দিন – ৬ (১২-০৩-২০১৩)
আগেই বলেছি আমাদের সিট ছিল স্লিপার সিট। তাই ঘুমের কোন অসুবিধা হয়নি। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে গেলাম। কারণ সিডিউল অনুযায়ী ৭টা-৮টার মধ্যেই দিল্লী স্টেশনে পৌছানোর কথা ছিল আমাদের। ঘুম থেকে উঠেই সবকিছু গুছিয়ে নিলাম। ট্রেন থেকে নামার জন্যে প্রস্তুত সবাই। কিন্তু এ কী! ঘড়িতে ৮টা ঠিকই বাজল কিন্তু আমাদের ট্রেন থামল না। চলল আরো ৪ঘন্টা। অবশেষে দুপুর ১২টা ১০মিনিটে আমাদের ট্রেন দিল্লী স্টেশনে থামল। ৩৩ ঘন্টার জার্নি ৪৪ ঘন্টাতে গিয়ে ঠেকল। ট্রেন থেকে নামার পর মনে হচ্ছিল জেলখানা থেকে এইমাত্র মুক্তি পেলাম।
দিল্লী স্টেশনটা দেখে একটু পুলকিত হলাম। মনে হচ্ছিল যেন একটি বিমানবন্দর। এই স্টেশন দেখেই বুঝা যায় ভারতের প্রধান পথ হচ্ছে রেলপথ। অনেক বড় একটি স্টেশন। বাকী ভাই আগে থেকে বাস ঠিক করে রেখেছেন। তিনি বাস স্ট্যান্ডে বাস খুঁজতে গেলেন। আমরা স্টেশনেই দাঁড়িয়ে রইলাম। পেটের অবস্থা তখন যা তা। ক্ষুধার জ্বালায় তখন কিছুই ভাল লাগছিল না। ট্রেন থেকে নামব নামব করে সকালের নাস্তাটাও করা হল না। যাইহোক, ভারতের আরেকটা নিয়ম ভাল লাগল। তারা স্টেশনে বাস প্রবেশ করতে দেয় না। স্টেশনের অপরদিকেই বাস স্ট্যান্ড। বাসে উঠতে হলে আমাদেরকে সেখানেই যেতে হবে। ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু উপায় কি! যেতে তো হবেই। বাসে উঠে বসার একটু পরই বাকী ভাইয়ের বন্ধু সরাফত ভাই আমাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বললেন। বাসটা মূলত সরাফত ভাই-ই রিজার্ভ করেছেন আর আমাদের জন্য চারজন বাবুর্চি নিয়ে এসেছেন। তারা সিমলা, মানালি, জয়পুর, আগ্রা সবখানেই আমাদের সাথে ছিল।
বাস যাত্রা শুরু করল সিমলার উদ্দেশ্যে। কিন্তু দূর্ভাগ্য যেন আমাদের পিছু ছাড়বে না বলে পণ করেছিল। গাড়ি চলার ৫মিনিটের মাঝেই নষ্ট হয়ে গেল। কি আর করার! ১০-১৫মিনিট অপেক্ষা করার পর বাস আবার চলতে শুরু করল। কিছুক্ষণ চলার পর গাড়ি আবার থামল। নাহ, এবার দূর্ভাগ্যের কিছু ঘটেনি। ফ্রেশ হতে সুযোগ দেওয়ার জন্যেই এই বিরতি। সবাই ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করল দুপুরে। বাস আবার চলা শুরু করল।
বিকাল ৪টার দিকে বাস আবার থামল। এবার দুপুরের খাবারের জন্য বিরতি। একটি রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ালো গাড়ি। নাম ছিল “সাগর ধাবা।“ ধাবা মানে হল রেস্টুরেন্ট। আমাদের বাবুর্চিরাই রান্না করেছে খাবার। খাওয়া শেষ করে সবাই একটু এদিক সেদিক ঘুরল। সন্ধ্যায় আবার সবাই গাড়িতে উঠল।
সফরের মজাটা শুরু হয় আসলে এখান থেকেই। গাড়ি চলছেই। গাড়িতে বসল গানের আসর। রবিন স্যার, সোহেল স্যার, হাসিব স্যার তিনজনই ছিলেন এই গানের আসরে। প্রথমে গানের আসর থাকলেও পরে তা হয়ে যায় খেলা। গানের অক্ষর দিয়ে চলতে থাকে এই খেলা। স্থায়ী ক্যাম্পাস আর সিটি ক্যাম্পাসে বিভক্ত হয়ে যায় সবাই। জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে খেলার শুরু করেন সোহেল স্যার। সিটি ক্যাম্পাসের ছাত্ররা দাবি করেছিল তারা জিতেছে আর স্থায়ী ক্যাম্পাসের ছাত্ররা দাবি করেছিল তারা জিতেছে। আসলে ঐ খেলাতে কেউই জেতেনি। জয় হয়েছিল আমাদের সফরের।
