১৭/১৮ বছর বয়সী ছেলেদের মধ্যে একটা দার্শনিক ভাব চলে আসে। খোঁঁচা খোঁচা দাড়িতে এই বাড়তি ভারিক্কি ব্যপারটা ভালোই মানিয়ে যায়। একটু কবিতা, একটু ভারী ভারী উক্তি, একটু গলা ছেড়ে গানটান গাওয়া। যদিও ২৪ পেরোতে পেরোতে জীবনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দার্শনিকোসিস রোগ মোটামুটি ৯৫ শতাংশই সেরে যায়। অথচ আমাদের যুবসমাজ যদি এই দার্শনিকোসিস রোগে আক্রান্ত না হয়ে সেই সময়টা কাজে লাগিয়ে কোন মিনিংফুল কিছু করতো!
তাতিন হচ্ছে এরকম চিকনবুদ্ধি সম্পন্ন একটা ছেলে। "ছহি রকেট সায়েন্স শিক্ষা" লেখা হয়েছে তাতিনেরই জবানীতে। তাতিন জীবনে কিছু হতে চায়, সেজন্য সেই ছেলেবেলা থেকেই বিভিন্ন নিনজা টেকনিক অ্যাপ্লাই করে এগিয়ে যেতে থাকে। তার সাথে হতে যাওয়া সমস্ত বিজ্ঞান, ভাবনা ও কল্পনার স্ফুরণ প্রতিহত করে তাতিন বেছে নেয় সফলতার চূড়ান্ত শিখরে আরোহন করার পথ। চূড়ান্ত শিখর হচ্ছে রকেট সায়েন্স। শর্টকাটে রকেট সায়েন্স শিখে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে ফেলার এই অপকৌশল তাতিন কীভাবে রপ্ত করলো, অথবা কীভাবেই বা আপনি নিজে তা রপ্ত করে নাম কামিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবেন, এই বইটা হচ্ছে এরকম জীবনে উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধি করার ম্যানুস্ক্রিপ্ট। রকেট সায়েন্টিস্ট হবার প্রি-রিকুইউজিট কী? তাতিনের মত একটি উদার, অসহিষ্ণু এবং কৌশলি মেধাবী মন ও মনন। আর কিছু লাগবে না? না মশাই। কারণ হচ্ছে হলো গিয়ে, রকেট সায়েন্স তো আসলে রকেট সায়েন্স না। কীভাবে সামান্য জ্ঞান দিয়েও অন্যের চোখে নিজেকে বিরাট জ্ঞানী প্রমাণ করবেন তার কৌশলটাই রকেট সায়েন্স।
আসুন এই বই সম্পর্কে কিছু FAQ জেনে নেয়া যাক!
এটা কি সায়েন্সের বই?
- আলবত। এটা সোশ্যাল সায়েন্সের বই। রকেট সায়েন্স সোশাল সায়েন্সের কোন শাখার অন্তর্ভুক্ত সুক্ষ্ণ উদাহরণ সহ ব্যখ্যা করা আছে এই বইতে।
: শুধুমাত্র এই একটি বই পড়ে কি রকেট সায়েন্স শেখা যাবে? আপনি কি রকেট সায়েন্স শিখতে পেরেছেন?
- অবশ্যই! আপাতত বইটা দিয়ে শুরু করুন। আপনিও পারবেন যদি মগজে "ধূসর জিনিস" থাকে।
: রকেট সায়েন্স শেখার প্রয়োজনীয়তা কী?
- দুর্বিষহ প্রয়োজনীয়তা। মেধাবী, সম্ভাবনাময় রকেট সায়েন্টিস্ট এর কাটতি দেশে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
: আর্থ সামাজিক উন্নয়নে এই বই কী ভূমিকা রাখবে?
- কোন ভূমিকা রাখবেনা। এটা লেখকের "বাজারী বই"। বাজারী বই চেনেন তো? হুমায়ূন স্যার "শেষ বয়সে" যা যা লিখেছেন সবই বাজারী বই। এই বই থেকে দেশ সমাজ ও এলাকাবাসীর কোন উন্নয়ন হবেনা, তবে আত্নন্নয়ন হবে। আপনার।
: গিফট আইটেম হিসেবে এই বই ক্যামন?
- বেশ ভালো। যাকে দেবেন তার ফিডব্যাক থেকে ওনার হিউমার সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারবেন। তবে ভুলেও তীক্ষ্ণধি কোন দোস্তকে গিফট করবেন না। এই বই পড়লে তারা থ্যানোসের মত ক্ষুরধার বুদ্ধি অর্জন করে আপনার দুনিয়ায় ক্যাড়াবেড়া সৃষ্টি করতে পারে। নিজ স্বার্থেই এই বই তাদের দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
এই বইয়ে কিছু মেসেজ আছে। আমাদের মেধাবী শিশু কিশোরদের কোমল মনে আমরা অসুস্থ প্রতিযোগীতার বীজ ঢুকিয়ে দিচ্ছি। আমরা তাদেরকে শর্টকার্টে ভালো ফলাফলের টোপ দেখিয়ে তাদের সৃজনশীলতা, কল্পনার জগতটাকে ক্রমাগত ব্যবচ্ছেদ করছি। আমরা যে সিস্টেম ফেঁদে বসে আছি, তাতে নিজে নিজে ভেবে কোন কিছু লেখার চেয়ে প্রাচীন রীতির পুস্তকাবৃত ক্লিশে গরুর রচনা মুখস্ত করে পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দিয়ে বেশি নম্বর নিয়ে আসা কে বেশি সফলতামন্ডিত মনে করা হয়, গ্লোরিফাই করা হয়। এভাবে আমরা আমাদের এক একটা জেনারেশনের কোমলমতি শিশু কিশোরদের মনে থেকে সৃজনশীলতার আলো মুছে ফেলে ভয় ভীতি ও অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী হবার বিষ পুশ ইন করে যাচ্ছি। তাতিনরা তাই "ছহি রকেট সায়েন্স" নিয়েই আগ্রহ দেখাচ্ছে বেশি, প্রকৃত রকেট সায়েন্স নিয়ে তাদের আগ্রহ নেই।
এটা একটা স্যাটায়ার উপন্যাস। তাতিনের মত অনেকেই শর্টকার্টে সফল হবার জন্যে বিভিন্ন রকম উপায় অবলম্বন করেন। সেই উপায় সাফল্যের ঘোড়দৌড়ে কতটুকু রাস্তা টেনে দিতে পারে সেসব চাওয়া-পাওয়ার গল্প এই বইতে আছে। স্যাটায়ার না বুঝলে আপনার কাছে বইটাকে চুড়ান্ত লেভেলের মোটিভেশনাল বই বলেও মনে হতে পারে। যদি হয়, জেনে রাখুন আপনিও পারবেন!
হাসান মাহবুব ভাইয়ার এটা দ্বিতীয় উপন্যাস। এবারই প্রথম স্যাটায়ারধর্মী উপন্যাস লিখেছেন। তাই সচরাচর যে হাসান মাহবুব কে আপনারা বইয়ে বা ব্লগে পেয়ে আসছেন তার থেকে একটু ভিন্ন স্বাদ পেতে পারেন এই বইতে। তবে সেটা অভ্যেস হয়ে যাবে কয়েক অধ্যায় পড়লেই।
লেখাটা আগে ফেসবুকে দেয়া হয়েছিলো। আগামী বইমেলাতেও ভাইয়ার নতুন বই আসছে। গল্পগ্রন্থ। নাম "জবাইঘর"।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৭