কথা টা শুনে সবাই পিছনে পিছনে হাসত জানি। আমি বুঝতাম কিন্তু কিছু বলতাম না। কি বলব? যাই বলিনা কেন সবাই সামনে সামনে সম্মতিতে মাথা ঝাকালেও পড়ে আবার ঠিক ই একজন আরেকজন কে বলে হাসাহাসি করবে। দেখা যেত ক্যান্টিন এ বড় ভাইয়ারা ডাক দিয়েও জিজ্ঞেস করত “ কাহিনী কি সত্যি নাকি? ভাল ভাল চালাই যা। জ্ঞানীজন রাও বলে গেছেন এই টাইপ মেয়েদের নাকি আলাদা চার্ম থাকে। ” এই টাইপ!! চুপ করে শুনতাম। কি বলব? তারা তো আবার বড়ভাই। তাছাড়া সাহস ও হয়ত ছিলনা। কিছুদিন পড়ে বন্ধুরাও দেখা যেত অনেক রকমের মন্তব্য করত। কিছু কিছু তো ছিল নারী পুরুষের আদিম সম্পর্ক নিয়ে। কখনো দুর্বল ভাবে প্রতিবাদ করতাম, কখনবা তাদের সাথে তাল দিয়ে যেতাম। আমার নিজের মাঝেই মনে হয় বেশি অস্বস্তি ছিল। তাইতো কখনো কাউকে শক্ত ভাবে কিছু বলতে পারিনি।
তোমার সাথে যতক্ষণ থাকতাম ততক্ষণ এই ব্যাপার টা মাথায় আসতো না। ওই সময় গুলোতে একটা ঘোরের মাঝে থাকতাম। মনে হত দেবী দুর্গার ( তা চেহারাতে হোক আর সাহসে হোক ) সাথে ঘুরে বেরাচ্ছি । তোমার সাথে তো আমি ঢাকেশ্বরীতেও গিয়েছি কয়েকবার। মনে আছে জগন্নাথ হলে আমাকে পাশে নিয়ে তুমি অর্চনা পাঠ করেছিলে। তোমার বান্ধবিরা যে কত মজা নিচ্ছিল। আমি তো লজ্জায় অর্ধেক তখন। আচ্ছা তোমার বান্ধবীরাও কি আমাকে নিয়ে তোমাকে খেপাত ?
একদিন এক তাবলীগি বন্ধুর কাছে শুনলাম যে হিন্দু মেয়ে বিয়ে করে তাকে মুসলমান বানালে নাকি বেহেস্ত কনফার্ম। হাহাহা। সেদিন তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করি তুমি কি মুসলমান হতে পারবে? তুমি বলছিলে পারবে কিন্তু দুই ধর্মের মানুষ কি নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে জীবন ভর পাশাপাশি থাকতে পারেনা ? আমি না বুঝেই বলেছিলাম পারে। তুমি জানতে চেয়েছিলে আমি কি তোমার জন্য ধর্ম পরিবরতন করতাম কিনা তুমি বললে। আমি হ্যাঁ বলেছিলাম... আমি মিথ্যা বলেছিলাম। এমন না যে আমি সেরকম ধর্মভীরু । কতদিন নামাজ পড়িনা মনে করতে পারব না। সবাই কি বলবে সেটাই ছিল আসল ভয়। তুমি কিভাবে খোলা মনে কথা বলতে জানিনা । আমি তো পারতাম না এখনও যে খুব পারি তাওনা।
পারবো কী করে? দুমুখো মানসিকতা থেকেই তো বের হতে পারিনি কখনো। তোমার মত তো পারিনি ভিন্ন ধর্মের ছেলেকে সাথে নিয়ে নিজের ডিপার্টমেন্ট , নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে বেড়াতে কাউকে তোয়াক্কা না করে। আমি তো সারাক্ষণ এই ভাবতাম কেউ দেখে ফেলল কিনা, কেউ বুঝে ফেলল কিনা। তোমার মত মনের জোর আমার তখন ছিলনা।
তাই পারিনি। ধরে রাখতে পারিনি। হয়ত বা নিজের মনের ভিতরের ভয়ের কারণে চাইনি ও।
ধর্ম । সমাজ। সভ্যতা!
শুনলাম তুমি নাকি একটা কলেজ এ জয়েন করেছ। আমি এটুকু জানি যে তোমার কলেজ এ চাঁদাবাজি, দলাদলি বা দুর্নীতি যাই আসে আসুক সাম্প্রদায়িকতা কখনই জায়গা পাবেনা। বিশাল বাংলাদেশের একটা ছোট অংশ মুক্ত থাকবে এটা থেকে।
কাউকেই দোষ দিতে চাইনা। যা কিছু দোষ নিজের ধরে নিয়েই চাই কোন একদিন মন থেকে হয়ত বলতে পারবে নিজেকে যে তুমি সব ভুলে গেছ, আমার প্রতি রাগ ও শেষ । অপেক্ষায় থাকলাম । আমি এখন অল্প হলেও খোলা মনে যতটুকু চিন্তা করতে পারি তার সম্পূর্ণ দায়ভার (!!) যার আমার সেই দেবী প্রতিমা বহ্নিশিখা-র একটা কল এর অপেক্ষায় থাকলাম।
অপরিচিত কল ধরিনা আমি। একদিন হয়ত সকাল বেলায় ঘুমের মাঝে তাও ধরে ফেলব ভুল করে আর ওইপাশ থেকে তুমি বলবে “ কেমন আছ তুমি? দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস যায় নি এখনও? ”