এই খেলা থেকেই উঠে আসে আমাদের সফরের সেরা গায়ক জুবায়ের। যার নাম দেওয়া হয় এমপিথ্রি। পরে তার নামকরণ করা হয় খসা জুবায়ের। এই নামের কারণটাও মজার। সে এই খেলায় হিন্দী গানই গেয়েছে সব। তো খেলার একপর্যায়ে সে “না জানে কাবসে” শিরোনামে একটা গান গাইল। তার গাওয়ার স্টাইলটা ছিল এমন যেন সে এখনই প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিচ্ছে। এবং এই কাজ সারতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। দুই থেকে তিন ঘন্টা এভাবেই কেটে গেল। বাস তখনো চলছে। আমাদেরকে জানানো হয় সিমলা পৌঁছাতে ১৫ঘন্টা সময় লাগবে। সেই হিসেব অনুযায়ী আমরা রাতের ৪টায় পৌছানোর কথা ছিল। কয়েকদিনের টানা জার্নিতে খুব ক্লান্ত ছিলাম। তাই কবে যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না।
দিন – ৭ (১৩-০৩-২০১৩)
সফরের সপ্তম দিনে এসে প্রথমবারের মত নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোথাও পৌঁছালাম। রাত ৩টা ১০মিনিটে বাস থেকে যখন নামলাম তখন আমাদের ৪জনের অবস্থা একেবারেই খারাপ। সবাইকে দেখে অবাক হলাম। সবাই শীতের জন্য কাপড় নিয়ে এসেছে। আমি আর নাহিদই মনে হয় ছিলাম যে দুইজনের একটা শালও ছিল না। তার উপর বাস থেকে যখন নামছি তখন গায়ে শুধুমাত্র একটা টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়ার্টার ছিল। আর সেই সময় সিমলার তাপমাত্রা ছিল ৩-৪ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের জোর এমন শক্তিশালী ছিল যে, কথায় বলতে পারছিলাম না। দাঁত পর্যন্ত কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছিল। দৌঁড়ে দৌঁড়ে হোটেলের দিকে গেলাম। হোটেলে প্রবেশ করার পর যা একটু শান্তি পেলাম।
হোটেল রুমে প্রবেশ করার আগে শুনেছিলাম হিটার আছে। রুমে গিয়ে দেখি নেই! বাথরুমে গিয়ে দেখি পানি গরম করার জন্য হিটার আছে। তখন মনটা খুশিতে ভরে গেল। গরম পানি দিয়ে ভালভাবে ফ্রেশ হয়ে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন ঘড়িতে বাজে রাত ৪টা। আর আমাদেরকে বলা হয়েছে সকাল ৮টায় সবকিছু নিয়ে বের হতে হবে। মনে মনে ভাবছিলাম সফরে এসে শান্তিতে ঘুমাতেও পারব না মনে হয়।
আমরা ৪জন ঘুম থেকে উঠলামই ৭টা ৫০মিনিটে। আর আমাদেরকে বের হতে বলেছিল ৮টায়। স্যারের বকা শুনতে হবে এই ভয়ে আমাদের অবস্থা তো খারাপ। এর মধ্যে মোশারফ এসে বললে তাড়াতাড়ি বের হতে। তখন ব্যাগও গুছাতে পারি নাই। বাকী ভাই আসল হঠাৎ। তিনি বললেন পাশেই একটা শ্যুটিং মল আছে। সবাই সেখানে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রওনা দিলাম মলের উদ্দেশ্যে।
সকাল বেলার সিমলাকে দেখলাম। এককথায় অসাধারণ। চারিদিকে সবুজ। পাহাড়ের চূড়ায় ছোট্র একটি শহর। দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। আমরা যে মল দেখার জন্য বের হয়েছিলাম মলটা পাহাড়ের চূড়ায়। যারা ফটোগ্রাফার তাদের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। মলে গিয়ে দেখলাম রবিন স্যার আর স্যারের স্ত্রী সাথে সাইফুল ভাই আর মোশাররফ ঘুরছে। আমরা একপাশ থেকে ঘুরতে শুরু করলাম। ঐপাশে কাউকে না দেখে আমরা ধরে নিয়েছিলাম সবাই জায়গাটা ঘুরে অন্যদিকে চলে গিয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে হোটেলে ফিরতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি মল ঘুরে দেখলাম। বলাবাহুল্য, সিমলার এই শ্যুটিং মলে হিন্দী থ্রি-ইডিয়টস ছবির কিছু অংশের শ্যুটিং হয়েছিল।
