ভরসা ছিল বেনসন অ্যান্ড হেজেস এর কাঠিগুলো। সেইটার ও দাম বেড়ে গেল বাজেট এর আগেই।