হোটেলে ফিরে দেখি প্রায় সবার নাস্তা করা শেষ। ওদের জিজ্ঞেস করলাম, তোরা মল থেকে কবে আসলি? তারা উত্তর দিল, কোন মল? ওদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম আমরা ৮জন ছাড়া আর কেউ মলে যায়নি। আমাদের কাছ থেকে বর্ণনা শুনে পরে অনেকেই যেতে চেয়েছিল। কিন্তু স্যারেরা নিষেধ করে দিল। কারণ এখানে দেরি করলে পরের জায়গাগুলোতেও দেরি হয়ে যাবে। তাই স্যারেরা তাড়া দিচ্ছিলেন সবাইকে। নাস্তা শেষ করে সবাই ব্যাগ নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে এলাম।
এবার রওনা দিলাম সিমলার একটি জায়গা কুফরি দেখার উদ্দেশ্যে। বাসে যেতে বেশিক্ষণ সময় লাগে না। পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতেই পৌঁছে গেলাম। পার্কিং থেকে মাহাসু পিক-এ যেতে ঘোড়ার সাহায্য প্রয়োজন। অর্থাৎ ঘোড়াতে চড়েই আমাদেরকে মাহাসু পিকে যেতে হবে। যাওয়ার আগে জানতাম না রাস্তাটা কেমন। জানলে অনেকেই হয়তো মাহাসু পিকে যেতে চাইতো না। কাঁদাযুক্ত রাস্তা, মাঝারি মানের পাথর দেওয়া রাস্তায়। সেই রাস্তা বেয়েই পাহাড়ের উপর উঠবে ঘোড়াগুলো। যেকোন সময় পিছলে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম ছিল না। বিশেষ করে যখন অনেক ঘোড়া একসাথে হয়ে যায় তখন এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মানুষের মত তারাও একে অপরকে ওভারটেক করতে চাই। আর ঘোড়া যদি পা পিছলে পড়ে তাহলে নিজের পা আর কোমড়ের ১২টা বাজার সম্ভাবনা খুব বেশি। ঘোড়ায় উঠার আগে যেকেউ চাইলে গামবুট পরতে পারে। তবে এর জন্য তাকে খরচ করতে হয় ৫০ রুপি। কাঁদা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যেই সাধারণত গামবুট পরে থাকেন পর্যটকেরা। অনেকে পরে আবার অনেকেই পরে না। আমি অবশ্য পড়েছিলাম।
কুফরি এসে এই ঘোড়া চড়াটা মনে আনন্দের যোগান দিল। প্রথমে ভয় পেলেও পরে মজাই লাগল। তবে দেখার মত কিছু পেলাম না। সব জায়গায় ধান্দাবাজি। ষাঁড়ের পিঠে উঠে ছবি তুলতে লাগে ১০ রুপি। এই দামটা অবশ্য আমাদের জন্য ছিল। অনেকে আরো বেশি দাম দিয়েও ছবি তুলেছে। অর্থাৎ যার কাছ থেকে যত পেরেছে তত রুপিই নিয়েছে। জায়গাটা আমার কাছে তেমন ভাল লাগেনি। তবে হ্যাঁ প্রথমবারের প্রাকৃতিক বরফ ছুঁয়ে দেখার স্বাদ পেলাম কুফরিতেই। ঘোড়াতে চড়ে নামার সময় মজা পেয়েছিলাম বেশি। আর ভয়ও পেয়েছিলাম বেশি। ২৪-২৫টা ঘোড়া একসাথে নামছিল। একটা আরেকটাকে ধাক্কা দিয়ে আগে যেতে চাইছিল। তাদের এমন কর্মকান্ডে আমাদের তো খুবই খারাপ অবস্থা। মোশাররফ তো আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ বলে জোরে চিৎকার দিল। আমার ঘোড়া তো ছিল খুবই দুষ্ট প্রকৃতির। তার কাজ কর্মে আমার মেজাজই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কোনরকমে নিচে নামতে পারলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচি – তখন এইরকম ছিল মনের অবস্থা। এসে শুনি নাহিদ নাকি ঘোড়ার উপর থেকে পড়ে গিয়েছে। এটা শোনার পর আমাদের হাসি আর আটকায় কে! অন্যের দুঃখে হাসি একটু বেশিই পায় আমাদের! কুফরিতে যা আনন্দ পেয়েছি তা হল এই ঘোড়া রাইডই। ভয় লাগলেও অ্যাডভেঞ্চার ছিল এই রাইডে। অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য এই রাইডটা আনন্দদায়কই ছিল।
দুপুরের খাবার কুফরিতেই খেলাম। খাওয়া শেষ করে আবার গাড়িতে উঠলাম। এবার যাত্রা শুরু মানালির উদ্দেশ্যে। বাস চলতে শুরু করল। পাহাড়ের আঁকা-বাকা পথ ধরে চলছে আমাদের বাস। আমাকে মুগ্ধ করেছে পাহাড়ের ঘনবসতি। ঘরগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। বিশেষ করে দিনের আলো বন্ধ হয়ে যখন সন্ধ্যা নেমে আসল তখন খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল পাহাড়গুলোকে। প্রতিটি ঘরেই জ্বলছিল আলো। রাতের আঁধারে মনে হচ্ছিল যেন আকাশের তারা সব পাহাড়ের বুকে নেমে এসেছে। অভূতপূর্ব একটি দৃশ্য। দিনের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পর রাতের সৌন্দর্য্যও উপভোগ করছিলাম।
হঠাৎ মাঝপথে বিরতি দিল। আশেপাশে পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই। এমন জায়গায় কেন বিরতি দিল তা বুঝতেই পারছিলাম না। তারপরও ভাবলাম বিরতি যখন দিয়েছে তখন ফ্রেশ হওয়ার কাজটা সেরেই ফেলি। আমার আগে বাস থেকে নেমেছে নাহিদ। তার আগে কে কে নেমেছিল খেয়াল করিনি। নাহিদ যখন একটু ঝোপের দিকে যাচ্ছে সে দেখল ঝোপের মাঝে কে যেন বসে আছে। তো নাহিদ জিজ্ঞেস করল’
“ইবে হন?”
উত্তর আসল, “আঁই।“
নাহিদ আবার জিজ্ঞেস করল, “আঁই হন?”
অপরপক্ষ থেকে আর কোন উত্তর আসল না। এরপরই নাহিদের পাশে আসি আমি। আমিও অন্ধকারে খেয়াল করলাম কেউ একজন বসে আছে। অনেকেই নিচে দাঁড়িয়ে গায়ে বাতাস লাগাচ্ছিল। স্যারেরাও ছিলেন। তাই আমিও বাসে না উঠে দাঁড়িয়ে ছিলাম বাইরে। সেই সুযোগে দেখা হয়ে গেল ঝোপের মাঝে বসা মানুষটাকে। আরে সে তো জাবেদ। নাহিদকে জানালাম এই কথা। নাহিদ সেই সময় তেমন কিছুই বলল না আর। সবাই ক্লান্ত ছিলাম বলে এই বিষয়ে আমাদের তেমন মনোযোগ ছিল না। সবাই আবার বাসে উঠল। বাস আবার চলতে শুরু করল।
চলতে চলতেই বাস হঠাৎ আবার থামল। হায়রে দূর্ভাগ্য! বাস আবার নষ্ট হল। অনেকেই বাস থেকে নেমে হাঁটছিল। আমরা বাসেই ছিলাম। ফখরুল আর নকিব গভীর ঘুমে মগ্ন ছিল। আমি, জুবায়ের, নাহিদ (জুনিয়র) আর নাহিদ ভাই গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে উঠে আসে জাবেদের কথা। জাবেদের শুরুটা হয়েছিল নাকি একটি বিকট শব্দে। শব্দটা ছিল এমন – ডর ডরররর ডররররররররররররর। তখন থেকেই নাম হয়ে গিয়েছিল ডর ডরি জাবেদ – দ্য জাংগেল বয়। আওয়াজ শুনেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন সে কি কাজ সেরেছে? এসব নিয়ে কথা বলতে বলতেই খবর এল আমাদের অন্য বাস ধরতে হবে। বাস ঠিক করতে পারবে পরেরদিন সকালে। আশেপাশে জঙ্গল ছাড়া আর কিছুই নেই। সারা রাত এখানে বসে থাকার কোন মানে হয়না। ভাগ্য এবার ফিরে থাকাল আমাদের দিকে। হঠাৎ একটা মানালিগামী লোকাল বাস এসে থামল আমাদের বাসের পিছনেই। ঐ বাসে আগে থেকেই যাত্রী ছিল। তাই বসার মত সিট সংখ্যা পর্যাপ্ত ছিল না। তাও আমরা ঐ বাসে উঠলাম। কোনভাবে পৌঁছাতে পারলেই হয়। আমাদের বাবুর্চিরা পরে আরেকটি বাসে আসবে। তারা আগের বাসটিতেই অপেক্ষারত রইল।
সিটের অপর্যাপ্ততার কারণে সবারই সমস্যা হচ্ছিল। বাসে উঠার একটু পরই অসুস্থ হয়ে বমি করে আদনান। একে তো অপর্যাপ্ত ঘুম, ক্লান্ত শরীর তার সাথে যুক্ত হয়েছিল সিট শেয়ার করে বসা। সবকিছুর পরেও আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম।